
এক রাজার এক কন্যা ছিল, যে ছিল অত্যন্ত সুন্দরী। এই সুন্দরী রাজকন্যার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যে-ই আসতো, তাকেই মহাবিপদে পড়তে হতো। একদিন এক ন্যাড়া—মানে মাথায় চুলবিহীন লোক—ভাবলো, রাজকন্যাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিলে কেমন হয়। যেমন ভাবা তেমন কাজ। ন্যাড়া তার পুটলিতে পাঁচটি রুটি পুরে রওনা দিলো রাজকন্যাকে বিয়ে করতে।
পথে পড়লো একটা বন। বনের ভেতর বসে ছিল এক দৈত্য, ক্ষুধার্ত আর রুষ্ট। দৈত্য এমনভাবে দাঁতে দাঁত পিষাচ্ছিল, যেন বহুদিন ধরে কিছু খায়নি। ন্যাড়া তার পুটলি থেকে রুটিগুলো বের করে দৈত্যকে দিয়ে দিলো। দৈত্য খেয়ে তৃপ্ত হলো। ন্যাড়া যখন আবার রওনা দিলো, দৈত্য বললো, “এই ন্যাড়া! আমার একটা চুল নিয়ে যা, কাজে লাগবে।” ন্যাড়া সেই চুল নিয়ে যাত্রা শুরু করলো।
কিছু দূর গিয়ে সে দেখলো, আরেক দৈত্য ঝর্ণার উৎসের পাশে শীতে কাঁপছে। দয়া করে ন্যাড়া তার কোর্টটি খুলে দৈত্যের গায়ে জড়িয়ে দিলো। কৃতজ্ঞ দৈত্য বললো, “আমার একটা চুল নিয়ে যা, কাজে আসবে।” ন্যাড়া দ্বিতীয় চুলটিও নিয়ে রওনা হলো।
এগিয়ে গিয়ে সে পৌঁছালো এক নদীর তীরে। সেখানে দেখলো, একদল পিঁপড়া নদী পার হতে পারছে না। সহৃদয় ন্যাড়া কাঠের একটা টুকরো পানিতে ফেলে সেতু তৈরি করলো, যাতে পিঁপড়ারা পার হতে পারে। যাওয়ার সময় পিঁপড়াদের রাজা ন্যাড়াকে তার একটি চুল উপহার দিলো। ন্যাড়া সেই চুলটিও যত্ন করে রেখে আবার যাত্রা করলো।
শেষ পর্যন্ত সে পৌঁছালো রাজপ্রাসাদে। দরোজায় কড়া নাড়তেই এক দারোয়ান এসে জিজ্ঞেস করলো, “কী চাও?”
ন্যাড়া বললো, “এসেছি রাজকন্যার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে।”
দারোয়ান জানতে চাইলো, “কার জন্য?”
ন্যাড়া উত্তর দিলো, “আমার জন্য!”
লোকটি গিয়ে বাদশাকে জানালো। বাদশা বললো, “হাম্মাম রেডি করো। ন্যাড়াকে সেখানে ফেলে দাও।”
এই হাম্মামটি সাত দিন সাত রাত ধরে গরম করা হয়। যে-ই রাজকন্যার বিয়ের প্রার্থী হয়, তাকে এই ফুটন্ত পানিতে ফেলে দেওয়া হয়, যা নিশ্চিত মৃত্যু।
বাদশার লোকটি ন্যাড়াকে বললো, “যারা রাজকন্যার প্রার্থী হয়, তাদের এই হাম্মামে গোসল করতে হয়।”
ন্যাড়া যখন হাম্মামের কাছে গেলো, বুঝতে পারলো এটি মরণফাঁদ। দেয়ালগুলো লাল হয়ে আছে, ফুটন্ত পানির শব্দ কানে আসছে। তখন তার মনে পড়লো দৈত্যের দেওয়া দ্বিতীয় চুলটির কথা। চুলটি আগুনে পুড়তেই দৈত্য এসে হাজির। ন্যাড়া তাকে বিপদের কথা বলতেই দৈত্য বললো, “চিন্তা করো না।” এরপর দৈত্য এক দীর্ঘ শ্বাস নিলো, আর হাম্মামের সমস্ত তাপ তার বুকে টেনে নিলো। হাম্মাম মুহূর্তেই ঠাণ্ডা হয়ে গেলো।
পরদিন সকালে বাদশার লোক এসে দেখে, ন্যাড়া নিশ্চিন্তে গোসল করে বসে আছে! এই দেখে বাদশা এবার নতুন কৌশল নিলো।
তাকে দেওয়া হলো তিন শ কিলো চালের ভাত ও তিন শ কিলো মাংস। বলা হলো, “পুরোটা না খেতে পারলে গর্দান যাবে!”
ন্যাড়া এবার প্রথম দৈত্যের চুলটি আগুনে পুড়লো। দৈত্য সাথে সাথে এসে হাজির হলো। ঘটনা শুনে দৈত্য এক নিমেষে সব খাবার সাবাড় করে দিলো। এবারও ন্যাড়াকে আটকানো গেলো না!
বাদশা এবার আরেক কৌশল নিলো।
এক গাধা যতটা ওজন টানতে পারে, তার তিনগুণ পরিমাণ গম, যব, আর ডাল একসাথে মিশিয়ে ন্যাড়ার সামনে রাখা হলো। বলা হলো, “এসব আলাদা করতে হবে, না পারলে গর্দান যাবে!”
ন্যাড়া এবার সত্যি বিপদে পড়লো। তারপর তার মনে পড়লো পিঁপড়ার রাজার দেওয়া চুলটির কথা। চুলটি আগুনে পুড়তেই পিঁপড়ারা এসে হাজির হলো। পিঁপড়াদের রাজা বললো, “এটা তোমার কাজ না, তুমি নিশ্চিন্তে ঘুমাও!”
ন্যাড়া ঘুমিয়ে পড়লো। সকালে উঠে দেখে, শস্যগুলো আলাদা হয়ে সাজানো!
বাদশা এবার বুঝতে পারলো, এই ন্যাড়াকে হারানো সম্ভব নয়। তাই সে রাজকন্যার সঙ্গে তার বিয়ের ব্যবস্থা করলো।
এক সপ্তাহ ধরে ধুমধাম করে বিয়ের আয়োজন হলো।
কিন্তু তখনই ঘটলো নতুন ঘটনা।
এই রাজকন্যাকে ভালোবাসতো এক দৈত্য। সে খবর পেয়েই বিয়ের পর রাজকন্যাকে ছিনিয়ে নিয়ে গেলো! ন্যাড়া আবার বিপদে পড়লো।
রাজকন্যার বুদ্ধিমত্তা ও সহযোগিতায় ন্যাড়া শেষ পর্যন্ত দৈত্যকে পরাজিত করলো। দৈত্য মারা গেল, আর ন্যাড়া রাজকন্যাকে নিয়ে সুখে-শান্তিতে জীবন যাপন করতে লাগলো।