পেচাগড়ের সুড়ঙ্গ

আমার প্রাচীন জিনিসের প্রতি আগ্রহ অনেক। মূলত প্রাচীনকালের বিভিন্ন স্থাপত্য বা বস্তু দেখতে ঘুরে বেড়িয়েছি সারা দেশ। এখনো বেড়াচ্ছি। যেখানেই পুরনো কিছুর খবর পাই সেখানেই ছুটে যাই। এ ই আমার স্বভাব।

এই বিচিত্র পৃথিবীর অনেক অনেক অপ্রকাশিত গল্প লুকিয়ে থাকে প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ বা প্রত্ন বস্তুর মধ্যে। এইসব বস্তুর সামনে দাড়ালে আমার মনে হয় তারা যেন এক ধরনের দূর্বোধ্য ভাষায় বলে যাচ্ছে তাদের জীবনকথা।

যাইহোক, এবার মূল গল্পে আসি। সে বছর পুরোটা শীতকাল ছিলাম নওগাঁ জেলার পত্নীতলা উপজেলা সদরে। সেখানকার অনেক প্রাচীন বস্তু দেখা এবং সে সম্পর্কে কিঞ্চিত গবেষণা কাজে ই মূলত গিয়েছিলাম। সদর থেকে ১৬ কিলোমিটার উত্তরে উপজেলা সদরের ঠিক উত্তর-পশ্চিমে দেখলাম এক বিশাল দিঘী। সে দিঘীর মধ্যে আছে গ্রানাইট পাথরের এক বিরাট স্তম্ভ। আমার কাজ ছিল এই স্তম্ভ নিয়ে। এটি কে বানিয়েছে, কবে বানিয়েছে কিছুই জানা যায় না। এক ইংরেজ, নাম বুকানন হ্যামিল্টন বিভিন্ন হিসেব টিসেব করে বলেছিলেন এর দৈর্ঘ্য ৩০ দশমিক ৭৫ ফুট। ক্যানিংহাম নামের আরেকজন বলেছিলেন এর জলের ভেতরেই আছে ৩ দশমিক ৬৩ মিটার। আর উপরে ৩ দ
শমিক শুন্য তিন। অনেক অনেক বছর ধরে এই স্তম্ভটি জলের উপরে তার উদ্ধত মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। কানিংহাম বলেন এটি সম্রাট অশোকের আমলে নির্মিত। কারন এত বড় পাথর অশোকের শাসনামলের পরে আর দেখা যায় নি।

এই স্তম্ভ নিয়ে স্থানীয়দের মত আবার অন্যরকম। তারা এই স্তম্ভটিকে বলে ভীমের পান্টি। ভীম নাকি হালচাষ করতে একবার নেমেছিলেন এখানে। তারপর যাবার সময় ঐ স্তম্ভটি তার হাত থেকে পড়ে যায়।

অদ্ভুত এই স্তম্ভ নিয়ে অনেক পরিশ্রম করে তথ্য খুঁজেছিলাম। কিন্তু পাই নি। কোথাও কোন তথ্য নেই এই স্তম্ভ নিয়ে। মনে হয় কে যেন ইচ্ছে করেই এর সম্পর্কিত তথ্য গুলো মুছে দিয়েছে। সে চায় না এ সম্পর্কে কেউ কিছু জানুক। হয়ত এর সত্যিকার ইতিহাস জানলে মানবজাতির জন্য মঙ্গল জনক কিছু হবে না। ইত্যাদি

সান্ত্বনা মূলক কথা মনে করে নিজেকে সান্ত্বনা দিয়ে আমি বাড়ি ফিরে এলাম। দীর্ঘ সময় বাইরে থাকা ও বাইরে খাওয়ার ফলে স্বাস্থ্য ভেঙে গিয়েছিল। তাই ভাবলাম কিছুদিন বেরোব না কোথাও। বিশ্রাম নেব।

কিন্তু দূর্ভাগ্য ই বলতে হবে। বিশ্রাম আর নিতে পারলাম না। আমার মানসিক বিশ্রাম চূলোয় গেল যখন শুনতে পেলাম আমার বাড়ীর কাছের মালিনী ছড়া চা বাগান থেকে দুই কিলোমিটার দূরে পেচাগড় নামক জায়গায় একটি বহু পুরাতন সুড়ঙ্গের মুখে একটা মৃতদেহ পাওয়া গেছে।
২ নং পর্ব

পত্রিকায় ছবি দিয়েছে। নাক মুখ থেঁতলে যাওয়া এক মৃতদেহের ছবি। আমি শিউরে উঠলাম। আমাদের দেশের সাংবাদিকতা নিয়ে আক্ষেপ ও হল। এমন মৃতদেহের ছবি কেউ পত্রিকায় দেয়?

সেদিন ই কিছু খোঁজখবর নিয়ে বিকেলের দিকে পেচাগড় নামক জায়গাটায় গেলাম। এক ঐতিহাসিক কিংবদন্তী জুড়ে আছে পাহাড়বেষ্টিত প্রায় ২০০ বর্গমিটার আয়তনের এই জায়গাটি ঘিরে। চারিদিকে বাঁশের ঘন জঙ্গল যেন সেই কিংবদন্তীকে আরো জীবন্ত করে তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছে এখনো। এরা যেন ইতিহাসের সেইসব ঘটনার
নীরব সাক্ষী, অতন্দ্র প্রহরী।

অনেক কাল আগে কামরুমের এক রাজা ছিলেন। তার নাম কামসিন্ধু। তার রানীর নাম ছিল উর্মি। রানী উর্মি বুদ্ধিমতী ও বিচক্ষণ ছিলেন। কামরুমের রাজার রাজত্বে দেশ বেশ ভালোভাবেই চলছিল। রানী রাজকাজে রাজাকে সহযোগিতা করতেন।

হঠাৎ একসময় রাজা কামসিন্ধু মারা যান। তার মৃত্যুর পর রানী উর্মি শক্তহাতে রাজ্যের হাল ধরেছিলেন। কিন্তু রানীর সৈন্যদলের মধ্যে বিভক্তি দেখা দিল। এরই সুযোগে প্রাগজ্যোতিষপুরের রাজা কামরুম আক্রমণ করে দখল করে নিলেন।

রানী সামান্য কিছু সংখ্যক সৈন্য নিয়ে দুর্গম অরন্যের ভিতর দিয়ে দীর্ঘপথ অতিক্রম করে জয়ন্তিয়ার “নারী” নামক রাজ্যে গিয়ে উপস্থিত হলেন। সেখানে এক অলস ও অকর্মন্য রাজার অধীনে প্রজারা অশান্তিতে ছিল। রানী এই রাজাকে হটিয়ে নারী রাজ্য দখল করে নিলেন।

তিব্বত হাটক রাজ্যের রাজকুমারের নাম ছিল কৃষক। এই কৃষক তখন জয়ন্তিয়ায় ছিলেন। জয়ন্তিয়া রাজ্য তার ভালো লেগে যায়। তিনি রানীর দরবারে গিয়ে নিজ পরিচয় দিয়ে রাজ্যে স্থায়ীভাবে থাকার অনুমতি প্রার্থনা করলেন। রানী উর্মি এতে আনন্দিত হলেন। তিনি এই সুদর্শন অভিজাত রাজপুত্রের সাথে নিজ কন্যা উর্বরার বিয়ে দেন।

উর্বরা ও কৃষকের ঘরে এক পুত্রের জন্ম হয়। তার নাম রাখা হয় “হাটক”। এই হাটক রানী উর্মির মৃত্যুর পর “নারী” রাজ্যের রাজার আসন গ্রহণ করলেন। এছাড়া তার পিতামহের মৃত্যুর পর হাটক রাজ্য ও তিনি উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেন। সুতরাং উর্বরা ও কৃষকের পুত্র হাটক তখন বড় একটি রাজ্যের মালিক হয়ে উঠলেন।

হাটক বেশ ভালোভাবে রাজ্য শাসন করেন। একসময় মারা যান। তার মৃত্যুর পর তার পুত্র গুহক রাজ আসনে বসেন। গুহকের ছিল তিন পুত্র ও দুই কন্যা।

গুহকের তিন পুত্রের নাম লড্ডুক, গুড়ক এবং জয়ন্তক। গুহকের মৃত্যুর পর এই তিন পুত্র তার রাজ্য ভাগ করে নেন। লড্ডুক যে অংশ নেন তার নাম হয় লাউড়। জয়ন্তক যে অংশ নেন তার নাম হয় জয়ন্তিয়া। আর গুড়ক যে অংশ নেন তার নাম হয় গৌড়।

এই গৌড় নিয়েই আমাদের কাহিনী। গৌড়ের একজন রাজা ছিলেন গোবিন্দ। এজন্য তাকে ডাকা হত গৌড় গোবিন্দ। গৌড় গোবিন্দের জন্ম সম্পর্কে অনেক কিংবদন্তী আছে। বলা হয়ে থাকে তিনি সমুদ্রদেবতা বরুণের পুত্র।

গৌড় গোবিন্দ এর শাসনামলে দরবেশ শাহজালাল গৌড় রাজ্য আক্রমণ করেন। এ নিয়েও অনেক কিংবদন্তী আছে। গৌড় গোবিন্দ এক সময় পালিয়ে যান।

পালিয়ে তিনি চলে আসেন এই পেচা বাশ বেষ্টিত পাহাড়ী এলাকা পেচাগড়ে। তিনি নাকী এই সুড়ঙ্গের ভিতরেই তখন বসবাস করতেন। সুড়ঙ্গটি অনেক গভীর। তবে কত গভীর তা কেউ জানে না। কারণ কেউ ভিতরে যেতে সাহস পায় না। অনেকদিন আগে একজন লোক ঢুকেছিল শোনা যায়। সে কিছু দূর যাওয়ার পর ভয়ংকর আর্তনাদের শব্দ শুনতে পায়। অপ্রকৃতিস্থ অবস্থায় সে বেরিয়ে আসে এবং কিছুদিনের মধ্যেই মারা যায়।

এ স্থানে সুড়ঙ্গ পথ আছে তিনটে । ঘন পেচা বাশের জঙ্গলে পূর্ণ। এখানকার লালেং জনগোষ্ঠী দুটি সুড়ঙ্গমুখের মাঝখানে তাদের পুজার থান নির্মান করেছে। এখানে তারা মোমবাতি জ্বালিয়ে পুজা করে।

তৃতীয় সুড়ঙ্গটি একটু গভীরে। সেই সুড়ঙ্গের মুখেই মৃতদেহ টি পড়েছিল। আমি যখন পৌঁছলাম তখনো দেখলাম মৃতদেহ টি পড়ে আছে। পাশের থানার ওসি বেশ বিরক্ত মুখে বসে আছেন ।

মৃতদেহের কাছে ভীড় করেছে লালেং জনগোষ্ঠীর মানুষেরা। আমি ওসি সাহেব কে জিজ্ঞেস করলাম, খুনটা কীভাবে হয়েছে কিছু বুঝতে পেরেছেন?

ওসি সাহেব বিরক্ত মুখে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কে? এখানে এসেছেন কেন?

আমি বললাম, আমি একজন প্রত্নতাত্বিক। এই প্রাচীন এলাকায় আশ্চর্য এই খুনের খবর পড়ে দেখতে আসলাম।

ওসি সাহেব অস্ফুট স্বরে ছাপার অযোগ্য একটি শব্দ উচ্চারণ করলেন। আমি বেশ হকচকিয়ে গেলাম। এরকম ব্যবহার অপ্রত্যাশিত ছিল।

আমি বেশ শক্তভাবে জিজ্ঞেস করলাম, কিছু বললেন?

ওসি তখন আমার দিকে তাকিয়ে বলল, আপনাকে না। এই লোকটাকে।

তিনি আঙ্গুলের সাহায্যে মৃতদেহ টাকে দেখালেন।

আমি জিজ্ঞেস করলাম, কেন?

ওসি বললেন, এই লোকটাও আপনার মত প্রত্নতাত্বিক ছিল। ঘুরে ঘুরে প্রাচীন বস্তু দেখত। এখানে এসে এই সুড়ঙ্গে ঢুকতে চেয়েছিল। তাইতো দেখেন কেমন মরে পড়ে আছে। এই অঞ্চলে রাস্তাঘাট ভালো না। তার ওপর গাড়ী নষ্ট
হয়ে গেছে। লাশ নিতে নিতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে। বুঝুন কি বিরক্তিকর অবস্থা।

আমি ওসির মনের অবস্থা বুঝলাম। লোকটা খুব বিরক্ত অবস্থায় আছে। তার কাছে কেন খুন হল, কে খুন করল এসব প্রশ্নের চেয়ে এখন একটা প্রশ্নই ঘুরছে, “তুই খুন হলি কেন বেটা, এখানে এসে?”

আমি লোকটার সাথে আর কোন কথা না বলে এলাকার লোকজন কে জিজ্ঞেস করলাম,
তারা কি মনে করছে। তারা সবাই বলল, এই সুড়ঙ্গ রাজা গোবিন্দের সুড়ঙ্গ। তিনি বরুনের পুত্র। দেবতা স্বরুপ। তাই এখনো এর ভিতরে আছেন।

লালেং জনগোষ্ঠীর লোকেরা মনে করে তারা রাজা গোবিন্দের বংশধর। রাজার সান্নিধ্যেই তারা আছে তাই। এই সুড়ঙ্গে ঢোকার চেষ্টা করলে মৃত্যু অবধারিত এবং তাই হওয়া উচিত এমন ও মনে করে তারা।

সুতরাং, আমি খুনের কারণ বা কে খুন করতে পারে সে সম্পর্কে কোন তথ্যই পেলাম না। বেশ অস্বস্তি তে পড়ে গেলাম। শহরের এত কাছে এবং আমার বাসস্থানের এত কাছের একটা জায়গা প্রাচীন এক ভয় ও সময় কে যেন আঁকড়ে ধরে বসে আছে।

আমার মন কোনভাবেই সায় দিচ্ছিল না রাজা গৌড় গোবিন্দ সুড়ঙ্গের ভিতর বসে আছেন। এত শত শত বছর কেউ বেঁচে থাকতে পারে না কি?

কিন্তু তাহলে খুনটা করল কে? কেনই বা করল? আর এই সুড়ঙ্গ কে নিয়ে এই যে একটি ভয় এর কারণ ই বা কী?

৩ নং পর্ব

সুড়ঙ্গের ভিতরে কি হতে পারে? আমার মিথ এবং রুপকথায় বর্নিত “হলো আর্থ হাইপোথিসিস’’ এর কথা মনে হল। এই হলো বা ফাঁপা পৃথিবীর গল্পগুলোতে দেখা যায় মাটির নিচে বসবাস করছে অনেকে। অবশ্য ১৮ শতকেই এই তথ্য বাতিল করে দেয়া হয়।

এমন কি হতে পারে এই সুড়ঙ্গের ভিতরে সত্যি সত্যি এক পৃথিবী আছে? ফাঁপা পৃথিবীর গল্পের মত। ওখানে বরুনপুত্র গৌড় গোবিন্দ এখনো তার সাথে পালিয়ে যাওয়া লোকগুলো নিয়ে রাজত্ব করছেন?

এই চিন্তা মাথায় আসার পর নিজের ই হাসি পেল। আমি এলাকার লোকদের জিজ্ঞেস করলাম, যে লোকটি এখানে ঢুকেছিল তাকে কি তোমরা চিনতে? না তার কথা তোমরা শুনেছ?

প্রফুল্ল পাত্র নামের একটি বৃদ্ধ লোক জোরের সাথে বলল, আমি নিজ চোখে দেখেছি। তার নাম ছিল দারোগানাথ। সে তেলিহাট চা বাগানে কাজ করত।

আমি ঘটনার সত্যতা জানতে চা বাগানে চলে গেলাম। সেখানে শ্রমিকদের পুরনো লিস্ট থেকে দারোগানাথের নাম পেলাম। তার নামের পাশে লেখা আছে অস্বাভাবিক মৃত্যু। যে লোকটি লিস্ট রাখার দায়িত্বে ছিল তাকে জিজ্ঞেস করলে সে জানাল সে কিছু বলতে পারবে না। কারণ দু বছর হল এই বাগানে নতুন এসেছে। সুতরাং আমাকে দারোগানাথের বাড়ি যেতে হল।

দারোগানাথের গ্রাম এই সুড়ঙ্গ এলাকা থেকে তিন কিলোমিটার দূরে। সেখানে ভাড়ারহাট ও সিদেরগুইল নামে দুটি গ্রাম পাশাপাশি আছে। গ্রামদুটিতে লালেং দের বাস। ভাড়ারহাট গ্রামেই থাকত দারোগানাথ।

আমি গ্রামে গিয়ে খোঁজ নিয়েই বুঝতে পারলাম দারোগানাথের কিংবদন্তী এখানে সবাই জানে। একেকজন উৎসাহী হয়ে গল্প বলতে শুরু করল। বলাবাহুল্য, প্রতিটি গল্পেই নতুন ডালপালার বিস্তার হচ্ছিল। তাই ঠিক করলাম দারোগানাথের বাড়ি যাব। তার আত্মীয় স্বজন কারো মুখে শুনলেই কেবল বিষয়টা নিয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে।

দারোগানাথের বাড়ি পেতে সময় লাগল না। বাড়িটি বেশ শক্ত পোক্ত। এ অঞ্চলের অন্য বাড়ি গুলোর মত শীর্ণ নয়। আমি দারোগানাথের ভাইকে পেলাম। তিনি প্রায় বৃদ্ধ লোক।

তাকে জিজ্ঞেস করলাম এই ঘটনার সত্যতা। তিনি গম্ভীর মুখে জানালেন সব সত্য। শরতের এক দুপুরে তার ভাই দারোগানাথ এই সুড়ঙ্গের ভেতরে প্রবেশ করে। কিছুদূর যাওয়ার পর সে দেখতে পায় একটা লৌহদ্বার। সে লৌহদ্বারের বামদিকের বাড়ানো অংশে মোঁচড় দেয়ার পর দরজাটি খুলে যায়। তারপরই সে দেখতে পায় ভয়ংকর কিছু। তারা তাকে নির্দেশ দেয় বাইরে গিয়ে যেন কিছু প্রকাশ না করে। কিন্তু দারোগানাথ বের হয়ে তীব্র অস্বস্তি ও ভয়ের মধ্যে পড়ে যায়। এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে লোকজনকে বলা শুরু করে। কিন্তু ঐ দরজা পর্যন্ত বলেই সে অপ্রকৃতিস্থ হয় এবং খুব অদ্ভুতভাবে মারা যায়।

দারোগানাথের আপন ভাইয়ের কাছে এসব কথা শুনে আমার বিভ্রান্তি আরো বাড়ল। আমি ভেবেছিলাম হয়ত ঠিকমত খোঁজ নিয়ে দেখা যাবে সব লোককথা। কিন্তু এত শক্ত মৌখিক প্রমাণে আমার বিজ্ঞান মনস্ক মনে আঘাত লাগল।

সেইদিন রাতে বসে বসে আমি ব্যাপারটা নিয়ে ভাবছিলাম। এই দারোগানাথের ঘটনার একটা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা করতে হবে। তা না হলে যেন শান্তি পাচ্ছিলাম না। আমি যুক্তি দিলাম

১। সুড়ঙ্গের ভেতরে হয়ত কোন কিম্ভুতকিমাকার প্রাণী আছে। এটা হতে পারে। কারণ এই এলাকা মোটামোটি বিচ্ছিন্ন। সুতরাং, কোন বিচিত্র প্রাণী থাকতে পারে।

২। সুড়ঙ্গটি যেহেতু প্রাচীন তাই এতে অক্সিজেনের অভাব থাকবে। কার্বন ডাই অক্সাইড নামের ভারী গ্যাসটি হয়ত সুড়ঙ্গটি জুড়ে বসে আছে। দারোগানাথ যখন ঢুকেছিল তখন অক্সিজেনের অভাবে তার মস্তিষ্কে হ্যালুশিনেশান
হয়েছিল। এবংএই কারণেই সে মারাত্বক ভয় পায়। সেই ভয়ের কারণেই তার মৃত্যু হয়।

যুক্তি দিয়ে মনকে সাময়িক সান্ত্বনা দিলেও আমার মন মানছিল না। তাই ঠিক করলাম নিজেই যাবো সুড়ঙ্গের ভিতরে। প্রত্নবস্তু আর প্রাচীন স্থাপত্যের পিছনে ছুটতে অনেক ভয়ংকর ভয়ংকর অবস্থার মধ্যে দিয়ে গিয়েছি। আমার রক্তের মধ্যেই মিশে আছে এই নেশা।

তাই আমাকে যেতেই হবে। এই টান ই আমাকে নিয়ে যাবে। ইতিহাসের প্রতি টান। প্রাচীন সভ্যতা ও মানুষের হারিয়ে যাওয়া গল্পের প্রতি টান। নেশাগ্রস্ত মানুষের কাছে কোন যুক্তি কাজ করে না। তাই এই সুড়ঙ্গে গেলে যে সমূহ বিপদের সম্ভাবনা, এ যে দৌড়ে গিয়ে সাপের লেজে পা দিয়ে বিপদ ডেকে আনার মত বিষয় – আমার তা মনে হল না। আমার ভিতরে তখন কাজ করছে সুড়ঙ্গের অভ্যন্তর দেখার ইচ্ছা।

৪ নং পর্ব

পরদিন সকালে নাস্তা করেই গেলাম বন্ধু হাসানের কাছে। সে সিলেট সদর থানার ওসির দায়িত্বে আছে। আমি তাকে যথাসম্ভব সব ঘটনা খুলে বললাম। সে মুচকি হেসে সায় দিয়ে গেল। আমার বন্ধুরা প্রায় সবাই আমার এই নেশাটার কথা জানে। অন্য লোকেরাও জানতে শুরু করেছে। দেশের একটা জনপ্রিয় পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে নিজের কাহিনীগুলো লিখে যাচ্ছি এটা একটা কারণ। এছাড়াও আমার কয়েকটি অভিযানে সরকারের বেশ লাভ হয়েছে। পুন্ড্রনগরের বিখ্যাত মঞ্জুশ্রী মূর্তিটা আমি ই উদ্ধার করেছিলাম। অবশ্য সে অভিযানে হাতে চোট লেগে তিনমাস বিছানায় থাকতে হয়েছিল। কিন্তু বিশ্বাস করুন, যখন ব্রোঞ্জের উপর সোনার আস্তরণ দেয়া মূর্তিটাকে দেখছিলাম তখন আমার সব কষ্ট যেন গলে গলে পড়ছিল। মনে হচ্ছিল এমন সুন্দর শিল্পকর্মের জন্য কয়েকটা জীবন এমনিতেই দিয়ে দেয়া যায়।

হাসান কে আমার পরিকল্পনার কথা বললাম। আমি সুড়ঙ্গের ভেতর যাবো। এজন্য চার জন পুলিশকে সঙ্গে দিতে হবে। আমি জানি এরা ভিতরে যেতে ভয় পাবে। তাই এরা দাঁড়িয়ে থাকবে সুড়ঙ্গের মুখে। কারণ আমার কেন জানি মনে হচ্ছে লালেং জনগোষ্ঠীর লোকেরাই খুন টা করেছে। এরা গুহাটাকে পবিত্র মনে করে। তাই এতে কেউ প্রবেশ করুক স্বভাবতই তারা কখনোই চাইবে না।

হাসান আমার প্রস্তাবে রাজী হল। সে বলল, আমি পুলিশ দেব চারজন। গাড়ি একটা দেব। এছাড়া এখানে রেডি থাকব। দরকার হলে ফোন করবি। একটা রাত না হয় নাই ঘুমালাম।

এই দিক টা ঠিক হবার পর আমি নিজের যন্ত্রপাতি ঠিক করতে বসলাম। আমার ন্যাগান্ট এম ১৮৯৫ রিভলভার টা সাথে নিতে হবে। কারণ এতে সাইলেন্সার আছে। এছাড়া নিতে হবে হালকা একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার ও শক্তিশালী টর্চ লাইট। এছাড়া সাপের মত হিংস্র প্রাণীদের থেকে বাঁচতে পা থেকে মাথা পর্যন্ত আচ্ছাদিত এক বিশেষ ধরনের পোষাক। এই পোষাক বিষাক্ত পোকাদের হাত থেকেও বাঁচাবে।

আর সুড়ঙ্গে যেতে হবে আগামীকাল। আগামীকাল অমাবস্যা । ঘুটঘুটে অন্ধকারেই করতে হবে কাজটা।

৫ নং পর্ব

পরদিন রাত বারোটার নাগাদ পুলিশের একটি জিপে করে চারজন সঙ্গী সমেত রওনা দিলাম। এখানে বলে রাখা প্রয়োজন আমি ঢুকব যে সুড়ঙ্গের সামনে মৃতদেহ পড়েছিল ঐ সুড়ঙ্গের ভেতর। তাই এর মুখেই অপেক্ষায় থাকবে পুলিশের লোক চারজন। তাদের হাতে মোবাইল আছে। বিপদে পড়লে আমি ভেতর থেকে কল দিতে পারবো। অবশ্য ভিতরে নেটওয়ার্ক পাবো কি না এ নিয়ে সন্দেহ হচ্ছিল।

রাত দুটো নাগাদ আমি সুড়ঙ্গের ভেতরে ঢুকলাম। বাইরে পেচা বাশের ঘন জঙ্গলে নিকষ কালো অন্ধকার। সুড়ঙ্গের মুখে ঘাপটি মেরে বসে আছে পুলিশের লোক চারজন।

সুড়ঙ্গটি সোজা চলে গেছে। আমি অক্সিজেন মাস্ক লাগিয়ে টর্চ লাইট টা নিভিয়ে ধীরে ধীরে হাটতে লাগলাম। পথ বেশ মসৃণ। তবে বুঝতে পারছিলাম ছোট ছোট পাথরের খন্ড ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।

প্রায় মিনিট দশেক যাওয়ার পর সুড়ঙ্গটি ডানে বাক নিল। এদিকের রাস্তায় পাথরের খন্ডের সংখ্যা বেশ কম। আমি কিছুদূর যাওয়ার পর দেখলাম একটি দেয়াল দ্বারা সুড়ঙ্গটি বন্ধ। কিন্তু এটাকে আমার সুড়ঙ্গের শেষ মাথা বলে মনে হল না। তিনটা সুড়ঙ্গের অবশ্যই একটা সংযোগ থাকবে। আমি তখন টর্চ লাইট জ্বেলে দেয়ালটাকে দেখতে লাগলাম। এটি দেয়াল না। লোহার দরজা। ঠিক যেমন দারোগানাথের বর্ননা ছিল।

বুঝা গেল দারোগানাথ সত্যি সত্যি এ পর্যন্ত এসেছিল। তাহলে কি সত্যি সত্যি সে ভিতরে অদ্ভুত কিছু দেখেছিল? আমি বেশ উত্তেজনা অনুভব করলাম। হাতের টর্চ লাইট টার আলো দরজার সব জায়গায় ফেলে বাড়ানো অংশটা খুঁজতে লাগলাম যেটা মোঁচড় দিলেই এই দরজাটি খুলে যাবে।

দরজার ডানদিকের কোণায় বাড়ানো অংশটা পাওয়া গেল। আমি টর্চ লাইট টা পকেটে রেখে এই বাড়ানো অংশটা ধরে মোঁচড় দিলাম। বাড়ানো অংশটা ঘুরে গেল। ক্যাচ ক্যাচ করে এক ধরনের শব্দ হয়ে দরজাটি খুলে গেল।

আমি কোন কিছু না ভেবেই এর ভিতরে প্রবেশ করলাম। ভিতরে প্রবেশ করে কয়েক পা যাবার পর দরজাটি নিঃশব্দে বন্ধ হয়ে গেল। আমার হার্টবিট বেড়ে যাচ্ছিল। একবার ভয়ে ভয়ে টর্চ লাইট টা জাললাম। কিন্তু যা দেখলাম তাতে আমার চক্ষুস্থির।

সুড়ঙ্গের এই অংশটা বড় গুহার মত। এর দেয়ালগুলোতে টেরাকোটা দিয়ে আঁকা অসংখ্য চিত্র। আমি দেয়ালের খুব কাছে গিয়ে চিত্রগুলো নিরীক্ষণ করতে করতে দেখতে পেলাম চিত্রগুলোর গায়ে শেওলা বা এ জাতীয় কিছু সৃষ্টি হয় নি। এই জিনিসটা বিস্ময়কর। কারণ পুরনো গুহার দেয়ালে শেওলা, মাকড়শা

র জাল ইত্যাদি থাকবে। কিন্তু এই দেয়াল গুলো ঝকঝক করছে। মনে হচ্ছে কেউ যেন নিয়মিত পরিস্কার করে রাখছে।

তাহলে কি এখানে কেউ আছে? সাবধানতার জন্য আমি টর্চ লাইট নিভিয়ে ফেললাম। আরো কিছুদূর প্রবেশ করলাম ভেতরে। আশ্চর্যের ব্যাপার টর্চ লাইটের আলো ছাড়াও আবছা আবছা ভাবে যেন সবকিছু দেখা যাচ্ছে। আমি গুহার ছাদের দিকে ভালো করে লক্ষ্য করে দেখতে পেলাম স্থানে স্থানে এক ধরনের আলো বিচ্ছুরণ কারী পাথর রাখা আছে। এদের মধ্য থেকে বিচ্ছুরিত হচ্ছে নীল রঙের আলো। কিন্তু এদের উপর আলো টা পড়ছে কোনদিক দিয়ে তা বুঝা যাচ্ছে না।

আমি তন্ময় হয়ে দেখছি আলো বিচ্ছুরণকারী অদ্ভুত নীল পাথর তখন শুনতে পেলাম কার যেন পায়ের শব্দ। এদিকেই আসছে। ঠিক যেন আমার দিকে। আমি কয়েক সেকেন্ডের জন্য ভেবে পেলাম না কি করব। হঠাৎ দেখতে পেলাম আমার বা দিকে পড়ে আছে এক বিরাট পাথব। এর পাশে দ্রুত লুকিয়ে পড়লাম।

চারিদিকে তাকাতে তাকাতে একটা লোক আমার পাশ দিয়ে চলে গেল। হাতে বর্শা, খালি গা। মুখে কালো রঙের এক ধরনের মুখোশ। অথবা রঙ ও হতে পারে।

সুড়ঙ্গটি আবার বা দিকে বাঁক নিয়েছে। বর্শা হাতের লোকটি ঐদিকে প্রবেশ করল। আমি কি করে দেখার ইচ্ছায় প্রায় নিঃশব্দে সুড়ঙ্গটি যেখানে বাঁক নিয়েছে সেখানে গিয়ে বাম দিকে তাকালাম।

তাকিয়ে দেখলাম সেখানে বিরাট ঘরের মত জায়গা। আলোতে ঝলমল করছে। গ্রানাইট পাথরে তৈরী একটা মূর্তি বেদীর উপর। তার পাশে একটি লোক চোখ বন্ধ করে বসে আছে। যে লোকটি বর্শা হাতে নিয়ে গিয়েছিল সে বর্শা রেখে মূর্তি বা ঐ বসে থাকা লোকটিকে প্রণাম করছে।

আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল। আমি শুনলাম বসে থাকা লোকটা চোখ বন্ধ রেখেই জিজ্ঞেস করল, কি হয়েছে?

প্রণাম করতে থাকা লোকটি মাথা তুলে বলল, মহারাজ, আরেকজন প্রবেশ করেছে।

বসে থাকা লোকটি খসখসে গলায় জিজ্ঞেস করল, এর আগে যে প্রবেশ করেছিল তাকে কি হত্যা করা হয় নি?

– জি মহারাজ। ওকে মেরে ফেলা হয়েছিল গুহার সামনে।

খসখসে গলায় বসে থাকা লোকটি নির্দেশ ছিল, একেও মেরে ফেল। যারা দুই দুনিয়ার মধ্যে সংযোগ করতে চায় মরে যাওয়াই এদের নিয়তি।

আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিল। ভাবলাম মনে হয় আর বাঁচব না। কারণ দরজাটাও বন্ধ। শুধু একটা মাত্র পথ আছে বাঁচার। তা হল অন্য সুড়ঙ্গমুখ দুটির যেকোন একটি দিয়ে বেরিয়ে পড়া। কিন্তু বেরোতে হলে এগুলো খুঁজে বের করতে হবে প্রথমে।

প্রণাম করতে থাকা লোকটি জিজ্ঞেস করল, মহারাজ এখনি কি মারব না কী সবাই গুহায় ফিরে আসার পর।

খসখসে কন্ঠে বসে থাকা লোকটি জবাব দিল, এখনি মেরে ফেল। সবাই আসলে বাইরে ফেলে আসবে।

এই কথা শোনার পর যেন একটু সান্ত্বনা পেলাম। যাক অন্যরা এখন গুহায় নেই। এরা ফিরে আসার আগেই পালাতে হবে। আমি রিভলভার টা হাতে নিয়ে সুড়ঙ্গের এক পাশে বসে রইলাম।

বর্শা হাতের লোকটা আমার পাশ দিয়েই চলে গেল। আমি নির্দিষ্ট দূরত্ব রেখে তাকে অনুসরন করতে লাগলাম। সে দেয়ালের এক জায়গায় চাপ দিতে একটা অংশ শব্দ করে খুলে গেল। লোকটা এর মধ্যে প্রবেশ করে চারদিকে খুঁজতে লাগল। আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছিলাম আমাকে খুঁজছে। দেখা মাত্রই তার হাতের ঐ ধারালো বর্শা বিদ্ধ হবে আমার বুকে। মাথায় ও হতে পারে। কিছুরই ঠিক নেই।

আমি রিভলভার টা হাতে নিয়ে লোকটাকে লক্ষ করে ঘোড়া টেনে দিলাম।

মুহুর্তের মধ্যেই সে পড়ে গেল। আমি দৌড়ে তার পাশে গিয়ে দেখতে পেলাম কিম্ভুতকিমাকার মুখ ও অথবা মুখোশ। বেশি দেখার সময় ছিল না। কারণ পালাতে হবে। এই দিকে সুড়ঙ্গ বেশ সরু হলেও মসৃণ পথ। আমি সামান্য কিছুদূর যাওয়ার পর শুনতে পেলাম অনেক পায়ের শব্দ। তালে তালে যেন এগিয়ে আসছে।

এবার আর বাঁচা যাবে না। সবাই ফিরে আসছে। আমি শেষ চেষ্টা হিসেবে একটা বড় পাথরের পাশে বসে রইলাম। যারা আসছে তারা যদি এদিকে ভালো করে লক্ষ্য না করে তাহলে বেঁচে যাবো।

আর যদি দেখেই ফেলে তাহলে কয়েকটাকে মেরে মরব বলে রিভলভার টা হাতে ধরে রইলাম।

পায়ের শব্দগুলো এগিয়ে আসছে আর আমার বুকের ভেতর যেন হাতুড়ি পেটা চলছে। নিজের নিঃশ্বাসের শব্দ শুনেও আৎকে উঠছিলাম। এক হাতে নাক চেপে রইলাম যাতে নিঃশ্বাসের ও শব্দ না হয়।

পায়ের শব্দগুলো এক সময় আমাকে অতিক্রম করে গেল। তারা আমাকে অতিক্রম করে দৃষ্টিসীমার বাইরে যাবার পর যেদিক দিয়ে এরা এসেছিল সেদিকে আমি দৌড় দিলাম। আমি নিশ্চিত এদিকে রয়েছে একটি সুড়ঙ্গমুখ। আমার ধারনা ভুল ছিল না।

মিনিট পাঁচেকের মধ্যে আমি যেন কীসের উপর ছিটকে পড়লাম। একটু ধাতস্ত হয়ে টর্চ লাইট জ্বেলে দেখলাম চারদিকে পেচাবাশের সারি। যে জায়গায় পড়েছি সেদিকে আলো ফেলে বুঝতে পারলা ছিটকে এসে পড়েছি লালেং দের পুজা করার বেদী থানের উপরে।

অক্সিজেন মাস্ক খুলে প্রায় দৌড় দিয়ে যে সুড়ঙ্গ মুখ দিয়ে ঢুকেছিলাম ওখানে গেলাম। পুলিশের লোক চারজন বসে আছে ঠায়। আমাকে বাইরে দেখে তারা বেশ অবাক হল।

আমি বললাম, অন্য সুড়ঙ্গ দিয়ে বের হয়ে এসেছি। ভিতরে মানুষ আছে। হয়ত চোরাকারবারি হবে।

আমার তখন মনে হচ্ছিল যাদের দেখেছি এরা কোন চোরাকারবারীর দল। আমি হাসানকে ফোন

করলাম । সে ঘন্টাখানেকের মধ্যে দুই জিপ ভর্তি পুলিশ নিয়ে চলে এল। টর্চ লাইট, বন্দুক ইত্যাদি নিয়ে পুলিশ তিন দলে ভাগ হয়ে তিনটা সুড়ঙ্গ মুখ দিয়েই ভেতরে প্রবেশ করল।

প্রায় ভোর পর্যন্ত তন্ন তন্ন করে খোঁজা হল। তিনটি দল ই বের হয়ে বলল, তারা বিভিন্ন লতানো উদ্ভিদ ছাড়া ভেতরে আর কিছু দেখে নি।

আমি জোর দিয়ে বুঝাতে লাগলাম আমি কি কি দেখেছি। কিন্তু কেউ আমার কথা বিশ্বাস করল। এমনকী হাসান ও না। সে বলল, তোর বোধহয় হ্যালুশিনেশান হয়েছিল।

কিন্তু আমি নিশ্চিত জানি এ হ্যালুশিনেশান নয়। কিন্তু পুলিশের লোকেরা গিয়ে ভেতরে কিছু পেল না কেন? ভেতরে কাদের আমি দেখেছি? সত্যি ই কি রাজা গোবিন্দ তার দল বল নিয়ে ভেতরে আছেন? আমার মনে পড়ল ভেতরের সব লোকগুলো খালি গায়ে বর্শা হাতে ছিল। চোরাকারবারী বা অন্য কোন ধরনের সন্ত্রাসী দল হলে অত্যাধুনিক অস্ত্র হাতে থাকত।

কিন্তু এদের অন্যেরা দেখতে পেল না কেন?

এই প্রশ্নের উত্তর আমি এখনো পাই নি। আমি যা যা দেখেছি তা কেউ বিশ্বাস করবে না তাও আমি জানি। কারণ তিন দল পুলিশ প্রবেশ করে এর কোন সত্যতা পায় নি। তবে বিশ্বাস করা বা অবিশ্বাস করা আপনার ব্যাপার। আমি কিন্তু নিশ্চিত দেখেছি, পেচাগড়ের সেই প্রাচীন সুড়ঙ্গের ভেতর প্রাচীন পৃথিবীর লোকদের।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!