পাহাড়মানব– রাগিব নিযাম জিসান

বন্দর নগরী চট্টগ্রাম।

বিরামহীন বৃষ্টি হলো গোটাদিন। এখন শান্ত হয়ে গেছে প্রকৃতি। কুসুমবাগ খুলশী এলাকায় পাহাড়ে অনেক ছিন্নমূলের বসতি। কারো টিনের চালা ঘর। কারো বা ছনের চালার ঘর।

পাহাড়ের এপাশেই বাউন্ডারির ভেতর পাঁচতলা বাড়ি। নিচ তলায় ছোট্ট ছিমছাম একটা পরিবার। মা বাবার আদরের ছোট্ট তিমূর। স্কুল শেষে ঘরে ফিরে খেলছে বাড়ির পেছনে উঠানে। বৃষ্টি থেমে গেছে অনেক আগেই।

হঠাৎ… হুড়মুড় করে ভেঙে পড়লো। পাহাড়টা জায়গামতো নেই। ভূমিধ্বসে পাহাড়ের উপর ছবির মতো বাড়ি গুলো নিমিষেই তলিয়ে নিচে ভেসে এলো।

“আম্মুউউউ” চিৎকার করে উঠলো তিমূর। মা জাহিনা এসে দেখেন উঠোনটা পুরো পাহাড় ধ্বসে ভরে গিয়েছে।

“তিমূর!!!” চিৎকার করে উঠলেন জাহিনা। যতনে আগলে রাখা ছেলেটা কোথায় গেলো?

বাবা… কোথায় তুই?

ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্স এর গাড়ী পৌঁছে গেছে এর এক ঘন্টা পর। মাটি খুঁড়ে বের করলো তিমূর কে। কিন্তু অসহায়ত্বের দিকে তাকালেন অফিসার ভবনবাসীর দিকে। অনেক দেরী হয়ে গেছে।

কবর দিয়ে ফিরে আসার পঞ্চাশ দিন পরের কথা। তিমূরের কবরটা উঁচু হতে লাগলো। একটু একটু একটু করে উচ্চতায় তা সাতদিনে টিলার রূপ নিলো। দশম দিনে মাটি ফুঁড়ে একটা হাত দেখা গেলো। এরপর পা। এরপর মাথা সহ একটা শরীর বেরিয়ে এলো।

বিষয়টা এতো হটকেকের মতো গোটা দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়লো যে, টি ২০ ওয়ার্ল্ড কাপের খেলা ছেড়ে মানুষ লাইন দিয়ে সেই ফিগারটাকে দেখতে আসলো। তখনও আটকে ছিলো শরীরটা।

কিন্তু হায়, রাতের আঁধারেই তা কোথায় যেনো চলে গেলো।

ছেলের শোকে জাহিনা ভেঙে পড়েছেন। তিনি শোকে ম্যুহমান।

ডিং ডং।

দরজা খুলে হতভম্ব হয়ে গেলেন। তার সামনে ঠিক তিমূরই দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু দুমাস আগেই না তিমূরকে কবর দিয়ে আসলেন?

অনেকক্ষণ হয় জ্ঞান ফেরে না জাহিনার।

“মা। মা।” কেউ একজন বলে উঠলো।

ঝাপসা চোখে তাকালেন জাহিনা। এ যে তার ছেলেই।

“বাবা তুই বেঁচে আছিস?” জাহিনা বললেন।

-মা আমি তো মরিনি। আমি তো বেঁচে আছি।

১১বছর পরের ঘটনা।

হায়ার মিডিয়ামে পড়া তিমূর শান্তিতে ঘুমিয়ে আছে। তার মা-বাবার মূখে প্রশান্তির হাসি। কোনো অলৌকিক কারণে বেঁচে ফিরেছে তাঁদের ছেলে।

“তিমূর। তোমার বেঁচে ফেরাটা মানুষের জন্য। সময় হয়েছে মানুষকে সেবা করার।” স্বপ্নে কেউ বলছে।

ঘুম ভেঙে উঠে গেলো হকচকিয়ে। তাহলে কি তিমূরকে কিছু করতে হবে?

-হ্যাঁ করতে হবে।

মাথা ঘুরিয়ে এক অদ্ভুত দর্শন লোক। দরবেশ মতন।

-আপনি কে?

-আমি কেউ একজন হবো। ধরতে পারো তোমার শিক্ষক। এখন থেকে তুমি শিখবে।

-শিখবো? হাহাহা। আমার তো অনেক শেখা হয়েছে। আপনি কি শেখাবেন?

-মানুষকে ভালোবাসতে শেখাবো।

সেই ১১বছর পর আবার ফিরে এসেছে বর্ষনমূখর দিন। আজ চট্টগ্রাম ভিজে যাচ্ছে বৃষ্টিতে ধুয়ে। কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিকের এডমিট কার্ড নিয়ে বাসায় ফিরে তিমূর রুমে ঢুকলো।

কড় কড় কড়াৎ। কোথাও বজ্র পড়লো।

হঠাৎ মাটি থরথর করে কাঁপা শুরু করলো। আগের বাসায় না থাকলেও এর থেকে একটু দুরে ১১টি বছর একটি ভবনে ওরা ফ্ল্যাট কিনে নিয়েছে।

-এই তিমুর কোথায় যাচ্ছিস?

-এইতো মা চলে আসবো।

টিঁউ টিঁউ টিঁউ।

সাইরেন বাজিয়ে ফায়ার সার্ভিস ঢুকছে। যে কোনো সময় ধ্বস নামতে পারে।

এবং অবশেষে তা হতে চলেছে।

“সবাই সরে দাঁড়াও।” গম গমে গলায় কে যেনো বলে উঠলো।

শরীরে কেমন যেনো একটা তাগিদ অনুভব করছে তিমূর। তার শরীরটা অদ্ভুত রকমের বড়ো হতে শুরু করেছে। ঘাস, লতায় পেঁচিয়ে ধরেছে।

থর থর। কাঁপছে পাহাড়।

হঠাৎ বিশ ফিট হয়ে গেলো তিমূর।

গুম গুম শব্দে ভারী পায়ে এসে পাহাড়ে গা ঠেকিয়ে দাঁড়ালো।

“সবাই সরে আসুন পাহাড় থেকে” দানবের মুখে হাসি। ১১বছর আগে যে তার পাহাড়ের মাটিতে মিশে গিয়েছিলো। কেউ একজনকে এদিকে আসতে দেখা গেলো যার নাম এজেন্ট রিশাদ।

এজেন্ট রিশাদ সম্পর্কে বলে রাখা ভালো, সে একজন সদ্য জয়েন করা ডিজিএফআই এজেন্ট। তাকে দ্বায়িত্ব দেয়া হয়েছে দেশের অতিমানবদের একত্রিত করার, যাদের নিয়ে একটি শান্তিমূলক সংগঠন তৈরি করা হবে যার নাম দুর্ধর্ষ সংঘ।

তিমূরকে দেখেই রিশাদ বলে উঠলো, “হু আর ইউ জেন্টেলম্যান?”

এজেন্ট রিশাদ সম্পর্কে বলে রাখা ভালো সে সদ্য জয়েন করা একজন ডিজিএফআই এজেন্ট। যাকে দ্বায়িত্ব দেয়া হয়েছে দেশের অতিমানবদের একত্রিত করা, যার উদ্দেশ্য হলো দুর্ধর্ষ সংঘ নামে একটি শান্তিমূলক সংগঠন তৈরি করা।

“আমি…? পাহাড়মানব…” হাসি ফোটালো মুখে তিমূর।

॥ পাহাড়মানব ॥

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!