গল্পের শেষ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
‘আচ্ছা রাহেলা, তোমার মনে আছে সেই দিনগুলোর কথা, যখন আমরা গ্রামে থাকতাম। ছোটখাট ব্যবসা করতাম আমি। সকালে বেরিয়ে যেতাম আর সন্ধ্যার আগেই ফিরে আসতাম। তুমি গরম ভাত হাজির করতে সামনে। আমি খেতাম আর তুমি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতে। আমি কতবার বলেছি, কিন্তু তুমি কখনও আমার সাথে খেতে রাজি হওনি। বলতে, ‘তোমার খাওয়া না দেখলে আমার মন ভরে না।’ রেহানা তখন সবে পাঁচ বছরে পা দিয়েছে।
ওকে নিয়ে আমাদের কত স্বপ্ন, কত পরিকল্পনা! তুমি ওকে কারণে-অকারণে বকতে। সন্ধ্যায় আমি বাড়ি ফিরলেই ও এগিয়ে এসে সব নালিশ করত।
আমি তোমাকে মানা করতাম আর ও তাতে কত আনন্দ পেত! ওকে আমি আদর করতাম বলে তুমি আমাকে প্রায়ই বলতে, ‘ওকে যে অত মাথায় তুলছ, শেষে নিচে নামাতে পারবে তো?’
আমি বলতাম, ‘দূর! মেয়েকে আদর করব না তো কাকে করব? মেয়ে আমার খুব বুদ্ধিমতি। ঠিক আমার দাদির মতো।’ তোমার মনে আছে রাহেলা?’ এতগুলো কথা একসাথে বলে হাফাতে লাগলেন শামসুল হক।
রাহেলা বেগম বললেন, ‘আমার সব মনে আছে, সব! দু’জনেই যেনো কোন্ সুদূর অতীতে ফিরে গেছেন। জীবনের এ্যালবাম থেকে খুঁজে ফিরছেন সুখের ফ্রেমে বাঁধা ছবিগুলো। কিছুটা সময়ের জন্যে হলেও পুলকিত হয়ে উঠলো তাদের উভয়ের হৃদয়। সুখ-সাগরে ভেসে চলল।
হঠাৎ প্রশ্ন করলেন শামসুল হক, ‘আচ্ছা রাহেলা, আমরা গ্রাম ছেড়েছি ক’বছর হলো?’
রাহেলা বেগম বললেন, ‘হঠাৎ এ প্রশ্ন কেনো?’
‘আহা বলোই না।’
‘তা বোধহয় চোদ্দ বছর হবে।’
‘আমরা যখন এই শহরে প্রথম এলাম তখন রাতুলের বয়স তিন বছর আর রাকিব তোমার পেটে। আর এখন আমাদের রাকিবের বয়স বারো চলছে। ও এখন এইটে পড়ছে। অথচ মনে হয় এই তো সেদিনের কথা। রাকিব ভূমিষ্ট হলো। জানো রাহেলা, আমি সবসময় ইংরেজি ওই কথাটা মনে রাখতাম, If you run a race against time, time will win. যদি তুমি সময়ের সাথে দৌড়ের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হও, তবে সময়ই জয়ী হবে। কিন্তু এখন আর ওসব মনে থাকে না।
সবকিছু কেমন ভুলো ভুলো লাগে। আসলে বয়স বাড়ছে তো!’ একটু হাসলেন তিনি, শব্দ না করে।
আবার শুরু করলেন,
‘আমার মাঝে মাঝে কি মনে হয় জানো? মনে হয়, তুমি যদি আমার পাশে না থাকতে তাহলে আমি অনেক আগেই নিঃশেষ হয়ে যেতাম। জীবনের এতটা পথ পাড়ি দেয়া আমার একার পক্ষে কিছুতেই সম্ভব হতো না। আজ তো ছোট একটা গর্তে পা পড়ে পা’টা কেবল একটু মচ্কে গেছে, অন্যথায় আরো বড় কোনো গর্তে কবেই হারিয়ে যেতাম আমি।’
‘আহা থাক না ওসব।
খালি খালি ওসব অতীত টেনে আনছো কেনো?’ রাহেলা বেগম প্রসঙ্গ পরিবর্তন করতে চাইলেন।
কিন্তু শামসুল হকের আজ কিসে পেয়ে বসেছে, তিনি থামতে পারলেন না। বললেন, ‘অতীত আছে বলেই তো মানুষ বেঁচে আছে।