এক শেয়াল পেটের জ্বালায় অস্তির।বেগুন ক্ষেতে ঢুকিয়া
বেগুন খাইতে লাগিল। খাইতে খাইতে হঠাৎ একটি বেগুন কাটা শেয়ালের নাকের ভিতর বিঁধিয়া গেল। শেয়াল এ ধারে নাক ঘুরায় ওধারে নাক ঘুরায়,বেগুন কাটা খোলে না।জিভ দিয়ে নাকের আগা চাটিতে গেল।কিন্তু জিভ নাক পর্যন্ত যায় না। সামনের দু,পা দিয়ে নাকের কাটা খুলিতে গেল।কিন্তু বেগুন কাটা এত সরু যে পায়ের নলি দিয়া ধরা যায়না। কাটার ব্যথায় হাচ্য হাচ্য করিতে শেয়ালের দুচোখ দিয়া পানি আসিল।
অবশেষে শেয়াল নাপিতের বাড়ি আসিল।
নাপিত ভাই!নাপিত ভাই!বাড়ি আছেন কি?
বেগুন কাটা নাকে ফুরছে করবো এখন কি?
নাপিত বড় ভাল মানুষ সে নরুনটি হাতে লইয়া শেয়ালের নাক হইতে কাটাটি খসাইতে হঠাৎ নুরুনের আগা লাগিয়া শেয়ালের নাকের খানিক টা কাটিয়া ফেলিল।
শেয়াল তো হুক্কা হুয়া করিয়া রাগিয়া মাগিয়া অস্তির।“ওরে নাপতে,শিগগীর আমার নাক জোড়া দিয়ে দে।নইলে তোকে মজাটা দেখাব।”
নাপিত হাত জোর করিয়া বলিল,“মাফ করো ভাই।তোমার কাটা তুলিতে হঠাৎ নরুন টা নাকে লাগিয়াছে।আমি তো আগে জানিতে পারি নাই।”
শেয়াল বলিল মাফ করে দিতে পারি,তোমার নরুন টা আমাকে দিস।”
নাপিত আর কি করে।নরুনটা শেয়াল কে দিল।নরুনটা মুখে লইয়া শেয়াল চলিল এ পাড়া হইতে আর এক পাড়া
কুমার বাড়ির ধাঁর দিয়া।
কুমার বলিল-
“শেয়াল মামা!
মুখে ওটা কি
একটু খানি দাড়াও দেখি পরফ করে নি।”
শেয়াল বলিল,“ওটা নরুন,নাকের বদলে পাইয়াছি।”
কুমার বলিল দেখি দেখি কেমন নরুন,কুমার হাতে নরুন দিতেই নরুন টা মাটিতে পড়িয়া ভাঙ্গিয়া গেল।
শেয়াল তখন রাগিয়া মাগিয়া বলিল,“ওরে কুমার!হত ছাড়া আমার নরুন টা ভাঙ্গিয়া দিলি। শিগগির জোড়া দিয়ে দে!নইলে রাতে আসিয়া তোর হাড়ি পাতিল সব ভাঙ্গিয়া দিয়া যাইব।সে গ্রামে কোন কামার নেই,কি করিয়া সে ভাঙ্গা নরুন জোড়া লালাবে?জোড় হাতে কুমার বলিল,“আমাকে মাপ করো ভাই।নইলে গরিব প্রানে মারা যাই।”শেয়াল বলিল,“তবে দে নরুনের বদলে হাড়ি দে।তাহাই লইয়া তোকে মাপ করা যায়।।”
কুমার খুশি হইয়া শেয়াল কে কটা হাড়ি দিল।হাড়ি মাথায় লইয়া শেয়াল সে গ্রাম ছাড়িয়া এক মাঠের মধ্যে যাইয়া পড়িল।তখন বেশ রাত হইয়াছে।
এক বর জাত্রি দল যাইতেছিল পটকা বাজি জ্বালাইয়া।তাহারই একটি বাজি লাগিয়া শেয়ালের হাড়ি গেল গাঙ্গিয়া।রাগিয়া মাগিয়া শেয়াল গিয়া বর যাত্রিদের ধরিল,তোমরা পট কা বাজি পোড়াইয়া আমার হাড়ি ভাঙ্গিয়াছ।শিগগির জোড়া দিয়ে দাও।
নইলে রাতে তোমাদের পাড়ায় যাইয়া মোরগ-মুরগী চুরি করিয়া আনিব।তরমুজ-বাঙ্গি আর খাইতে হবে না।দাঁত দিয়া কামড়াইয়া একাকার করে দিব।
পাল্কি হইতে বর নামিয়া আসিয়া জোড়হাতে বলিল,”এ বারের মতো মাফ করো ভাই।”
শেয়াল বলিল,“মাফ করিতে পারি যদি তোমার কনেটিকে আমার দাও।বর কি তার বিবাহ কারা কনে সহজে দিতে চায়।বরযাত্রী সকলে বলিল,“শেয়ালের কথা না রাখিলে সে আমাদের খেত-খোলা নষ্ট করিয়া দিবে।মোরগ মুরগি ধরিয়া লইয়া যাবে।সে তো কম লোকসান হবে না।তার চাইতেই কনেটিকে দিয়া দাও।অগত্যা বর কনে টি কে শেয়ালের হাতে দিল।কনে পাইয়া শেয়াল খুশি হইয়া নাচিতে নাচিতে শেয়াল এক ঢুলির বাড়ি গেল।
ঢুলি ভাই!এসো এসো ঢোলে ঢোলে দিয়া আজকের শুভুদিনে মুই শেয়ালের বিয়া।”
ঢুলি বলিল,আমার তো একটা মাত্র ঢোল।বিবাহের সময় তো ঢোল-ডগর,সানাই,কাড়া-নাকড়া কত বাজাইতে হয়।বোলো তো আমার দলের সবাই খবর দেই।”
শেয়াল বলিল,“বেশ!তোমাদের দলের যে কয়জন আছে সকলকে খবর দিয়া দাও।আমার কনেটি তোমাদের এখনে থাকিল।আমি এদিকে পুরুত ডাক দিতে যাই।সে আসিয়া তো বিবাহের মন্ত্র পড়াইবে।”
ঢুলি-বউ কুটনা কুটিতেছিল।কনে টি বটির সামনে বসে ঝিমাইতেছিল।ঝিমাইতে ঝিমাইতে হঠাৎ ধারালো বটির উপর পড়িয়া বউটি কাটিয়া চৌচির হইয়া গেল।পরের বউ এমন করিয়া মারা পড়িল।ভয়ে ঢুলি-বউ কনেটিকে টানিয়া লইয়া খড়-গাদায় লুকাইয়া রাখিল।পুরুত ডাকিয়া শেয়াল আসিয়া দেখে কনে নাই।সে তেড়িয়া-মেড়িয়া ঢুলির বউ কে বলে,শিগগির আমার কনে আনিয়া দাও।নইলে দেখাইব মজা।”
জোরহাত করিয়া কাঁদিয়া কাটিয়া ধুলি-বউ বলে,আমাকে মাপ করিয়া দাও।
শেয়াল উত্তর করিল,“মাফ করিতে পারি আমার কনের বদলে তোমার ঢোলটা দাও।
ধুলী-বউ তাহাদের ঢোল টা শেয়ালকে দিয়া খুনের দায় হইতে বাঁচিল।
ঢোলটি গলায় ঝুলাইয়া মনের খুশিতে বড় তালগাছটার মাথায় উঠিইয়া নাচে আর গান করে।
তাক ধুমা ধুম ধুম
বেগুন খেতে ফুটল নাকে বেগুন কাটা যম।
তাক ধুমা ধুম ধুম।
কাটা তুলতে কাটল নাক ব্যথা নয় তার কম
তাক ধুমা ধুম ধুম।
নাকের বদলে নরুন পেলাম
তাক ধুমা ধুম ধুম।
নরুনের বদলে হাড়ি পেলাম
তাক ধুমা ধুম ধুম
হাড়ির বদলে কনে পেলাম
তাক ধুমা ধুম ধুম।
কনের বদলে ঢোল পেয়েছি
তাক ধুমা ধুম ধুম
গান গাহিতে গাহিতে আর নাচিতে নাচিতে শেয়াল দিয়াছে এক লাফ আর মাটিতে পড়িয়া চিৎপটাং!
—–জসিমউদ্দিন