নীল রং এর সুখ !

ভাই, আপনি ২ টাকার বাদাম দিবেন?

বাদামওয়ালা লোকটি তার দিকে তাকিয়ে বলল, “স্যার, আমি ৫ টাকায় দিবো? ভালো বাদাম খেলে মজা পাবেন।”

লোকটি হেসে বলল, “আমার কাছে তো শুধু ২ টাকা আছে।”

তবে বাদামওয়ালা জানে না, যে ২ টাকার বাদাম এবং ১ গ্লাস পানি তার আজকের দুপুরের খাবার।

বাদামওয়ালা কিছুক্ষণ চিন্তা করে বলল, “ভাই, আপনি কী করেন?”

লোকটি বলল, “আমি স্কুল শিক্ষক।”

“ও, তাহলে স্যার, টাকা লাগবে না। অন্যদিন টাকা দেবেন।”

“নিজে তো পড়ালেখা করতে পারি না, তাই আপনাকে সম্মান জানিয়ে এই বাদাম দিলাম। টাকা লাগবে না স্যার।”

লোকটি আর কিছু বলল না, তার দেওয়া ৫ টাকার বাদাম নিয়ে হাঁটতে শুরু করল এবং এক এক করে বাদাম খেতে লাগল।

“২ টাকা দিন স্যার, সকাল থেকে কিছু খাইনি।”

লোকটি দেখল, ৭ বা ৮ বছরের একটা ছেলে।

তার পরনে একটি ছেঁড়া শার্ট এবং ছেঁড়া প্যান্ট, অগোছালো চুল এবং খালি পা ছিল।

“তোমার নাম কী?”

“জি, মেহেদী স্যার।”

“বাহ্, সুন্দর নাম।”

“তোমার বাসায় কে কে আছেন, মেহেদী?”

“কেউ নেই স্যার, আমি এতিম, সামনের বস্তিতে থাকি।”

লোকটি আর কিছু বলল না, তার পকেটে থাকা শেষ সম্বল ২ টাকা এবং কিছু বাদাম ছেলেটিকে দিল।

ছেলেটি ২ টাকা এবং বাদাম নিয়ে চলে গেল।

লোকটি তার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ভাবছিল, সে যে ছেলেটিকে প্রাইভেট পড়ায়, আজ মাসের শেষ, আজ সে টাকা পাবে।

টাকা পেলেই সে মেহেদীর জন্য নতুন শার্ট এবং প্যান্ট কিনবে।

৩ প্যাকেট বিরিয়ানি কিনবে।

একটি নিজের জন্য, একটি বাদামওয়ালার জন্য এবং একটি মেহেদীর জন্য।

তারপর বস্তিতে গিয়ে মেহেদীকে নিয়ে আসবে।

তারপর তাকে নতুন শার্ট এবং প্যান্ট পরিয়ে দিয়ে তিনজন একসঙ্গে খেতে বসবে।

এসব ভাবতেই লোকটি অদ্ভুত এক সুখ অনুভব করল।

বিকাল ৫টা, লোকটি তার ছাত্রকে পড়াচ্ছিল।

“স্যার, একটা কথা বলি?”

“বল, সায়েম।”

“যদি উত্তর জানা থাকে দিবো, আর যদি না জানি, আমাকে মাফ করে দিও।”

“আপনি অনেক ভালো স্যার।”

“আপনার মতো কাউকে আমি দেখিনি।”

“আচ্ছা স্যার, নীল রঙ কি আপনার প্রিয় রঙ?”

“হঠাৎ এই প্রশ্ন কেন, সায়েম?”

“না মানে, সেই প্রথম দিন থেকে দেখছি আপনি নীল রঙের শার্ট পরে আসছেন। তাই বললাম আর কী।”

“না সায়েম, আসলে আমার একটাই শার্ট, প্রতিদিন রাতে ধুয়ে শুকাতে দিই, রাতে শুকিয়ে যায়, দিনে আবার পরে বের হই। আমার প্রিয় কোনো রঙ নেই, সায়েম।”

“আর নেই, তাই ধরে নাও এটাই আমার প্রিয় রঙ।”

সায়েম নিজেকে আর ধরে রাখতে পারেনি, বসে থেকে উঠে নিজের রুমে চলে গিয়ে কান্না করতে থাকে।

নিজেকে খুব অপরাধী মনে করতে থাকে।

কেন সে স্যারের কাছে এই কথা জিজ্ঞেস করেছিল?

সে তার মাকে ডেকে বলল, “আজ আমি আর পড়ব না।”

সায়েমের মা এসে লোকটিকে বলল, “স্যার, সায়েম তো আজ আর পড়বে না।”

“আপনি কাল আসেন, আর এই নেন, এই মাসের বেতন।”

টাকা নিয়ে সে বের হয়ে আসে, নিজেকে খুব সুখী মনে করতে থাকে।

সায়েমের বাসা থেকে বের হয়ে সে মার্কেটের দিকে গেল, মেহেদী নামের সেই এতিম ছেলেটির জন্য শার্ট এবং প্যান্ট কিনতে।

আর এইদিকে তার ছাত্র সায়েম, তার জমানো কিছু টাকা এবং মায়ের কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে বাসা থেকে বের হল।

সায়েম ভাবছিল, সে তার স্যারের জন্য সুন্দর একটি জামা কিনবে।

কিনে পর স্যারের বাসায় গিয়ে দিয়ে আসবে।

কথাটি ভাবতেই সায়েম এক অদ্ভুত সুখ অনুভব করতে শুরু করল।

বেশ কিছুক্ষণ পর, স্যার এবং ছাত্র দুজনেই রাস্তায়।

দুজনের চিন্তা এক। তারা একই কথা ভাবছিল।

কথাটি হচ্ছে, মাঝে মাঝে অন্যকে কিছু দেয়ার মাঝেও প্রকৃত সুখ খুব ভালোভাবে অনুভব করা যায়।

মজার ব্যাপার হচ্ছে, স্যার সেই মেহেদী নামের এতিম ছেলেটির জন্য নীল রঙের শার্ট এবং নীল রঙের প্যান্ট কিনেছে।

আবার স্যারের ছাত্র সায়েমও স্যারের জন্য নীল রঙের শার্ট কিনেছে।

স্যার এবং ছাত্র দুজনেই ভাবছিল, “আচ্ছা, নীল রঙ কেন?”

“কষ্টের রঙ তো নীল?”

আবার দুজনের চিন্তা করতে গিয়ে মনে হল, মাঝে মাঝে সুখের রঙও নীল হওয়া উচিত।

এতে দোষের কিছু নেই!!

গরু-ভেড়ার অনুতাপ

অলসের কাঁটাগাছ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *