দুর্ভিক্ষের আযাব প্লেগের আযাব
১৮ হিজরিতে ওমর ফারুক (রাঃ) এর খেলাফত আমলে হঠাৎ বৃষ্টি বর্ষণ বন্ধ হয়ে যায়। বাতাসে ধূলোবালির পরিবর্তে ছাই উড়তে থাকে। এ কারণে দুর্ভিক্ষের সে বছরকে ইতিহাসে আররামাদা নামে অভিহিত করা হয়েছে। সে কঠিন দুঃসময়ে বন্য হিংস্র পশুর দল খাদ্যের আশায় মানুষের কাছে ছুটে এসেছিল। খলিফা প্রতিজ্ঞা করেছিলেন সাধারণ মানুষ যতদিন খাদ্য পানীয় পুরোপুরি না পাবে ততোদিন তিনি দুধ ও ঘি খাবেন না।
৬৪ হিজরিতে বসরায় ভয়াবহ প্লেগ দেখা দেয়। বসরার গভর্ণর মারা যান। তার নামাযে জানাযায় চার জন মানুষও পাওয়া যায়নি। ৯৬ হিজিরীতে প্রচন্ড প্লেগে ৩ দিনে ৭০ হাজার মানুষ মারা যায়। সাহবী আনাস (রাঃ) এর সন্তান সংখ্যা ছিল একশ’র বেশি। ওদের মধ্যে ৮০ জন প্লেগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। ভয়াবহ সর্বগ্রাসী প্লেগে যারা মারা যেতো তাদেরকে কবরস্থানে নিয়ে কবর দেয়া সম্ভব হয় নি। একটি ঘরে তাদের লাশ রেখে ঘরে দরজা জানালা ইট দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হতো।
১৩১ হিজরীতে প্লেগের প্রকোপে প্রথম দিনে ৭০ হাজার, দ্বিতীয় দিনে ৭০ হাজারের বেশি এবং তৃতীয় দিনেও বহু মানুষ মারা যায়। ৩৩৪ হিজরীতে এমন দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় যে, মানুষ হিংস্র পশু জবাই করে খেতে থাকে। এমনকি নিজেদের সন্তানদের জাবাই করে ক্ষুধা নিবারণ করে। কয়েকটি রুটির বিনিময়ে সে সময় অনেক বড় সম্পত্তি বিক্রির ঘটনা ঘটেছিল। গভর্ণর মোয়েজ্জুদ্দৌলা ২০ হাজার দিরহাম দিয়ে এক চালান গম কিনেছিলেন। সেই চালানে ৮০ মন গম ছিল। প্রতি মন দু’শ দিরহাম, প্রতি সের পাঁচ দিরহাম দাম পড়েছিল।
৪৪৮ হিজরিতে এমন এক দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় যে, ৫ সের খাদ্যদ্রব্য ৭ গুন দামে বিক্রি হয়। এক গিনিতে একটি ডালিম বিক্রি হয়েছিল। একটি চাকরের মূল্য ছিলি এক গিনি। মিসরে এক ঘরে ৩ জন চোর ঢুকেছিল খাদ্যদ্রব্যের সন্ধানে। সকালে দেখা যায়, তিনজন ঘরের তিন জায়গায় মরে পড়ে আছে।
৪৬২ হিজরিতে এমন ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় যে, মানুষ মানুষকে ধরে জবাই করে খেতে থাকে। একটি বাদাম সে সময় এক দিরহামে বিক্রি হয়েছিল। সে সময় একজন গভর্ণর ঘোড়া নিয়ে এক জায়গায় অবতরণ করেন। তিনজন লোক সি ঘোড়াকে জবাই করে ঘোড়ার গোশত কাঁচা খেয়ে ফেলে। গভর্ণর উক্ত তিনজন লোককে ফাঁসীতে মৃত্যুর সাজা দেন। রাতে ফাঁসী কার্যকর করা হয়েছিল। সকালে দেখা যায় সে সে তিনজনের কারো দেহে গোশত নেই শুধু কঙ্কাল পড়ে আছে। ক্ষুধার্ত মানুষেরা সে তিন ব্যাক্তির দেহের গোশত কেটে খেয়ে ফেলেছিল।
নাঊযুবিল্লাহ মিনাল আফাত অল হাওয়াদিছ। বিপদ আপদ এবং দুর্বিপাক থেকে আমরা মহান আল্লাহর কাছে পানাহ চাই।