নুই যেন মা—- আহমেদ পলাশ

প্রসব ব্যথায় অস্থির সুরমা বেগম। স্বামী চাঁদ মিয়ার এতটুকুন ক্ষমতা নেই যে, কোন ক্লিনিকে নিয়ে গিয়ে ডাক্তারি পরিচর্যায় সন্তান প্রসব করাবে। যত সময় গড়িয়ে যায় সুরমা বেগমের প্রসব ব্যথা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। অবশেষে চারপাশের লোকজন সুরমা বেগমের অবস্থা দেখে চাঁদা তুলে ডাক্তারি হেফাজতে পাঠান। ডাক্তার দেখেই বলে ফেলল- আপনারা রুগীকে এতো দেরিতে আনলেন কেন? রুগীর অবস্থা খুবই খারাপ। যদি রুগীকে বাঁচাতে চান তাহলে সন্তান বাঁচবেনা। আর সন্তান বাঁচালে রুগী বাঁচবে না। সবাই ডাক্তারের কথা শেষ না হতেই বলল ডাক্তার সাহেব আগে গাছ বাঁচান। গাঁছ বাঁচলে ফল একদিন আসবেই।
এই কথা শোনা মাত্রই সুরমা বেগম শোয়া থেকে এক লাফে বসে বলল- না! না! ডাক্তার সাহেব। আমি বাঁচি আর নাইবা বাঁচি আমার সন্তানের যেন কিছু না হয়। আমি পৃথিবীতে আমার সন্তানের আগমন দেখতে চাই। আমার জন্যে আপনি নিষ্পাপ শিশুটির জীবন কেড়ে নিতে পারেন না। প্লিজ ডাক্তার সাহেব আপনি আমার সন্তানটিকে বাঁচান।
ডাক্তার সাহেব সুরমা বেগমের কথায় কাজ শুরু করলেন। প্রায় দেড় ঘন্টা পর সুরমা বেগমের একটি পুত্র সন্তান জনম নেয়। সুরমা বেগম ভূমিষ্ঠ হওয়ার সাথে সাথেই ছেলেটির কপালে দু’টি চুমু দিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। আর ছেলেটির একটি নামও দিয়ে যায় ‘‘পরশ।’’
পরশ দেখেনি মায়ের মায়াবি মুখখানি। মায়ের দেয়া দু’টি আদরমাখা চুমোই সারা জীবনের সঙ্গী। কিন্তু তাকে তো বেঁচে থাকতে হবে। খেতে হবে কারো বাটের দুধ। কেউ আসেনি পরশকে বুকে টেনে নিতে। কেউ আসে না বাটের দুই ফোটা দুধ খাওয়াতে এই অবুঝ শিশুটিকে। শেষে একজন দেŠড়ে এলেন তিনি হলেন পরশের নানু। মেয়ের সন্তানকে সর্বদা নানুরা একটু বেশিই আদর করেন। এটা হয়ত বিধাতার একটি স্বর্গীয় দান। পরশকে বুকে নিয়ে মনে মনে বললেন আজ থেকে আমিই তোমার মা। তুমি আজ থেকে আমার আরেকটি সন্তান হয়ে বেঁচে থাকবে। এই বলে পরশকে দুধ পান করালেন মধ্য বয়সী পরশের নানু জুবেদা বেগম।
পরশ নানুর সংস্পর্শে থেকে ধীরে ধীরে বড় হতে লাগলো। পরশের সকল প্রকার ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার, গোসল, খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু সকল প্রকার কাজ কর্ম জুবেদা বেগম নিজেই করেন। জুবেদা বেগমের পরশের প্রতি আদর যত্ন দেখে পুত্র বধুরা ঠাট্টা টিট্কারি মারতে লাগলেন। বড় ছেলের বউতো একদিন মুখ ফোটে বলেই ফেললেন- মার চেয়ে মাসির দরদ বেশি। খায় ছেলেদের পুটলিতে আর আদর যত্নে পড়ে থাকে মেয়ের ছেলের প্রতি। আহারে কী দরদ!
এই কথাগুলো শুনার পরও জুবেদা বেগম পরশের সেবা যত্নের কাছ থেকে বিন্দু পরিমাণও সরে যাননি। বরং মমতা যেন আরো বহু গুণে বেড়ে গেল। হয়ত সেটা বিধাতারই ইশারা।
পরশ খুব টেলেন্ট স্টুডেন্ট। সে ছোট বেলা থেকে প্রত্যেকটা পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জন করেছে। টেলেন্টপুলে বৃত্তিও পেয়েছে কয়েকটিতে। সবি জুবেদা বেগমের অবদান। পরশের পুরো পৃথিবী আজ তার নানুকে ঘিরে। যার আদর স্নেহ মমতায় পরশে বড় হয়েছে সেই তো তার জীবনের মহামূল্যবান রত্ন এটাই স্বাভাবিক।
আজ পরশের মাস্টার্সের রেজাল্ট দিয়েছে। সে ফাস্ট ডিভিশন পেয়ে মহা খুশি। বাজার থেকে দশ কেজি মিষ্টি নিয়ে নানুর সামনে হাজির। নানু মিষ্টি গুলো খাটের এক পাশে রেখে পরশকে তার মায়ের কবরের পাশে নিয়ে গিয়ে বললেন- আগে তোর মাকে এই খুশির খবরটি দে। মায়ের জন্য দুই হাত তুলে দোয়া কর, যে মা তোকে দুনিয়াতে পাঠিয়ে নিজেই চলে গেলেন। ঐ মাকে খুশি করতে পারলেই আমি তোর মিষ্টি খাবো। পরশ নানুর কথা গুলো শুনে মায়ের পদতলে লুটে পড়ে। নানুর ভালোবাসার কাছে নিজেকে শপে দেয়।

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!