নমরুদের গজবী মৃত্যু-পর্ব ৬
নমরুদের গজবী মৃত্যু-পর্ব ৫ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
হযরত ইব্রাহীম (আঃ) বললেন, যদি এবারেও তুমি ইসলাম কবুল না কর তবে তোমার গজবী মৃত্যু হবে, পরকালে দোজখের কথিক আজাব ভোগ করবে এবং তোমার রাজ্য ছিন্ন ভিন্ন হয়ে সেখানে বহু লোকের রাজত্ব কায়েম হবে। নমরুদ নবীর কথার উত্তরে বলল, আমার যাই হোক তাতে তোমার কি যায় আসে? তুমি তোমার মুক্তির চিন্তা কর। তোমারও কঠিন পরিণাম ভুগতে বেশি দিন বাকি নেই।
হযরত ইব্রাহীম (আঃ) নমরুদের কথা শুনে খুব বিমর্ষ হয়ে ফিরে এলেন। এ সময় জিব্রাইল (আঃ) এসে নবীকে বললেন, হে আল্লাহর দোস্ত! নমরুদের কথায় আপনি মনক্ষুণ্ণ হবেন না। তাকে শেষ দাওয়াত দেয়া আপনার দায়িত্ব ছিল। তা সমাধা হয়েছে। পৃথিবীতে কয়েকজন মোহর যুক্ত কাফের আছে, যারা কোন দিন ঈমানের দাওয়াত কবুল করবে না। নমরুদ তাদের মধ্যে একজন। আপনি নমরুদের ইসলাম গ্রহনের বিষয় দুশ্চিন্তা গ্রস্থ হবেন না। তার ইহলীলা শেষ হতে আর বেশি বাকি নেই। একথা বলে জিব্রাইল (আঃ) চলে গেলেন। নবী জিব্রাইল (আঃ) – এর কথায় নিজেকে দায়মুক্ত মনে করে কিছুটা ক্ষান্ত হলেন।
নমরুদের কর্মচারী দিন রাত তার মাথায় আঘাত করে চলছে। আঘাতকারী কর্মচারীর সংখ্যা বৃদ্ধি করা হল। প্রত্যেককে আট ঘণ্টা করে ডউটী ভাগ করে দেয়া হল। ইতোমধ্যে তার রাজ্যে নানারূপ বিশৃঙ্খলা দেখা দিল। বর্ডার এলাকার কয়েকটি রাজ্য স্বাধীনতা ঘোষণা করল। কর্মচারী মহল নমরুদের কথার প্রতি তেমন ভ্রূক্ষেপ করত না। যে যার ইচ্ছামত দায়িত্ব পালন করে যেতে লাগল।
তাতে পরস্পর বিরোধ অ সংঘাতের সৃষ্টি হল। রাজ দরবারের কিছু সংখ্যক কর্মচারী বহু টাকা-পয়সা আত্মসাৎ করে দরবার ছেড়ে চলে গেল। অপর দিকে যে সব সৈন্যরা যুদ্ধ ক্ষেত্রে জীবন দিয়েছে তাদের আত্মীয়-স্বজনেরা নমরুদের উপর ভয়ানক ক্ষিপ্ত হয়ে উঠল। তারা প্রচুর ক্ষতিপূরণ দাবী করল। প্রতিদিন মৃত সৈনিকদের মা, বোন ও স্ত্রীরা রাজ দরবারে আসে ভীড় জমাতে লাগল।
ওদিকে নমরুদের অবস্থা দিন দিন খারাপ হতে আরম্ভ করল। সে শারীরিক ও মানষিক ভাবে খুবই দুর্বল হয়ে পড়ল এবং ববেক বুদ্ধি অনেকটা লোপ পেল। স্মরণ শক্তি কমে গেল। মেজাজ রুক্ষ হল, ধৈর্য বলতে কিছু বাকি থাকল না। এমতাবস্থায় তার অনুগত ব্যক্তিবর্গেরা তার নিকট থেকে সরে গেল। এমন কি তার নিয়মিত পরিচর্যায় পর্যন্ত ব্যাঘাত সৃষ্টি হল। একদিন তার মাথায় আঘাতকারী একজন কর্মচারী নিজ প্রয়োজনে ক্ষণিকের জন্য বাইরে গিয়েছিল।
তখন নমরুদ ক্রোধে অগ্নিশর্মা হয়ে ওঠে। যখন কর্মচারী ফিরে এল তখন তাকে জুতা দিয়ে খুব প্রহার করল। এতে কর্মচারী খুব অপমান বোধ করল এবং সে প্রতিশোধের চিন্তায় ব্যাকুল হয়ে উঠল। একদিন পড়ে রাত্রিবেলায় যখন তার ডউটী পড়ল তখন সে গভীর রাতে কাঠের হাতুড়ি দ্বারা নমরুদের মাথার উপর খুব জোরে আঘাত করল। এ আঘাতে নমরুদের মাথা ফেটে চৌচির হয়ে গেল। তখন দেখা গেল তার মাথার খুলীর ভিতর থেকে একটি মশা উড়ে গেল। এই সাথে নমরুদের ইহলীলা শেষ হয়ে গেল।
সূত্রঃ কুরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী