
এক কৃষকের একটি পোষা বেজি ছিল। বেজিটি ঘরের উঠানে একটি লোহার খাচায় বাস করতো। কৃষকপত্নী প্রতিদিন সকালে দরজা খুলে দিত, বেজি সারা দিন ঘুরে ঘুরে খাবার খেয়ে বিকালে ফিরে আসতো। কৃষক পত্নী বেজিটিকে খাচায় ভরে দরজাটা বন্ধ করে দিতো। এমনি করে কৃষকের স্নেহ মমতায় বেজিটির দিন কাটছিল।
কৃষকের ছোটো একটি ছেলে ছিল। একদিন কৃষক সকালে মাঠে চলে গেল। যাওয়ার সময় কৃষক পত্নীকে বলে গেল, “আজ মাঠে অনেক কাজ, সকালের নাস্তা নিয়ে তুমি একটু তাড়াতাড়ি এসো।” কৃষক পত্নী তাড়াতাড়ি রান্না করে ছেলেটিকে উঠানে এক গামলা পানির সামনে বসিয়ে দিয়ে তাড়াতাড়ি মাঠে চলে গেল।
এদিকে, ছেলেটি গামলা ভর্তি পানিতে হাত নেড়ে চেড়ে থেলতে ছিল, এমন সময় দুটি সাপ এসে পানি খেতে এল। একটি দাড়াস সাপ আর একটি গোখরো সাপ। প্রথমে দাড়াস সাপ পানিতে মুখ দিল। ছেলেটি সাপটিকে হাত দিয়ে ধরে সাপটি পানি খাওয়া পর্যন্ত খেলছিল। এবার যেই গোখরো সাপ পানিতে মুখ দিল, ছেলেটি তাকেও ধরলো। আর গোখরো সাপ সাথে সাথে তাকে ছোঁবল দিল।
নিত্য দিনের মতো কৃষক পত্নী সেদিন ভুলে বেজির খাঁচার দরজা খুলে যায়নি। তবুও বেজিটি খাঁচার ভেতর তোলপাড় করতে শুরু করলো। বেজির ক্যাচ ম্যাচ শুনে সাপ দুটি ভয়ে তাড়াতাড়ি চলে গেল। কিছুক্ষণ পরে কৃষক পত্নী বাড়ি ফিরে এল। এসে দেখে পানির গামলার পাশে ছেলেটি পড়ে আছে, তার মুখ দিয়ে ফেনা বের হচ্ছে। কৃষক পত্নী ছেলেটির কাছে গিয়ে তার শরীরে হাত দিয়ে দেখলেন তার হুঁশ নেই।
এবার তার চোখ পড়ল বেজির খাঁচার দিকে, দেখলেন খাঁচার দরজা ভাঙ্গা, খাঁচায় বেজি নেই। সে মনে করলো বেজিটি তার ছেলের এ অবস্থা করেছে। তাই বেজির প্রতি তার ভীষণ রাগ হলো। সে একটি লাঠি নিয়ে বেজিটিকে খুঁজতে বের হল।
এমন সময় বেজিটি দৌড়ে তার সামনে আসলো। আর অমনি কৃষক পত্নী লাঠি দিয়ে বেজির মাথায় আঘাত করলো। এক আঘাতে বেজিটি মাঠিতে লুটিয়ে পড়ল এবং বেজিটি মারা গেল। আঘাত এতটাই জোরে হয়েছিল যে বেজিটির মুখ হা হয়ে গিয়েছিল।
হঠাৎ কৃষক পত্নী খেয়াল করলো বেজির মুখে দাত দিয়ে কামড়ে ধরা একটি গাছের শিকড়। কৃষক পত্নীর মাথায় ভাবনা এল, এটা কোন ঔষধি গাছ। সে গাছের শিকড়টি বেটে রস করে ছেলের মুখে দিল। কিছুক্ষণের মধ্যে ছেলেটির জ্ঞান ফিরে এল।
এবার কৃষক পত্নী খেয়াল করলো ছেলেটির ডান হাতের পাতায় সাপের ছোবলের চিহ্ন। এবার বুঝতে পারলো কী হয়েছিল। তার ছেলেকে বেজিটি বাঁচানোর চেষ্টা করছিল, আর সে কিনা ভুল বুঝে উল্টো বেজিকেই আঘাত করলো।
সে দৌড়ে বেজির কাছে এল, নাড়া চাড়া করে দেখলো বেজি মরে গেছে। সে বেজিটিকে কুলে নিয়ে কান্না করতে লাগলো।