বড় কাকু আমার কথার ইঙ্গিতটায় তেমন গা দিলো না কিন্তু কাকু আমার দিকে আবার করে কট মট করে তাকালো।
আমি বললুম—‘কাকু, লীনা মেডিক্যাল্সে কতজন কাজ করতো জানা যেতে পারে কি? তাদের কাউকে যদি পাওয়া যায় তো তিন চারটে কথা জানতে চাইতুম আমি কাল…’
‘সমঝ গয়া…হো যায়গা মিঃ বন্ড….ডোন্ট ওরি…আর কিছু?’
‘ডঃ সানিয়েলের ঘরের দরজা ও জানলাটা আর বাথরুমের সামনের দেওয়ালটা একটু গোপনে পরীক্ষা করতে পারা যাবে? মানে তিনি যেন জানতে না পারেন’।
‘এনি থিং সাসপেক্টিং, মাষ্টার বন্ড?’
‘হুঁ….মেটাল ডিটেক্টার নিয়ে গেলে ভালো হবে হয়তো’।
‘ও কে…..জেরার অজুহাতে থানায় নিয়ে এসে ওনাকে বসিয়ে রেখে …ও হ’য়ে যাবে ডোন্ট ওরি …আমি আমার জন্য অনেক কাজ পেয়ে গেছি…..তবে এই কেসটায় গন্ডগোলটা কোথায় তা কি তুমি ধরতে পেরেছো, মাষ্টার বন্ড?’
‘হুঁ, মনে হয় কিছুটা পেরেছি, কাকু…।’
‘কি? কি বললে তুমি? ওহঃ ….মাই গুডনেস….রিয়েলী? তুমি কিন্তু যা বলছো তা সত্যি প্রমাণিত করতে পারলে নগদ পাঁচ লাখ পাবে। মিঃ কুমারের এই কেসে শিরে সংক্রান্তি হয়ে আছে। তিনিই ঘোষণা করেছেন …’
‘সে সব পরে হবে, কাকু…’
‘আচ্ছা, তুমি খুব ক্লান্ত…টেক রেষ্ট …..গুড নাইট..’ বড় কাকু চলে গেলেন।
কাকু শোবার আগে আমার জন্য মাউথ ওয়াশের ব্যবস্থা করছিলো। বললো—‘ওপরের ফ্ল্যাটের বাথরুমটা কেমন দেখলে, বাদল?’
‘ওয়ান্ডারফুল….একদম নিচের বাথরুমের কপি….তোমার ব্রান্ডেড মাউথ ওয়াশ ও আছে সেইখানে, কাকু…হিঃ…হিঃ….হিঃ….সত্যিই দু’জনের পছন্দ ও শৌখিনতা সব একই ধরনের যে তা কিন্তু তোমাকে মানতেই হবে…’
কাকু ভ্রু কুঁচকে বললো—‘হুঁ….এটা একটা পয়েন্ট। এই বয়সের দু’জন জেন্টলম্যানই এতো শৌখিন…?’
‘কেন কাকু? তুমি যদি আমাকে নিয়ে টাকার শ্রাদ্ধ করে শৌখিনতা করতে পারো আর অন্য কেউ করলেই দোষ? হিঃ…………হিঃ………….হিঃ.’
‘আরে যাঃ…আমার বাদল তো একটা অতি সুন্দর বাচ্ছা ছেলে। তাকে আমি কেন, যে কেউ সাজিয়ে গুজিয়ে রাখতে ও পরিচ্ছন্নতা শেখাতে চাইবে। কিন্তু তাই বলে….নাঃ মনে হয় এটা অনুকরণ, বাদল?’
‘কাকু, তুমি সত্যিই বাহাদুর। ঠিক তখনকার আমার পয়েন্টটা তুমি ধরে ফেলেছ। আর দ্বিতীয় সূত্র হচ্ছে তোমার ওই মাউথ ওয়াশ। সেই বোতলটা গায়েব হ’লো কেন? থাক কাকু, এখন চলো, শুয়ে পড়া যাক। দাও, তোমার মাউথ ওয়াশ….সেরে নি…’।
শুয়ে পড়বার জন্য জামা প্যান্ট ছাড়তে ছাড়তে বললুম—‘কাল আর একবার বাড়ির মালিকের শোবার ঘরটা দিনের আলোয় গিয়ে ভালো করে দেখতে হবে আমাকে আর পোষ্টমর্টেমের রিপোর্ট আর লীনা মেডিক্যল্সের পর্ব চুকলেই কাল রহস্য ভেদ হয়ে যাবে, কাকু.। তারপর আমরা দে পিঠটান, কাকু। চঞ্চলের জন্য নইলে মন কেমন করছে তো এখনই আমার …’।
কাকু আমাকে নিয়ে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো জড়িয়ে ধরে, মুখে কিছুটি না বলে।
তার পরের দিনটা আমার প্ল্যানমতন সব করে টরে নিতেই কেটে গেল।
আর তার পরের দিনই আমাদের রওনা হবার পালা। তাই তৈরী টৈরী হয়ে সব জিনিষপত্র গুছিয়ে ব্যাগ ও অ্যাটাচী বন্ধ করে শেষে কাকুকে বললুম-‘কাকু, আজ বিকেলে তুমিই গিয়ে রহস্যটা ভেদ করে দিয়ে এসো, আমি আর যাবো না । আমি শেষটা সব বললে মিত্তল আংকল রেগে কাঁই হবেন। ডেঁপো ছোকরা রহস্যভেদী তাঁর দু’চোখের বিষ যে….’
তা আমার কাকু শুনলে তো।
আমাকে কাকু সে’দিন ও ঠিক সাজিয়ে গুজিয়ে একটা পরী ছেলে বানিয়ে নিয়ে গেল
আর বললো-‘এইবার শুরু করো, বাদল তোমার মাউথ ওয়াশ রহস্য…’
কি আর করি?
বললুম—‘থ্যাংক ইয়ু, কাকু। সংক্ষেপেই বলছি। কারণ আমাদের ফ্লাইট ছ’টায়। চারটেয় কাকু গিয়ে হাজির হবেই এয়ারপোর্টে। কাকুর নিয়ম মেনে চলা স্বভাব তো, তাই রওনা হবে তিনটেয়। এখন বেলা একটা। তাই……….’
‘প্রথমেই বলি পোষ্টমর্টেমের রিপোর্টের কথা। মিঃ সিয়েন মারা গিয়েছেন তীব্র বিষক্রিয়ায় কিন্তু খাবারে কোন বিষ ছিলো না। প্রশ্ন হবে বিষ তবে এলো কোথা থেকে? সহজ উত্তর হয় খাবার খেয়ে উঠে জল পান করবার সাথে হয়তো পেটে চলে গিয়েছে। কিন্তু জলের কোন গ্লাশে ও বিষ টিষ কিচ্ছুটি মেলে নি। রিপোর্ট তাই বলছে। তবে? শেষ বিকল্প কি থাকে? হ্যাঁ…. পরে যখন তিনি মাউথ ওয়াশ করেন তখন। তাই মাউথ ওয়াশের পুরো ফাইলটা গায়েব করতে হয়েছে….অপরাধিকে এই কেসে। খুব সুবিধা। এই মাউথ ওয়াশ নিয়ে কে আর মাথা ঘামাচ্ছে?’।
‘এখন প্রশ্ন হবে কে করেছে এই কাজ’?
উত্তর সহজ—‘খুনী…’
‘কিন্তু সে কে? মিঃ অবিনাশ কি? কি তার স্বার্থ? ঋণ না পাওয়ার জন্য রাগ’? না তাঁর নিজের ছোট ছেলে মিঃ কুমার?’
‘মাষ্টার বাদল। সরি ফর ইন্টারাপশন। মিঃ সিয়েনের ওই একটিই ছেলে। তুমি ভূল বলছো…..’ বললেন গৃহকর্তা।
‘না স্যার। আমি একটু ও ভূল বলিনি…..একটি মাত্র নয় ওনার আরো একটি ছেলে ছিলো। বড় ছেলে। মিঃ কুমারের বয়স আন্দাজ করে প্রথম দিনই আমার সন্দেহ হয়েছিলো । থরো পুলিশ ইনভেস্টিগেশানে তাই সঠিক বলে প্রমানিত হয়েছে। সব কথা শুনে হয়তো মিঃ কুমার নিজেই স্বীকার করবেন…।’
‘সে কথায় আমি আসছি এখুনি। তার আগে বলে নি বাড়ীর মালিক ডঃ সানিয়েলকে কেউ বাইরে থেকে দরজা আটকে ঘরে বন্ধ করে রেখেছিল সেই রাতে। তাই তিনি তো
ঘরে বন্দী হয়েই ছিলেন সুতরাং তাঁকে তো এই অপরাধে দোষী বলাই চলে না। হ্যাঁ কেসটা সুইসাইড মোটেই নয় …হোমিসাইড অর্থাৎ হত্যা বা মার্ডারের কেস….আর তার শাস্তি ও সবাই জানেনই………..’
ডঃ সানিয়েল লাফিয়ে উঠলেন যেন– ‘শাবাস ছেলে। বাহাদুর বটে। আমি তোমাকে গোল্ড মেডেল দেব। ডঃ সানিয়েল গোল্ড মেডেল….প্রত্যেক বছর বছর তোমার মতন বাহাদূর ও কুশাগ্রবুদ্ধি ছেলে মেয়েদের দেওয়া হ’তে থাকবে এই মেডেল, ফান্ড থেকে…’
‘সরি আংকল, মেডেল বা প্রাইজ তো হয় মেমোরিয়াল। এটা ও কি হবে তাই?’
‘মা…মানে? হোয়াট ডু ইয়ু মিন, মাই বয়?’
‘বলছি। খানিকটা সময় হাতে আছে এখন ও আমার। এই ঘরে এখন মিঃ বসাক উপস্থিত আছেন। আপনি তো চেনেন…’
‘না মানে হ্যাঁ…’
‘সে কী? আপনার কর্মচারিকেই ভূলে গেলেন, স্যার?’
‘ইনি সত্যের খাতিরে ও একজন নিরপরাধের প্রাণ রক্ষার্থে আমাদের মানে পুলিশকে একটা স্টেটমেন্ট দিয়েছেন। লীনা মেডিক্যাল্সের বন্ধ হ’বার সম্ভাবিত কারণ হিসেবে। তিনি ছাড়া ও আর ও দু’জন কর্মচারী ছিলেন সে’খানে যাদের বিরুদ্ধে পুলিশের ওয়ারেন্ট বেরিয়েছে। তারা কিছু অসাধু মেডিকেল কোম্পানির সেল্স রিপ্রেজেন্টেটিভদের সাথে ষড় করে নকল ওষুধ বেচতে থাকে ডঃ সানিয়েলের অগোচরে। কমিশন পঞ্চাশ পার্সেন্টের ও অনেক বেশী। অন্য আর ও গিফ্ট ও প্রাইজের আশাতীত লাভ ছিল’।
‘ডঃ সানিয়েল রোগীদের প্রেসক্রিপশান দিয়ে বলে দিতেন যে তারা যেন ওষুধ নিয়ে
যায় তাঁর দোকান থেকে। তিনি নকল ওষুধের কথা জানতেন বলে মনে হয় না আমার কেননা তিনি সত্যিই একজন সুচিকিৎসক ছিলেন…’
‘কি বলছো তুমি? ছিলেন??? আর ইয়ু গোয়িং ক্রেজী?’
‘নো স্যার… নট অ্যাট অল। আগে সবটা শুনুন একটু ধৈর্য ধরে। তা এই করে একদিন
একজন মিঃ সেনের বড় ছেলের অকালে পরলোকপ্রাপ্তি হয়। এমন আরো অনেকেই সে’খানে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন হয়তো নকল ওষুধ খেয়ে, তবে তাদের বেলায় লোক জানা জানি হয় নি। তাদের মনে হয় তেমন সামর্থ্য ছিলো না কিন্তু এই কেসে অনেক জল ঘোলা হয়েছিল’।
‘পুলিশ ও এসেছিল তাই পুলিশের পুরণো ডায়েরিতে সব বিবরণ পাওয়া গিয়েছে ও কম্প্যুটারাইজড্ ডাটা স্টোরেজ সেন্টারের মাধ্যমে সব বিশদ তথ্য পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু ব্যাপারটা জানাজানি হয়ে যেতেই লীনা মেডিক্যাল্সের সেই দুই ধুরন্ধর কর্মচারী মিলে রাতারাতি নকল ওষুধের সব স্টক সরিয়ে ফেলে পৌঁছে দেয় সেই মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভের গোপন আড্ডায়, আগের সুরক্ষার শর্তানুযায়ী’।