পুতা লইয়া যাও

হাটে একটি প্রকাণ্ড বোয়াল মাছ উঠিয়াছে। এক ফকির ভাবিল, এই বোয়াল মাছটার পেটি দিয়া যদি চার টি ভাত খাইতে পারতাম! সে মাছের দোকানের কাছে দাঁড়াইয়া রহিল। এক

জন চাষী আসিয়া মাছটি কিনিয়া লইল। মুছাফির তাঁহার পিছি পিছি যাইতে লাগিল। লোকটি যখন বাড়ির ধারে আসিয়াছে তখন মুছাফির তাঁহার নিকটে যাইয়া বলিল, “সাহেব! আমি মুছাফির লোক। ভিক্ষা করিয়া খাই। কোন দিন ভালো খাওয়া হয় না। আজ হাটে যাইয়া

যখন ঐ বড় মাছটি দেখিলাম, মনে বড় ইচ্ছা হইল এই মাছটির পেটি দিয়া যদি চারটি ভাত খাইতে পারিতাম!তাই আপনার পিছে পিছে আসিয়াছে।দয়া করিয়া যদি আমার মনের ইচ্ছা পুরন করেন বড়ই সুখী হইব।”

লকটি বড়ই দয়ালু। সে খুব আদর করিয়া মুছাফিরকে আনিয়া বৈঠকখানায় বসাইল। তারপর মাছটি ভিতরে লইয়া গিয়া তাঁহার বউকে মুছাফিরের সমত্ত ঘটনা বলিয়া হুকুম করিল, “ এই মাছটির পেটি খুব পুরু করিয়া কাটিবে। পেটি খানা মুছাফিরকে দিতে হইবে।”
এমন সময় লোকটির গরু ছুটিয়া গেল। সে তাড়াতাড়ি গরুটির পিছে পিছে দৌড়াইল।

মাছ কুটীতে কুটিতে চাষীর বউ ভাবিল,। “ সে তাড়াতাড়ি গরুটির পিছে পিছে দৌড়াইল।

মাছ কুটিতে কুটিতে চাষীর বউ ভাবিল,“বাড়িতে ভালো কিছু খাবার পাক করিলেই আমার স্বামী এমনি করিয়া মুছাফির লইয়া আসে।মুরগীর রানটা, মাছের পেটিটা সব সময়ই মুসাফিরদের দিয়া খাওয়াই। এই বড় মাছের পেটি খানাও মুছাফিরকে খাওয়াইবে। যেমন করিয়া হোক মুছাফিরকে আজ তাড়াইব”

এই কথা ভাবিয়া বউটি পাটার উপর পুতাখানা ঘষিতে আরম্ভ করিল আর সুর করিয়া কাঁদিতে লাগিল।
অনেকক্ষণ কান্না শুনিয়া মুছাফির ভাবিল,না জানি বউটির কি হইয়াছে। সে বাড়ির ভিতর এসে গিজ্ঞাসা করিল, “ মা জননী!তুমি কাঁদিতেছ কেন? তোমার কি হইয়াছে?”
বউটি টি বলিল!“বাবরে! সে কথা তোমাকে বলিবার নয়। আমাড় শ্বামী মানা করিয়াছে।”
মুছাফির বলিল।“মা! আমি তোমার ছেলে। আমাড় কাছে কোন কথা গোপন করিও না”
বউটি তখন আধেক কাঁদিতে আধেক কাঁদিবার ভান করিয়া বলিল, “আমার স্বামী বাড়ীর ভীতরে আসিয়া আমাকে বলিল, এই মুছাফির বড় লোভী।

আমাদের পুতাখানা পাটায় ধার দিয়া চোখা করিয়া রাখ। মুছাফিরদের গলার ভিতর দিয়া ঢুকাইয়াদিব। যাহাতে সে আর কাহারও মাছ দেখিয়া লোভ করিতে না পারে।

তাই আমি কাঁদিতেছি।হায়!হায়!আমার শ্বামী এই মোটা পুতা তোমার গলার ভিতরে ঢুকাইলে নিশ্চয় তুমি মারা যাইবে, তাই আমি কাঁদিতেছি। কিন্তু স্বামীর হুকুম তো আমাকে মানিতেই হইবে।”
শুনিয়া মুছাফিরের তো চক্ষুস্থির। সে বলিল, মা জননী! তুমি একটু আস্তে আস্তে পুতা ঘস। আমি আখনি চলিয়া যাইতেছি।”

এই বলিয়া মুছাফির তাড়াতাড়ি লাঠি-বোঁকচা লইয়া দে চম্পট। এমন সময় বাড়ির কত্তা ফিরিয়া আসিয়া দেখে কাছারির ঘরে মুছাফির নাই।

বউকে জিজ্ঞাসা করিল,মুছাফির চলিয়া গেল কেন?”বউ নথ নাড়িতে নাড়িতে বলিল,তুমি বাড়ি হইতে চলিয়া গেলে মুছাফির বলে কি, তোমাদের পুতাটা আমাকে দাও।”দেখ তো, আমাদের একটা মাত্ত পুতা।তা মুছাফিরকে দেই কেমন করিয়া? পুতা দেই নাই বলিয়া মুছাফির রাগিয়া চলিয়া গেল।”

স্বামী বলিল,“সামান্য পুতাটা দিলেই পারিতে। আমি না হয় বাজার হইতে আর এক টা পুতা কিনিয়া আনিতাম। শিগগীর পুতাটা আমাকে দাও, আর মুছাফির কোন দিকে গিয়াছে বল!”

বউ পুতাটি স্বামীর হাতে দিয়া বলিল মুছাফির এই দিক দিয়া গিয়াছে।”
পুঁতাটি হাতে লইয়া সেই দিকে দৌড়াইয়ে চলিল।
খানিক যাইয়া দেখিল, মুছাফির অনেক দূরে হন হন করিয়া চলিয়াছে। সে ডাকিয়া বলিতে লাগিল, “ও মুছাফির, দাঁড়াও- দাঁড়াও -পুতা লইয়া যাও ।”

শুনিয়া মুছাফির উটিয়া পড়িয়া দৌড়। চাষী যতই জোরে জোরে বলে, “ও মুছাফির!পুতা লইয়া যাও,-পুতা লইয়া যাও” মুছাফির আরও জোরে দৌড়ায়। সে ভাবে সত্যই চাষী তাঁহার গলায় পুতা ঢুকাইতে আসিতেছে। বোঁকচা -বুঁচকি বগলে ফেলিয়া সে মরিয়া হইয়া দৌড়ায়।

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!