নবীজীর খুনের চক্রান্তে শয়তান শামিল

হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেনঃ কুরাইশদের সব গোত্রের সর্দাররা একবার তাঁদের পরামর্শসভার জমা হয়। অভিশপ্ত ইবলীস ও একজন বয়স্ক মুরুব্বির রূপ ধরে তাঁদের কাছে গিয়ে পৌছায়। কুরাইশের সর্দাররা তাকে দেখার পর জানতে চায়, আপনি কে?

শয়তান বলে, আমি নজদ এলাকার এক বুজুর্গ। আপনার যে উদ্দেশ্য সমবেত হয়েছেন, তা আমি শুনেছি। তাই আমি আপনাদের কাছে এসেছি। আপনারা আমার কাছ থেকে পাবেন বড়ই গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ ও মতামত। কাফিররা বলে ঠিক আছে, আপনি এই সভায় শরীক হয়ে যান। সুতরাং শয়তান সেই সভায় প্রবেশ করে এবং বলে, আপনারা ওই ব্যক্তি নবীজী-র বিষয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিন। আল্লাহ্‌র কসম! সেই সময় কাছাকাছি এসে গেছে, যখন ও আপনাদের ওপর প্রবল হয়ে যাবে।

কুরাইশদের এক সর্দার বলে- ও (নবীজী)-কে প্রথমে মজবুতভাবে বন্দী করতে হবে। তার পর কষ্ট দিতে হবে এবং অপেক্ষা করতে হবে, যতক্ষণ না মারা যায়। যেমন ওর আগের নবীরা মারা গিয়েছিল তেমনিই এই যুহাইরার পরিণতিও ওদের মতো হবে। (নাউযুবিল্লাহ।)

আল্লাহ্‌র দুশমন নজদের শায়খরূপি শয়তান বলে- আল্লাহ্‌র কসম! এটা কোনও কাজের কথা নয়। কেননা ও (নবীজী)-র কথা কয়েদখানা থেকে বের হয়ে ওর সঙ্গী সাথী (সাহাবী)-দের কাছে পৌছাবে এবং ওরা সঙ্গে সঙ্গে এসে আপনাদের উপর হামলা করে ওকে আপনাদের হাত থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে যাবে। ফলে আপনাদেরকে আপনাদের এলাকা থেকে বহিস্কার করে দেবে কিনা সে বিষয়ে আমি কোনও নিশ্চয়তা দিতে পারি না। সুতরাং আপনারা অন্য কোন পন্থা ভাবুন।

তখন অন্য এক সর্দার বলল- ও (মুহাম্মদ (সাঃ)) কে দেশ থেকে বের করে দিয়ে স্বস্তির ফেলা হোক। কারণ ও এদেশ থেকে চলে গিয়ে অন্য কোথাও যা খুশি করুক গে, তাতে আপনাদের কোনও ক্ষতি হবে না। আপনাদের থেকে ওর অনিষ্ট দূর হয়ে যাবে এবং আপনারা সুখে-স্বস্তিতে থাকতে পারবেন। আর ওর অনাচার অন্যদের সামনেই হবে

শয়তান তখন ফের বলে- আল্লাহ্‌র কসম! আপনার এই প্রস্তাবও কোনও গুরুত্ব রাখে না। আপনারা কি ও (নবীজী)-র কথায় মাধুর্য আর ভাষার কারুকার্য লক্ষ্য করেননি! আপনারা কি দেখেননি ওর কথাবার্তা শ্রোতাদের মন-মগজে কেমনভাবে সাড়া ফেলে! তাই আমি আল্লাহ্‌র দোহাই দিয়ে বলছি, আপনারা যদি অমন করেন, তবে ও অন্য অঞ্চলে গিয়ে সেখানকার মানুষজনকে ডাক দিতে শুরু

করবে এবং তারা ওর ডাকে সাড়া দেবে। তারপর এক সময় তাঁদের নিয়ে ও আপনাদের উপর চড়াও হবে এবং আপনাদের দেশছাড়া করবে ও আপনাদের সর্দারদের কতল করবে।

তখন কুরাইশের সর্দাররা বলে হ্যাঁ, আল্লাহ্‌র কসম! এই শায়খ (শয়তান) ঠিকই বলেছে। এতএব আপনারা অন্য কোনও উপায়ের কথা চিন্তা ভাবনা করুন।

আবূ জাহল বলে- আমিও একটা প্রস্তাব পেশ করছি, যা আমার মাথায় আসছে। আশা করি আপনারা আমার প্রাস্তবটা বিবেচনা করবেন। এর চেয়ে ভালো প্রস্তাব আর হতেই পারে না।

কাফির সর্দাররা বলল- কী সেই প্রস্তাব?

আবূ জাহল বলল- প্রত্যেক গোত্র থেকে একজন করে শক্তিশালী ও সাহসী যুবক নিয়ে একটা টিম গড়তে হবে। এবং তাঁদের হাতে থাকবে একটা করে ধারালো তলোয়ার। তারা সাবাই ও (নবীজী)-র উপর এককোপে খুন করার মতো তলোয়ার চালাবে। এভাবে ওকে হত্যা করা হলে, তার দায় সমস্ত গোত্রের উপর পড়বে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এভাবে হত্যা করলে (নবীজীর গোত্র) বনী হাশিম বদলা নেবার জন্য কুরাইশের সমস্ত গোত্রের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারবে না। তা সত্ত্বেও যদি ওরা আমাদের সাথে যুদ্ধ বাধায়, তবে আমরা ওদেরকে কতল করে দেব এবং এভাবে ওদের হাত থেকে নিরাপদ হয়ে যাব।

শয়তান বলে- আল্লাহ্‌র কসম! এই হল একটা প্রস্তাব। যা ওই যুবক বলেছে। আমারও এই মত। এছাড়া অন্য কিছু নয়।

ওই প্রস্তাবে সবাই একমত হবার পর সভা বরখাস্ত হয়।

এবং ঠিক সেই সময় জনাব রসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর কাছে হযরত জিবরাঈল (আঃ) গিয়ে নিবেদন করেন- আজ আপনি আপনার বিছানায় আরাম করবেন না।– তারপর তিনি কাফিরদের চক্রান্তের কথাও তাঁকে বলেন এবং আল্লাহ্‌ তাঁকে সেই সময় হিজরতের নির্দেশ দেন।

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।