উপস্থিত জনপ্রতিনিধি ও কর্মকর্তাবৃন্দ – আসসালামও আলাইকুম বলেই রহিমুল্যা চেয়ারম্যান একটা বড় করে শ্বাস টানে। রুমে তখন পিন পতন নিরবতা – নতুন উপজেলা কর্মকর্তার আগমন উপলক্ষে সভা চলছে – এর মাঝে চ্যায়ারম্যেনের এই লম্বা শ্বাস ছেড়ে চুপ করে থতমত ভঙ্গীটা বেমানান। নতুন কর্তা সাহেব একটু উশখুশ করে নড়ে চড়ে বসে। রহিমুল্যা কিছুটা টের পায় – উপস্থিত সবার দিকে তাকিয়ে আবার শুরু করে সে – আজ আমাদের মাঝে এসেছেন সুযোগ্য — কর্মঠ – …. স্যার।
তাকে সাথে নিয়ে আমরা সবাই কাজ করব। আশা করি তিনি সহযোগীতা করবেন। আমাদের বিশেষ ফান্ডে কিছু টাকা আছে সেটা আগের উনি ব্যবহার না করে এই এলাকার জনগণকে বঞ্চিত করেছেন – আশা রাখি এইবার এর ব্যতিক্রম হবে। উপস্থিত সবাই স্যারের মুখের দিকে দৃষ্টি দিল – স্যার স্মিত হেসে বড়ই নরম গলায় জবাব দিল – এই এলাকার উন্নয়নের জন্যই আমি এসেছি – আপনাদের সাথে নিয়েই উন্নয়ন করব ইনশাল্লাহ। চারদিকে তীব্র করতালি ছুটল ছোট্ট ঘরের ভিতরে। রহিমুল্যা হাক দিল – ঐ ছমির – সবাইরে চা সিঙ্গারা থাওয়া – হোটেল ডাকাতিয়া থেকে আনবি আর আমার নাম কবি। ছমির নামে কেউ একজন দ্রুত বেরিয়ে গেল চোখের পলকে। স্যারের মুখে তখনও হাসি। স্যার অমায়িক বাবে বলল – সেই সকাল থেকে আমরা এখানে বসে আছি কাজের ব্যাঘাত ঘটছে আপনারা সবাই যার যার কাজে যান। সবাই ধীরে ধীরে উঠল। ইঞ্জিনিয়ার আর প্রজেক্ট অফিসার উঠতেই হাতের ইশারায় তাদের তাকতে বললেন স্যার। রুম টা ফাকা হতেই স্যার ধীরে ধীরে বললেন – রহিমুল্যা সাহেব ঘটনা কি খুলে বলেন – টাকা পয়সা আবার কই আছে? রহিমুল্যা গলা খাকারী দিয়ে বলল – আর বইলেন না স্যার, আগের স্যাররে এত করে কইলাম প্রায় ৬ লাখ টাকার ফান্ড আছে উন্নয়নের সেইটা বরাদ্দ দিতে – আমরা নাকি খাইয়া ফেলুম সেই কথা কইয়া আর ফান্ড টা ছাড়ল না।
স্যার প্রজেক্ট অফিসার আর ইঞ্জিনিয়ারের দিকে তাকালো – চশমা টা একটু টিক করে প্রজেক্ট অফিসার বলল স্যার ৬ লাখ না – আছে লাখ চারেক টাকা। ইঞ্জিনিয়ার হুট করে ধমক লাগাল – না জেনে টাকা পয়সার হিসাব দেন কেন? আছে ত মাত্র তিন লাখ। তাও এর অর্ধেক টা উপজেলা ক্যাম্পাসের উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ এর বাইরে খরচ করা যাবে না। প্রজেক্ট অফিসার মাথা ঝুকায় – ঠিক বলছেন স্যার। রহিমু্ল্যার মুখ টা একটু শুকনো লাগে। রহিমুল্যা কিছু একটা বলতে যায় – সেই মুহুর্তে স্যার মুখ খুলেন – চুপ করে যায় রহিমুল্যা। তিন লাখ যদি থাকে তবে অর্ধেকে হয় দেড় লাখ। আচ্ছা রহিমুল্যা সাহেব আপনি বলেন এই টাকা দিয়ে সবাইকে খুশী করা যাবে না। অল্প টাকা। একটা কাজ করেন – আপনি ১ লাখ টাকার একটা পুকুর সংস্কার প্রজেক্ট দেন আর আপনার পছন্দ মত আর কাউরে দিয়া একটা রাস্তায় মাটি ভরাটের বাকী টাকার প্রজেক্ট দিতে বলেন। খুশী ত – বলেই স্যার তাকান রহিমুল্যার দিকে। স্যার আপনি যখন বলছেন খুশী না হয়ে পারি। কালকেই করে দেব সব। তা স্যার দুপুরে কি বিরানী খাবেন ? আপনার পরিবার ত এখনও আনেন নাই – আমার বাড়ি দুরে তা না হইলে বাড়িতেই যাইতে বলতাম। স্যারের অফিসে বিরানী পাঠানোর ব্যবস্তা করেন তাইলেই হবে – প্রজেক্ট অফিসার সাথে সাথে উত্তর দেয়। স্যার তার অমায়িক হাসিটা মুখে ঝুলিয়ে – রহিমুল্যাকে আসতে বলেন। সপ্তাহ যায় – গোটা বিশেক নারকেল গাছের গোড়াতে সাদা চুন করে নম্বর বসানো হচ্ছে যত্ন করে কালো কালিতে। সবাই দেখছে নতুন স্যার নিজে দাড়িয়ে থেকে কাজের তদারকি করছে। রোদ বেশ তাও স্যারকে নিবৃত্ত করতে পারছে না মাঠের মাঝে দাড়ানো থেকে। আর দুইজন শ্রমিক সেই সকাল থেকে আবর্জনা পরিস্কার করছে মাঠের। আগের দিন সকল অফিসের সামনে পিছনে থেকে সকল ময়লা পিয়ন দিয়ে পরিস্কার করবার নোটিশ জারি হয়েছে। সবাই কর্মততপর।
বেশ পরিস্কার পরিস্কার একটা ভাব এসেছে। একটা কাজের লোক পাওয়া গ্যাছে এতদিনে। সবার মুখে প্রসংশা আর প্রশংসা। বিকাল নাগাদ কাজ শেষ। সবাই চলে গ্যাছে। পরের দিন আবার শুক্রবার। সুনসান সব সন্ধার আগে আগে। স্যার হাটতে বেরিয়েছেন। উল্টোদিক থেকে দুইজন নতুন কর্মকর্তা আসছেন। স্যার ডাক দিলেন – সামনে যেয়ে তারা সালাম দিল। স্যারের মুখে অমায়িক সেই হাসি। বলেন ত এতদিন কিভাবে ছিলেন এত নোংরাতে আপনারা? আপনাদের যুবক বয়স – আপনারা কই উদ্যোগী হবেন তা না – আমাকেই করতে হলো – স্যার বলে চলেছেন চুপচাপ দুই কর্মকর্তা শুনছেন শুধু – হুম স্যার একটু পরিস্কার পরিস্কার লাগছে আজকে চারপাশ। একটু কেন লাগবে ? বলেন অনেক পরিস্কার – আপনাদের দেখবার চোখও নেই দেখছি – স্যারের স্বগোতক্তি – গাছের গায়ে লাল সবুজ বর্ডার গুলো দেখেছেন ?
এইসবও চোখে পরে না আপনাদের – স্যার একটু বিরক্ত হয়ে বলেন আসলে বিষয়টা এইভাবে ভাবিনি স্যার – বলেই মাথা ঝাকায় দুই জন দেশ প্রেম অনেক বড় জিনিস বুঝলেন – দেশ প্রেম আনেন মনে – লাল সবুজে দেখছেন কেমন একটা দেশ প্রেম দেশ প্রেম ভাব আসছে !!! এভাবেই দেশ কে নিয়ে ভাবতে হয় – দেশ প্রেম দেখাতে হয় – স্যারের মুখ বলতে বলতে উজ্জ্বল হয়ে উঠে সাঝ বেলাতে ।।।