ধনী ও দরিদ্র

আমাদের সমাজে ধনী ও দরিদ্র এই দুই শ্রেণীর মানুষ বাস করে। ধনীরা তাদের অবস্থানকে মজবুত করার জন্য যেমন বেশী বেশী ধন-সম্পদ লাভের চেষ্টা করে; তেমনি দরিদ্ররা তাদের দুঃখ-কষ্ট দুর করার জন্য ধন-সম্পদের প্রতি আগ্রহী হয়। কিন্তু এটা পরীক্ষিত সত্য যে, বেশী ধনসম্পদ থাকলেই মানুষ সুখী হতে পারে না। কারণ অতিরিক্ত ধন-সম্পদ মানুষকে আল্লাহর স্মরণ থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারে। এছাড়া ধন-সম্পদ মানুষকে অহংকারী করে তুলতে পারে। নবী করিম (সাঃ) বলেছেন, ‘আমির ও ধনী লোকের ৪০ বছর আগে দরিদ্র বা গরিব লোকেরা জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘তোমরা দরিদ্র লোকের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন কর এবং তাদের প্রতি সাধ্য ও সামর্থ্য অনুযায়ী দান-খয়রাত এবং সাহায্য-সহযোগিতার মাধ্যমে উপকার কর।

ধন-সম্পদ মানুষকে অহংকারী করে তোলে। আর কোন মানুষ যখন অহংকারী হয় তখন তার অধীনস্থ কিংবা দরিদ্র মানুষকে সে আর মানুষ বলে মনে করে না। ফলে তার কথায় ও আচরণে গরীবরা কষ্ট পায়। এ সম্পর্কে আমরা রংধনু আসরে একটি সত্য কাহিনী প্রচার করেছি।

রাসূলেখোদা (সাঃ) একবার সাহাবীদের এক মজলিসে বক্তব্য রাখছিলেন। সকলে মনোযোগ দিয়ে তাঁর উপদেশ বাণী শুনছিল। এমন সময় ছেঁড়া জামা-কাপড় গায়ে দিয়ে একজন গরীব লোক সেই মজলিসে হাজির হলো। ইসলামী রীতিনীতির দৃষ্টিতে মজলিসে উপস্থিত সকলের সমান মর্যাদার অধিকারী এবং বৈঠকের আদব ও রীতি হচ্ছে, নতুন আগত ব্যক্তি যেখানে খালি জায়গা দেখবে সেখানেই বসে পড়বে। সে হিসেবে গরীব লোকটি বসার জন্য একটি খালি জায়গা খুঁজতে লাগলো্ । চারদিকে তাকিয়ে সে ঘরের এক কোণায় একটি খালি জায়গা দেখতে পেলো। তাই চুপচাপ সেখানে গিয়ে বসে পড়লো।

গরীব লোকটির পাশে আগে থেকে বসা ছিল একজন ধনী লোক। ছেঁড়া কাপড় গায়ে দরিদ্র লোকটি তার পাশে বসায় সে খুব বিরক্ত হলো। এরপর অহংকারী লোকটি তার মূল্যবান জামা-কাপড় টেনে নিলো যাতে লোকটার ছেঁড়া ময়লা কাপড়ের ছোঁয়া না লাগে। তারপর সে গরীব লোকটির কাছ থেকে দূরে সরে গেলো। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব ঘটনা খুব মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করছিলেন রাসূলুল্লাহ (সাঃ)। ধনী লোকটির কাণ্ড দেখে অসন্তষ্ট হলেন তিনি। তিনি ধনী লোকটিকে উদ্দেশ্য করে বললেন, কি ব্যাপার! ঐ লোকটা পাশে এসে বসায় তুমি এত বিরক্ত হলে কেন ? এই লোকটার দারিদ্র্য ও অভাব-অনটন তোমার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে মনে করে তুমি কি ভয় পেয়েছো ?

নবীজির এসব কথা শুনে লোকটি থতমত খেয়ে গেল। এভাবে রাসূলের চোখে ধরা পড়ে যাবে ভাবতেও পারেনি সে। এরপর কাঁচুকাচু হয়ে সে জবাব দিলো, না ! হে রাসূলুল্লাহ। আসলে এমনটি নয়। রাসূল (সাঃ) জানতে চাইলেন, তাহলে এমন কি কারণ ছিল যে, তুমি এ গরীব লোকটিকে দেখেই একপাশে সরে গেলে? তুমি কি ভেবেছো, ওর গায়ে লাগলে তোমার দামী জামা নোংরা হয়ে যাবে? ধনী লোকটি একথার কোন জবাব দিতে পারলো না। সে নিজের ভুল বুঝতে পেরে খুবই লজ্জিত হলো।

এরপর সে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! সত্যিই আমি খুব অন্যায় করে ফেলেছি। আমি আমার অন্যায় স্বীকার করছি। এখন আমি এ অপরাধের কাফফারা দিতেও রাজি আছি। আমি আমার এ অপরাধের কাফফারা হিসেবে আমার সম্পদেও অর্ধেক ও গরীব ভাইকে দান করতে চাই। এতে হয়তো আল্লাহ আমার গুণাহ মাফ করবেন।

ধনী লোকটির এ প্রস্তাব শুনে গরীব লোকটি উঠে দাঁড়ালো। এরপর ঐ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমি এই প্রস্তাব গ্রহণ করার জন্য মোটেই প্রস্তুত নই। এ সময় দরবারে বসা অন্য লোকেরা প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার কারণ জানতে চাইলে গরীব লোকটি বললো, আমি এ প্রস্তাবটি গ্রহণ করতে পারছি না বলে দুঃখিত। ধনী লোকটির প্রতি আমার কোন রাগ বা ঘৃণাও নেই। আমার একটাই ভয়, ওর মতো ধনসম্পদের অধিকারী হলে আমিও হয়তো অহংকারী হয়ে উঠবে। অন্য মুসলমান ভাইয়ের প্রতি আমিও অন্যায় আচরণ করবো, তখন সেই ধন-সম্পদ আমার জন্যে আরও ক্ষতির কারণ হয়ে উঠবে।

পাঠক! দেখলেন তো গরীব লোকটি কিভাবে ধনী লোকটি বিশাল সম্পদ প্রত্যাখ্যান করলো ? আসলে অতিরিক্ত ধন-সম্পদ মানুষকে যেমন অহংকারী করে তুলতে পারে তেমনি অতিরিক্ত দারিদ্র্যও মানুষের ঈমানকে নষ্ট করে দিতে পারে। তাই ইসলাম সবসময় মানুষের দারিদ্র্য দূর করার চেষ্টা করে। অভাব মোকাবেলার ব্যাপারে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গী সম্পর্কে আমিরুল মোমেনীন হযরত আলী (আঃ) বলেছেন, দরিদ্রতার জন্য চেয়ে মৃত্যু ভাল। তিনি তার পুত্র হানাফীয়াকে বলেন, হে আমার পুত্র! আমি তোমার দরিদ্রতার কারণে ভয় পাই। কারণ দরিদ্রতা মানুষের ধর্মকে অপূর্ণ করে এবং মন মানসিকতাকে বিচলিত করে দেয়। তাই আমাদের সবাইকে সমাজ থেকে দারিদ্র্য দূর করার চেষ্টা করতে হবে।

সদাচরণ

আকাশকুসুম কল্পনা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *