দৃষ্টান্তবিহীন এক ঘটনা-পর্ব ৪
দৃষ্টান্তবিহীন এক ঘটনা-পর্ব ৩ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তুমি এবার ওদের ক্ষমা করে দাও। গরু ওয়ালা বলল, আপনার দরবারে আমি ন্যায় বিচার পেতে আসছি ক্ষমা করতে নয়। তখন জিব্রাইল (আঃ) এক আওয়াজ দিয়ে বললেন, হে খলিফা বিচার প্রার্থী ন্যায় বিচার পেতে এসেছে অতএব আপনি ন্যায় বিচার করুন। ক্ষমার মাধ্যমে মিমাংসার প্রয়োজন নেই। হযরত দাউদ (আঃ) তখন বৃদ্ধা কে জিজ্ঞাসা করলেন এ ব্যাপারে তোমাদের কি বক্তব্য আছে। বৃদ্ধা তখন বলল, হুজুর আমার স্বামী একজন নেককার ব্যাবসায়ী ছিলেন।
তিনি চির দিন তাঁর ব্যাবসার লাভের অর্ধেক গরিব দুঃখী কে দান করতেন। একদা তিনি ব্যাবসার উদ্দেশ্যে সিরিয়া যান। তাঁর পর আর তিনি ফিরে আসেনি। আমি তখন আমার ছেলেকে নিয়ে খুব বিপ্নন হয়ে পড়ি আমার আওতায় যেসব ধনসম্পদ ছিল তা দুষ্ঠ মানুষেরা আত্নসাত করে নেয়। ফলে আমাকে অভুক্ত অবস্থায় দিন কাটাতে হয়। তখন আমি মনে মনে চিন্তা করলাম।
বুভুক্ষ অবস্থায় হা হুতাশ করে মৃত্যু বরণ করার চাইতে নিভৃতে আল্লাহর নাম স্মরণ করতে করতে মৃত্যু কর অনেক শ্রেয়। তাই আমি বাড়ি ঘর ছেড়ে ময়দানে একখানি জীর্ণ কুটির তৈরি করে আল্লাহর এবাদাত –বন্দেগীতে মশগুল হই। এখানে আল্লাহ তায়ালা আমাদের সুপেয় আপনি ও মূল্যবান ফল দান করে রিজিকের ব্যবস্থা করে দেন। আমরা দীর্ঘ সত্তর বছর যাবৎ আল্লাহর প্রদত্ত এ রিজিক খাই এবং বন্দেগীতে লিপ্ত থাকি। ইতোমধ্যে আমার ছেলে নতুন কিছু খাবার সংগ্রহ করে এনে দেয় এবং নিজে খায়। তখন আল্লাহ প্রদত্ত রিজিক আমাদেরকে বন্ধ করে দেয়। এ অবস্থায় যখন তিনদিন অতিবাহিত হয় তখন আমরা ক্ষুধার তাড়নায় খুবই অস্থির হয়ে পড়ি। এ সময় গরুটি এসে আমাদের দরজার সামনে শুয়ে থাকত। তৃতীয় দিন গরু জবান খুলে সে বলল, তোমরা ক্ষুধা যন্ত্রণা কেন ভোগ করছে? তোমার আমাকে জবাই করে আমার গোস্ত খেয়ে তোমাদের ক্ষুধা নিরারণ কর। আমি তোমাদের জন্য হালাল। আমাকে আল্লাহ তায়ালা তোমাদের খাদ্যরুপে মঞ্জুর করেছে।
তারই নির্দেশে আমি তোমাদের দ্বার প্রান্তে এসে হাজির হয়েছি। হুজুর আমরা গরুর মুখের কথা শুনে বিশ্বাস করলাম এবং গরুটিকে অতি সহজে জবেহ করে কাবাব করে কিছুটা খেয়ে ফেললাম। এমন সময় দেলালা নামক এক মহিলা গিয়ে গরুর বিষয় আমাদের নিকট অনুসন্ধান করতে আসে। পরবর্তী সময়ে আপনার লোক গিয়ে আমাদেরকে ধরে নিয়ে আসে। এখন বিষয়টির যে ফয়সালা তা আপনি করে দিবেন আমরা অবনত মস্তকে তা মেনে নেব। হযরত দাউদ (আঃ) উভয় পক্ষের বক্তব্য পরে উপস্থিত জনতার মাঝে নিজ রায় প্রদান করে বলেন। হে গরুর দাবিদার। তুমি একটি ধুরন্ধর মানুষ, তুমি একজন লুন্ঠনকারী ও হত্যাকারী। তুমি আজ যে সম্পদের অধিকারি, সে সম্পদের প্রকৃতি মালিক এই বৃদ্ধার স্বামী।
সে হিসাবে এই গরুর মালিক এ বৃদ্ধা ও তাঁর ছেলে। এমতাবস্থায় যার গরু সে জবেহ করেছ। তাতে তাদের কোন অপরাধ হয়নি। একথা শুনে গরুর দাবিদার ধনী ব্যক্তি বলল, খলিফা আমি আপনার নিকট ন্যায় বিচারের জন্য এসেছিলাম। কিন্তু আপনি তো আরম্ভ করে দিলেন কাল্পনিক কিচ্ছা। আপনি যা বলেছেন তা সত্য নয়। হযরত দাউদ (আঃ) বললেন, বেটা দাগাবাজ, মিথ্যুক আমি যা বলছি আমার কথা নয়। হযরত জিব্রাইল (আঃ) এর কথা। আমি মিথ্যা বলছি না তুই মিথ্যা বলছিস তাঁর প্রমাণ দেখ।