আর অপরাধী যদি ধরাই পড়েছে তবে আর কাকু কি করবে? নাঃ…সত্যিই দেখি জটিল ব্যাপার। আর আত্মহত্যার কেসে অন্য কেউ অপরাধী হয়ই বা কি করে? তবে শুনলুম যে যিনি মারা গেছেন তিনি এই বাড়ির একমাত্র ভাড়াটে ছিলেন। নাম মিঃ সিয়েন। আর মালিক আর ভাড়াটে দু’জনেই শুনি যে বাঙালী। এ আবার কেমনধারা বাঙালী নাম রে বাবা? বাঙালী খ্রিশ্চানদের শুনেছি এমন সব নাম হয়।
ড্রয়িংরুমে গিয়ে একটা বড় নরম সোফায় কাকুর পাশে বসে তখন কাকুকে চুপিচুপি কথাটা জিজ্ঞেস করে ফেলতেই হ’লো আমাকে আর আমার প্রথম প্রশ্ন শুনেই কাকু চট করে মুখে রুমাল চাপা দিলো হাসি চাপতে। যাঃ….কাকু যেন কি?
খানিক পরে আমার কানে কানে কাকু বললো-‘এইগুলো সব ডেলহাইট নাম। একজন
হ’লেন ডঃ স্যান্নাল। ইনি বাড়ির মালিক আর তিনি একজন বড় ডাক্তার তবে এখন আর প্র্যকটিশ করেন না। আগে করতেন। রাজৌরী গার্ডেন না কোথায় নিজস্ব চেম্বার সহ ওষুধের একটা দোকান ও ছিলো। লীনা মেডিক্যাল্স নামে। বয়স হয়েছে বলে সব বিক্রী করে দিয়েছেন। আর অন্য জন মিঃ সেন। দিল্লীতে বাঙালির কদর বুঝে নিতে পারবে তুমি এই নামগুলো থেকেই, বাদল’।
সে’খানে আর ও একজন ছিলেন। নাম মিঃ কুমার। তিনি না কি মিঃ সিয়েনের একমাত্র ছেলে । তবে তাঁর বয়স মনে হ’লো মোটেই বেশী নয়। কাকুর চেয়ে বছর তিন চার বড় হ’তে পারেন। একমাত্র ছেলে শুনে কাকুর ভ্রু কুঁচকে গেলো। আমার মনে হ’লো যে তিনি মিঃ সিয়েনের ছোট ছেলে হ’লে ও বা কথা ছিলো।
কাকু চুপি চুপি বললো-‘কে জানে বাবা? হয়তো বেশী বয়সে ছেলে হয়েছে। তবে আমাদের সব খরচ পত্র দিয়ে ডেকেছেন ইনিই। কারণ ও আছে। ইনি ও পুলিশেষ বিশেষ সন্দেহভাজন হয়ে আছেন যে…’।
সবাই এসে বসতে তখন বাড়ির মালিক এসে বসে বললেন—‘যে তিনি ডাক্তারী প্র্যাকটিশ ছেড়ে দেবার পরে বাড়িতে বসে তাঁর বড় একা লাগতো। সময় আর কাটতে চাইতো না। ভাইটা তো প্রায় বাড়িতেই থাকে না। কিসের যেন সেল্স রিপ্রেজেনন্টেটিভ….. তবে পয়সার খুব খাঁকতি আছে, আর হয়তো সেই লোভেই………………..’
‘তাঁকে কাজের লোকের ভরসায় একলাই থাকতে হ’তো বাড়িতে। প্রায় বছরখানেক আগে একদিন ক্লাবে গিয়ে শুনলেন যে মিঃ সিয়েন তাঁর ছেলের সাথে থাকবেন না অশান্তি এড়াতে, সেই জন্য কোথাও বাড়ী ভাড়া নিতে চাইছেন। তিনি ও মেম্বার তবে অন্য একজন মেম্বার মিঃ আগরওয়াওলা একদিন পরিচয় ও করিয়ে দিলেন। তখন
ডঃ সানিয়েল ভাবলেন যে বাড়ির নিচের তলাটায় যদি ভালো একজন নির্ঝন্ঝাট টেনান্ট পাওয়া যায় তো মন্দ কি? তায় বাঙলী। গল্প গাছায় বেশ সময় কাটানো যাবে। কিছু পয়সা ও আসবে ঘরে বসে। হাজার দশেক। মন্দ কি? একমাত্র ছেলে তো চাকরী নিয়ে বেঙ্গালুরুতেই থাকে। কালেভদ্রে আসে।
তাই তিনি বাড়ী ভাড়া দিয়ে ফেললেন। তা সত্যিই তাঁর ভাগ্য ভালো। তিনি ভাড়াটের সজ্জনোচিত ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে গেলেন। নির্ঝন্ঝাট একা মানুষ আর বেশ হাসি খুশী। গল্প গুজব আড্ডা তাশ টাশ খেলে দিন ভালোই কাটতে লাগলো’।
‘মিঃ সিয়েন প্রায় তাঁর সমবয়সী আর মন মেজাজ ছাড়া চেহারাতে ও বেশ মিল ছিল দু’জনের। মাঝারী হাইট, ফর্সা একহারা চেহারা আর মাথায় টাক ও ছিল দু’জনেরই। ডেলী রুটিন ও প্রায় এক। দু’জনেই ভোরে উঠে বেড়াতেন। জগিং মাঝে মধ্যে নইলে হাঁটতেই পছন্দ করতেন। দেখতে দেখতে পরিচিত মহলে মাণিকজোড় আখ্যা পেতে দেরী হ’লো না’।
‘বছর খানেক সময় বেশ কেটে গেলো। মিঃ সিয়েন নিজে থেকেই ভাড়া দু’হাজার আর ও বাড়িয়ে দিলেন। তাঁর ওজর আপত্তি কানেই তুললেন না। আদর্শ টেনান্ট….বলেন কিনা রিটায়ার্ড তো আমরা দু’জনেই, পরষ্পরকে না দেখলে কে দেখবে?’
‘তাঁর ছেলে বৌমা ও নাতি কেউ ইতিমধ্যে একবার ও বাড়ী না এলেও তাদের অভাব টেরই পেলেন না তিনি। তারপরে হঠাৎ কি যে হয়ে গেলো। যার ভাগ্যে সুখ লেখা নেই তার এমনিই হয়’।
‘একদিন ভোরে উঠে তিনি তৈরী হয়ে বেরোবেন, দেখেন যে ঘরের দরজা বাইরে থেকে কে বা কারা আটকে দিয়েছে। যতই ডাকাডাকি করেন তিনি, কেউ আর সাড়া দেয় না। ফলে সে’ দিন আর প্রাতঃভ্রমণ করা হয়ে উঠলো না তাঁর ভাগ্যে। ভাইটা বাড়িতে তো থাকা বা না থাকা দুই সমান। ভোরে উঠতে তার বড় বয়েই গিয়েছে। খালি বেলা অবধি পড়ে ঘুমোয়’।
‘তিনি মুক্তি পেলেন সাতটায় কাজের লোক আসবার পরে’।
‘সে বললো যে মেন গেট তো খোলাই ছিল। শুনে তিনি নিচে নেমে এসে দেখেন যে গেটের তালা ভাঙ্গা। মিঃ সিয়েনের ঘরের দরজাও খোলা আর তিনি বিছানাতেই পড়ে আছেন’।
‘অনেক ডাডাডাকিতেও সাড়া না পেয়ে লোকাল থানায় ফোন করেন তখন তিনি’।
‘মিঃ মিত্তল ঘন্টখানেকের মধ্যেই এসে পড়েন। পুলিশের ডাক্তার ও সঙ্গে এসেছিলেন। তিনি মৃতদেহ পরীক্ষা করে শরীরে আঘাতের কোন চিহ্ন না পেয়ে বলেন যে হয়তো বিষ খেয়ে সুইসাইড করেছেন। পোষ্টমর্টেম হ’লে সঠিক জানা যাবে’।
‘আপাত দৃষ্টে পুলিশ সুইসাইড বললে ও তিনি ঘরের দরজা খোলা রেখে শুয়ে পড়লেন কেন? সুইসাইড নোট নেই কেন? গেটের তালা ভাঙলো কে? তাঁর ঘরের দরজাই বা
বাইরে থেকে বন্ধ করলো কে এবং কেন? এইসব প্রশ্নগুলোই কেসটাকে হত্যা বা হোমিসাইডর মনে করতে বাধ্য করছে সবাইকে। আর মোটিভ? বিনা উদ্দেশ্যে কি কেউ খুন করে? একজন রিটায়ার্ড বুড়োমানুষকে কেউ মারবে কেন? এমন কিছু কোটিপতি লোক তো ছিলেন না মিঃ সিয়েন আর তাঁর ছেলে তো উত্তরাধিকারী হিসেবে আছেনই। খুনী কি পাবে? তবে কি তাঁর ছেলেই…?’
‘এই সন্দেহের কারণ আছে। ঘটনার দিন সন্ধ্যার পরে তিনিই ছিলেন মিঃ সিয়েনের কাছে একমাত্র ভিজিটার। মাঝে মধ্যে তিনি আসতেন দেখা করতে। অবশ্যই নিজের গরজে। সে’দিন ও এসেছিলেন মিঃ সিয়েনের নামের কোন একটা এল০আই০সি০ পলিসির ম্যাচ্যুরিটি পেপার্স নিয়ে সই করাতে। নইলে টাকা মিলবে না যদি ও তিনি নমিনী। টাকার অঙ্ক প্রায় পঁচিশ লাখ….’।
‘মিঃ সিয়েন সই করেননি বলে দু’জনে বেশ কথা কাটাকাটি ও হয়েছিল। চলে যাবার আগে মিঃ কুমার ওপরে তাঁর ঘরে ও এসে তাঁকে অনুরোধ করেছিলেন তাঁর বাবাকে একটু বোঝাতে। নইলে অতোগুলো টাকা….। কিন্তু তিনি পিতা পুত্রের ঝগড়ায় মাথা গলাতে রাজী না হ’তে শেষে রাগ করে মিঃ কুমার উঠে চলে যান, ঘরের দরজাটা ঝনাৎ করে টেনে বন্ধ করে দিয়ে। হয়তো সেই ধাক্কাতেই দরজার ঢিলে হয়ে যাওয়া টানা হুড়কোটা একটু সরে এসে দরজাটা আটকে যায়। তখন তো আর তিনি সে দরজা টেনে দেখেন নি।
ইচ্ছাকৃতভাবে যে মিঃ কুমার তাঁর ঘরের দরজা আটকে দিয়ে যান নি তা তিনি পরে বার বার বলেওছেন। কিন্তু খুনের কেস হ’লে সন্দেহ তো হবেই আর অতোগুলো টাকা যেখানে পাবেন না তিনি……………এখন অবশ্য এল০ আই০ সি০ টাকা দিতে পারে অবশ্য যদি নমিনী মানে মিঃ কুমার খুন না করে থাকেন..’।
গল্পের চতুর্থ অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।