গল্পের ১ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
অতীত না থাকলে মানুষের কিছুই থাকতো না। এই দেখ না, অতীত আছে বলেই তো আমরা সেই অতীত থেকে স্মৃতি রোমন্থন করতে পারছি। আসলে প্রত্যেকটা মানুষের জীবনেই কিছু না কিছু সুখের স্মৃতি থাকে যেগুলো কখনও মুছে যাবার নয়। জীবনের কোনো না কোনো বাঁকে মানুষ সেগুলো স্মরণে আনে এবং সেখান থেকে আনন্দের পাশাপাশি অনুপ্রেরণাও সংগ্রহ করে। তোমার কি ভালো লাগছে না এসব মনে করতে?’
‘হ্যাঁ তা লাগছে। কিন্তু খারাপও লাগছে।’
‘খারাপ লাগছে তোমার? কেনো?’
একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন রাহেলা বেগম। বললেন, ‘না এমনি বললাম আর কি। আসলে স্মৃতিই মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে, এগিয়ে যেতে প্রেরণা জোগায়।’
‘রাতুল প্রাইভেট পড়ে এখনও বোধহয় ফেরেনি।’ হঠাৎ প্রসঙ্গ বদল করেন শামসুল হক। ‘তুমি ওদের দিকে একটু ভালো করে খেয়াল রেখো। আমি তো সময় পাইনে। তুমিও ঢিলা দিলে শেষে বিপথে চলে যেতে পারে।’
‘এ ব্যাপারে তুমি কোনো চিন্তা কোরো না। আমার ছেলেমেয়রা অমন না। বাপ-মায়ের মনে কষ্ট দেয়ার মতো কোনো কাজই ওরা করবে না, এ আমি জোর দিয়েই বলতে পারি।’
‘সে বিশ্বাস আমারও আছে। আছে বলেই তো এতটা নিশ্চিন্ত থাকতে পারি। কিন্তু সমাজটা তো খুব ভালো না। তাই একটু সতর্ক থাকাই ভালো।’ একটু থামলেন তিনি। তারপর আবার বললেন, ‘এই দেখ, তোমার সাথে কথা বলে আমার মনটা ভালো হয়ে গেল। এবার যাও, একটু বরফ কোথাও পাও কি-না দেখ।
আর শোনো, যাওয়ার সময় রেহানা মাকে একটু পাঠিয়ে দিও আমার কাছে।’
রাহেলা বেগম একটু মুচকি হাসলেন। তারপর বেরিয়ে গেলেন।
রাহেলা বেগম বেরিয়ে যেতেই চিন্তায় মগ্ন হলেন শামসুল হক। মনটা তার এখন অনেক হালকা লাগছে। মনে হচ্ছে জগদ্দল একটা পাথর তার বুকের ওপর থেকে নেমে গেছে এইমাত্র। আসলে তার স্ত্রীর কোনো তুলনায় হয় না। এমন স্ত্রী পাওয়া ভাগ্যেরই ব্যাপার বটে। তিনি ভাগ্যবান। তার জীবনের সুখ-দুঃখগুলোকে রাহেলা বেগম ভাগ করে নেয় বলে কখনও নিজেকে অসহায় মনেই হয় না।
চরম সময়েও পরম প্রশান্তির পরশ পান তিনি তার স্ত্রীর কাছ থেকে। পথের বাঁকে হঠাৎ আলোর সন্ধান পাওয়ার মতো সামনে এগিয়ে যান তিনি। নব উদ্যমে পা ফেলেন সম্মুখে। স্বপ্ন দেখেন আলোকিত ভবিষ্যতের।
সুখেই আছেন তিনি। স্ত্রী কিংবা ছেলেমেয়ে কেউই তার সামর্থ্যের বাইরে কিছু দাবী করে না। ওরা তার পজিশন বোঝে। তিনিও ওদেরকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসেন।
তবে রেহানাকে নিয়েই তার যতো চিন্তা। বিয়ের বয়স পার হয়ে গেলেও মেয়ের জন্যে কিছুই করতে পারছেন না তিনি। এই একটা বিষয় তাকে সর্বদা কুরে কুরে খাচ্ছে। চেষ্টাও কম করছেন না।
কিন্তু মিলাতে পারছেন না। মেয়ে তার চাপা স্বভাবের। নিজের থেকে কিছুই বলে না। কিন্তু তিনি তো সব বোঝেন। আর বোঝেন বলেই দহনে পুড়তে থাকেন। এখন সবকিছু মহান প্রভুর কাছে সপে দিয়েছেন। তিনিই একটা ব্যবস্থা করে দেবেন নিশ্চয়ই। কেনো দেবেন না? তাকে ডাকতে তো কখনও ভুল হয় না তার। প্রভুকে তার ডাকে সাড়া দিতেই হবে।
বাস্তবে ফিরে এলেন শামসুল হক। যে মেয়েকে জীবনে কোনোদিন একটা ফুলের টোকাও দেননি, সেই মেয়েকে আজ কি-না তিনি বকেছেন? না না, মেয়েকে বকা তার ঠিক হয়নি।
খুবই কষ্ট পেয়েছে নিশ্চয়ই মেয়েটা। কি করলে ও সব ভুলে যাবে তা-ই ভাবতে রাগলেন তিনি। পেয়েও গেলেন। স্বস্তির একটা দীর্ঘশ্বাস তাই তার ফুসফুস থেকে বেরিয়ে এলা।
দরোজার বাইরে পায়ের মৃদু আওয়াজ শোনা গেলো। ওপাশেই থেমে গেল।
শামসুল হক বললেন, ‘আয় মা, ভেতরে আয়।’
ধীরে ধীরে রুমে প্রবেশ করল রেহানা। বাবার সামনে এসে জড়সড় হয়ে দাঁড়ালো।
শামসুল হক পরম স্নেহে মেয়ের মাথায় হাত রাখলেন।