পথের বাঁকে–জুবায়ের হুসাইন-১ম পর্ব

গল্পের ২য় অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

শামসুল হকের মনটা হঠাৎ করে খারাপ হয়ে গেছে। তিনি নিজেও বুঝতে পারছেন না কেনো তার মনটা খারাপ হলো। অথচ যে কারণে মন খারাপ, সেটা বড় কোনো বিষয় নয়।

অফিস শেষে বাসে করেই বাড়ি ফিরছেন তিনি। প্রতিদিনকার মতো আজও বাস থেকে নামলেন। এখান থেকে তার বাসা রিকসায় করে গেলে আট টাকা ভাড়া। কিন্তু তিনি কোনোদিনই এই আট টাকা খরচ করেননি। এটাকে তিনি বেহুদা খরচ মনে করেন। অর্থাৎ পায়ে হেঁটেই পাড়ি দেন পথটুকু। অবশ্য মাথার উপর একটা ছাতা মেলানো থাকে কী বর্ষা, কী রোদ সবসময়।

পড়ন্ত এই বিকেলে রোদের তেজ না থাকলেও ছাতা বন্ধ করেননি তিনি। হয়ত বা খেয়ালও করেননি যে এখন ছাতা না মেলিয়েও নিশ্চিন্তে পথ পাড়ি দেয়া যায়। দীর্ঘদিনের অভ্যাস বলেই কথা।

বাস থেকে নেমে কেবল কয়েক কদম এগিয়েছেন তিনি এই সময়ই ঘটলো ঘটনাটা। পিচঢালা রাস্তা হলেও এখানে ওখানে খোয়া উঠে গিয়ে ছোট বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। তেমনই একটি গর্তে শামসুল হকের বাম পা পড়ে। আর তাতেই মুহূর্তে মনটা তেতো হয়ে ওঠে তার। ‘উহ!’ করে ব্যথায় ককিয়ে ওঠেন একবার।

মনে মনে গর্তটাকে কষে কয়েকটা গাল দেন তিনি। তবে তার এই গালিতে কোনো অশালীন শব্দ নেই।
এখন একটু খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছেন মাঝ বয়স ছাড়িয়ে যাওয়া লোকটা। পা’টা বুঝি মচকেই গেলো- ভাবলেন তিনি।
শামসুল হকের মন খারাপের কারণ এটাই।

এর আগে অনেক বড় বড় ঘটনা তার জীবনে ঘটে গেছে। কোনো সময়ই তার এতো মন খারাপ হয়নি। হাসি মুখে সব সহ্য করেছেন তিনি। বুঝতেও দেননি কাউকে তার মন খারাপের কথা। আর আজ কি-না!

আসলে মানুষের মনটা বড়ই বিচিত্র। কখন কি কারণে মন ভালো হয়ে ওঠে, কোন্ কারণে মন খারাপ হয় তা বলা মুশকিল। মন নামক জিনিসটার কূল পাওয়ার সাধ্য বোধহয় কারোরই নেই। তাই মন নামক জিনিসটাকে মাঝে মাঝে তার কাছে জটিল এক রহস্য বলে মনে হয়। এ রহস্যের জাল ছিন্ন করতে চেষ্টাও তিনি করেননি।
আকাশে কী আজ মেঘ জমেছে?

মুখ তুলে আকাশপানে তাকান শামসুল হক। কই? নীল আকাশই তো দেখা যাচ্ছে, রোজই যা দেখা যায়। মাঝে মাঝে পেঁজা তুলোর মতো খ- খ- সাদা মেঘ ভেসে যাচ্ছে। হেমন্তের মেঘশূন্য আকাশ বলে কথা! কিন্তু তার মন জুড়ে কেনো এতোগুলো কালো মেঘ? ক্রমেই যেনো ভারি হচ্ছে মেঘগুলো। তিনি বুঝতে পারেন না এ কিসের আলামত। কিছুটা ভয়ও পাচ্ছেন তিনি এখন।

দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলেন আকাশ থেকে। কী এক অস্বস্তিতে তান মনটা ছেয়ে গেছে। প্রচ- তেষ্টা পেয়েছে তার। পাশে একটি হোটেল থাকলেও সেখানে গিয়ে পানি খেতে ইচ্ছে করছে না। লাগুক তেষ্টা। পাক কষ্ট।

পাঁচতলা বিল্ডিংয়ের দো’তলায় শামসুল হক তার পরিবার নিয়ে ভাড়া থাকেন। স্ত্রী, এক কন্যা ও দুই পুত্র নিয়ে তার সংসার।
আজ এটুকু সিঁড়ি টপকাতেই হাফিয়ে উঠলেন তিনি। পায়ের ব্যথাটা আরো বেড়ে গেছে এই মুহূর্তে।
দরোজার সামনে দাঁড়িয়ে দেয়ালে হেলান দিয়ে রীতিমতো হাফিয়ে নিলেন দুই মিনিট। তারপর দরোজায় টোকা দিলেন অভ্যাস মতো। আগে কলিং বেল ছিল, নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর তা আর ঠিক করা হয়নি।

গল্পের ২য় অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!