পিন্টু ও একটি গাছ

কয়েকদিন হল পিন্টুকে আর খেলার মাঠে দেখা যাচ্ছে না। তার মানে এই নয় যে সে ঘরে বসে লেখাপড়া করছে। বিকেল হতেই একছুটে উধাও। ঘন্টা দুয়েক পরে ঘেমে নেয়ে ধুলোয় একশা হয়ে এমন ভূত সেজে ফিরবে, যে কারো পক্ষেই বোঝার উপায় নেই সে ফুটবল খেলতে যায়নি। সেই একই অবস্থা টুবলুরও। সম্প্রতি দুজনেই সাইকেল চালাতে শিখেছে – আর সাইকেল নিয়ে পাড়ায় বেড়ানোর অনুমতিও মিলেছে। ফলে তারা যে ঘুরতে ঘুরতে ঠিক কোথায় চলে যাচ্ছে, কি করছে কেউ নজর রাখবে এমন সাধ্য নেই। আসলে এই ঘটনার সূত্রপাত কিছুদিন আগেই ।
তখন শীতের ছুটি চলছে। এই ছুটিটা তো আর খুব বড় নয়। এক থেকে বড়জোর দেড় সপ্তাহ। মাঝে মধ্যে ক্রিকেট খেলা, বেড়ানো আর বড়দিনের কেক এইসবের ফাঁকে শীতের ছোট্ট ছুটিটা কোথা দিয়ে যে মিলিয়ে যায়, বোঝাই যায় না। একটা আনন্দের ব্যাপার হচ্ছে এই ছুটিতে কোন ছুটির কাজ থাকে না।
এমন সময় একদিন বিকেলে টুবলু উধাও। উধাও মানে খেলার মাঠে নেই, বাড়িতেও নেই। কোথাও গেলে সাধারনতঃ সে বলেই যায় পিন্টুকে।
পরের দিন খেলার পর পিন্টু চেপে ধরতে সে এসে বিজ্ঞের মত একটা হাসি দিয়ে বললে, “কোথায় গেছিলাম, তা তুই ভাবতেও  পারবি না। আমাদের পাড়ায় এমন জিনিস আর নেই।”
পিন্টু লাফিয়ে উঠল, “ কেন? সার্কাস এসেছে বুঝি?”
“ধুত্তোর সার্কাস। তোকে না সব জিনিসটাই আমাকে শেখাতে হয়। সার্কাস নয়, গঙ্গার ধারে পুষ্প প্রদর্শনী এসে বসেছে।”
পিন্টু এসব কস্মিনকালেও শোনেনি। পুষ্প মানে তো ফুল। ফুলের আবার প্রদর্শনী কি? সে একটু বোকা বনে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল টুবলুর দিকে। ভাবখানা এমন যে আমি তো ভাই বুঝতে পারিনি।
“আচ্ছা, না হয় তুইই কিছু বল”
বন্ধুর ভাবগতিক দেখে টুবলু একটু খুশিই হল। বন্ধুদের এরকম মাঝে মধ্যে তাক লাগিয়ে দিতে না পারলে আর মজা কিসের?
“গঙ্গার ধারে একলফতে যে সরু লম্বা জায়গাটা আছে না সেখানে বিভিন্ন ধরনের ফুল আর গাছের মেলা বসেছে। সে অনেক রকম ফুল, সব ফুলের আমি নামও জানি না, তবে এক একখানা ইয়া বড় বড় পেল্লায় ফুল। সেরকম আমরা কখনও দেখিই নি। শুধু তাই না, সেই সঙ্গে টবে ফলের গাছ – সে কত রকমের ফল আম, জাম, লেবু, কমলা প্রায় সবই আছে। তার ওপরে আছে ক্যাকটাস। বনসাই। ”
চোখ বড় বড় করে শুনছিল পিন্টু। টুবলু বরারবই কিছু না কিছু বেশি জানে – তা সে যে বিষয়েই হোক না কেন। কদিন আগে একটা কাচের বোতলে শুধু জল নিয়ে তার মধ্যে একটা গাছ বসিয়ে চমকে দিয়েছিল পিন্টুকে – বলেছিল ঐ গাছকে নাকি মানিপ্ল্যান্ট বলে। ক্যাকটাসের কথা তাও বা শুনেছে, কিন্তু বনসাই সেটা আবার কি? নাঃ, এটা তো না দেখতে গেলেই নয়।
পিন্টু আবদার করে বসল, “হ্যাঁ রে, আমায় নিয়ে আরেকবার যাবি?”
টুবলু খানিক ভাবল। মাথা চুলকে এদিকে ওদিক তাকিয়ে শেষটায় বলল, “আচ্ছা, এত করে যখন বলছিস, তখন না হয় আরেকবার ঘুরে আসি। তবে খুব বেশিদিন থাকবে বলে মনে হয় না”
“বেশ তো, তাহলে আর দেরী কেন? আজই চল না?”
এই ঘটনার পর কয়েক মাস কেটে গেছে।

পুষ্প প্রদর্শনীর এক একটা গাছ যেন মাথায় ছবির মত বসে গেছে। দুই বন্ধু অনেকদিনই ভাবে কিছু একটা হবি থাকলে ভালো হয়। এবার দুজনেই মেতে উঠল বাগান করতে। পিন্টুর বাড়ির সামনেই খানিক বাগান করার মত জায়গা ছিল। সেখানে কিছু বিফল পরীক্ষা নিরীক্ষার পর অবশেষে একটা ঢিবির উপর ছড়িয়ে দেওয়া ভিজানো ছোলা থেকে লকলকিয়ে বেড়ে উঠল ছোলার গাছ। যবে থেকে বিজ্ঞান বইয়ে অঙ্কুরোদ্গম পড়েছিল, তবে থেকেই এটা হাতে নাতে করে দেখার খুব ইচ্ছে ছিল দুজনের। ছোলা মটর ভিজিয়ে রাখলে কল বেরোয় এটা তো জানা, কিন্তু তাই থেকে যে দিব্যি গাছ হতে পারে এটা দেখে দারুন লাগছিল। একদিন যখন ইস্কুল থেকে ফিরে পিন্টু দেখল যে ছোট ছোট গাছগুলোতে আবার ফল ধরেছে, তখন আর আনন্দে থাকতে পারল না সে। কাউকে জিজ্ঞেস না করেই একটা ছিঁড়ে মুখে পুরে দিল। আহা সে কি স্বাদ!
এই কয়েক মাসে দুজনেই গাছ সম্পর্কে বিস্তর জেনে ফেলেছে। এমনকি সব গাছের চারা যে বীজ থেকে হয় না, কলম করা কাকে বলে এইসবও। টুবলু প্রথমে একটু গাম্ভীর্য বজায় রাখার চেষ্টা করেছিল, বিশেষ করে সে নিজেই যখন প্রথম আইডিয়াটা দিয়েছে, তখন একটু তো কায়দা রাখতেই হবে।  কিন্তু পিন্টুর উৎসাহ দেখে সেও সমান তালে ঝাঁপিয়ে পড়ল। টুবলুর বাড়িতে বাগান করার মত সেরকম জায়গা নেই। তাই সে তার বাগান শুরু করল ছাতে টব নিয়ে।
দুজনকেই যে চিন্তাটা ভিতর ভিতর জালাচ্ছিল, তা হল বনসাই। প্রদর্শনীর এক প্রান্তে রাখা ছিল ঐ গাছগুলো। ছোট চ্যাপ্টা মাটির টবে। কোনটা বট, অশ্বত্থ বা পাকুড়। নিচে লেবল করে লেখা ছিল কোন গাছের কত বয়স – সাত বছর, দশ বছর, পনেরো বছর। অত বয়স যদি হবে তাহলে গাছগুলো এত ছোট কেন? আশ্চর্য ছোট হলে কি হবে দেখতে ওগুলোকে এক্কেবারে হুবহু বড় গাছের মতই, সেরকম খুদে গুঁড়ি, মোটা শেকড় উঠে এসেছে, ঝুরি নামছে।
এই নিয়ে ভাবতে ভাবতে অবশেষে পিন্টু একদিন ধরল ওর পিসতুতো দাদা মান্টিকে। মান্টি তখন ডাক্তারি পড়ছে, ছোটদের যে কোন বিষয়ে কিছু বলতে পারলে সে খুশিই হয়। একদিন সে পিন্টু আর টুবলুকে ধরে বনসাই করা বোঝাতে শুরু করল।
“তোরা বিজ্ঞানে পড়েছিস গাছের শেকড় কিরকম হয়?”
“পড়েছি বৈকী। শেকড় দুরকম। একটা প্রধান মূল আর বাকিগুলো শাখা আর প্রশাখা মূল”
“ভেরি গুড। বড় বড় গাছের ওপরে যতটুকু থাকে তার দ্বিগুন বা তিনগুন থাকে মাটির তলায়। তা এইরকম একটি ছোট গাছের প্রধান মূলটা কেটে দিয়ে যদি চ্যাপ্টা কোন টবে বসিয়ে দেওয়া যায়, তবে গাছের প্রধান মূল আর বাড়ে না, কিন্তু খাদ্যের জন্য শাখা আর প্রশাখা মূল বাড়তে থাকে। তবে গাছের যে পূর্ণ বৃদ্ধি হত, সেটা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বছরের পর বছর গাছগুলো দিব্যি থাকতে পারে টবের মধ্যেই”
দুজনে হাঁ করে শুনছিল। ব্যাপারটা খুব বোধগম্য না হলেও পিন্টু বলে বসল, “আচ্ছা, আমরা চাইলে বনসাই করতে পারি?”
“কেন পারবি না? কেবল একটা বট বা অশ্বত্থের চারা যোগাড় করতে হবে। সেটা যে কোন পুরনো বাড়ি বা পাঁচিলের গায়েই পেয়ে যাবি। তারপর যেরকম করে বললাম, সেরকম করে একটা টবে বসিয়ে দিলেই হবে। আমার এক বন্ধু যা বনসাই করেছিল না শুনলে তাক লেগে যাবে।”
“বলো, বলো-”, দুজনেই বায়না ধরল।
“সে কোথাও থেকে ছোট ছোট এই আঙুলের সাইজের ইট বানিয়ে এনেছিল অর্ডার দিয়ে। তারপর মাটি দিয়ে গেঁথে তার ওপরে বসিয়েছিল একটা বটের চারা। ফলে বটের শেকড় বাকড় সেই ইঁটের ফাঁক দিয়ে জায়গা করে নিল। ব্যাপারটা দেখতে হল যেন পোড়ো বাড়ির চাতালে বট”
দুই বন্ধু গুনমুগ্ধ হয়ে শুনতে লাগল সেইসব গল্প। গল্প শুনতে শুনতে যে কতরকম দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেল মাথায় তার ঠিক নেই।

 

এরপর মাঝে মাঝেই তাদের খেলার মাঠেও কম দেখা যেতে লাগল। যে সময়টা খেলে কাটাত সেই সময়টায় দুজনে মোটামুটি চষে ফেলল মফঃস্বল শহরটা।
এমনিতেই যেভাবে বাড়ি গজিয়ে উঠছে এখানে ওখানে, তাতে খেলার মাঠই আছে হাতে গোনা। সেখানে আর পোড়ো বাড়িই বা তারা খুঁজে পাবে কোথায়। একদিন তো একটা অচেনা রাস্তায় চলতে চলতে প্রায় পুকরে পড়ার উপক্রম হয়েছিল – একটা ঢালু রাস্তার ওপ্রান্তে যে পুকুর আছে সেটাই তারা জানতো না।  তবে ঘুরতে ঘুরতে একটা উপকার হয়েছিল। একদিকে পাড়ার সব রাস্তা , অলিগলি, আর অন্যদিকে যত রকমের গাছপালা চোখে পড়ে, তা সবকিছুই জানা হয়ে গেল দুজনের।
কিন্তু সমস্যাটা তখনও মেটেনি। বট বা অশ্বত্থের চারা সেরকমভাবে কোথাও পাওয়া যাচ্ছিল না। অনেক খুঁজে পেতে একটা মাঠের ধারে প্রকান্ড এক বট খুঁজে পাওয়া গেছিল বটে, কিন্তু চারা আর পাওয়া যায় নি।
টুবলু একবার বলেছিল যে বটের বীজ থেকে চারা করে নিলে কেমন হয়? কিন্তু সেই প্রস্তাব পিন্টুর খুব একটা মনে ধরেনি। এমনকি বটগাছটাই তার খুব একটা পছন্দের নয়। যদিও বটের গুঁড়ি হয়, আর অশ্বত্থের হয় না। তবু বটের পাতাগুলো যেন কেমন। এরকমভাবে খোঁজাখুজি করতে করতে একদিন দুজনেই মনের মত চারা খুঁজে পেল। টুবলুর বটের চারাটি ওপড়াতে গিয়ে শেকড়টা অনেকটা ছিঁড়ে গেলেও, টবের মাটিতে জল আর যত্ন আত্তি পেয়ে সে বেশ সামলে নিয়ে দাঁড়াল। আর পিন্টুও অশ্বত্থ চারা ওপড়াতে গিয়ে টের পেল যে ঐটুকু গাছের শেকড় কত লম্বা। তবে শেষ পর্যন্ত যখন কাটতেই হবে, তখন আর বেশী কষ্ট না করে একরম কেটেই ফেলেছিল সে। সেই গাছও দাঁড়িয়ে গেল টবে।
প্রথম প্রথম খুব একটা পার্থক্য বোঝা যাচ্ছিল না। কারন প্রদর্শনীতে দেখা গাছগুলো পাতা ছিল ছোট ছোট – যেন বড় গাছের একটি ক্ষুদে সংষ্করন। এদিকে পিন্টু বা টুবলু কারো বনসাইতেই পাতাগুলো দেখে তা মনে হচ্ছিল না। মানে দু একটা যে পাতা ছিল, তা একেবারে বড় গাছের মতই। আর বনসাই করতে গেলে সাত বছর অপেক্ষা করতে হবে এই ভেবেই দুজনে একটু দিশেহারা হয়ে যাচ্ছিল। এই সময়ে তাদের সবচেয়ে বেশী করে দরকার ছিল মান্টি’দাকে। কিন্তু মান্টি’দা অল্প কদিনের ছুটি ছাটা পেলে তবেই আসে, আবার হস্টেলে ফিরে যায়। সে সময়টা তার সাথে যোগাযোগ করাই মুশকিল।
একবার টুবলু এসে বলল, “আমার মনে হয় সার দিতে হবে।”
“সার? সার জিনিসটা ঠিক কি?”
“ওরে বোকা সার জানিস না? ওটা হল গাছেদের খাবার। গাছের গোড়ায় সাদা সাদা গুঁড়ো মত ছড়িয়ে দেয় দেখিসনি কখনও?”
পিন্টু সত্যিই দেখেনি। তাও সে ঘাড় নাড়ল। টুবলুটা এক এক সময় এমন একটা জিনিস ঝাড়ে যে সে স্রেফ ভ্যাবলা হয়ে যায়। কিন্তু তাই বলে আর প্রেস্টিজ খোয়ালে তো আর চলবে না। তাই কোনরকমে সামলে নিয়ে বললে, “ তা নয় হল, কিন্তু এখন সার আমরা কোথায় পাব?”
“হুমম। ভাবছি। মনে হচ্ছে বড়দের কারো কাছে জিজ্ঞেস করে দেখতে হবে।”
কপাল ভালো সেই শনিবারেই পিন্টুর রাঙাদাদু এলেন ওদের বাড়িতে। পিন্টু দাদুর খুব প্রিয়। প্রত্যেকবার দাদু এসে খবর নেন সে কেমন পড়াশুনো করছে। তারপর মাকে লুকিয়ে একটা ক্যাডবেরী দেন। কিন্তু এবারে পিন্টুর আনন্দ আর দেখে কে। সে মায়ের কাছে শুনেছিল যে দাদুর খুব গাছের শখ। একসময়ে একটা বড় বাগান করেছিলেন, এখন বয়স হয়ে গেছে বলে আর নিজে থেকে সামলাতে পারেন না। তবে গাছ খুব ভালোবাসেন। পিন্টু দাদুকে টানতে টানতে বাগানে এসে বলল, “জান দাদু, এবারে আমরা কি করেছি? এই দ্যাখো – একটা বনসাই বানাচ্ছি।”
পিন্টুর দাদু ভুরু কুঁচকে বললেন, “বনসাই?”

 

“কেন ভালো হয়নি?”
“নাহ”
পিন্টুর মুখ ভার হয়ে গেল। সে অপেক্ষা করেছিল দাদুকে বনসাইয়ের কথা বলে তাক লাগিয়ে দেবে। কিন্তু দাদু যে এরকম বলবেন সে ভাবতেই পারেনি। অভিমান ভরা গলায় সে বলল, “কেন দাদু, ভালো হয়নি কেন?”
“বলছি। তার আগে তুমি আমায় বলো তো, যে আগের বছর যে জামা যে জুতো পরতে – এবছর কি সেগুলো পরো?”
পিন্টু একটু ভেবে মাথা নাড়ল।
দাদু হেসে বললেন, “কেন বলো তো? জামাপ্যান্ট তো খারাপ হয়ে যায়নি। জুতোটাও তো ঠিকই আছে। তবে?”
“তবে আবার কি? আমি তো বড় হয়ে যাচ্ছি দাদু। এখন তো আমার পায়ে এক সাইজের বড় জুতো লাগে।”
“একদম ঠিক কথা। তোমার বাবা মা, বড়রা সবাই চাইবেন যে তুমি আস্তে আস্তে বড় হও। ভালো করে পড়াশুনো কর, অনেক উন্নতি কর, তাই না?”
ঠিকই। দাদু কিছু ভুল বলছেন না।
“তাহলেই ভাবো প্রকৃতির নিয়ম হচ্ছে বড় হওয়া। তোমার আশে পাশে সব ছেলেমেয়েকে দেখো। তারা সব্বাই বাড়ছে। তাই না? তোমার মা তোমাকে রোজ দুধ খেতে, মাছ খেতে বলেন কেন? যাতে তুমি বড় হও, ঠিক মত পুষ্টি পাও।”
পিন্টু মাথা নাড়ল।
“এবার মনে করো, আমি তোমাকে খাবার দিলাম না। দিনে একবার খেতে দিলাম। পা দুটো দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখলাম, যাতে তুমি বাড়তে না পারো? তাহলে? তোমার কি কষ্ট হবে না? আর তোমাকে ঐরকম দেখে কি আমাদের ভালো লাগবে?”
পিন্টু একটু ভয়ে শিউরেই উঠল। এমনটা খুব সাংঘাতিক হবে তাতে সন্দেহ নেই।
“তাহলেই বুঝে দেখো দাদুভাই। একটা মানুষের যদি এরকম করলে কষ্ট হয়, তাহলে গাছেদেরই বা কষ্ট হবে না কেন? ঐ যে গাছটাকে তুমি টবে রেখেছো ওর কত বড় হওয়ার কথা, কিন্তু তুমি ওর শেকড় কেটেছো, ওকে সেরকম খাবার দিচ্ছো না। ওর কি খুব ভালো লাগছে? ভেবে দেখো তো একবার। শুধু তোমার দেখতে ভালো লেগেছে বলে একটা গাছকে এত যন্ত্রনা দেবে?”
পিন্টু আস্তে আস্তে বলল, “না”
“গুড বয়। আর গাছ নিয়ে আচার্য জগদীশচন্দ্র বোস কি আবিষ্কার করেছিলেন মনে আছে তো?”
“গাছেরও প্রাণ আছে।”
“উঁহু, তা তো আছেই। তবে সেটা জগদীশচন্দ্র প্রমাণ করেননি। উনি বলে গেছিলেন যে গাছও উত্তেজনায় সাড়া দেয়। অর্থাৎ তুমি যে এরকম করছো ঐ গাছটার সাথে, তাতে ওরও খুব কষ্ট হচ্ছে, ও তোমাকে বলছেও। কেবল তুমি শুনতে পাচ্ছো না। বুঝলে দাদুভাই?”
পিন্টু মাথা নাড়ল।
“কিন্তু গাছটাকে কি ফিরিয়ে দেওয়া যাবে, দাদু?”
দাদু হাসলেন। “ফিরিয়ে হয়তো দেওয়া যাবে না। তবে তুমি ওকে মাটিতে ফিরিয়ে দাও। ও ঠিক নিজের মত বাড়বে। ”

দু মাস কেটে গেছে। বনসাই আর করা হয়নি। তবে তার বদলে বসেছে অনেকগুলো জবা গাছ। শুধু একরকম নয় – বিভিন্ন রঙের। আর ওদিকে টুবলু টবে বসিয়েছে ফিলোড্রেনডন। সেও পুরোদস্তুর শিল্পীর মত একটা লাঠির ওপর রীতিমত ছোবড়া দিয়ে মুড়ে একটা অবলম্বন তৈরি করে ফেলেছে যাতে গাছটার শেকড়গুলো ছোবড়ার মধ্যে দিয়ে ঢুকে গাছটাকে সোজা বাড়তে দিতে পারে।
পিন্টুর জন্মদিনে একটা গাছ উপহার দিয়েছেন রাঙাদাদু। দেখতে অনেকটা বনসাইয়ের মতই। মানে বড় গাছের মত গুঁড়ি তার, তবে খুবই ছোট্ট। দাদুকে ফোন করে জিজ্ঞেস করেছিল পিন্টু – ওটার বয়স কত?
দাদু হেসে বলেছিলেন, “তিনমাস। তবে আরেকটু বাড়লে ওটাকে বড় টবে দিও”
পিন্টু মাঝে মাঝেই ছোট্ট টবটাকে একটা ট্রেতে করে পড়ার টেবিলে এনে রাখে। ওর সাথে গাছটাও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কিনা সেটা নজরে রাখতে হবে তো!

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!