আমার নানুবাড়িতে একবার ঘটেছিল অতি আজব এক ঘটনা যার রহস্য আজও কেউ ভেদ করতে পারে নি।
আমার নানুবাড়ি হলো দাঊদকান্দি এলাকায়। গ্রামের একেবারে শেষ মাথায় এক বিশাল বাড়ি গড়ে তুলেছেন আমার মামা। এত বড় দোতালা বাড়িতে থাকার মানুষ কেবল ছিলেন আমার নানী।
তার ছেলেমেয়ে সব ঢাকায়। তো রাতের বেলা সাথে থাকার জন্য তিনি একেক সময় একেক আত্নীয়কে অনুরোধ করতেন।
আমার কোন খালা বা মামাত ভাই-বোন নানীর সাথে রাতের বেলা থাকতেন। আর দিনে নানীর তেমন কোন সমস্যা হতো না।
নানীর সাথে বেশীরভাগ সময়ই রাতে সালিমা খালা থাকতেন। উনি না এলে অন্য কেউ আসত। তো সেই বিশাল বাড়ির পিছনে এক পুকুর ছিল।
একদিন রাতে সেই পুকুরে একদল চোর মাছ চুরি করার জন্য আসে। সালিমা খালা রাতে ঘুম থেকে হঠাৎ জেগে জানালা দিয়ে বিষয়টা দেখতে পান।
তিনি তড়িঘড়ি উঠে সেখানে যান, কিন্তু একটা চোর তাকে ধরে ফেলে। তারা তার হাত-পা বেধে পুকুরে ফেলে দেয়। সালিমা খালা পুকুরে ডুবে মারা যান।
এর পরেরদিন তার লাশ উদ্ধার করা হয়। এরপর থেকেই ঘটনার শুরু। আমার নানী রাতের বেলা প্রায়ই জানালা দিয়ে পুকুরের দিকে উকি দিলে সেখানে কমলা শাড়ি পড়া কারো অবয়ব দেখতে পেতেন।
আর সালিমা খালাও সবসময় কমলা শাড়িই পরতেন। আর জীবদ্দশায় সালিমা খালা কখনো ধর্ম-কর্ম করেন নাই।
তিনি কি এক আজগুবি সাধুর শিষ্য ছিলেন, যে লোক মানুষের মাথার খুলি কবরস্থান থেকে চুরি করতে গিয়ে পরে ধরা খেয়ে জেলের বাসিন্দা।
এরকম আজব মহিলা মৃত্যুর পরেও তার আজগুবি কর্ম-কান্ড। চালিয়ে গেল। আর প্রায়ই রাতে সেখানে গুন গুন করে কোন নারীকণ্ঠ শোনা যেত।
আমার মা,ছোট খালা সেখানে বেড়াতে গিয়েছিলেন। তারা যেদিন চলে আসবেন,তার আগের দিন মা সালিমা খালার মতো কাউকে পুকুরপাড়ে বসে থাকতে দেখেন।
তিনি তখনো এই ভৌতিক বিষয়টা জানতেন না। তিনি “কে ওখানে? কে বসে আসো গো? ” বলতে বলতে পুকুরের দিকে যেতে লাগলেন।
একেবারে কাছে যাওয়ার পরেই মা চমকে উঠলেন এবং বুঝলেন এটা মানুষ না, খারাপ কিছু! কিন্তু তখন দেরি হয়ে গেছে,সেই কমলা শাড়ি পরা নারীটি এবার মাথা ঘুরে তাকালো।
মা দেখে শিউরে উঠেছিলেন! সালিমা খালার মতো গড়ন বিশিষ্ট, কিন্তু তার মুখ পুরা বিকৃত ছিল, চক্ষুকোটরে নাকি কালচে রঙের মণি ছিল।
সারা দেহই ছিল পচা-গলা লাশের মতো। সেটি মার দিকে মুখ করে খ্যাক করে হেসে উঠল….আর খপ করে মায়ের দুই পা ধরে টানতে লাগল! মা কোন মতে “ছাড়,ছাড় ” বলে চিল্লাতে লাগলেন।
নানী দৌড়ে এসে দেখেন মা পুকুরের পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছে, অথচ মা খুব ভালো সাঁতারু। এর পরে দ্রুত লোকজন ডাকিয়ে মা কে উদ্ধার করা হলো।
তারা সবাই মায়ের পায়জামায় রক্তের মতো লাল আর থকথকে আঠালো কি যেন লেগে থাকতে দেখলেন।
সেই রাতে ঘুমানোর পূর্বে নানী বাড়ির জানালা দিয়ে পুকুরের দিকে তাকিয়ে নাকি স্পষ্ট সালিমা খালার চেহারা দেখতে পান,যা পুরা বিকৃত ও বীভৎস ছিল।
নানী পরেরদিন ভালো আলেম ডেকে বাড়ি বন্ধ করান। তিনি মা কে একটা তাবিজ দিয়ে বলেন “,আল্লাহ তোর রক্ষা করছে মা। ঐটা খুব খারাপ জিনিস ছিল।
রাতের বেলায় ঐ দিকে যাইস না”… আর এর পরেও সেখান থেকে আমার গ্রামের লোকজন নিস্তার পায়নি।
একবার আমার এক মামী পুকুর থেকে পানি এনে সিদ্ধ করতে চুলায় বসান।
তিনি হঠাৎ দেখেন চুলায় গরম পানির বদলে টগবগে তাজা রক্ত ফুটছে আর মামীর মনে হয়েছিলো তখন পানিতে সালিমা খালার চেহারা ভেসে উঠল..তিনি ভয়ে জ্ঞান হারান।
কিন্তু পরে দেখেন পানিতে কিচ্ছু নাই, পরিষ্কার পানি।
আর একবার ভরদুপুরে আমার মামাত ভাই সেখানে মুখ ধুতে গিয়ে পানিতে এক বিশ্রী – কুৎসিত চেহারা দেখে আতকে উঠেন!সেই চেহারায় তিনি কোন চোখ দেখতে পান নি, কালচে মণি।
মুখ পচা-গলা…..ঐ পুকুরের মাছ ও কেউ খায় না। সেই মাছ খেয়েও অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ে…..
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।