গল্পের ৩য় অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
দরোজা খুলে দিল রেহানা শামসুল হকের একমাত্র মেয়ে। ভাইবোনের মধ্যে সবার বড় সে।
শামসুল হক ভেতরে প্রবেশ করলেন। ‘তোমার মা কই?’ জিজ্ঞেস করলেন তিনি।
‘মা একটু শুয়ে আছেন।’ জবাব দিল রেহানা।
‘কেনো, এই অবেলায় শুয়ে কেনো?’
‘না, মানে—’
‘তুমি কি জন্য এসেছো দরোজা খুলতে?’ ঝাঁঝিয়ে উঠলেন শামসুল হক।
চমকে উঠলো রেহানা। একি! বাবা এমন রেগে যাচ্ছেন কেনো? তিনি তো কোনো সময় তার ছেলেমেয়েদের উপর রাগ করেন না। আজ হঠাৎ কি এমন হলো?
‘আব্বা আপনি—’
রেহানা কথা শেষ করতে পারে না, আবার ঝাঁঝিয়ে ওঠেন শামসুল হক, ‘ওভাবে তালগাছের মতো দাঁড়িয়ে আছো কেনো? যাও সামনে থেকে! যত্তসব..’ গজ গজ করতে লাগলেন তিনি।
দ্রুত কেটে পড়লো রেহানা পরিস্থিতি উত্তপ্ত হবার আগেই। হন্তদন্ত হয়ে প্রবেশ করলেন মা। জিজ্ঞেস করলেন, ‘কি হয়েছে? মেয়েটাকে ওভাবে বকাবকি করছ কেনো?’
‘বকব না মানে? তোমার মেয়ে একটা—, দিন দিন ধাড়ি হচ্ছে আর—’ বলতে বলতে নিজের রুমের দিকে এগিয়ে গেলেন তিনি। পেছন পেছন গেলেন রাহেলা বেগম। স্বামীর খুঁড়িয়ে হাঁটা খেয়াল করে বললেন, ‘একি গো! তুমি অমনভাবে খোড়াচ্ছ কেনো? তোমার পায়ে কি হয়েছে?’
শামসুল হক কড়া ভাষায় কিছু কথা বলার জন্য প্রস্তুতি নিয়েই ফেলেছিলেন। কিন্তু কিছুই বললেন না। ছাতাটা একপাশে রেখে খাটে বসে পড়লেন। রাহেলা বেগম জামা-কাপড় পাল্টাতে সাহায্য করলেন। তারপর এক গেলাস ঠান্ডা পানি এনে দিলেন। শামসুল হক নীরবে পান করলেন। রাহেলা বেগম খালি গেলাসটা টেবিলে রেখে এসে স্বামীর পাশে বসলেন। নরম সুরে বললেন, ‘কি হয়েছে তোমার? শরীর খারাপ করছে? মাথাটা একটু টিপে দিই?’
শামসুল হক কি বলবেন তা যেনো একটু গুছিয়ে নিলেন। তারপার বললেন, ‘মানুষ এমন কেনো গো?’
‘কেনো একথা বলছ?’
‘রেহানা খুব কষ্ট পেয়েছে, তাই না?’ উত্তরের অপেক্ষা না করে বলেই চললেন, ‘আসলে কেনো যে ওকে বকলাম তা আমি নিজেও জানিনে। বাস থেকে নেমে কয়েক পা এগোতেই একটা গর্তে পা পড়ে মচ্কে মতো গেলো, তারপরই মনটা কেমন খারাপ হয়ে গেলো। আর সেই রাগ–’
‘তুমি বরং শুয়ে পড়। আমি দেখি জাহানারা ভাবিদের ফ্রিজে বরফ পাওয়া যায় কি না।’ উঠতে গেলেন রাহেলা বেগম।
শামসুল হক তাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, ‘তোমার মনে খুব দুঃখ, তাই না? জীবনে তো কিছুই দিতে পারলাম না তোমাকে। হ্যাঁ, অনেক দুঃখ ও অভাব দিতে অবশ্য পেরেছি। আমি এক ব্যর্থ মানুষ!’ কেমন উদাস হয়ে গেলেন শামসুল হক।
‘এই, কি হয়েছে তোমার সত্যি করে বল তো! আমি কি তোমার কাছে কোনো সময় ওসব সুখ-টুক চেয়েছি? তুমিই তো আমার সুখ আর আনন্দ। আমি তো শুধু তোমাকেই চেয়েছি এবং পেয়েওছি। আর কোনো চাওয়ার নেই আমার। খবরদার! ওসব কথা আর কখনো বলবে না। তাহলে কিন্তু আমি খুব কষ্ট পাবো।’ ধরে এলো রাহেলা বেগমের গলা। ছলছল করে উঠেছে চোখ জোড়া।
গল্পের ৩য় অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন