Categories রূপকথা

প্রতিজ্ঞা

প্রাচীনকালে মালবদেশ ও পঞ্চাল দেশের মধ্যে একবার প্রচন্ড বিরোধিতা দেখা দিল। মালবদেশের রাজার নাম ছিল বীরসেন। তার ছেলের নাম ঝছিল বিজয় সিংহ। পঞ্চাল দেশের রাজার নাম ছিল বিমলাদিত্য। ঐ রাজার একটি মেয়ে ছিল। নাম মণিমালা। সে খুব সুন্দরী ও নম্রস্বভাবা ছিল। যথাসময়ে মণিমালার জন্য পাত্র বাছাই করতে স্বয়ম্বর সভা ডাকা হর। বিভিন্ন দেশে খবর পাঠানো হল। সুন্দরী মণিমালাকে বিয়ে করার আশায় বহু যুবক, এমনকি বহু দেশের বহু বয়স্ক রাজাও মণিমালার স্বয়ম্বর সভায় এসে হাজির হল।

তবে বিমলাদিত্য তার শত্রু বীরসেনের কাছে মণিমালার এই স্বয়ম্বর সভার কোন খবর বা আমন্ত্রন পাঠায়নি। এতে বীরসেনের ভীষণ রাগ হল। এদিকে বীরসেনের ভীষন আগ্রহ ছিল মণিমালাকে যেন-তেন প্রকারেণ নিজের কবলে আনার। বীরসেন তার ছেলে বিজয়সিংহকে ডেকে বলল, ‘তুমি এক্ষুণি তৈরী হও। তোমাকে যুদ্ধে যেতে হবে। তুমি একাই পারবে। সৈন্য নিযে পঞ্চালদেশ আক্রমণ করে আজকুমারী মণিমালাকে তুলে নিয়ে এস। হ্যাঁ–শোন, আমি স্থির করেছি মণিমালাকে বিয়ে করব।” বিজয়সিংহ পঞ্চালদেশ আক্রমন করে জয়ী হল। পরাজিত বিমলাদিত্য পালিয়ে প্রাণে বাঁচল। রাজবাড়ির সবাই বিজয়সিংহের হাতে বন্দী হল।

বিজয়সিংহকে দেখে মণিমালা চোখ ফেরাতে পারল না। কিছুক্ষণের মধ্যে নিজেকে সংযত করে বিজয়সিংহ বলল, ‘রাজকুমারী, আপনাকে বিয়ে করতে আমার বাবা আগ্রহী। তাই আগামী কাল আমাদের দেশে যাওয়ার জন্য তৈরী থাকবেন।” মণিমালা বিজয়সিংহের এই কথার জবাবে কোন কথা বলে বিজয়সিংহের কথা শেষ হওয়ার পর ধীরে ধীরে নিজের ঘরে চলে গেল। সেই রাত্রে বিজয়সিংহের ঘুম হল না। সারাক্ষণ তার চোখের সামনে মণিমালার মুখ ভাসতে লাগল। সে মাঝে মাঝে বিছানা ছেড়ে উঠে বারান্দায় পায়চারি করছিল। হঠাৎ মণিমালার এক চাকর একটি চিঠি এনে তার হাতে দিল। সেই চিঠিতে লেখা ছিলঃ ‘যুদ্ধ করে বীরের মত যে বস্তু জয় করা হয় তা অন্যের হাতে দিয়ে দেওয়া একান্ত অনুচিত।” বিজয়সিংহ বুঝতে পারল মণিমালা তাকে বিয়ে করতে চায়। প্রথম দর্শনেই মণিমালাকে তার ভাল লেগেছে।

তার ওপর এই চিঠি পেয়ে বিজয়সিংহ ঠিক করল মণিমালাকে সেই বিয়ে করবে। পরের দিন মণিমালাকে নিয়ে মালব দেশে ফিরে যাওয়ার কথা। বহু সময় ধরে ভেবে ভেবে অবশেষে সেদিনই বিজয়সিংহ মণিমালাকে বিয়ে করল। সেই রাত্রে সে মণিমালাকে স্ত্রী হিসেবে পেয়ে মহানন্দে তাকে কাছে টানতে যেতেই তার বুকে একটি ছোরা ঠেকে গেল। বিজয়সিংহ তাকে আলিঙ্গন করতে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সে ছোরা চালাতে লাগল। বিজয়সিংহ ঝট করে তার হাত ধরে বেঁকিয়ে তাকে প্রশ্ন করল, “আমাকে যে চিঠি দিয়েছিলে তাতে আমার মনে হয়েছিল তুমি আমায় ভালবাস; তুমি কি ভালোবাসার অভিনয় করেছিলে? সত্যি বল, তা না হলে তুমি আমার হাতেই কঠোর শাস্তি পাবে।” “যুদ্ধে পরাজিত হয়ে বাবা আমাকে শেষ কথা বলেছিলেন প্রতিশোধ নিতে। আমি তাঁর শেষ ইচ্ছা পূরণ করার চেষ্টা করেছি মাত্র।” বিজয়সিংহ কিছুক্ষণ কি যে ভেবে, কর্তব্য স্থির করে ও হঠাৎ কোথায় যেন চলে গেল।

তারপর থেকে তার খোঁজ আর কেউ কোনদিনই পেল না। বেতাল এই কাহিনী শুনিয়ে বলল,“রাজা, মণিমালাকে বিজয়সিংহও তো ভালবেসেছিল, তাকে ছেড়ে সে চলে গেল কেন? সে কি মণিমালাকে ক্ষমা করতে পারে নি? মণিমালা তো বলেছিল তার ভালবাসা অভিনয় নয়। তবু তার কথা কি বিজয়সিংহের বিশ্বাস হল না? আমার প্রশ্নের জবাব জানা স্বত্ত্বেও উত্তর না দিলে তোমার মাথা চৌচির হয়ে যাবে।” জবাবে রাজা বিক্রমাদিত্য বললেন,“মণিমালাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য বিজয়সিংহের দোষ দেওয়া যায় না।

মণিমালার ছোরা তার বুকে বিদ্ধ হলে সে মারা যেত, মণিমালা একাই পড়ে থাকত। ওর চলে যাওয়ার অন্য কারণ। সে মণিমালার কাছে একটি শিক্ষা পেয়েছিল। মণিমালা বিজয়সিংহকে ভালবেসেও বাপের ইচ্ছা পূরণের চেষ্টা করেছে। কিন্তু সে মণিমালাকে ভালবেসে বাপের ইচ্ছার কথা ভুলে গিয়েছিল। তাই সে নিজের দেশে না ফিরে অন্য দেশে পাড়ি দিল।” রাজার এইভাবে মুখ খোলার সঙ্গে সঙ্গে বেতাল শব নিয়ে আবার ফিরে গেল সেই গাছে।

আরো পড়তে পারেন...

সুবর্ণের সন্ধানে

সে অনেক দিন আগের কথা।এখন থেকে অন্তত দুহাজার বছর আগের কথা তো বটেই।ভারত বর্ষের পূর্বদিকে…

সোনার দেশে লোহার মানুষ

বৈকুন্ঠে লক্ষীর সঙ্গে নারায়নের সামান্য একটূ তর্ক বেধেছিল।নারায়ন বলেছিলন,তোমার পুজো করে সামান্য লোকরা কৈ তেমন…

মরা ক্ষেতের গল্প

নিজের ক্ষেতের কাছে আলোর বুকে পা রেখে মনটা কেমন মুষড়ে যায় জয়নাল মণ্ডলের। নিজের চোখকে…