নমানুষ (সাইকো গল্প)

পাজেরো থেকে নেমে পারকিং লট থেকে হেটে গুলশান ক্লাবের দিকে আসার সময় হটাত করে থমকে গেল দিশা। সামনে এসে দাঁড়িয়েছে এক উদ্ভট চেহারার ভিক্ষুক। আর বলা নেই কওয়া নেই দিশার শিফনের ওড়নাটা ধরে নিয়ে টানাটানি শুরু করে দিল। এমনিতেই রাতের এই সময়ে বিশেষ করে রাতের এই সময়ে এইখানে পার্টি ছাড়া এরকম ড্রেসে কেউ আসেনা। সবাই আসে আনন্দ ফুর্তি করার জন্য। তাই গুলশান ক্লাবের সামনের গলিটার কানা গলি গুলোতে সাতটার পর কেউ থাকেনা। সেই অন্ধকারে এই উপদ্রপ দেখে দিশা বেশ ভয়ই পেয়ে গেল।

ভিক্ষুকটা দেখতে বিদঘুটে। মুখের বাম পাশটা পোড়া। বাম হাত নেই। সেখানে ময়লা শার্টের হাতা ঝুলছে। ডান হাতে দিশার ওড়না ধরে টান দিচ্ছে একটু একটু করে। যেন এটা সিনেমার ধর্ষণ দৃশ্যের শুটিং। দুই হাত থাকলে এতক্ষনে সে ওড়নাটা নিয়ে টানাটানি খেলা শুরু করে দিত।এক এক বার টান দেয় আর বলে-

“আম্মার দুইটা টাহা দেন। সারাদিন কিছু খাই নাই”

দিশা পড়েছে মহা বিপদে। আজকে পার্স নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে দেখে পার্সে ক্রেডিট কার্ড ডেবিট কার্ড কিছুই নেই। শিশা হাউজে গিয়ে নতুন একটা ফ্লেভার কিনবে চিন্তা করেছিল।ঊর্মিলা- দিশার ক্লোজ ফ্রেন্ড আজকে পার্টি দিয়েছে গুলশান ক্লাবে। সেখানে নতুন নতুন সব ফ্লেভার এসেছে শিশার। …
সেখানে নিয়ে যাবে বলে ই ঢুকেছিল শিশা হাউজে। ফ্লেভারটা কিনে ও ফেলেছিল প্রায়- কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারলো না শুধু মাত্র টাকা নেই দেখে। এখন টাকা নেই দেখে ভিখারী টার হাত থেকে ছোটা ও যাচ্ছেনা।

“মাফ করো- মাফ করো’ কয়েকবার বলার পর ও যখন ভিক্ষুকট নাছোড়বান্দা তখন হটাত আকাশ বাতাশ কাঁপিয়ে চিতকার করে উঠল দিশা-

“উফ- তোমাকে কতবার বলেছি মাফ করো? কানে শোনো না? নাকি হাতের সাথে কানটা ও রেখে এসেছ বাসায়? বাস্টার্ড কোথাকার?”

চিতকার করে গালিটা দিতেই হটাত করে ওড়নাটা ছেড়ে দিল ভিখারী টা। তারপর একচোখ দিয়ে এমন ভাবে তাকালো যে আর সেখানে দাঁড়াতে পারল না দিশা। দৌড়েই পালাল সেখান থেকে। সোজা ঢুকে পড়ল ক্লাবের রিসিপশনে।

 

পার্টিতে আজকে অনেক আনন্দ হচ্ছে। ঊর্মিলার জন্মদিন উপলক্ষে সেই সবাইকে জাকুজি লাউঞ্জে এনে ডিজে পার্টি দিচ্ছে। সাথে চলছে ইচ্ছে মত সীসার আড্ডা। হিন্দি আর ইংরেজি গানের সাউন্ড বিকৃত করে বাজাতে বাজাতে নেচে নেচে চলেছে এক মহিলা ডিজে। মেয়েদের সবার শরীরে কাপড় নেই যায়গা মত। যাদের আছে তারা কিছুক্ষন পরেই আরো উন্মাতাল হতে শুরু করবে। এমন একটা সময় দিশা এসে যোগ দিল পার্টিতে।

দিশা এসে ঢুকতেই লালনীল আলো জ্বলে শুরু হয়ে গেল একটা মরোক্কান সংগীত। ছেলে মেয়ে গুলো গানের অর্থ …

.না বুঝেই নাচা শুরু করে দিল। সেখানে গিয়েই অনেকের সাথে হাই হেলো শুরু হয়ে গেল দিশার। কিন্তু দিশা খুজছে ঊর্মিলাকে। আগে থেকে দেখা না দিলে পরে বলবে সে আসেনি। এই জন্য আগে থেকে ঊর্মিলার সাথে দেখা করতে হবে ওর। খুঁজতে খুঁজতে এক কোনায় পেয়ে গেল ওকে। গোল করে বসে সীসা টানছে ঊর্মিলা। দিশা কে দেখে উঠে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল সে। সেখানেই কুঁজো হয়ে বসে ছিল ঊর্মিলার একজন গেস্ট। দিশাকে দেখে সোজা হয়ে বসল সে। টিকালো সোজা নাক আর উন্নত চিবুকের ছেলেটারে সাথে ঊর্মিলাই পরিচয় করিয়ে দিল। ছেলেটার নাম অলিন্দ।

চমতকার ফিগারের অলিন্দের সাথে পরিচিত হয়ে ভেতরে ভেতরে বেশ কাঁপুনি অনুভব করল দিশা। বিশাল বিজনেস ম্যাগনেটের একমাত্র ছেলে অলিন্দের নিখুঁত ফিগার দেখে পাগল প্রায় দিশা। কিন্তু খুব একটা নিখুঁত সে নয়। নাচার সময় ডান পায়ে খানিক টা খোঁড়ায় সে। কিন্তু ব্যাপারটা দেখেও না দেখার ভান করল দিশা।
অনুষ্টানের অনেক বাকি- রাত মাত্র বারোটা- এমন সময় দিশা অলিন্দের সাথে বের হয়ে আসে অনুষ্টান থেকে। টলছে দিশা। হুশ নেই। অলিন্দ কিছুক্ষনের মাঝেই দিশা কে প্রায় পাগল করে ফেলেছে। টলতে টলতে দিশাকে নিয়ে পারকিং লটে এসে একটা কালো সিডানে তুলে দিল দিশাকে। তারপর নিজে আরেকটা সাদা গাড়িতে চেপে কালো গাড়িটার পেছন পেছন চলে …

.গেল। খুব ই সবাভাবিক একটা ঘটনা। কেউ ই তেমন লক্ষ করলো না। করলেও গুরুত্ব দিলনা কেউ।

 

মাথার বাম পাশে কেমন যেন একটা চিনচিনে ব্যাথা অনুভব করল দিশা ঘুমের ঘোরেই। নেশা করলে খানিকটা মাথা ব্যাথা হয় -বলে নিজেই নিজেকে প্রবোধ দিল। ঠিক এর পরেই ঘুম পুরোপুরি ভেঙ্গে গেল দিশার। চোখ মেলতে গিয়েই প্রচন্ড আলোতে ধাদিয়ে গেল চোখ। ঘোলা ঘোলা লাগতে শুরু করেছে দিশার চোখ। অনেকক্ষণ পর কিছুটা সয়ে আসতেই নিজেকে একটা লোহার খাটে আবিষ্কার করল দিশা। চারপাশে অন্ধকার। শুধু মাথার ঠিক উপরে একটা সাদা তীব্র আলো জ্বলছে। কিছু বুঝে উঠার আগেই সে আবিষ্কার করল তার হাত বাঁধা। পাও বাঁধা। কিন্তু মূখ খোলা। মাথার কিছুটা সামনে ঝুলছে দিশার সেই ওড়না টা।
“আমি এখানে কেন? কেউ আছেন? আমাকে এখানে বেধে রাখা হয়েছে কেন? কেউ আছেন?” বলে বার কয়েক চিতকার করার পরও যখন কেউ আসছেনা তখন দিশা হাতের স্ট্রাপ গুলো কে টানা হেচড়া করা শুরু করল। যদি কোন ভাবে খুলে ফেলা যায়- এই চিন্তায়। এমন সময়- ঘরে বেটে একটা লোক প্রবেশ করল। কোনদিক থেকে প্রবেশ করল সেটা দেখেনি দিশা। শুধু দেখল এসে মাথার উপর দাঁড়িয়েছে। খাট টা শোয়ানো ছিল- দিশার মাথার উপর এসে বেটে লোক টা কালচে দাঁত বের করে একটা বিদঘুটে হাসি দিল।

মুখটা দেখেই ভয় পেয়ে গেল দিশা। পুরো …

মুখে দানাদানা সব টিউমার। এক একটা মার্বেল সাইজের। লোকটার যতটুকু চোখ যায় ততটুকুতেই এই দানাদানা টিউমারে ভর্তি। তারপর মুখটা কেমন যেন বেটে দের মর লম্বাটে। আর ডান চোখের উপর একটা টিউমার উঠেছে নতুন। সেটাতে পঁচন ধরেছে। দিশা দেখেই ভয়ে চিতকার করে উঠল।আর লোকটা বাম হাত মুখে দিয়ে চুপ করার জন্য ইশারা দিয়েই কোথায় যেন চলে গেল।

 

অনেক ক্ষন কারো দেখা নেই। দিশা একা একা শুয়ে আছে শোয়ানো লোহার টেবিলে। দিশার বেশ খিদা পেয়েছে। কিন্তু কেউ ওকে এনে কিছু খেতে দেয় নি। শুয়ে থেকে থেকে বেশ কাহিল হয়ে পড়েছে সে। পায়ের বাঁধন গুলো বেশ শক্ত- সেখানে রক্ত জমে গেছে। এখন কিছুটা হাটার দরকার ছিল ওর। কিন্তু কেউ ওকে দেখারজন্য ও আসেনি। মাঝে মাঝেই চিতকার করে জানান দিতে চেয়েছে আশেপাশের লোকজন কে। কিন্তু কেউ ওর কাছে আসেনি। এর মাঝে ও ঘুমিয়ে পড়েছে ক্ষুধা আর ক্লান্তি তে।

 

কেমন যেন একটা গুঞ্জনে ঘুম ভেঙ্গে গেল দিশার। চোখ মেলেই সেই আলোর ঝলকানি দেখল সে। কিন্তু অবাক হল না। বেশ সয়ে এসেছে ব্যাপার টা। মা বাবার আদুরে মেয়ে দিশাকে কেউ কোনদিন গলা তুলে কথা বলেনি। শিক্ষকরা পযন্ত ওকে কোনদিন কোন কটু কথা বলেনি। আজকে এভাবে শুয়ে শুয়ে আটক থাকতে খারাপ লাগছে অনেক। কিন্তু ব্যাপারটা অনেক সয়ে এসেছে। বেশ

কিছুক্ষন আগে কেউ একজন এসে দিশার মুখের উপর ঢেলে দিয়ে গেছে একবাটি সুপ। সেই সুপ খেয়ে পেট ঠান্ডা ছিল বেশ কিছুক্ষন। এখন গুঞ্জন টা শুনে ঘুম ভেঙ্গে গেল ওর। চারপাশে যথারীতি অন্ধকার। কিছু দেখা যাচ্ছে না।

এমন সময় পাশ থেকে কেউ একজন এসে দাঁড়াল দিশার খাটের সামনে। দাঁড়িয়ে গলা খাকড়ি দিল সে। তারপর কাকে যেন ইশারা করল- আর সাথে সাথে দুইজন মুখোশ পড়া মানুষ এসে দিশাকে খাটিয়া সহ দাঁড় করিয়ে দিল একটা মেকানিজমের মাধ্যমে। এই মুহূর্তে দিশা বেশ কাঁপুনি অনুভব করল। ভয়ে অসুস্থ হয়ে যাবার দশা হল। কারন ওর সামনে চারপাশে ঘুরানো একটা ইংরেজি ইউ আকৃতির সারিতে বসে আছে সারি সারি মানুষ। সবাই তাকিয়ে আছে দিশার দিকে। দিশা কাউকেই স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছেনা। কিন্তু অবয়ব দেখা যাচ্ছে। কেউ কোন কথা বলছেনা। এমন সময় সেই পাশে দাঁড়ানো লোক টা দিশার সামনে এসে মুখ থেকে মুখোশ খুলে নিল। দেখেই চিতকার করে উঠল দিশা। লোকটার মুখ বলতে কিছুই তেমন নেই। চোখ আছে একটা। বাকিটা কোন ভাবে ঝলসে গেছে এবং ঝলসে গিয়ে মুখের হাড্ডি বের হয়ে গেছে। হাতের যে টুকু বের হয়ে ছিল সেখানে হাড় বের হয়ে আছে। ঘৃণায় বমি করে দিল দিশা। ঠিক তখন লোকটা কথা বলে উঠল সামনে বসে থাকা মানুষ গুলোর উদ্দেশ্যে-

“ এই মেয়েটা- নিজেকে অনেক সুন্দরী মনে করে। সে আমাদের কালু ভাই কে …

.ভিক্ষা দেয় নি। উলটা বেজন্মা বলে গালি দিয়েছে। আজকের বিচার সভায় এই মেয়েটার শাস্তি নির্ধারিত হয়েছে”- কিছুক্ষন থেমে আবার শুরু করল সে-

“ এই মেয়ের দোষ- সে কালু কে ভিক্ষা দেয় নি- সে কালূ কে বেজন্মা বলে ভিক্ষুক জাতি কে অবমাননা করেছে- নিজেকে সুন্দরী প্রমান করার জন্য কালুকে বলেছে সে তার হাত আর কান বাসায় রেখে এসেছে’ বলেই বসে থাকা মানুষ গুলোর দিকে এক চোখ দিয়ে তাকাল।

মানুষ গুলো যেন নিমিষেই খেপে উঠল। কেউ কেউ উত্তেজনায় উঠে দাঁড়াতে চাইল। কেউ দোলাদুলি শুরু করে দিল। একজন লোক হেচড়াতে হেচড়াতে লাইটের আলোতে চলে এল। লোকটাকে দেখেই দিশা চিনতে পারল। এই লোক সারাদিন ফার্মগেট ওভারব্রিজের উপর শুয়ে থাকে আর চিতকার করে ভিক্ষা করে।
লোকটা খানিকটা সামনে এসে মুখ চোখ বিকৃত করে একদলা থুথু ছিটিয়ে দিল দিশার গায়ে। ঘৃণায় গা ঘিন ঘিন করে উঠল ওর। পিঠে কুজ ওয়ালা একজন এসে দিশার হাত পা টিপে টিপে দেখে দুইগালে দুইটা থাপ্পড় দিয়ে গেল। ওকে সাহায্য করল ষণ্ডা মার্কা সেই দুইজন লোক।

কয়েকজন মহা উতসুক ভিখারী এসে দিয়াকে থুথু দিয়ে গেল। কেয়েকজন চিতকার শুরু করে দিল।
একজন চিতকার করে বলল-“ মেয়েটার হাত আর কান কেটে দেয়া হোক।“

একজন কোনা থেকে বলল- “কালু ভাইকেই দেয়া হোক কাটাকটির কাজে”
কেউ একজন বলল-“ মেয়েটাকে এর পর …

নামানো হোক ভিখারী টিমে”।
এভাবে একের পর এক চিতকার ভেসে আসছে। এগুলা শুনে ভয়ে চিতকার করে উঠল দিশা। নিজের হাত আর কান কাটার কথা শুনে কেঁদে ফেলল সে। বার বার ক্ষমা চাইতে লাগল সে। কিত্নু কে শোনে কার কথা। শেষে কে এই কাজ করবে এটা নিয়ে ডিসিশন নিতে না পেরে দায়িত্ব দেয়া হল লম্বা চওড়া একজন কে। সে এসে দাঁড়াতেই চোখ মুখ বড় হয়ে গেল দিশার। কারন ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে রাতে পরিচয় হওয়া অলিন্দ। অলিন্দ কে দেখে দিশা আরো ভয় পেয়ে গেল । কারন অলিন্দ কে কেমন যেন লাগছে। খালি গায়ে এসেছে সে। গায়ে কিছু না থাকাতে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে ওর গায়ে বিভিন্ন যায়গায় যায়গায় ক্ষত। কেমন যেন মাংস উঠে গেছে।

ক্ষত গুলোর দিকে তাকিয়ে আছে দেখে দিশার দিকে তাকিয়ে অলিন্দ বলল-

“দেখেছ তোমাদের সমাজের ভাল মানুষ গুলো আমার কি দশা করেছে? আমি ছোট বেলা কাজের ছেলে ছিলাম এক বাড়িতে। একদিন একটা কাপ ভেঙ্গে ফেলাতেই আমার শরীরে গরম পানি ঢেলে দেয় বাড়ির কর্তা। সেই থেকে আমার এই অবস্থা। আরেক ঘরের মহিলা আমার পায়ের মুড়ো কেটে নেয় দা দিয়ে। আমি উনার ছেলের একটা খেলনা ভেঙ্গে ফেলেছিলাম বলে। আজকে আমি প্রতিষ্টিত। দেখ- আমার গাড়ি আছে- বাড়ি আছে- কিন্তু আমার নেই কোন স্ত্রী- নেই কোন ভালবাসা। নেই কোন জীবন। এরজন্য দায়ী তোমরা। এইযে এখানে এতগুলো মানুষ – সবাই …

আজকে ভিখারী তোমাদের মত উঁচু শ্রেনীর সুন্দর সুন্দর মানূষদের জন্য। তাই আজকে তোমাদের সুন্দরতম সমাজের সুন্দর প্রতিনিধি হিসাবে তোমার শাস্তি হবে। প্রস্তুত হও”- বলেই দিশার মুখ বেঁধে ফেলল একটা কাপড় দিয়ে।

এরপর একটা মার্কার নিয়ে বাম হাতের কব্জি পর্যন্ত একটা কালো দাগ দিয়ে নিল। এরপর একজন এসে অলিন্দের হাতে ধরিয়ে দিল একটা ধারালো দা। সেই দা দিয়ে চোখে নিমিষে এক কোপ দিয়ে কেটে ফেলল দিশার হাত। হাতের রক্ত দেখে দিশা সেখানেই জ্ঞান হারাল।এর পর কিছু মনে নেই ওর।

 
ধানমন্ডি তে একটা লাল নীল বাতি জ্বালানো বাড়ি থেকে বের হয়ে আসছে আশরাফ। আজকে অনেক নেচেছে সে। নাচতে নাচতে দুর্বল হয়ে বের হয়ে এসেছে অনুষ্টান থেকে। হলুদের অনুষ্টান ছিল আজকে। সেখানে ডিজে পার্টিতে নেচে গেয়ে অস্থির হয়ে শেষে বের হয়ে চলে এল সে। একটু দুরেই গাড়ি পার্ক করেছে সে। এখনকার বাসা গুলোতে অতিথি দের গাড়ি পার্ক করতে দেয় না বাড়ির মালিক রা। তাই বাধ্য হয়েই গাড়িটা বাইরে রাখতে হয়েছে আশরাফ কে।

গাড়িতে চাবি ঢুকিয়ে উঠতে যাবে এমন সময় একটা ভিখারী এসে আশরাফের পাঞ্জাবী খামচে ধরে। ধরেছে তো ধরেছেই। ছাড়ার নাম নেই। ভিক্ষা চাইছে ভিখারীটা। দরজা না খুলে ঘুরে দাঁড়াল আশরাফ- যেন ভাল ভাবে দেখতে পায়, এবং দেখেই চমকে উঠল …
.আশরাফ।ভিখারী একজন মহিলা। ময়লা একটা ত্রিপিস গায়ে দেয়া। গা থেকে বের হচ্ছে তীব্র দুর্গন্ধ। মুখের চারপাশে ঘোরাঘুরি করছে বেশ কিছু পোকা। কারন চেহারার বাম পাশটা পোড়া। সেখানে পচন ধরে গন্ধ বের হচ্ছে। ভিখারীর এক চোখ নাই- পূড়ে কিংবা অন্য কোন ভাবে নষ্ট হয়ে গেছে সেটা। বাম হাতের কব্জি নেই। ডান দিয়ে টেনে ধরেছে পাঞ্জাবী। দেখেই ভয়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল ভিখারীকে। দিয়ে গাড়িতে উঠে চলে গেল সোজা মিরপুর রোড বরাবর। এরমাঝে পেছন ফিরলেই দেখতে পেত ভিখারী উঠে দাঁড়িয়েছে মাটি থেকে। মুখে তার রহস্যময় একটা হাসি…

(সমাপ্ত)

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!