প্রতিদিনের মতো মনিরার গৃহে রাত নেমে আসে নিঃসঙ্গতা আর একাকিত্বের কাঁধে ভর দিয়ে। নিদ্রাহীন রাত বিছানায় এপাশ-ওপাশ করে পার হয়ে যায়। ফজরের আজান শোনা গেলে মনিরা বিছানা ত্যাগ করে। এ সময় তার স্বামী নিয়ামত ঘরে ফেরে ডিউটি শেষ করে। ঘরের বেড়ায় লাগানো পেরেকে গায়ের শার্টটা খুলে ঝুলিয়ে রাখে। লুঙ্গি পরে হাই তুলতে তুলতে যায় শৌচাগারের দিকে। মনিরা নিয়ামতের খাবার প্লেটে বেড়ে ঢাকনা দিয়ে রাখে। নিজে সামান্য পরিপাটি হতে হতে বলে ‘ভাত বাইরে রাখছি। খাইয়ে নাও, আমি কামে যাতিছি’। ‘বেজায় ঘুম পাইছে রে বউ। ঢাহা থাহুক, পরে উইঠে খাবানি।’ ‘শুন, ঘরে কপাট দিয়া ঘুমাবা কলাম। তুমার তো কোনো হুঁশ থাহে না। দিনেদুপুরে তুমার লাহান মরদ মানুষ ঘরে থাকতি কাইল আমার ভাত রান্দার বড় পাতিলডা চোরে নিছে ক্যাম্বায়?’ কথাগুলো বলতে বলতে মাথায় লম্বা কাপড় তুলে চলে যায় মনিরা তার নির্ধারিত বাড়িতে ছুটা বুয়ার কাজ করতে। সকালে গিয়েই বেগম সাহেবের ঘরদুয়ার পরিষ্কার করে। নাস্তা বানানো, দুপুরের রান্না ও রাতের রান্না শেষ করে সন্ধ্যার পর ঘরে ফেরে। রাতের খাবার বেগম সাহেবকে বলে বাড়ি নিয়ে আসে সে।
সারা দিনের ক্লান্তি আর ঘাম ধুয়ে ফেলতে গোসল সেরে মনিরা যখন ঘরে আসে তখন নিয়ামত নাইটগার্ডের পোশাক পরে গুলশানের এক আলিশান বাড়ির ডিউটিতে যাওয়ার জন্য তৈরি। ঘরে ঢুকে মনিরা শাড়িটা গুছিয়ে পরে। ভেজা চুলগুলো সুন্দর সিঁথি কেটে আঁচড়িয়ে পিঠের ওপর ছেড়ে দেয়। তাকের ওপর হাত বাড়ায় সেখান থেকে হেনোলাক্স ক্রিমটা নিয়ে মুখে লাগায়। সুগন্ধিতে মনটা যেন ফুরফুরে হয়ে যায়। রূপ যৌবন কোনোটাই কম দেননি বিধাতা মনিরাকে। সেই সাথে আরো দিয়েছেন দরিদ্রতাও। স্বামী-স্ত্রী দু’জনে মিলে বেগমসাহেবের বাড়ি থেকে আনা ভাত ভাগ করে খায়। তাতেই তৃপ্ত। মনিরার এখন অখণ্ড অবসর। একখিলি পান নিয়ে রঙিলা ভঙ্গিতে গা ঘেঁষে নিয়ামতের সামনে দাঁড়ায়। মুখের কাছে একখিলি পান তুলে ধরে। যেন নিয়ামত একটু হা করলেই নিজহাতে নিয়ামতের মুখে পুরে দেবে পরম আহলাদে। মোটাবুদ্ধি সম্পন্ন নিয়ামতের এ ভাষা বোঝার ক্ষমতা কোথায়? সে স্ত্রীর হাত থেকে পানটা নিয়ে মুখে পুরে কোমরের বেল্ট বাঁধতে বাঁধতে রওনা দেয় কাজে।
মনিরা আলতো করে পেছন থেকে কোমর জড়িয়ে ধরে বলে, ‘শুন, একরাইত ডিউটিতে না গেলি কি হয় না?’ কও কি বউ! তাইলে আমার নাইটগার্ড চাকরি কি থাকবেনে? একলা ঘরে রাত্তির বেলায় ডর করে। ডর কিসের? কি জানি, মনে হয় কিডা যেন সারা রাত্তির ঘরের চারপাশ দিয়ে খচর-মচর করে হাঁটাহাঁটি করতিছে। ধুর! ওসব তুমার মনের ডর। আসলে কিচ্ছু না। নিয়ামতের বুকের ওপর মাথাটা রেখে মনিরা বলে আমার মনে হয় চোর আসে রোজ রাত্তিরে। বুকা কুথাকার! আমার মতো গরিবের এই ভাঙাঘরে চোর আইসে কি করবি। কি এমন মূল্যবান জিনিস আমার আছে যে চোরে নিতি আসবি আন্ধার রাইতে। নিয়ামতের এই হতদরিদ্র জীবনে সব চেয়ে মূল্যবান তার চাকুরি। সেটাকে যেকোনো মূল্যে টিকিয়ে রাখতে হবে। বুকের ওপর মিশে থাকা স্ত্রী মনিরার মুখের থুঁতনিটা হাত দিয়ে তুলে ধরে। মনিরার স্বামীর সোহাগের পরশে আস্তে যেন চোখ দুটো মুদে আসে।
অনুভব করে হয়তো এখনি তাকে নিয়ে যাবে কোনো এক অতৃপ্ত স্বর্গসুখের দোরগোড়ায়। নিঃশ্বাস ঘন হয়ে আসে। অপেক্ষায় দ্রুত ওঠানামা করছে হৃদযন্ত্রটি। কিন্তু চোখ মেলে দেখে নিয়ামত তার মুখটা সরিয়ে নিজের শার্টের বুক পকেটে হাত দিয়ে দেখে নিল প্রহরীর বাঁশিটা পকেটে ঠিকমতো আছে কি না। নিয়ামত চলে যায় কাজে। মনিরা কপাট লাগিয়ে বিছানায় এসে শুয়ে পড়ে। ঘরে স্ত্রীর কাছে স্বামীর দায়িত্ব পালন করতে পারুক বা না পারুক কর্মক্ষেত্রে নিয়ামত কর্তব্যপালন করে যাচ্ছে নিষ্ঠার সাথে। অন্ধকার গলিতে নিজের ভাঙা ঝুপড়ি ঘরে তরুণী স্ত্রী কতখানি নিরাপদ, সে ভাবনার চেয়ে সাহেবের আধুনিক সুসজ্জিত প্রাচীরঘেরা বাড়িটারে নিরাপদে রাখা তার কাছে অতি জরুরি। বাড়ির প্রতিটা কোণায় সার্চলাইটের আলো জ্বলজ্বল করছে।
গেটের দুই ধারে গোলাকার কাঁচের বলের মধ্যে আলো জ্বলছে সার্বক্ষণিক। সেই বাড়িটাকে রাতের আঁধারে আরো সুরক্ষিত ও নিরাপদ রাখার জন্য নিয়ামতের সতর্ক প্রহরা। দু’দণ্ড ঘুম নেই চোখের পাতায়। মাঝে মধ্যে বুক পকেট থেকে বাঁশি বের করে হুঁশিয়ারি সঙ্কেত দেয়। রাতে মনিরা বিছানায় একা। মনে হয় ঘরের বাইরে খচমচ শব্দ। মনে হয় টিনের বেড়ায় কে যেন টোকা দিলো। মনিরা শিউরে ওঠে। কান খাড়া করে। আবারো টোকা দেয়ার শব্দ। ভয়ে মুখে কোনো শব্দ বের হচ্ছে না। জড়সড়ো হয়ে হাতের কাছে বটিটা নিয়ে বসে। নির্ঘুম রাত পেরিয়ে যায়। এ দিকে সাহেবের বাড়ির বিলেতি কুকুরটা ঘেউ ঘেউ করে ডেকে ওঠে। নিয়ামত বুক পকেট থেকে বাঁশিটা বের করে জোরে ফুঁকে। হাতের টর্চ জ্বালিয়ে বাড়ির কোনায় কোণায় পরখ করে। ঝাউগাছের তলা ফুলগাছের ঝোপ ভালো করে দেখে নেয়। আবারো বাঁশিতে ফুঁ দেয়। না কোথাও কেউ নেই।
সকালে উঠে মনিরা বেগম সাহেবের বাড়িতে কাজে যায়। ড্রেসিংটেবিলের ধুলো মোছে আর ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখে ফারফিউমের নকশী করা বোতলটা দেখতে ভারি চমৎকার! বেগম সাহেব লক্ষ করেন তা। এ বাড়ির সব কিছুই চমৎকার লাগে মনিরার কাছে। যেমন চমৎকার বেগম সাহেবের ছোট শিশুপুত্রটি। বড্ড মায়া! মনিরা তাকে নিয়েও কাজের ফাঁকে ফাঁকে খেলা করে। শিশুটিকে দেখে যেন মাতৃবাৎসল্য জেগে ওঠে নিজের অজান্তে। রঙিন টিভিতে হিন্দি সিনেমা দেখে আর অবাক হয়ে ভাবে কী চমৎকার, কী স্ন্দুর প্রেম ভালোবাসা ! বেগমসাহেব আজ বাড়ি আসার সময় তার অর্ধব্যবহৃত সেই পারফিউমের বোতলটা মনিরাকে দিয়ে দিলো। তলায় একটুখানি পারফিউম আছে। সেটা নিয়ে বাড়ি ফেরে মনিরা। বোতলটা বের করে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখে। সাজিয়ে রাখবে ঘরের কোনোখানে।
হঠাৎ টিপ পরে বোতলের মুখে। ফুস করে ধোঁয়ার মতো বের হয়ে মনিরার ব্লাউজের সামনের বেশখানিকটা ভিজে যায়। কেমন শিরশির করে ওঠে শরীর। আহা কি দারুণ বাসনা! নিয়ামত বলে, ‘কিসের শব্দ যেন হুনলাম! হ ঠিকই হুনছো। কিসের শব্দ? কোনখানে? মনিরা এগিয়ে কাছে যায়। নিয়ামতের চোখের সামনে গিয়ে বলে, এই হানে। নিয়ামত হা করে তাকিয়ে থাকে। এর ভেতর থেকে শব্দ হয় কিভাবে বুঝে উঠতে পারে না। বিশ্বাস হয় না? নাকটা লাগায়ে দেহ কোন বাসনা পাও কি না। নিয়ামত তবুও বুঝতে পারে না কি বলছে। একটান দিয়ে বুকের কাপড়টা সরিয়ে ফেলে নিয়ামতের মাথা টেনে নাকটা লাগিয়ে দিয়ে বলে, আমার কোনো কথাই তোমার বিশ্বাস হয় না, না? মিথ্যা কইছি কি না দেহ শুঁইকে। মাথা তুলে বলে, হ, খুব সুন্দার বাসনা। ভাত দিবা না খাতি? কামে যাওয়ার সুমায় পার হইয়ে যাচ্ছে। মনিরা ভাতের থালা ধাক্কা দিয়ে এগিয়ে দেয় নিয়ামতের সামনে।
নিষ্পৃহ নিয়ামত! রাগ অভিমান আবেগ ভালোবাসার কোনো সংজ্ঞাই তার জানা নেই। সে খেয়ে নেয় তাড়াতাড়ি। সন্ধ্যা থেকেই গুমোট আবহাওয়া। আকাশ মেঘলাই ছিল। বাইরে বাতাস বইতে শুরু করেছে। নিয়ামত তাড়াতাড়ি চলে যায় কাজে বৃষ্টি নামার আগেই। মনিরা দরজা লাগিয়ে চুপ করে শুয়ে পড়ে। টিনের চালে শুকনো পাতা ঝরার শব্দ। আজ বাইরের কোনো শব্দেই সে ভয়ে কেঁপে উঠছে না। ঘরে বাতাসের ঝাপটা লাগছে। বাইরে খচখচ শব্দ মনে হলো। মনে হলো টোকা দেয়ার শব্দ। মনিরা বলে, কিডা? উত্তর নেই। এবার দরজায় টোকা দেয়ার শব্দ। মনিরা বলে, বাইরে কিডা? কথা কয় না ক্যান? এবার বাইরে থেকে উত্তর আসে, আ- আমি। মনিরা উঠে যায় নির্ভয়ে। সটান দরজা খুলে, আরে হাবিবুল ভাই যে ! আমি কাম শেষে এইপথ দিয়েই পত্যেক দিন মেসে যাই। আপনি এই পথ দিয়ে পত্যেক দিন যান আর আমারে এক দিনও দেখতে আইলেন না।
কেমন পাষাণ আপনি? না পত্যেক দিন যাই ঠিকই তবে রাইত হইয়া যায় তো। তাই আর তোমাগো ডিস্টাব করি না। মনিরা আর কোনো কথা বাড়ায় না। তাকে দেখে আজ খুব মনে পড়ে তার বাড়ির কথা। গ্রামের কথা। হাবিবুল মনিরাদের একই গ্রামের ছেলে। বাড়িও ছিল কাছাকাছি। ঝড়ো আম কুড়ায়ে মনিরা ভর্তা বানিয়ে খাওয়াতো তাকে। তারও কি কম টান ছিল! খেজুরের রস গাছ থেকে পেড়ে চুপি চুপি মনিরাকে খাওয়াতো। আরো কতকি! সে এখন ঢাকায় গার্মেন্টে এ চাকরি করে। চার পাশ তাকিয়ে দেখে জিজ্ঞেস করে, এম্বায় একলা ঘরে তুমার ডর করে না মনিরা? ‘আমি একলা মানুস, আমার আবার ডর।’ ‘তুমি ভালা আছতো ? ’ হ্। জব্বর ভালা।’ আচ্ছা আমি যাই।’ ‘যাবেন কেমনে? বাইরে তুফান ঝাড়ছে। ভিতরে আসেন।’ বলে ঘরের ভিতরে নিয়ে বসতে দেয় মনিরা। ‘আপনি এইপথ দিয়ে রোজ যান আর আমার কোন খবর নেন না’। ‘তুমার সব খবরই আমি রাখি। কিন্তু সময় পাই না।
বাইরে প্রবলবেগে ঝড় ছেড়েছে। ঝোড়োবাতাস সশব্দে অনবরত দরজায় ধাক্কা দিতে থাকে। ঘরের বিদ্যুৎটা হঠাৎ চলে যায়। অন্ধকারে হাবিবুল বলে, ‘ভয় কইরো না। দেশলাইয়ের কাঠি জ্বালাচ্ছি।’ প্রচণ্ড গতিতে খোলা দরজা দিয়ে বাতাস ঘরে আসছে। পকেট থেকে দেশলাই বাক্স বের করে বারুদে বারুদ ঘষা দেয় হাবিবুল। আলো জ্বলে ওঠে। মনিরা মোমবাতি ধরায়। সেই আলোয় ঘরের খোলা কপাট লাগিয়ে দিতে যায়। হাবিবুল তখন উঠে দাঁড়ায়। এসে দরজার কাছে গিয়ে যায়। মনিরা মৃদু হেসে ছিটকিনিটি লাগাতে লাগাতে বলে, ‘ভালোই হইছে আপনি আসছেন, নইলে এমন ঝড়ের রাইতে আমারে একাই একলা আন্ধার ঘরে রাত কাটাইতে হইতো। বসেন বিছানায়।’ বেশ খানিকটা বেগ পেতে হচ্ছে মনিরার ছিটকিনি টা লাগাতে। হাবিবুল এসে মনিরার হাতের ওপর হাত রাখে। সে ছিটকিনি বন্ধ করতে সাহায্য না করে অর্ধ লাগানো ছিটকিনি খুলে দরজার বাইরে চলে যায়।
মনিরা জিজ্ঞেস করে, ’কই যান ঝড়ের রাইতে ?’ ’ঘরে যাই, পুরোপুরি ঝড় ওঠার আগে’। এই তুফান রাইতে বাইরে যাবেন ?’ হ, আমারে যাইতে হবে। তোমার ভাবী পোয়াতি, একলা ঘরে ডর পাইবে। তুমি বিয়া করলা কবে! তোমার বউ পোয়াতি? মনিরা অবাক হয়ে প্রশ্ন করে। করছি, তয় তুমার বিয়ার পর। সে সংবাদ তোমারে দেয়া হয়নি। আমার ওপর তোমার খুব রাগ? নাহ্। আমি সব জানি। চাচাজান মরণের সময় আমি চাকরির খোঁজে ঢাকায় আছিলাম তোমার কোনো খোঁজখবর রাখাতে পারিনি। সবই কপাল! বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, তো আমি যাই। ভালো থাইকো। হাবিবুল চলে গেল। মনিরার বুকের মধ্যে কোথায় যেন কিসের তরে চাপাব্যথা অনুভূত হলো। ঝড়ো বাতাসে তার ঘরের খোলা দরজা এপাশ-ওপাশ করতে লাগল।
আজ ভোরের ফ্লাইটে নিয়ামতের সাহেব সিঙ্গাপুর গিয়েছেন। যাওয়ার সময় নিয়ামতকে ডেকে বলে গিয়েছেন ছয়-সাত দিনের জন্য দেশের বাইরে থাকবেন। বাড়িতে ম্যাডাম একা। ঠিকমতো যেন সব দেখেশুনে রাখে। কিন্তু সন্ধ্যারাতেই এ বাড়ির বান্ধা কাজের বুয়া মতির মা ব্যাগ নিয়ে বাড়ি চলে গেল। বলে গেল ম্যাডাম তারে দুই দিনের ছুটি দিয়েছে। গ্যারেজের পাশে ড্রাইভারদের ঘরটা খালি। ওদেরও ছুটি দিয়েছেন ম্যাডাম। এত বড় দোতলা বাড়িতে ম্যাডাম একা রাতে থাকবেন। নিয়ামতের দায়িত্ব আজ আরো বেড়ে গিয়েছে। বাইরে গুমোট আবহাওয়া। লোহার গেট লক করে দিয়ে চাবি হাতে নিয়ে টুলে বসে। দমকা বাতাস প্রবল হয়ে উঠেছে। অন্ধকারে একটি দামি জিপের হেডলাইটের আলো এসে পড়ে গেট বরাবর। ঠিক যেন নিয়ামতের চোখের ওপর।
গাড়ির ভেতর থেকে হর্ন টিপছে। নিয়ামত দৃঢ় হাতে গেটের চাবিটা চেপে ধরে আছে। সে অজানা কাউকে রাতে বাড়িতে প্রবেশ করতে দেবে না। এমন সময় ওপর থেকে ইন্টারকমে ম্যাডাম ফোন করে নিয়ামতকে। কথা না বাড়িয়ে গেস্টকে ভেতরে ঢুকতে দাও। ম্যাডামের নির্দেশে সে গেট খুলে দেয়। গাড়ি থেকে একটি অচেনা সাহেব নামেন। রাতের গাউন পরিহিতা ম্যাডাম নিজেই এগিয়ে এসেছেন সিঁড়ি পর্যন্ত। নিয়ামত হা করে সব দেখল। তার মোটা মস্তিস্কে তড়িৎবেগে কি যেন অনুভব করল। আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে ঘন ঘন। মেঘের গর্জন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাতাস প্রবলতর বেগে বইতে শুরু করেছে। নিয়ামত হাতের লাঠিটা ফেলে দিলো। বুক পকেট থেকে বাঁশিটা খুলে ঝড়ো বাতাসে ঊর্ধ্বে ছুড়ে ফেলল। বাতাসে শিষ বেজে উঠল। দ্রুত রওনা হলো নিজ গৃহপানে যেখানে একাঘরে স্ত্রী মনিরা নিদ্রাহীন ভয়ার্ত রাত কাটাচ্ছেন।