পুরস্কার পাঁচ হাজার ডলার— দ্বিতীয় অংশ

“প্রব্লেমটা হল, প্রায় মাসখানেক ধরে এই অঞ্চলে মাগিংটা খুব বেড়ে গেছে।” উত্তরটা দিলেন জ্যাক সাইপ্রাস।”
এ দেশের ‘মাগিং’ হচ্ছে আমাদের দেশেরন ‘ছিনতাই’। আচমকা আক্রমণ করে বা ভয় দেখিয়ে পয়সা ও দামি জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেওয়া। যাই হোক, জ্যাক সাইপ্রাসের কথাটার তাত্‍‌পর্য রাজ সিং ঠিক ধরতে পারলেন না। বললেন, “নিউ ইয়র্কের সব জায়গাতেই তো মাগিং বেড়েছে।”
“দ্যাটস ট্রু। কিন্তু এখানে সমস্যাটা একটু অন্য। মাগিং-এর যেসব রিপোর্ট লোকাল পুলিশ পাচ্ছে – তার অনেকগুলোই আসছে আমাদের কাস্টমারদের কাছে থেকে। ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলে বেরোবার একটু পরেই তারা রাস্তায় মাগড হচ্ছে।”
এটা শুনেও রাজ সিং বিস্মিত হন নি, কারণ মাগাররা ব্যাঙ্কের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকলেই দেখতে পাবে কারা ব্যাঙ্ক থেকে বেরোচ্ছে। যারা বেরোচ্ছে, তাদের সবার কাছে টাকা থাকার সম্ভাবনা, নইলে তারা ব্যাঙ্কে আসবে কেন! কিন্তু জ্যাকের পরের কথাটা শুনে উনি বুঝতে পারলেন সমস্যাটা কোথায়।
আমরা যখন তদন্ত শুরু করলাম, জ্যাক সাইপ্রাস বললেন, “তখন দেখলাম শুধু তারাই মাগড হচ্ছে যারা সেদিন অনেক টাকা ব্যাঙ্ক থেকে তুলেছে। শুধু তাই নয়, প্রত্যেকটি ভিক্টিমই টাকা তুলেছে মিস সিলভিয়া জোনস বলে একজন টেলারের কাছ থেকে। কিন্তু প্রব্লেম হল, আমাদের কোনও ধরণাই নেই কেন এটা ঘটছে! আই পার্সোনালি অবজার্ভড হার বেশ কয়েক দিন ধরে, কিন্তু অস্বাভাবিক কিছুই লক্ষ করিনি।”
মিস্টার জনসন বললেন, “বাট উই আর শিওর যে সামহাউ সিলভিয়া গুণ্ডাগুলোকে জানাচ্ছে কে মোটা রকমের ক্যাশ উইথড্র করছে। দ্যাটস দ্য ওনলি এক্সপ্ল্যানেশন। এখন আপনাকে মিস্টার সিং খুঁজে বের করতে হবে যে কী করে সিলভিয়া গুণ্ডাদের ইনফরমেশনগুলো দিচ্ছে। হাউ ইজ শি কম্যুনিকেটিং উইথ দেম? বাট ইউ মাস্ট হারি। কারন একবার যদি খবরের কাগজের লোকেরা জানতে পারে যে আমাদের কাস্টমাররা মাগারদের টার্গেট, তা হলে আমাদের বিজনেসের কি অবস্থা হবে – সেটা তো বুঝতেই পারছেন।”
“তা পারছি,” রাজ সিং উত্তর দিলেন, “কিন্তু কাজটা নেওয়ার আগে আমার একটা প্রশ্ন আছে।”
“কি প্রশ্ন?”
“নিউ ইয়র্কে এত প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর থাকা সত্ত্বেও আমাকে আপনি সিলেক্ট করলেন কেন?”
“ভেরি সিম্পল। যেহেতু আপনি একজন ইণ্ডিয়ান, সিলভিয়া বা ওর গুণ্ডা বন্ধুরা কল্পনাও করবে না যে আপনি ডিটেকটিভ। বিকজ ইট ইজ র্যানদার অ্যান আনইউুয়াল প্রোফেশন ফর অ্যান ইণ্ডিয়ান। দ্যাট, আই বিলিভ, উইল মেক ইয়োর জব সিম্পলার। তাই না?”
“মে বি,” রাজ সিং বললেন, “তবে আমার চার্জ কিন্তু দিনে পাঁচশো ডলার, প্লাস এক্সপেন্স। আর কাজটা করতে পুরো দু-সপ্তাহ লেগে যেতে পারে।”
রাজ সিং নর্মালি এত চার্জ করেন না। কিন্তু শাঁসালো মক্কেল, ট্রাই করতে দোষ কি!
“দ্যাটস ফাইন উইথ আস।” ক্লিফোর্ড জনসন উত্তর দিলেন।
এই হল মোটামুটি ঘটনা।

রাজ সিং একেনবাবুকে বললেন, “এবার বুঝতে পারছেন তো আমার সমস্যাটা?”
“হ্যাঁ স্যার, মনে হচ্ছে বুঝেছি। অর্থাৎ গত পাঁচদিনে ইউ হ্যাভ ফাউণ্ড নো ক্লু।”
“এগজ্যাক্টলি। আমি সিলভিয়াকে খুব ক্লোজলি ওয়াচ করেছি। ইন ফ্যাক্ট, যদি কখনও অন্যমনস্ক হয়ে কোনও কিছু মিস করে থাকি সেইজন্য জ্যাক সাইপ্রাসের কাছ থেকে ব্যাঙ্কের সিকিউরিটি ক্যামেরায় তোলা ভিডিওগুলোও স্টাডি করেছি।”
“সেটা কি স্যার?” একেনবাবু জিজ্ঞেস করলেন।
“কিসের কথা বলছেন, সিকিউরিটি ভিডিও?”
“হ্যাঁ স্যার।”
“আপনি জানেন না বুঝি!” রাজ সিং একটু অবাক হলেন। নিউ ইয়র্কে সব ব্যাঙ্কে ভিডিও ক্যামেরা লাগানো থাকে। যারা টেলারদের কাছে গিয়ে টাকা নিচ্ছে, তাদের সবার ছবি ক্যামেরাতে ওঠে। এইজন্যেই ব্যাঙ্ক ডাকাতি আজকাল অনেক কমে গেছে।”
(এখানে বলে রাখি, যে সময়ের কথা লিখছি সেটা ২০০০ সাল – আমাদের দেশে তখনও ভিডিও ক্যামরা তেমন চালু হয় নি।)
“অ্যামেজিং কানট্রি স্যার, ট্রুলি অ্যামেজিং!” একেনবাবু মাথা নাড়তে নাড়তে বললেন।
“এনি ওয়ে,” রাজ সিং পুরনো প্রসঙ্গে ফিরে এলেন। “নাউ আই ডোণ্ট নো হোয়াট টু ডু নেকস্ট।
প্রমথ বলল, “এটাই বুঝি আপনার সেই সিকিউরিটি ভিডিও?”
“রাইট। দেখবেন?” রাজ সিং একেনবাবুকে জিজ্ঞেস করলেন।
“কি জানি স্যার,” একেনবাবু মাথা চুলকোতে চুলকোতে বললেন, “ভিডিও দেখে কি আর মিস্ট্রি সলভ করতে পারব!”
“তা বলে দেখতে ক্ষতি কী,” বলে প্রমথ টেবিল থেকে টেপটা তুলে ভিডিও প্লেয়ারে ঢোকাল।
ছবির কোয়ালিটি বিশেষ ভালো নয়। তবে মোটামুটি চেহারাগুলো বোঝা যাচ্ছে। রাজ সিং এক্সপ্লেন করে বললেন, “অরিজিনালি অন্য ফোর্ম্যাটে তোলা। ভি এইচেস-এ কনভার্ট করতে গিয়ে ডেফিনেশনটা একটু লুজ করেছে।
একেনবাবু আবার এসব টেকনিকাল টার্মগুলো বোঝেন না। বললেন, “হোক না ডিফরমেশন, তবু দিব্যি দেখা যাচ্ছে। কিন্তু সিচুয়েশনটা আমায় একটু বুঝিয়ে দিন স্যার।”
“শিওরলি,” রাজ সিং বললেন। “টেলারদের দেখতে পাচ্ছেন তো, ঐ যে চারজন, যারা কাউণ্টারের উলটো দিকে পাশাপাশি বসে আছে?”
“হ্যাঁ স্যার, দেখতে পাচ্ছি।”
“বাঁ দিক থেকে কাউণ্ট করে থার্ড পার্সন হল সিলভিয়া জোনস।“
“আই সি স্যার,” টিভি স্ক্রিনের দিকে খুব মন দিয়ে তাকিয়ে একেনবাবু বললেন, “যার চুলগুলো লাল মতো?”
“ইয়েস।”
“জায়গাটা এত ফাঁকা কেন স্যার, প্রত্যেক টেলারের সামনে মাত্র একজন করে কাস্টমার?”
“ফাঁকা নয়, প্রচণ্ডই ভিড়, কিন্তু ক্যামেরা অ্যাঙ্গেলের জন্য ঠিক বোঝা যাচ্ছে না,” রাজ সিং উত্তর দিলেন। “নর্মালি, ভিড় হলে কাস্টমাররা কাউণ্টার থেকে একটু দূরে লাইন করে দাঁড়িয়ে থাকে। টেলারদের সঙ্গে একজন কাস্টারের কাজ শেষ হলে লাইনের প্রথমে যে দাঁড়িয়ে আছে, সে তার জায়গায় যায়। ফলে টেলারদের সামনে ধাক্কাধাক্কি হয় না। কাস্টমারদের ঐ লাইনটা ক্যামেরার অ্যাঙ্গেলের বাইরে পড়ে গেছে।”
“আপনি কোথায় ছিলেন স্যার?”

গল্পের তৃতীয় অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

দুঃখিত!