নবী কারীম (সাঃ ) ও হযরত আবু বকর (রাঃ ) এর হিজরতের বিবরণ – পর্ব ৫

নবী কারীম (সাঃ ) ও হযরত আবু বকর (রাঃ ) এর হিজরতের বিবরণ – পর্ব ৪ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

হযরত আবু বকর (রাঃ) কখনও আগে আগে চলিতেন, কিন্তু যখনই পিছন হইতে কাহারো আসিবার আশঙ্কা মনে জাগিত তখন পিছনে পিছনে চলিতেন। এইভাবে সমস্ত পথ কখনও আগে কখনও পিছনে চলিতে থাকিলেন। হযরত আবু বকর (রাঃ) যেহেতু প্রসিদ্ধ ব্যক্তি ছিলেন, সেহেতু কোন পরিচিত লোকের সহিত দেখা হইলে জিজ্ঞাসা করিত, তোমার সহিত ইনি কে? তিনি বলিতেন, ইনি একজন পথপ্রদর্শক, আমাকে পথ দেখাইতেছেন। তাঁহার উদ্দশ্য হইত দ্বীনের পথ দেখাইতেছেন, আর অপর লোকটি মনে করিত সফরের পথ দেখাইতেছেন।

তাঁহারা চলার পথে যখন কুদাইদ নামক জনপদের নিকট পৌঁছিলেন তখন একব্যক্তি বনু মুদলিজ গোত্রের নিকট যাইয়া বলিল, আমি দুইজন উষ্ট্রারোহীকে সমুদ্র উপকূলের দিকে যাইতে দেখিয়াছি। আমার ধারণা হয়, ইহারা কোরাইশের সেই দুই ব্যক্তি যাহাদিগকে তোমরা তালাশ করিতেছ।

সুরাকা ইবনে মালেক বলিল, এই দুইজন তো তাহারা, যাহাদিগকে আমরা লোকদের অন্য এক কাজে পাঠাইয়াছি। প্রকৃতপক্ষে সুরাকা বুঝিতে পারিয়াছিল যে, ইহারা হযরত আবু বকর (রাঃ) ও রাসূল (সাঃ) কিন্তু সে অন্যান্যদের নিকট গোপন করিবার উদ্দেশ্যে এই কথা বলিল। অতএব সুরাকা নিজের বাহির বাদীকে ডাকিয়া তাহার কানে কানে বলিয়া দিল, সে যেন তাহার ঘোড়া বাহির করিয়া রাখে। অতঃপর সে তাঁহাদের সন্ধানে বাহির হইল। সুরাকা ইবনে মালেক (রাঃ) বলেন, আমি তাঁহাদের নিকটে পৌঁছিয়া গেলাম। এইরূপে তিনি পরবর্তী ঘটনা বর্ণনা করিয়াছেন, যাহা সামনে আসিতেছে।

ইবনে সীরীন (রহঃ) বলেন, হযরত ওমর (রাঃ)এর যুগে কতিপয় লোক নিজদের মধ্যে আলোচনা করিতেছিল। তাহারা আলোচনা প্রসঙ্গে এমন কথা বলিল, যাহাতে তাহাদের নিকট হযরত আবু বকর (রাঃ) অপেক্ষা হযরত ওমর (রাঃ) শ্রেষ্ট বলিয়া বুঝা যাইতেছিল। হযরত ওমর (রাঃ) এই কথা জানিতে পারিয়া বলিলেন, আল্লাহর কসম, হযরত আবু বকর (রাঃ)এর এক রাত্র ওমরের সম্পূর্ণ খান্দানের যিন্দেগী হইতে উত্তম এবং হযরত আবু বকর (রাঃ)এর এক দিন ওমরের সম্পূর্ণ খান্দানের যিন্দেগী অপেক্ষা উত্তম।

রাসূল (সাঃ) হযরত আবু বকর (রাঃ)কে সঙ্গে রাত্রিবেলায় ঘর হইতে বাহির হইলেন এবং গুহায় যাইয়া আশ্রয় গ্রহণ করিলেন। সেই রাত্রে হযরত আবু বকর (রাঃ) কিছুক্ষণ রাসূল (সাঃ)এর আগে আগে হাঁটিতেন আবার কিছু সময় পিছন পিছন হাঁটিতেন। রাসূল (সাঃ) বুঝিতে পরিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, হে আবু বকর, তোমার কি হইয়াছে? কিছুক্ষণ আগে চল আবার কিছুক্ষণ পিছনে চল? তিনি আরজ করিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, যখন আমার মনে হয় যে, পিছন হইতে কেহ আসিয়া পড়ে, তখন আমি পিছনে হাঁটি। আবার যখন মনে হয় যে, সামনে কেহ ওৎ পাতিয়া বসিয়াছে কিনা? তখন সামনে হাঁটি।

রাসূল (সাঃ) বলিলেন, হে আবু বকর, (আল্লাহ না করুন) যদি বিপদ আসিয়া পড়ে তবে তুমি কি ইহা পছন্দ কর যে, তাহা আমার পরিবর্তে তোমার উপর আসুক? হযরত আবু বকর (রাঃ) বলিলেন, সেই পাক যাতের কসম, যিনি আপনাকে দ্বীনে হক দিয়া প্রেরণ করিয়াছেন, আমি ইহাই চাই। তাঁহারা যখন গুহার নিকট পৌঁছিলেন তখন হযরত আবু বকর (রাঃ) আরজ করিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, আপনি একটু এইখানে দাঁড়ান, আমি ভিতরে প্রবেশ করিয়া গুহা পরিস্কার করিলেন। তারপর বাহিরে আসিয়া মনে হইল যে, ছিদ্রগুলি পরিস্কার করা হয় নাই। আরজ করিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, আপনি আর একটু অপেক্ষা করুন, আমি ছিদ্রগুলি পরিস্কার করিয়া আসি। অতঃপর ভিতরে যাইয়া গুহাকে ভালভাবে পরিস্কার করিয়া আসিয়া বলিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, ভিতরে আসুন।

সূত্রঃ হায়াতুস সাহাবা

নবী কারীম (সাঃ ) ও হযরত আবু বকর (রাঃ ) এর হিজরতের বিবরণ – পর্ব ৬ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।