পিতার হাতে পুত্রের কুরবানী-৩য় পর্ব

হযরত ইব্রাহীম (আঃ) পুত্রের কথা অনুসারে আস্তিনের মধ্যে রক্ষিত রশিগুলো বের করে তাদ্বারা ইসমাইলের হাত পা বেধে নিলেন। তারপর তাকে কাত করে শুইয়ে দিলেন। তারপর আস্তিন থেকে ধারালো ছুরি বের করে বিস্মিল্লাহি আল্লাহু আকবর বলে ইসমাইলের গলদেশে ছুরি চালিয়ে দিলেন। কিন্তু তার ছুরি চালোনায় কোন কায হল না। ছুরি ইসমাইল (আঃ) – এর চামড়ায় কোন ক্ষত সৃষ্টি করতে পারল না। তখন হযরত ইব্রাহীম (আঃ) আরো জোরে, শক্ত করে ছুরি রগড়াতে লাগলেন, কিন্তু না, কোন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হল না। তখন ইসমাইল (আঃ)  বললেন, পিতা আপনি ছুরির তীক্ষ্ণ মাথাটা গলার উপরে শক্তি দিয়ে চেপে ধরুন। তাহলে সম্ভবত আপনার উদ্দেশ্য সফল হবে। নবী তাই করলেন কিন্তু ছুরির তীক্ষ্ণ মাথাও চামড়ায় আদৌ ঢুকল না। তখন হযরত ইব্রাহীম (আঃ) রাগ করে ছুরি দূরে নিক্ষেপ করলেন। তখন ছুরি বলে উঠল, হে ইব্রাহীম (আঃ)! তুমি আমাকে ইসমাইলের গলা কাটার জন্য একবার বল কিন্তু মহান রব্বুল আলামীন আমাকে দশবার বারণ করেছেন। অতএব, তোমার কথার গুরুত্ব দেব না আল্লাহ তা’য়ালার কথার গুরুত্ব দেব। অএতব তুমি অন্য পন্থা গ্রহন কর। হযরত ইসমাইল (আঃ) ও হযরত ইব্রাহীম (আঃ) উভয়ে ছুরির কথা শুনলেন।

ইসমাইল (আঃ) তখন পিতাকে বললেন, হে প্রিয় পিতা! সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে তাকে জবেহ করা অত্যন্ত কঠিন কাজ। এ কাজ হয়ত আল্লাহ তা’য়ালা পছন্দ করছেন না। অতএব আপনি কাপড় দিয়ে আপনার চোখ দুটি বেধে নিন যাতে আমার চেহারা আপনি দেখতে না পান। তখন আপনার চেষ্টা অবশ্যই কাজে আসবে। হযরত ইব্রাহীম (আঃ), ইসমাইল (আঃ) – এর পরামর্শ অনুসারে নিজ চক্ষু দুটি নিলেন এবং পুর্ববৎ ইসমাইলকে কাত করে শোয়াইয়ে দিলেন। অতঃপর বিসমিল্লাহ বলে ছুরি চালালেন। এবার ছুরি সহজে চলল। কলকল রবে রক্ত প্রবাহিত হয়ে জবেহের কার্য সমাধা হল।

আল্লাহ তা’য়ালা তার নবীর শেষ পরীক্ষার সফলতা দেখে সন্তুষ্ট হলেন। যার পরিণামে আল্লাহ তা’য়ালা জিব্রাইল (আঃ) মারফত বেহেস্তে থেকে আনা এক দুম্বাকে জবেহের মুহূর্তে ইসমাইল (আঃ) এর স্থলে শুইয়ে দিয়ে ইসমাইলকে একটু দূরত্বে দাড় করিয়ে রাখলেন। যার সামান্য লেশমাত্র বুঝা নবী দ্বয়ের পক্ষে সম্ভব হয় নি। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) জবেহের কাজ সুস্টভাবে সম্পন্ন হয়েছে ভেবে আলহামদুলিল্লাহ্‌ পাঠ করলেন এবং চোখের কাপড় খুলে ফেললেন। তখন তিনি চোখে যা দেখলেন তা তাঁর বিশ্বাস হল না। তাই তিনি একবার চোখ দুটি হাত দিয়ে মুছে চতুর্দিকে তাকালেন। বাস্তব দৃশ ভাল ভাবে দেখে তিনি ক্ষাণিক নিস্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। হযরত ইসমাইল (আঃ) ও নির্বাক হয়ে পিতার দিকে তাকিয়ে রইলেন। ক্ষণিক পড়ে পিতা পুত্রের কাছে গয়ে তাকে জড়িয়ে ধরলেন এবং দু’চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে পাঠ করলেন ছোবহানাকা আল্লাহুম্মা……। অতঃপর পিতা ও পুত্র একত্রিত হয়ে শোকরানা নামায আদায়ের জন্য দাঁড়িয়ে গেলেন।

এ মুহূর্তে হযরত জিব্রাইল (আঃ) সেখানে অবতীর্ণ হলেন। তিনি সজোরে উচ্চারন করেছিলেন। “আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।” অতপর তিনি হযরত ইব্রাহীম (আঃ)  এর নিকট আসে বললেন, হে আল্লাহর দোস্ত! আল্লাহ আপনাকে ছালাম প্রেরণ করেছেন।

আল্লাহ তা’য়ালা নবীকে লক্ষ্যকরে আরো বলেছেন, “হে ইব্রাহীম! তুমি আল্লাহ তা’য়ালার উদ্দেশ্যে তোমার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করেছ। নিঃসন্দেহে এটা ছিল একটা মহা পরীক্ষা। আমি এভাবে আমার সৎ ও উদার বান্দাদের পুরস্কৃত করে থাকি। আমি সন্তান কুরবানীর ক্ষেত্রে বদল করে পশু কুরবানী দ্বারা পুরস্কৃত করেছি। এক্ষেত্রে আরো যা দিবার তা পরকালের জন্য রইল। আমি আমার সৎ নিষ্ঠাবান বান্দাদের পুরস্কার দিয়ে থাকি। ইব্রাহীম (আঃ) আমার ইমানদার, কৃতজাত বান্দাদের অন্যতম। তাকে ইসহাক নামক আর এক পুত্রের সুসংবাদ দিচ্ছি। যিনি নবী হিসেবে আমার সৎ বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত থাকবেন।”

হযরত ইব্রাহীম (আঃ) আল্লাহ তা’য়ালার প্রেরিত সুসংবাদ শুনে অত্যন্ত খুশি হলেন এবং তাঁর দরবারে শুকরিয়া আদায় করলেন। অতঃপর তিনি ইসমাইল (আঃ)  কে নিয়ে বিবি হাজেরার নিকট চলে গেলেন। সেখানে গিয়ে হাজেরাকে সমস্ত ঘটনা বললেন। হাজেরা তখন আল্লাহ তা’য়ালার শোকর আদায় করলেন।

সূত্রঃ কুর আনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী

পিতার হাতে পুত্রের কুরবানী-১ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।