নীল নদে ফেরাউনের মৃত্যু-২য় পর্ব
নীল নদে ফেরাউনের মৃত্যু-১ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তখন সে ক্ষিপ্ত হল এবং সেনাবাহিনীদের হযরত মুছা (আঃ) পিছনে ধাওয়া করার হুকুম দিলেন। সকল সৈন্য কে তার দরবারে ডেকে পাঠাল। সোমবার দিন কয়েক লক্ষ্য সৈন্য দরবারে হাজির হল। তখন ফেরাউন বলল, মুছা আমাদের কে ধোঁকা দিয়ে আমার সাহায্য প্রার্থনা করায় আমি ভেবেছিলাম ওরা দুর্বল হয়েছে তাই তাদের পর্যপ্ত সাহায্য দিয়েছি এবং তাদের প্রতি পাহারা শিথিল করে দিয়েছি। এই সুযোগে তারা দলবল নিয়ে পালিয়েছে। এখন তাদের অনুসরন করে ধরতে হবে এবং সলক কে হত্যা করতে হবে। তোমরা অপ্ল ক্ষনের ভিতরে অস্ত্র-সস্ত্র নিয়ে প্রস্তুত হও আমি নিজেও প্রস্তুত হয়ে আসছি। কিছু সময় পরে ফেরাউন ময়দানে গিয়ে উপস্থিত হয়ে সৈন্যদর কে নিয়ে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে সাজাল। ফেরাউনের সাথে থাকবে সাত লক্ষ্য অশ্বরোহী সৈন্য এবং তার পিছনে থাকবে পদাতিক বাহিনী ও রসদ বহন কারি দেনাদল। এভবে এক সুন্দর পদ্ধতিতে বিন্যাস করে এক বিশাল বাহিনী রওয়না করল। অবস্থা দেখে মনে এ এক যুদ্ধ যাত্রা। সেনা বাহিনীর পূর্বভাগের দায়িত্ব ছিল খোদ ফেরাউনের উপর শেষ দিকের দায়িত্ব ছিল প্রধানমন্ত্রী হামানের উপর। ফেরাউনের সৈন্যরা খুব দূরত পথ অতিক্রম করতে লাগল। হযরত মুছা (আঃ) যে পথ ধরে অগ্রসর হয়েছেন ফেরাউন সেই পথ ধরেই চলতে থাকে। ওদিকে হযরত মুছা (আঃ) ও বনি ইসরাইল লোকেরা খবর পেল যে ফেরাউন কয়েক লক্ষ সৈন্য নিয়ে তাদের অনুসরন করে দূরত এদিকে এগিয়ে আসছে। তখন বনি ইসরাইল দের অন্তরাত্না শুকিয়ে গেল। সকলে হযরত মুছা (আঃ) এর নিকট এসে কান্নাকাটি শুরু করে দিল। তারা বলল, ফেরাউনের রাজ্যে জুলুম নিপীড়নের ভিতর আমরা বেঁচে ছিলাম কিন্তু এবারে একত্রে সকল মানুষের প্রাণ দিত হচ্ছে। এর চাইতে জুলুম সহ্য করা উত্তম ছিল। হযরত মুছা (আঃ) সকল কে সান্তনা দিলেন, তিনি বললেন, আমরা আল্লাহার তালার নির্দেশক্রমে এখানে এসেছি। অতএব তিনি আমাদের জিম্মাদার, তোমরা চিন্তা কর না। তিনি অবশই ফেরাউনের আক্রমণ থেকে আমাদের রক্ষা করবেন। এই সময় পর্যন্ত আল্লাহাতালার কোন নির্দেশ আসেনি, তাই সকলে ঘাবড়ে গেলেন এবং শিশু নারি বৃদ্ধ নির্বিশেষে সকলে অঝোর নয়নে কাঁদতে লাগলেন। এভাবে সময় গড়িয়ে যেতে লাগল।
এক সময় ধু ধু ময়দানে অপর প্রান্তে তাকিয়ে দেখলেন ফেরাউনের সৈন্যরা কাল মেঘের ন্যায় সারিবদ্ধ ভাবে এগিয়ে আসছেন। তখন তাদের অবস্থা কি হতে পারে বলার অপেক্ষা রাখে না। সকলে বাকশক্তি পর্যন্ত হারিয়ে ফেলল। হযরত মুছা(আঃ) বনি ইসরাইল দের কে বললেন, তোমরা সকলে অযু করে নাও অতপর দুই রাকাত নামাজ আদায় কর। সকলে মির্ত্যুর প্রস্তুত মনে করে ওজু করল। এবং নামাজ আদায় করল। ফেরাউনের সৈন্যরা তখন সম্মুখে এসে গেছ তাদের পরিষ্কার দেখা যাচ্ছিলি। এমন সময় আল্লাহাতালা হযরত মুছা(আঃ) কে আদেশ দিলেন হে মুছা! তোমার হাতে লাঠি নীল নদের উপর আঘাত কর এবং নদি বক্ষে যে রাস্তা দেখা যাবে সেই রাস্তা দিয়ে বনি ইসরাইল দের নিয়ে অগ্রসর হও।
হযরত মুছা(আঃ) তখন নিজের লাঠি দিয়ে পানির উপর আঘাত করে অমনি পানি ভাগ হয়ে বারটি প্রশস্ত রাস্তা তৈরি হয়ে গেল। হযরত মুছা (আঃ)বনি ইসরাইলের বারটি গোত্র কে নিয়ে ঐ রাস্তা দিয়ে সম্মুখে অগ্রসর হতে আদেশ দিলেন, বনি ইসরাইল গন আদেশ পাওয়া মাত্র পথ অতিক্রম করতে লাগলেন। নীল নদের মধ্যকার রাস্তা অতিক্রমকালে বনি ইসরাইল অনুভব করছিল সে রাস্তা যেন সম্মুখ দিকে নিজ গতিতে এগিয়ে চলছে। এভাবে স্বাভাবিক পথ চলার চাইতে দশগুন দূরত পথ অতিক্রম করছিল। এমতা অবস্থায় অতি অল্প সময়ের মধ্যে বনি ইসরাইল সকল মানুষ নদির অপর তিরে পৌঁছে গেল।
এমন সময় ফেরাউনের সৈন্যরা নদির বক্ষে বারটি উনমুক্ত রাস্তা দেখে অনেক খুশি হল এবং এটা হযরত মুছা(আঃ) এর যাদু ক্রিয়ার ফল মনে করে তারা একে সঙ্গে বারটি রাস্তা ধরে পথ চলতে শুরু করল। যখন হামান সহ অল্প কিছু সৈন্য পিছনে বাকি রইল তখন প্রচণ্ড ভাবে শব্দ করে নদির বুকের রাস্তা গুলা দুপাশের পানিতে এমন কঠিন ভাবে চাপ দিল যে ফেরাউনের সমস্ত সৈন্যরা খনিকের মধ্যে মৃত্যু বরন করল। রাস্তার পানিতে যে ভীষণ চাপ ছিল তাতে ফেরাউনের সৈন্যদের এবং ঘুড়াগুলোর পাজর ও খাচার হাড় গুলা গুড়িয়ে একত্রিত হয়ে গিয়েছিল। দেখে মনে হচ্ছিল মানুষ ও পশুগুলোর উপর দিয়ে রোলার চালনো হয়েছে। খনিকের মধ্যে ফেরাউন ও তার কয়েক লক্ষ্য সৈন্য মর্মান্তিক ভাবে নিহত হল।
সূত্রঃ কুরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী