নমরুদের গজবী মৃত্যু-পর্ব ৫

নমরুদের গজবী মৃত্যু-পর্ব ৪ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

এরমধ্যে মাঝখানে একদিন পার হয়ে গেল, যুদ্ধের দিনে ভোর থেকে নমরুদের সৈন্যরা দামামা ও যুদ্ধ বাজনা বাজিয়ে ময়দান কাঁপিয়ে তুলল। এমন সময় দেখা গেল আকাশে এক খণ্ড কালো মেঘ। মেঘখণ্ড যেন দ্রুত ঐদিকে আসছে। অল্পক্ষণ পরে দেখা গেল সেনাবাহিনীর মাথার উপরে মেঘমালা এসে উপস্তিত হল। সেনাবাহিনীর লোকেরা উপরের দিকে তাকিয়ে রইল। এবার তারা পরিষ্কার দেখতে পেল মেঘের আকারে তাঁদের মাথার উপর যে কালো ছায়া এসে পৌঁছেছে তা ক্ষুদ্র মশককুলের সমষ্টি। এ বিন্দু বিন্দু মশকের ডাকের শব্দ এত প্রচণ্ড ছিল যে নমরুদ বাহিনীর বাদ্য বাজনার সমস্ত আওয়াজ তলিয়ে গেল।

মশকেরা অতি দ্রুত এক এক সৈন্যের মাথার উপর এক একটি বসে যখন চামড়া ভেদ করে তাঁদের হুল ফুটিয়ে দিল তৎক্ষণাৎ দে অজ্ঞান হয়ে পড়ল। এভাবে দশ মিনিটের মধ্যে সমস্ত ময়দানের লোকেরা ধরাশায়ী হয়ে পড়ল।

মশকেরা সৈন্যদের মাথার মগজ ও রক্ত খেয়ে শেষ করল। অতঃপর তাঁদের শরীরের মাংস খেতে আরম্ভ করল। অল্প সমায়ের মধ্যে ময়দানের সমস্ত মানুষের শুধু চুল, নখ ও হাড় ছাড়া আর কিছুর অস্তিত দেখা গেল না। এবং প্রত্যেকটি ক্ষুদ্র মশা রূপান্তরিত হয়ে মুরগির আকৃতি ধারণ করল।

নমরুদ দূরে বসে সমস্ত অবস্থা দেখল এবং আতঙ্কিত হয়ে ব্যাবিলনের রাজ মহলে গিয়ে আশ্রয় নিল। সেখানে সে একা একা বসে ভাবতে লাগল। অবস্থাটা কি হল, ক্ষুদ্র মশা কিভাবে সমস্ত মানুষগুলোকে নিঃশেষ করল। এমন সময় একটি ক্ষুদ্র খোড়া মশা এসে তাঁর হাটুর উপর পতিত হল। সে তখন মশকটি দেখে দুশ্চিন্তা গ্রস্ত হল এবং ভাবল এত ক্ষুদ্র এক প্রানি আমার শক্তিশালী এক এক জন সৈন্যকে  কিভাবে সমূলে নিরঃশেষ করে দিল।

একথা চিন্তা করে যখন মশাটিকে ধরার জন্য হাত বাড়াল, অমনি মশাটি উড়ে তাঁর নাকের ছিদ্র দিয়ে মাথার মধ্যে গিয়ে পৌছাল। তখন থেকে নমরুদের মাথায় ভীষণ যন্ত্রণা আরম্ভ হয়ে গেল। নমরুদ দিশেহারা হয়ে গেল। সে তখন হাত দিয়ে মাথায় আঘাত করতে আরম্ভ করল। তাতে একটু উপশম বোধ করল। কিন্তু মাথায় আঘাত করা বন্ধ করে দিলে তখন মাথায় যন্ত্রণা শুরু হয়ে যায়। নমরুদ এ অবস্থায় কয়েকটি কাঠের ছোট হাতুড়ি বানাল। যা দিয়ে মাথায় আঘাত করা সহজ  হয়। একদিন একরাত অতিবাহিত হবার পরে এ কাজের জন্য একজন কর্মচারী নিয়োগ করা হল। সে কাঠের হাতুড়ি দ্বারা সর্বক্ষন মাথায় আঘাত করত। এতে সে মোটামুটি কিছুটা সুস্থতা বোধ করত।

এ সময় আল্লাহ্‌ তা’য়ালা জিব্রাইল (আঃ) মারাফত নবীকে পুনরায় নমরুদের নিকট ঈমানের দাওয়াত জানানোর জন্য যেতে আদেশ দিলেন। নবী নমরুদের নিকট গিয়ে বললেন, আমার খোদার শক্তি সম্বন্ধে তোমার অভিজ্ঞতা হওয়া উচিত।  অতএব এখন শেরেকী পরিত্যাগ করে আল্লাহ তায়ালার একত্ববাদে বিশ্বাস স্থাপন কর।

 একবার কালেমা পাঠ কর আমি তোমার পরকালের নাজাতের জামিন হব। নমরুদ বলল, তুমি একজন বিশ্ব যাদুকর। আমি তোমার যাদুর নিকট নতি স্বীকার করার পাত্র নই। যাও তুমি তোমার খোদাকে নিয়ে থাক। আর আমাকে পৃথিবীর খোদা হিসেবে নির্বিগ্নে থাকতে দাও।

সূত্রঃ কুরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী

নমরুদের গজবী মৃত্যু-পর্ব ৬ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।