আমার নাম বাদল।
আমার নাম এখন হয়তো অনেকেই জানেন কাকুর লেখালিখির কল্যাণে।
আমি চঞ্চলের বন্ধু থেকে এখন তো ভাই হয়ে গেছি আর আমি এখন তো একটু বেশ বড় ও হয়েছি। বারো বছর বয়স হয়ে গেছে আমার অনেক দিন। তেরো চলছে। তাই কাকুর মত করে গল্প লেখবার জন্য চেষ্টা ও করি আমি মাঝে মাঝে কিন্তু কেমন যে হয় তা কে জানে?
অবশ্য আমার দেখাদেখি পরীর দেশের রাজকুমার ছেলে চঞ্চল ও লুকিয়ে লুকিয়ে এই কর্মটি করে থাকে। তা আমি ঠিক জানি। তবে এখন চঞ্চল মাঝে মাঝে বাড়িতে মায়ের কাছে ও গিয়ে থাকে দরকারে আর কাকুর সেটি তো মনে হয় একদম পছন্দ নয়। অবশ্য বারণ ও করে না।
কাকু আমার সব কিছু দেখাশুনা করে। এক কথায় আমি কাকুর খুব আদরের ছেলে হয়ে গেছি এখন, তা সবাই জানে। আমি বড় হয়েছি তো তাই কাকু এখন রোজ সকালে আমাকে আধ ঘণ্টা ফ্রি হ্যান্ড ব্যায়াম করায় আর রবিবারে বসে আমার রূপের চর্চা ও করে ।
তা আমি কি আর পরীর দেশের রাজকুমার চঞ্চলের মতন অপরূপ সুন্দর ছেলে হ’তে পারি নাকি? কিন্তু কাকুকে সে’কথা কে বলে? কাকুর ব্যবহারে এই পরিবর্তন দেখেই আমার সন্দেহ শুরু হয়েছে যে কাকু কি আমাকে চঞ্চল তৈরী করছে না কি তার বিকল্প? কাকু যা অভিমানী ছেলে না, অসম্ভব কি?
এ’সব হয়তো শৌখিনতা কিন্তু আমাকে সাজিয়ে কাকু মনে হয় আত্ম সন্তুষ্টি পায়।
এই যেমন কাকুর ধারণা হয়েছে যে আমার নাকি দিনে দু’বার ফেস ও মাউথ ওয়াশ করা চাই, রাতে ক্লিনিং, টোনিং আর ময়েসচারাজিং আরো কত কি সব না করলে নাকি আমার নরম ত্বক চকচকে আর ভালো থাকবে না । আর ও আছে । ষ্টীম বাথ ও চাই আমার, বিশেষ করে শীত কালে আর চাই বডি স্ক্র্যাবিং।
আমি যত বলি কাকু আমি কি তোমার মেয়ে নাকি যে এত সব আমার জন্যে চাই। তা কাকু শুনলে তো। বলে তুমি আমার মেয়ে আবার ছেলে দুই ।
রবিবারে বডি স্ক্র্যাব করার জন্যে কাকু গরম দুধে খানিকটা পাউরুটি ভিজিয়ে তাই দিয়ে কাজ চালায়। আমি কৃত্রিম প্রসাধন পছন্দ করি না বলায় এই ব্যবস্থা। রাত্রে আমার ন্যাচারাল ফেস ক্রীম হয়েছে দুধের সর। আমি নাকি খুব সুন্দর ছেলে, তাই এত সব ব্যবস্থা। দুৎ….যত সব বাজে কথা।
তা সেদিন আমার রূপের পরিচর্যা সব সারতে বেলা সাতটা বেজে যেতে কাকু আমাকে নিয়ে জলখাবার খেতে বসেছে আর তখনই ফোনটা ঝনঝনিয়ে বেজে উঠলো আর কাকু রেগে গেল । আমার প্রসাধন করা তখন ও বাকি যে।
ফোনে সুদূর দিল্লী থেকে চঞ্চলের বাপী কথা বলছিলেন। কে একজন বেশ বড়লোক সে’খানে আত্মহত্যা করেছেন না খুন হয়েছেন তাই কাকুর ডাক পড়েছে। তা পড়তেই পারে। গরীব কেউ মারা গেলে কেউ জানতে ও তো পায় না কেননা সেটি নিউজ হয় না এই গরিবের দেশে। যেমন কুকুর বেড়াল তো রোজ কতোই মরে, সে আর কি নিউজ হয়?
তবে কাকু সাফ বলে দিলো যে এখন আমি কাজে একটু ব্যস্ত আছি আর ট্রেনের বার্থ রিজার্ভ ও তো করা নেই, তাই দিল্লী গিয়ে তদন্ত করা এখন সম্ভব নয় আমার পক্ষে।
এই বলে ফোন রেখে দিয়ে ফিরে এসে বসে দু’গাল মুখে দিয়েছে কি দেয় নি কাকু, আবার ফোনটা বাজতে লাগলো। কি? না তোকে আসতেই হবে । আমার কাজ বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে, তাই ই-মেল আই ডিতে টিকিট পাঠিয়ে দেব প্লেনের। বেনারস থেকে দিল্লী। মাষ্টার বন্ডকে সঙ্গে নিয়ে তুই চলে আয়। কেসটা গন্ডগোলের মনে হচ্ছে বেশ। আত্মহত্যা না ও হ’তে পারে। কিছু ব্যাপার তো আছেই কিন্তু কোথায় যে অসঙ্গতিটা আছে, ধরতেই পারছি না। ।
জ্বালাতন আর কাকে বলে? কাকুর তখন ও আমার প্রসাধন করতে এক ঘণ্টা চাই। করে কি? তাই ই-মেল আই ডি বলে দিয়ে কাকু পালিয়ে এলো।
জল খাবার শেষ হ’তে আমাকে কাকুর ভাষায় সাজঘরে নিয়ে গিয়ে ক্রিম, পাউডার,
কাজল পরানো থেকে আর কত কি যে লাগানো শুরু হোল, সে সব লেখা কঠিন। সব শেষ হ’তে তখন আমাকে একটা খুব দামী সুন্দর ঝকঝকে ড্রেস পরিয়ে দিলো কাকু আর তখন আমি সত্যি সত্যি যেন একটা পরী ছেলে হ’য়ে গিয়েছি।
ততক্ষণে আবার ফোন। বড়লোকের বাড়ির কেস। পুলিশকে ও তারা যা বলবে তাই করতে বাধ্য হবে। টাকার এমনি মহিমা।
গল্পের দ্বিতীয় অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।