প্রতিহিংসা–চতুর্থ অংশ

কাকু ফিসফিস করে বললো—‘স্বারথ লাগি করে সব প্রীতি…হুঁ….অমনি কি আর কেউ প্লেনের ভাড়া খসায় রে বাপু…’

ডঃ সানিয়েল বলে চললেন—‘ঘটনার দিন এবং আগের দিন ও আমার ভাই অবিনাশ
বাড়িতেই ছিলো কিন্তু পরের দিন ভোরেই সে বেরিয়ে গিয়েছিলো। আমাকে ও জানিয়ে যায় নি। কেন? তা আমি জানি না। হয়তো জরুরী ফোন টোন এসেছিলো কিছু। তবে এমনিতে সে অতো ভোরে কখনোই ওঠে না। তাই সে বাড়িতে নেই এই খবর পেয়েই পুলিশ মানে ও সি সাহেব নিজে গিয়ে নতুন দিল্লী রেল স্টেশন থেকে সেইদিনই অবিনাশকে গ্রেফতার করেন সে ট্রেনে উঠে পড়বার আগেই’।

‘অবিনাশ হঠাৎ কেটে পড়বার তালে ছিল মনে করে তাকে ধরলে ও অনেক ‘কড়ী পুছতাছ’ করে ও পুলিশ তাকে দিয়ে অপরাধ স্বীকার করাতে তো পারেই নি, উল্টে বলেছে যে সে পালাতে যাবে কেন নিজেদের বাড়ী ছেড়ে? সে তো তার কাজে যাচ্ছিল মাত্র। জরুরী এস০এম০এস০ পেয়ে। এখন সেটা কে পাঠিয়েছিল, তা জানবার চেষ্টা চলছে…’।

কাকু বললো—‘বাদল, দু’ নম্বর সাসপেক্ট ও হাজির….বোঝ ঠ্যালা’।

‘এখন কথা এই যে মিঃ সিয়েনকে মারতে যাবে কেন সে? মোটিভ কি? পুলিশের ধারণা যে সে তাঁর কাছে টাকা ধার চেয়েছিলো আমাকে না জানিয়ে? কিন্তু অবিনাশ তা স্বীকার তো করেই নি, উল্টে বলেছে সে বাড়ির একজন টেনান্টের কাছে হঠাৎ টাকা ধার চাইতে যাবে কেন তার দাদা থাকতে আর কেউ অমনি চাইলেই বা তাকে টাকা দিতে যাবেই বা কেন? কোন প্রশ্নই ওঠে না। পুলিশ তাকে ফাঁসাতে চাইছে আসল অপরাধিকে ধরতে না পেরে’।

‘এই কথা না শুনে মিঃ মিত্তল তাকে তৎক্ষণাৎ লক আপে ঢুকিয়ে দেন বেজায় রাগ করে। বহু চেষ্টায় তবে একদিন পরে আজ সে বাড়িতে আসতে পেরেছে। তবে সে এখন ও পুলিশের নজর বন্দী। বিনা অনুমতিতে দিল্লির বাইরে যেতে পারবে না। বাধ্য হয়ে তাকে এখন দিন দশেক ছুটি নিতে হয়েছে…’।

হঠাৎ আমি বললুম—‘আংকল, আমি কি একটা প্রশ্ন করতে পারি, প্লীজ?’

‘কে? ওঃ …তুমি….তা বেশ তো, করো না……….’

‘আপনারা কি রোজ দু’জনে একসাথেই ভোরে বেড়াতে বেরোতেন, আংকল?’

‘নাঃ, রোজ ঠিক তা হয়ে উঠতো না। আমি হয়তো একটু লেট হয়ে গেলাম। তখন মিঃ সিয়েন একলাই যেতেন বা তার উল্টোটাও হয়ে যেতো কোনদিন। এই নিয়ে আমরা মাথা ঘামাতাম না…’।

‘যে দিনের কথা বলছেন সে’দিন কি হয়েছিল আংকল? আপনার মনে আছে কি?’

‘কেন থাকবে না? ক’দিন মাত্র তো হয়েছে। সে’দিন আমি তো ঘরে বন্দী হয়ে যেতেই পারিনি আর মিঃ সিয়েন তো…’

‘হুঁ,….কিন্তু তিনি তো…..আচ্ছা থাক। এখন মৃতদেহ তো আর দেখা যাবে না।অন্ত্যেষ্টি ও হয়ে গেছে। তাঁর ঘরটা একটু আমি দেখতে চাই। যদি সম্ভব হয় তো…..।’

‘এখন আর দেখবার কি আছে? পুলিশ তিন বার সব দেখেছে আগেই’। মিঃ মিত্তল বলে উঠলেন শোনামাত্র….

আমি বড় কাকুর মুখের দিকে তাকাতেই তিনি বললেন—‘ওঃ মিঃ মিত্তল, ওপন দি ডোর অব দি ফ্ল্যাট। ইটস্ অর্ডার…’

‘ওঃ ইয়েস স্যার। চলো হে ছোকরা…কি দেখতে চাও দেখবে চলো…ছোঃ…’

‘ওহ মিত্তল….মাইন্ড ইয়োর ল্যাংগোয়েজ, প্লীজ…’

‘সরি…. স্যার….’

কাকু আর আমি ইন্সপেক্টরের সাথে নীচে নেমে এলাম। তিনি চাবি দিয়ে তালা খুলে আলো জ্বেলে দিয়ে আমার দিকে না তাকিয়ে কাকুকে বললেন-‘আসুন স্যার..দেখে নিন যা দেখবার আছে আপনার…’

ঢুকে দেখি যে থ্রি রুম ফ্ল্যাট…কিচেন বাথ সহ…সিলিং ফ্যান রুম কুলার টেবিল ফ্যান রিডিং টেবিল… চেয়ার… খাট..সোফা…সেন্টার টেবিল…গোদরেজ স্টোরওয়েল.. ওয়াড্রোব এমন কি একটা আয়না সমেত ড্রেসিং টেবিল ও রয়েছে।

তার ড্রয়ারে অনেক প্রসাধন সামগ্রী ও দেখি সাজানো রয়েছে। স্নো, ক্রীম, বোরোলীন, ময়েশ্চরাইজার, পাউডার, বডি স্প্রে, সেভিং সেট সেভিং ক্রীম আফটার সেভিং লোশন এমন কি একটা মাউথ ওয়াশের বটল ও।

ভদ্রলোক বেশ সৌখিন ছিলেন বলে মনে হয় …..কাকুর মতন। বড়লোক হ’লে হয়তো শৌখিনতা আপনিই জেগে ওঠে। আমার কাকু যদি বড়লোক না হয়ে ও……

আমি সেই বোতলটা সন্তর্পনে হাতে তুলে নিয়ে দেখলাম কাকু যে ব্র্যান্ড আমার জন্যে কিনেছে একদম সেই ব্র্যান্ড, তবে সেটা এখন খালি। আমি সেটা তুলে কাকুর হাতে দিয়ে মুখ টিপে একটু দুষ্টু হাসি হেসে দিলুম। ব্যস, আর যায় কোথায়? আমার কটাক্ষ ঠিক বুঝে নিয়ে কাকুর মুখ ভার হয়ে গেল।

আমি চট করে বাথরুমে গিয়ে ঢুকলুম…কিন্তু নাঃ নেই তো এ’খানে ও। গেলো কোথায় অন্য ভর্তি বোতলটা রে বাবা? এক্কেবারে ভ্যানিশ…

কিন্তু তা হয় কি করে? যে মাউথ ওয়াশ করে সে তো রোজই করবে। ওই বোতলটা একদম শুকনো মানে দিন দশেকের ও আগে খালি হয়েছে। সুতরাং কেউ নতুনটা সরিয়েছে মনে হয়। কে হ’তে পারে আর কেনই বা?

সে এখন যাক গিয়ে। এইবার আমরা আবার ওপরে যাই। বাড়ির মালিকের ঘর ও বাথরুমটা ও কোন ছুতোয় দেখে নিয়ে তারপরে বড় কাকুর ফ্ল্যাটে চলে যাব। বেশ ক্ষিধে ও পাচ্ছে এখন আমার আর ক্লান্তি ও লাগছে দারুণ।

কে বলে যে এয়ার জার্নিতে মানুষ টায়ার্ড হয় না। বিশেষ করে ইন্দিরা গান্ধী ইন্টার ন্যাশনাল এয়ার পোর্টে গিয়ে পড়লে তো হয়েই গেলো কম্ম কাবার। বেরোতেই হাঁটতে হবে মাইল দুই। তারপরে লাগেজ কালেকশানের ঝামেলা আছে। খোঁজ, কোথায় পাঁচ নম্বর বেল্ট…..তাও দেখ সে আবার কখন ঘোরে……যত্ত সব বিচ্ছিরী ব্যবস্থা। কাকু ঠিকই বলে রাগ করে এয়ার জার্নির না কাঁথায় আগুন…হিঃ…..হিঃ……….হিঃ……….

তাই আর কিছু বেশী কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ ও করিনি আমি। মনে হয় একটু পাষ্ট হিস্ট্রী ও জানতেই হ’বে এই কেসে নইলে মোটিভই তো পাচ্ছি না ঠিক ধরতে। সামান্য টাকা চেয়ে না পেলেই কি কেউ খুন করে না পলিসির টাকা না পেলে ছেলে হয়ে নিজের বাপকে?…..যাঃ ….যতসব পুলিশের ফুলিশ বুদ্ধি….. এ’খানেই বড়কাকু ও আটকে গেছে বলে মনে হয়।

তা বাড়ির মালিকের শয়নকক্ষটি পুরনো হ’লে ও বেশ সুন্দর ও আধুনিক কেতায় সাজানো। মনে হয় কোন নামী ইন্টিরিয়র ডেকোরেটারের কাজ, তবে দরজায় বাইরে থেকে বন্ধ করবার জন্য যে ধাতুর টানা হুড়কোটা রয়েছে সেটা সত্যিই বেশ পুরনো বলে ঢিলে হয়ে গেছে। দরজার পাশেই বড় পাল্লার গ্রিল লাগানো জানলা।

ঘরে ঢুকে একটু পরেই আমি কাকুকে চুপিচুপি বললুম—‘কাকু, এক নম্বরে যেতে পারি কি?’

কাকু আমার দিকে কটমটিয়ে তাকালো কেননা কারো বাড়িতে গিয়ে সে’খানে
তাদের বাথরুম ব্যবহার করা একদম পছন্দ নয় কাকুর, কিন্তু আমাকে যে একবার যেতেই হবে বাথরুমে। কাকু আমার মুখের দিকে চেয়ে কি বুঝলো কে জানে তবে ঠিক কিছু বুঝে নিয়ে তখনি সেই জন্য অনুমতি চাইতেই ডঃ সাহেব নিজে উঠে এসে আমাকে অ্যাটাচড্ বাথ দেখিয়ে দিলেন। আমি ঢুকেই দরজা বন্ধ করে দিলুম। দেখি….এইবার পকেটের মেটাল ডিটেক্টারটা হয়তো আমার একটু কাজে লাগবে।

সে’খানে চা জল খাবারের ঢালা ও ব্যবস্থা করা ছিল কিন্তু আমি খুব ক্লান্ত আর ঘুম পাচ্ছে বলে কিছু না খেয়ে চলে এলুম কাকুদের সাথে।

বাড়ী এসে খাওয়ার টেবিলে বসে বড় কাকু বললেন—‘হ্যালো মাষ্টার বন্ড, কি বুঝলে তাই বলো। গভীর গাঢ্ঢা, তাই না?….’

‘নাঃ…কাকু…..সরি…মাত্র ফিট দুয়েকের মতন হবে….হিঃ…হিঃ….হিঃ….’

‘তাই না কি? তবে তো মার দিয়া কেল্লা। তা এখন বলো তো আমাকে কী করতে হবে?’

‘আচ্ছা কাকু…..মেডিক্যাল স্টোরে মানে আধুনিক ভাষায় স্টোর্সে কর্মচারী থাকে না?’

‘হুঁ….তা তো থাকেই। কেন?.’

গল্পের পঞ্চম অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

দুঃখিত!