দেওঘরে অদ্ভুত ঘটনা– দ্বিতীয় অংশ

পড়বার প্রায় এক মিনিট পরে ঘর হইতে যাই, যাবার সময়ও দেখে গিয়েছি।” আমরা আশ্চর্য্যান্বিত হইলাম। বাহির হইতে কোন লোক স চিহ্ণিত দরজা দিয়া কোন রকমে ঐ কথিত পদার্থটা ফেলিযা, পরে মা চলিয়া যাইবার পর তাহা তুলিয়া লইয়া গিয়াছে, এই সন্দেহ উপস্থিত হওয়াতে আমি ঐ দরজা কিরূপ বন্ধ আছে পরীক্ষা করিতে গেলাম; দেখিলা উহা ভিতর হইতে দৃঢ়রূপে বন্ধ রহিয়াছে। মা পুনঃ পুনঃ বলিতে লাগিলেন যে তাহার কিছুমাত্র ভ্রম হয় নাই – তিনি সুস্পষ্টরূপে একটা কালবর্ণের পদার্থ পড়ার শব্দ শুনিয়াছেন, এবং প্রায় এক মিনিট ধরিয়া সুস্পষ্টরূপে তাহা দেখিয়াছেন। খ চিহ্ণিত ঘরের ন চিহ্ণিত স্থানে আমরা প্রায গোলাকারে (in a circle) দাঁড়াইয়া এই শেষোক্ত ব্যাপারের আলোচনা করিতেছি, পার্শ্বে একটা প্রদীপ উজ্জ্বলরূপে জ্বলিতেছে, এমন সময় আমাদিগের সকলের সম্মুখে circle এর মধ্যভাগে থপ করিয়া একটি আন্দাজ ৪ ইঞ্চি পরিমিত জিনিস পড়িল। মা অমনি চমকিয়া উঠিয়া বলিলেন, “এই জিনিসটাই ঐ ঘরে পড়েছিল – আমি প্রায় এক মিনিট এটা দেখেছিলাম, এর আকার আমার বেশ মনে রয়েছে- ও ঘরে যা পড়েছিল এটা যে সেই – সে বিষয়ে আমার কোন সন্দেহ নাই।” এই ব্যাপারের পর এই সকল যে ভৌতিক ব্যাপার আমাদের সে বিশ্বাস অনেকটা গাঢ় হইল। যা হউক, ঐ পদার্থটা কি দেখিবার জন্য উঠাইয়া লইলাম, দেখিলা উহা একখানা ব্যবহৃত পুরাতন শুষ্ক সাবান। উহা যেরূপ শব্দ করিয়া আমাদের সম্মুখে পড়িয়াছিল কতদূর উপর হইতে পড়িলে সেরূপ শব্দ হয় তাহা পরীক্ষা করিয়া দেখিবার জন্য উহা প্রথমে খুব উঁচু হইতে তাহার পর আর একটু উঁচু হইতে এইরূপ দুই তিনবার ফেলিয়া দেখিলাম, আন্দাজ চারিহাত উপর হইতে ফেলিলে যেরূপ শব্দ হইল, প্রথম পড়িবার সময় সেইরূপ শব্দ হইয়াছিল। এই ঘটনার পর সে দিন রাত্রে আর কিছু হয় নাই। ঐ খ চিহ্ণিত ঘরে যাঁহারা শয়ন করিতেন তাঁহারা সে রাত্রে আর তথায় শয়ন করিলেন না।

১৪ই বৈশাখ আবার এই ব্যাপারের পুনরাভিনয় হয়। সে দিন সমস্ত দিন প্রচণ্ড গরম বাতাস বহিয়াছিল। এখানে গ্রীষ্মকালে যে দিন গরম বাতাস বহে দেখা যায় সে দিন ফল ফুল বা পাতা গাছ হইতে উঠাইয়া রাখিলে ৩।৪ ঘণ্টার মধ্যে শুষ্ক হইয়া যায – ফুল ও পাতা এত শুষ্ক হয় যে অতি সহজে তাহা গুঁড়াইয়া ফেলা যায় আর ফল অত্যন্ত বিকৃত অবস্থা প্রাপ্ত হয়। কিন্তু এই দিন অত্যন্ত গ্রীষ্ম হইলেও এবং খুব গরম বাতাস বহিলেও যে ফলগুলি পড়িয়াছিল তাহার কোনটী একটু শুষ্ক বা বিকৃত দেখা যায় নাই – দেখিলে বোধ হয় যে নিঃসন্দেহ তাহা তত্‍‌ক্ষণাত্‍‌ তুলিয়া আনিয়াছে। কোন কোনটীর বোটায় আটার ন্যায় আদ্র পদার্থও দেখা গিয়াছিল। নিকটে কোন স্থানে ঐ জাতীয় ফলের গাছ ছিল না অথচ সদ্য উত্‍‌পাটিত ফলের ন্যায় আকৃতি, এই ফল নিক্ষেপ কার্য্য মানুষের কাজ হইলে এরূপ হওয়া কখন সম্ভব নহে।
তত্‍‌পর দিন সন্ধ্যার পর গ চিহ্ণিত ঘরের ট চিহ্ণিত স্থানে রক্ষিত একটি দেরাজের উপর সম্মুখে বারাণ্ডায় খাটের উপর পিতা মহাশয় শয়ান ছিলেন, এবং দ ও ধ চিহ্ণিত দ্বারদ্বয়ের সম্মুখে বারাণ্ডায় বাড়ীর কেহ কেহ বসিয়াছিলেন।
এই তিন দিন এইরূপ ঘটনা হয়। ইহার পর প্রায় দেড় বত্‍‌সর কাল আমরা ঐ বাড়ীতে বাস করি, কিন্তু আর কখনও ঐরূপ কাণ্ড হয় নাই।

সাধারণের মধ্যে একটা সংস্কার আছে যে ভূতে ঢিল বা অন্য কোন বস্তু ফেলিলে তাহা কহারও গায় পড়ে না। আমাদের বাড়ীতে কযেক দিন যে সকল ফল পড়ে, তাহার একটিও কাহারও গায়ে পড়ে নাই।
যাঁহারা ভৌতিক ব্যাপার অনেক দেখিয়াছেন তাঁহারা বলেন উহা প্রথম রাত্রেই হয়। আমাদিগের বাটীতে তিন দিন যে কাণ্ড হইয়াছিল তাহা ১০টা রাত্রির পূর্ব্বেই বন্ধ হইয়া যাইত।

কোন কোন spiritualists বলেন এমন অনেক ভূত আছে যাহারা পবিত্র স্থানে অর্থাত্‍‌ যেখানে ঈশ্বরের নাম উচ্চারিত হয় সেখানে উপদ্রব করিতে পারে না। আমাদিগের বাটীর খ চিহ্ণিত ঘরে প্রত্যহ পারিবারিক উপাসনা হইত। ঐ ঘরে বা ঐ ঘরের পার্শ্বস্থ ছ ও জ চিহ্ণিত ঘর দুইটীতে উপরোক্ত ব্যাপারের কিছুই হয় নাই।

যে ব্যাপার বর্ণনা করিলাম তাহা যে ভৌতিক ব্যাপার, তাহা আমরা আজও সম্পূর্ণ বিশ্বাস করি না, তবে যেরূপ পরীক্ষা ও অনুসন্ধান করা হইয়াছিল তাহাতে উহা ভৌতিক ব্যাপার ভিন্ন আর কিছু হওয়ার বড়ই কম সম্ভাবনা ইহাই আমাদের সংস্কার।

গল্পের প্রথম অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

দুঃখিত!