আজ নির্ধারিত সময়ের আগেই ফুটবল খেলা শেষ হল ।
আওয়াজটা বিকট ছিল , ফুটবল বিস্ফোরণের ।
মাগরিবের আযান দেওয়ার অনেকটা সময় বাকি আছে বিধায়
বাড়ি গেলাম না । মোয়াজ্জেম ভাইয়ের দোকানে বসলাম ।
টেলিভিশনে হিন্দি ছবি চলছিল । গ্রামের মানুষ
হিন্দি ভাষা কতটুকু বোঝে তা জানিনা কিন্তু হিন্দি গানের
তালে নাচতে পারে আবার ছোটছোট পোশাক পড়া রমণীর ঢং-
রঙ দেখে জিভে কামড় দিতে পারে বেশ । লজ্জা লাগবে কিন্তু
চ্যানেল পরিবর্তন হবেনা , হু ।
তবে হ্যাঁ , এই ছোট পোশাক পড়া যদি কেউ সামনে পড়ে দুঃখিত
ছোট পোশাক তো দূরে থাক বড় থেকে একটু ছোট আর
চাপা পোশাক যদি কেউ পড়ে তবে তো ছিঃ ছিঃ ছিঃ জিকির
উঠে যায় ।
নিজে টেলিভিশনে দেখবো , এক চোখ বুজে লজ্জায়
জিভে কামড় দিবো তবুও দেখবো । কিন্তু কেউ পড়বে না । বড়
আজব নিয়ম , পড়লে পাপ দেখলে কি বলবে কার বাপ !
মোয়াজ্জেম ভাইটা খুবই ভাল মানুষ । সবার কাছেই , বিশেষ
করে যারা “গাঁজা” টানে তাদের কাছে তিনি দেবতা । তার
কারণ ভাই চোখ দেখেই চা বানিয়ে দিতেন ,দুধ-
চিনি বেশী দিয়ে শরবত চা । চিনির বাজার তুঙ্গে উঠলেও স্বাদ
অটুট থাকবে ।
মানুষটা সহজসরল , হাসি-বিহীন মুখে কারো দিকে তাকায়
না লোকটা ।
বাকি টাকা নিয়ে কারো সাথে মানুষটা ঝগড়া করে নাই
এখনো । এমনকি নিজের বউকে অথবা একমাত্র মেয়েকে যখন
মারত তখন তিনি মারার কারণ বলত আর হাসত ; অদ্ভুত মানুষ ।
টেলিভিশন বন্ধ , মাগরিবের আযান হচ্ছে ।
হিন্দি ছিনেমার নেশায় কখনযে সন্ধ্যা হল টের পাইনি । আযান
শেষে আরও গভীর ভাবে বোঝা যাবে গ্রামে রাত
নেমেছে কারণ শহরে যখন সন্ধ্যার পর বিদ্যুতের ট্রান্সমিটার
গুলো সচল হয় তখন গ্রামের ট্রান্সমিটার গুলো বন্ধ হয় ।
অনেকক্ষণ দোকানে বসেছি , উঠে একটু হাঁটতে চাইতাছি কিন্তু
শরীরটা এগোচ্ছেনা । তখনই একটা আওয়াজ এলো বাইরের রোড
থেকে ; ফুটবল বিস্ফোরণের মতো ছিল আওয়াজটা ।
আজকেও এই রোডে একটা জীবন শেষ হল আওয়াজেই
বুঝতে পেরেছিলাম তবে মানুষের বলা ” ধর , ধর ,” “দৌড় দে ”
দৌড়া ” শব্দ গুলো শুনে নিশ্চিত হলাম আওয়াজ টা ফুটবলের
না মানুষের ।
কিছুক্ষণ আগে যে শরীরটা চলছিলনা সে শরীরটাতেই এখন জোড়
বেড়ে গেছে ।
মোয়াজ্জেম ভাইকে এক-কাঁপ চা বানাতে বলে দৌড়িয়ে এলাম
ঘটনা-স্থলে ।
আজ মাঠে ফুটবলটা ফেটেছে ঠিক কিন্তু ছিন্ন-ভিন্ন হয় নাই ।
তবে রোডে আট – নয় বছরের যে মেয়েটি পড়ে আছে ওর
দেহটা অক্ষত থাকলেও মাথার পেছনের অংশ থেঁতলে গেছে ,
খুলির তিন – চার খণ্ড হাড্ডি একটু দূরে দূরে পড়ে আছে ।
একটি চোখ বের হয়ে গেছে ।
কেউ একজন বলল ” মাইক্রো-বাসটার সামনের লাইট বন্ধ ছিল এর
জন্যই মোয়াজ্জেমের মাইয়াডা দ্যাখে নাই “।
ঘটনাটি কয়েক বছর আগের ।
এখনো গ্রামে ফুটবল খেলা হয় , মানুষ গুলো এখনো জিভে কামড়
দেয় আবার আযান শেষে ট্রান্সমিটার গুলো বন্ধও হয়ে যায় ।
গাঁজাখোর গুলো ওদের নেশা আজও বাদ দিতে পারেনি ,
তবে একটা মানুষ জীবনের অনেক কিছুই ত্যাগ করতে পেরেছে ।
এখন সে মানুষটা বউকে মারে না , নেই সেই হাসিমুখ ।
দুর্ঘটনার দিন আমি চা না পেলেও ঐদিনেই ছিল মোয়াজ্জেম
ভাইয়ের দোকানে আমার শেষ চায়ের অর্ডার দেয়া ।
সেদিন গাঁজাখোর গুলো হারিয়েছে ওদের দেবতা ; আর
দেবতাটি হারিয়েছে তার নেশা ।
— — Kazi Badhon
–সংগৃহীত
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।