নতুন একটা ফুল ফুটল বাগানে। ফুলটার সৌরভ ছড়িয়ে পরল বাগানের চারদিকে। সকল প্রাণীরা ফুলটার সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হল। প্রজাপতির দল উড়ে আসল মধু পান করতে। প্রতিদিন সকালে ফুলটা ফোটে আর সন্ধ্যায় পাপড়িগুলো গুটিয়ে রাখে। একদিন সকালে একটা বড় প্রজাপতি আসল ফুলটার মধু পান করতে। প্রজাপতিটা দেখতে দারুন সুন্দর, পাখা দুটো রংধনুর মত রঙীন। মধু পান করে উড়ে গেল প্রজাপতিটি। তারপর বাগানের বাগানের অন্য প্রজাপতিরা এসে ফুলটার কাছে জড় হল। কিন্তু একটু মধুও পেলনা কেউ। সবাই বুঝতে পারল, সব মধু ওই রংধনু রঙীন বড় প্রজাপতিটা এসে খেয়ে চলে গেছে।
পরের দিন সকালে সবাই সতর্ক থাকল। অপেক্ষা করতে লাগল রংধনু রঙীন বড় প্রজাপতির জন্য। হঠাৎ করেই রংধনু রঙীন বড় প্রজাপতিটা উড়ে এসে বাগানের ভীতর ঢুকল। তখন বাগানের সকল প্রজাপতির সৌন্দর্য রংধনু রঙীন বড় প্রজাপতির কারনে বিলুপ্তি ঘটল কিছু সময়ের জন্য। রংধনু রঙীন বড় প্রজাপতির সৌন্দর্য দেখে বাগানের সকল প্রজাপতির হিংসা হতে থাকল। সবাই এসে রংধনু রঙীন বড় প্রজাপতিটাকে ঘিরে ধরল। সবাই বলল, এই ফুলটা আমাদের জন্য ফুটেছে, এই ফুলের মধু খাব আমরা। তুমি এই ফুলের মধু খেতে পারবেনা।
রংধনু রঙীন প্রজাপটিটা বলল, তোমরা ভুল বলছ, এই ফুলটা শুধু আমার একার জন্যই ফোটে। এই ফুলের মধু আমি একাই খাব। তোমরা এই ফুলটার কাছে জিজ্ঞেস করে শুনে দেখ। সব প্রজাপতি ফুলটাকে প্রশ্ন করতে শুরু করল, ও ফুল, বল তুমি কাদের জন্য ফোটো। ফুলটা কথা বলতে শুরু করল, বলল, আমি রংধনু রঙীন প্রজাপতির জন্য ফুটি। রংধনু রঙীন প্রজাপতি আমার বন্ধু। সব প্রজাপতি তখন লজ্জা পেল। সেই থেকে রংধনু রঙীন প্রজাপতি একাই ওই ফুলটার মধু খেতে আসে। খাওয়া শেষ হলে উড়ে চলে যায় অজানার উদ্দেশ্যে।
এই দৃশ্য দেখে বাগানের অন্য সব প্রজাপতির হিংসা হয়। তাই তারা সিদ্ধান্ত নিল, রংধনু রঙীন প্রজাপতিকে মেরে ফেলবে। পরের দিন সকালে যখন রংধনু রঙীন প্রজাপটিটা মধু খেতে বাগানে আসল, অন্য প্রজাপতিরা তাকে মেরে ফেলল। সেই সাথে ফুলটাকেও মেরে ফেলল। রংধনু রঙীন প্রজাপতির লাশটা থেকে রংধনু রঙীন পাখা দুটি আলাদা করে ফেলল। পাখা দুটি ফেলে রাখল বাগানের এক কোনায়। আরেক কোনায় ফেলে রাখল রংধনু রঙীন প্রজাপতির লাশটা। আর ফুলের লাশটা বাগানের অন্য সব কিট পতঙ্গরা এসে খেয়ে ফেলল। দারুন মজা পেল তারা।
রংধনু রঙীন প্রজাপতির সুন্দর পাখা দুটো একদল পিপঁড়ার নজর নজরে পরল। তারা খুব আফসোস করতে লাগল, এত সুন্দর একটা প্রজাপতিকে কারা মারল, যার সুন্দর রংধনু রঙীন পাখা দুটো এখানে পড়ে আছে। পিঁপড়ার দল পাখা দুটো তাদের সাথে নিয়ে গেল। পাখা দুটি খুব যত্ন করে নিজেদের ঘরে এনে রাখল। আর মনে মনে খুব আফসোস করতে লাগল, আহারে প্রজাপতিটাকে কারা যেন নিষ্ঠুর ভাবে মেরে ফেলেছে।
একদিন সকালে প্রচন্ড ঝড় শুরু হল। সবাই বাঁচার জন্য প্রাণপন এদিক ওদিক ছুটতে লাগল। পানিতে তলিয়ে গেল সমস্ত বাগান। সবাই সাঁতরাতে শুরু করল। প্রজাপতিরা উড়ে পালাতে চেষ্টা করল, কিন্তু পারল না। কারণ তাদের সবার পাখা ততক্ষণে খুলে পড়ে গেছে। একে একে বাগানের সব কিট পতঙ মারা যেতে শুরু করল। অপর দিকে সেই পিপঁড়ার দল, যারা রংধনু রঙীন প্রজাপতির পাখা দুটি যত্ন করে রেখে দিয়েছিল, তাদের গায়ে পাখা গজালো। সেই পাখার সাহায্যে তারা বন থেকে উড়ে চলে গেল আর ঝড়ের হাত থেকে প্রাণে বাঁচল।
ওই পিপঁড়ার দলটি রংধনু রঙীন প্রজাপতির পাখা দুটো যত্ন করে রেখে দিয়েছিল। তাই পুরস্কার হিসেবে তাদের নিজেদের গায়েও পাখা গজালো। ফলে তারা ঝড়ের সময় উড়ে পালিয়ে প্রাণে বাঁচতে পেরেছিল। অপরদিকে হিংসুটে প্রজাপতির দল ঝড়ের কারণে মারা গেল। কারণ রংধনু রঙীন প্রজাপতির পাখা দুটি দেখে হিংসা হিংসা হত তাদের।