পুনর্জন্মে

“হাল ছেড়ো না বন্ধু” – এই শ্লোগানকে পাথেয় হিসেবে নিয়েই যাত্রা শুরু করেছিল নাগরিক। এমন প্রত্যয়ে যার যাত্রা শুরু হয় তার সেই “কণ্ঠ ছাড়ো জোরে” বলার অধিকারটুকু খুব সহজে সে কাউকে কেড়ে নিতে দেবে না এমন শপথও ছিল সেই চিৎকারে।
গত পাঁচ বছরে আমি নিজে সারাক্ষণ নাগরিকের একদম সাথেই ছিলাম তা বলা যাবে না। কাছে ছিলাম। দূরে থেকেও ছিলাম। আশেপাশেও ছিলাম অনেকটা সময়। প্রাত্যহিক আটপৌরে জীবনেও যে নাগরিকত্ব মিশে আছে সেই নাগরিক জীবনের দৌড়ে ভিড়তে গিয়ে অস্থি-মজ্জায় মিশে যাওয়া এই নগরকে দূরে ঠেলতে হয়েছে মাঝে মধ্যেই। দূরে থেকেছি ব্যক্তিগত বিভিন্ন হিসাবের বোঝা সামলাতে। তারপর এইসব বোঝার চাপে জবুথবু মাথাটাকে দু’দন্ড শান্তি দিতেও চলে আসতাম নাগরিকেই। ছায়া হয়ে। অথবা কায়াসহ। আমার অস্তিত্বেরই আরেকটা অংশ হয়ে গেছে যে নগর তার থেকে দূরে গেলেও সে রয়ে যায় কাছেই। অনেকটা “আমি ছেড়ে যেতে চাই, ‘নগর’ ছাড়ে না” মার্কা অবস্থা। সে টেনে ধরেই রাখে। পিছুটান হয়ে।

 
এই পাঁচ বছরে নাগরিকের বিভিন্ন উত্থান-পতনেরও সাক্ষী হয়ে রইলাম আমরা কতো-কতোজন। নগর নিজেও। আমাদের নিজেদের কতো উত্থানের, পতনের, রাস্তা পাল্টানোর সাক্ষী হয়ে রইলো সে। তবে কফি হাউজের মানুষ পাল্টায়। চেহারা পাল্টায়। আড্ডা বা আড্ডার ধরণও পাল্টে যায়। কিন্তু কফি হাউজ তো রয়েই যায় অমলিন! নগরও তেমন – রয়েই যায়। কিংবা ফিরে আসে। বার বার। তার দেয়ালে দেয়ালে সময়ের বা আমাদের বিভিন্ন আঁচড়ের দাগ, পানের পিকের দাগ বা বিরাট ভালবাসায় নিজেদের খোদাইকৃত নামের দাগসহ নগর নিজের মতো রয়ে যায়। সমস্ত ইতিহাস নিয়ে। অক্ষত।
ক্ষত যে তৈরি হয় নি একেবারেই তা নয়। তবে শহর পুরানো হলে তাতে ইতিহাস আর স্মৃতির সাথে জমা হয় কিছু আবর্জনাও। ওগুলো পরিষ্কারও করতে হয় নিয়মিত। নগরের ফটক বন্ধ রেখে তাই বোধ করি নগরের দারোয়ানগণ সেইসব আবর্জনা সরিয়ে ঝেঁটিয়ে পরিষ্কার করে, আবার ফিটফাট নতুন একটা চেহারা দিতে সময় নিলেন অনেকগুলো দিন। আমাদের অনেকেরই এই দিনগুলো গেছে বিরাট অন্ধকারে। দ্বিধায়। দ্বন্দ্বে। বাতাসে ভেসে বেড়ানো কানকথায়। গুজবে। নগর পুড়ে গেছে। গুঁড়িয়ে দিয়েছে। মেইনরোডের দরজা আর খুলবে না এমনতরো কতো কথায় আমাদের অনেকের ভরসার জায়গাগুলোও কি নড়ে উঠছিল না মাঝে মধ্যেই? মনের মধ্যে হতাশা বেজে উঠেছিল – নগর কি হাল ছেড়ে দিল তবে?
নাগরিক হাল ছেড়ে দেয় নি। আর আমরা বুঝলাম – হাল ছেড়ে দেবেও না খুব সহজে। সমস্ত গুজব, হতাশা, অন্ধকার আর বাতাসের কানাকানিগুলোকে তাদের সেই পুরানো দৃপ্ত প্রত্যয়ের আগুনে ঝলসে সেই আগুন থেকেই ফিনিক্স পাখির মতো আবার পুনর্জন্ম নিয়ে ফিরল নাগরিক।
নাগরিকের প্রথম জন্মের সময়ে যে অঙ্গীকারপত্র দিয়েছিল তার প্রথম বাক্যটা এমন – “স্মৃতির জন্ম দূরত্বে।” সেই পরীক্ষাই হয়তো কিঞ্চিত নিয়ে নিল সে এবার। দূরত্বে রেখে আমাদের স্মৃতিগুলোর তীক্ষ্ণতা বাড়িয়ে দিল। তবে স্মৃতির জন্ম হতে থাকে হয়তো প্রতি মুহূর্তেই। এক্কেবারে বুকের কাছে ধরে রেখে, প্রতিনিয়ত গন্ধ নাকে টেনেও স্মৃতি জমতে থাকে। দূরে গেলেও তেমনি জমে উঠতে থাকে তারা একইরকম তাড়াহুড়োয়। নাগরিকের সাথে দূরত্বের এই ক’টা সপ্তাহে স্মৃতির জমিজমা বেড়ে উঠেছে আরো। সেই স্মৃতির বুকেই বসত-বাড়ি গড়ে বসে থাকি। দূরে যাই বা কাছে – নাগরিক আমারই। আমাদেরই। নাগরিকের দ্বিতীয়-জন্মে এই ভরসা পেয়ে যাই খুব। নাগরিক ফিরে আসেই। আসবেই। আমাদেরই থাকবে। আর আমরাও হাল না ছাড়ার শপথে কণ্ঠ ছেড়ে নাগরিকের সাথেই হেঁটে যাবো। আরো বহুদূর।
পঞ্চম জন্মদিনে দ্বিতীয় জন্ম নিয়ে ফিরে আসা নাগরিকের জন্যে শুভেচ্ছা!
“হাল ছেড়ো না বন্ধু, বরং কণ্ঠ ছাড়ো জোরে!”

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!