
সচরাচর পুতুলকে খুব মিষ্টি এবং মায়াবী করে তৈরি করা হয়। শিশুদের খেলার উপকরণ হিসেবে পুতুল সেই আদিকাল থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কিন্তু এই পুতুলও কখনো কখনো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে। এর আগে রকমারি পাতার আরেকটি আয়োজনে আমরা অ্যানাবেল নামের এক পৈশাচিক পুতুলের ভয়ঙ্কর গল্প জেনেছিলাম। তবে আজকের গল্প একটা দ্বীপের।
যে দ্বীপটি সবার কাছে ভয়ঙ্কর পুতুলের দ্বীপ হিসেবে পরিচিত। একটা সাধারণ ঘটনা থেকেই এ দ্বীপের রহস্যমণ্ডিত অগ্রযাত্রার শুরু। আর এ ঘটনাটি আজ থেকে প্রায় আশি বছরেরও বেশি সময় আগের। তিন মেস্কিকো শিশু শীতল অন্ধকার দ্বীপটিতে খেলাচ্ছলে পুতুলের বিয়ে দিচ্ছিল। আর পুতুল বিয়ে খেলতে গিয়ে তিন শিশুর একজন নিখোঁজ হয়ে যায়!
অনেক খোঁজাখুঁজির পর দ্বীপের পাশের একটি খালে শিশুটির মৃতদেহ খুঁজে পাওয়া গেল। সেই শুরু। এরপর থেকে ভয়ে কেউ আর ওই পথ মাড়াতো না। ভয়ঙ্কর এই পুতুলের দ্বীপটি মেস্কিকোর রাজধানী মেস্কিকো সিটি থেকে ১৭ মাইল দক্ষিণে জোকিমিলকো জেলায় অবস্থিত। এই দ্বীপে ঢুকলে অসীম সাহসী মানুষেরও বুক কেঁপে উঠবে। দ্বীপজুড়ে শুধু পুতুল আর পুতুল।
ভয়ঙ্কর এই দ্বীপকে ঘিরে বছরের পর বছর ধরে প্রচলিত হয়ে আসছে নানা কাহিনী। এতসব রহস্যের কারণেই ১৯৯০ সালে মেস্কিকোর সরকার এই জোকিমিলকো জেলার এই দ্বীপটিকে ন্যাশনাল হেরিটেজ ঘোষণা করে। মেস্কিকো সরকার এই দ্বীপকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে পর্যটন অঞ্চল বানানোর উদ্যোগ নেয়। কিন্তু পর্যটকরা কদাকার পুতুল দেখে বোধহয় রাতে দুঃস্বপ্ন দেখতে চান না।
তাই তারা কখনো আসেন না। এই দ্বীপে একেক মৌসুমে বিশ-ত্রিশজনের বেশি পর্যটক কখনোই আসেননি। ১৯৫০ সালের দিকে ডন জুলিয়ান সানতানা নামের এক যাজক এই দ্বীপে এসেছিলেন। তার উদ্দেশ্য ছিল এখানে তিনি নির্জনে তপস্যা করবেন। সেই যাজকের ভাষ্য অনুসারে, দ্বীপটিতে আশ্রম গড়ে তোলার পর থেকে তিনি প্রায়ই ওই মৃত শিশুটির আত্দার দেখা পেতেন।
তার সঙ্গে মৃত শিশুটির আত্দার নাকি কথাও হতো। এর মতেই একদিন ওই শিশুর আত্দা জুলিয়ানের কাছে পুতুলের বায়না ধরে। আবার এক্ষেত্রে একটি শর্তও জুড়ে দেয়। সাধারণ কোনো পুতুল হলে চলবে না। পুতুল অবশ্যই বীভৎস হতে হবে। অর্থাৎ শিশুটির আত্দা-যেগুলো দেখলে মনে হবে তারা মানুষের নির্যাতনে প্রাণ হারিয়েছে।
ওই আত্দার অনুরোধেই জুলিয়ান তার আশ্রমে চাষ করা সবজির বিনিময়ে মানুষের কাছ থেকে নষ্ট পুতুল সংগ্রহ করতে থাকেন। জঙ্গলে এসে গাছের ডালের সঙ্গে এগুলো বেঁধে রাখলেই খুশি হতো শিশুটির আত্দা। এমনিভাবে হাজার হাজার কুড়িয়ে পাওয়া কিংবা কিনে আনা পুতুল দিয়েই জুলিয়ান গড়ে তোলেন মৃত পুতুলের দ্বীপ।
কেউ কেউ বিশ্বাস করেন, দ্বীপটিতে এখনো মৃত শিশুটির আত্দা ঘোরাঘুরি করে। মাঝেমধ্যে শোনা যায় ভুতুড়ে আওয়াজ। বিশ্ববাসীর কাছে মৃত পুতুলের দ্বীপ আসলেই বড়সড় আতঙ্কের নাম।