পেত্নি ও পরীর গল্প!

ছোট নিঝুম দ্বীপ, চারিদেক শুধু অথই পানি আর বিশাল বন জঙ্গল। গাছ আর গাছ, সেই গাছে বাস করে হরেক রকম পাখী, যারা গাছের ফল খেয়েই বাচে। সেই সব গাছের একটিতে বাস করে একটি পেত্নি পরিবার, পেত্নি, পেত্নির ভাই, এই দুইজনকে নিয়ে তাদের পরিবার, পেত্নির বাবা আর মা মারা গেছে অনেক যুগ আগেই। পেত্নি আর পেত্নির ভাই মিলে নদীর মাছ ধরে ধরে খায় আর জীবন চালায়। সেই বনে বাস করে হলুদ পরী, যেমন রুপ তেমনি তার গুন। আবার পেত্নি আর পরী প্রাণের সখী। একদিন পেত্নির খুব মন খারাপ হলো,সে মন খারাপ করে নদীর পাড়ে বসে কাঁদতে লাগলো তাই দেখে হলুদ পরী জানতে চাইলো ” এই পেত্নি তোর কি হয়েছে রে” পেত্নি উত্তরে বললো সখি আমার না এই বনের পাশে এক গ্রাম আছে সেই গ্রামে এক রাখালকে খুব ভালো লাগে কিন্তু কি করে তার কাছে যাই সে তো মানুষ আর আমি পেত্নি”। এই কথা শুনে হলুদ পরী হেসে বললো ও এই কথা, দাড়া আগে আমি দেখে আসি সে দেখতে কেমন। হলুদ পরী উড়ে গিয়ে ওই গ্রামে গেলো একটা গাছের তলে রাখালকে দেখতে পেলো, এতো সুন্দর রাখালকে দেখে পরীর নিজের ই খুব পছন্দ হয়ে গেলো। পরী তার রুপ পাল্টে সেই রাখারের সাখে গল্প করতে লাগেলা, ধীরে ধীরে তাদের সখ্যতা বাড়তে লাগলো। এ দিকে পরী পেত্নিকে বললো রাখাল অনেক খারাপ মানুষ তুই ওর দিকে আর তাকাসনে। পেত্নিও সরল মনে পরীর কথা মেনে নিলো শত হলেও পরী তো তার সখী হয়। একদিন পেত্নি উড়ে গিয়ে আবার ওই গ্রামে গেলা তখন সে দেখলো পরী আর রাখালকে, তারা গাছের নীচে বসে মগ্ন হয়ে গল্প করছিলো,পেত্নির চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরলো পরী তাকে ধোঁকা দিয়েছে। পেত্নি আর ওখানে না থেকে বনে ফিরে এলো, পরীকে আর সে কিছু বললো না, মনে মনে ভেবে নিলো সে তো ওই রাখালের যোগ্য না, পরী কতো সুন্দর রাখালের সাথে মানায় ও তাকে বেশ। এভাবে দিন কেটে যাচ্ছিল। পেত্নি মাঝে মাঝে ওই গ্রামে ঘুড়তে যায়, হঠাৎ একদিন সে দেখলো একটা মানুষ গাছের তলে বসে বাশি বাজাচ্ছে, পেত্নি সেই গাছের ডালে বসে বাশির সুর শুনতে লাগলো। তার খুব ভালো লাগলো বাশির সুর। এভাবে প্রতিদিন সে ওই গ্রামে যায় আর বাশির সুর শুনে আসে। একদিন সে ওই বংশী বাদকের সামনে যায় তবে রুপ বদলে, মানুষের রুপ ধরে, বংশি বাদকতো তাকে দেখে খুব অবাক, পেত্নি বংশী বাদককে বললো সে প্রতিদিন তার বাশির সুর শুনে যায় তার বাশির সুর খুব ভালো লাগে, সে তার বাশির সুর প্রতিদিন শুনতে আসবে যদি বংশী বাদকের কোন আপত্তি না থাকে। বংশী বাদক কোন কিছু না ভেবে বলে ঠিক আছে আমি তোমাকে প্রতিদিন বাশি শোনাবো। পেত্নিও খুশি মনে তার কথা মেনে নিয়ে বনে ফিরে আসে। এর পর থেকে পেত্নি রোজ গ্রামে গিয়ে বাশির সুর শুনে আসে আর বংশী বাদকের সাখে গল্প করে। এভাবেই কাটছিলো তাদের দিন, হঠাৎ একদিন হলুদ পরী তাদের দেখে ফেলে, বংশী বাদককে দেখে পরীর খুব পছন্দ হয়ে যায়।সে বনে ফিরে পেত্নির কাছে জানতে চায় তাদের কি সম্পর্ক, পেত্নি বলে আমার আসল রুপ কি তাতো বংশী বাদক জানেনা, তাই সে মানুষের রুপ ধরে প্রতিদির তার কাচে যায় আর গাছের তলে বসে রোজ গল্প করে,বাশির সুর শুনে আসে। তবে সে বংশী বাদকে ভালোবেসে ফেলেছে, কি করা যায় পরীর কাছে জানতে চায় পেত্নি, পরী পেত্নিকে বলে ঠিক আছে আমি তোর হয়ে বংশী বাদককের কাছে যাবো আর তাকে সব খুলে বলবো, দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে, কিন্তু যতো দিন আমি কিছু না বলি তুই ভুলেও ওই গ্রামে যাবিনা, তোকে দেখে আবার হিতে বীপরিত না হয়ে যায়। পেত্নিও সরল মনে সব পরীর কথা আবার মেনে নিল। এদিকে পরী মানুষের রুপ ধরে ওই গ্রামে গিয়ে বংশী বাদকের সাথে গল্প করে আর বাশি শুনে আসে। এভাবে সে বংশী বাদকের কাছাকাছি চলে যায়। আর এ দিকে পেত্নি অপেক্ষা করে কবে পরী আসবে আর সে বংশী বাদকের সাথে দেখা করবে। দিন গড়িয়ে মাস যায়, পরী শুধু তাকে বলে আরে সবুর করতে, এখনো বংশী বাদক রাজি হয়নি, রাজি হলে সে পেত্নিকে জানিয়ে যাবে। পেত্নিও সরল মনে অপেক্ষা করে। একদিন পেত্নির ভাই ওই গ্রামে যায় মাছ চুরি করতে, সে তখন গাছের নীচে পরী আর বংশী বাদককে দেখতে পায়, পেত্নির ভাই পেত্নির মনের কথা আর বংশী বাদকের কথা জানতো, সে পরীকে ওই বংশীবাদকের সাথে দেখে একটু অবাকই হয়, সে বনে ফিরে পেত্নিকে সব খুলে বলে, সব শুনে পেত্নি খুব কষ্ট পায় আর বুঝতে পারে কেনো পেত্নি এতেদির থেকে তাকে শুধু আশ্বাস দিয়ে আসছে আর এবারও সে তাকে ধোকা দিয়েছে। পেত্নি পরীর কাছে গিয়ে জানতে চায় কেনো সে এমন করলো, পরী খুব অহন্কারের সাথে বলে ” আরে তোর যে চেহারা তা দেখে কে তোকে পছন্দ করবে, ভালোবাসবে” তুই বংশী বাদককে ভুলে যা, সে শুধু আমার” পেত্নি তখন পরীকে বলল, তুই আমার বন্ধু হয়ে দুইবার ধোকা দিয়েছিস দেখবি একদিন তুই ও ধোকা খাবি, পরী অহন্কারের সুরে বলে গেল কেউ আমাকে ধোকা দিতে পারবে না এই সব তোকে ভাবতে হবে না। পরীর অহন্কারী কথা শুনে পেত্নি মনের দুঃখে পরীর বাসা থেকে নিজের বাসায় ফিরে এসে কাঁদতে লাগলো আর বিধাতাকে বলতে লাগলো কেনো তাকে পেত্নি বানালো পরী না বানিয়ে। মনের দুঃখে পেত্নি বাকী জীবন একাই কাটাতে লাগলো। -সংগৃহীত

গোপালের ঈশ্বর সেবা

ওজের জাদুকর!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *