দুনিয়া ত্যাগকারী রাজকন্যা

বনী ঈসরাইলের এক আবেদা রাজকন্যা ছিল। তার দ্বীনদারী ও পরহেজগারী দেশময় ছিল প্রসিদ্ধ। একবার এক রাজপুত্র তাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিলে সে কোন ভূমিকা ছাড়াই ঐ প্রস্তাব প্রত্যাখান করল। পরে সে তার দাসীকে বলল, আমার জন্য একজন ফকীর ধরনের আবেদ জাহেদ ও নেক পাত্র খোজ কর। দাসী বহু সন্ধান করে একজন নেক পাত্র খুঁজে বের করল এবং রাজকন্যার সামনে উপস্থিত করল। তিনি তাকে বললেন, তুমি যদি আমাকে বিয়ে করতে সম্মত হও, তাহলে এখনি কাজীর নিকট চল। সেখানে আমাদের বিয়ে সম্পন্ন হবে। রাজকন্যার প্রস্তাব ছেলেটি গ্রহণ করল এবং যথাসময়ে বিয়ে সম্পন্নও হল।

বিয়ের পর ছেলেটি তার স্ত্রীকে বলল, তোমাদের বাড়ি চল। উত্তরে সে তার পরনের কম্বলটিকে দেখিয়ে বলল, আল্লাহ্‌র শপথ! একমাত্র পরনের এ কম্বলটি ছাড়া আর কোন সম্বল নেই আমি দিনের বেলা এটা পরিধান করি এবং রাতের বেলা এটা গায়ে দিয়ে শয়ন করি। নব পরিনীতা রাজকন্যার মুখে একথা শুনে ছেলেটি কিছুমাত্র বিচলিত না হয়ে বলল, আমি তোমার এ অবস্থার উপর সন্তুষ্ট আছি।

ফকীর রাজকন্যাকে বিয়ে করে তার জীর্ণ কুটিরে এনে উঠাল। সারাদিন মেহনত করে সন্ধায় স্ত্রীর জন্য সামান্য আহার নিয়ে ঘরে ফিরত। স্ত্রী প্রতিদিন তা দ্বারাই ইফতার করে আল্লাহ্‌ পাকের শুকুর আদায় করত।

ঘটনাক্রমে ফকীর একদিন তার স্ত্রীর জন্য কিছুই সংগ্রহ করতে পারল না। দিনের শেষ ভাগে সে পেরেশান হয়ে ভাবতে লাগল, স্ত্রী নিশ্চয় আমার পথ পানে চেয়ে অপেক্ষা করেছে। আমি ঘরে ফিরলে সে ইফতার করবে। অথচ আজ তার জন্য কিছুই সংগ্রহ করা হয়নি। মনে মনে সে এসকল কথা ভেবে পেরেশান হল বটে, কিন্তু স্ত্রীর জন্য ইফতারের কিছুই উপায় করতে পারল না। অবশেষে সে অযূ করে দুরাকাত নামায আদায়ের পর আল্লাহ্‌ পাকের দরবারে আরজ করল, আয় পরওয়ারদিগার! তুমি তো ভাল করেই জান, আমি কখনো তোমার নিকট দুনিয়ার কোন বস্তু প্রার্থনা করিনি, কিন্তু আজ আমার স্ত্রীর মনতুষ্টির জন্য তোমার নিকট হাত তুলেছি। আমার স্ত্রী রোজা রেখে আমার অপেক্ষা করেছে। অথচ আজ আমি তার জন্য কিছুই জোগাড় করতে পারিনি। হে বিশ্বজগতের মালিক! তোমার ধনভাণ্ডারে তো কোন কিছুরই অভাব নেই। আমি তোমার নিকট রিযিক প্রার্থনা করছি। আর তুমিই সকলকে রিযিক দান করে থাক।

তার মোনাজাত শেষ হওয়ার সাথে সাথে আকাশ হতে একটি মুক্তা এসে তার সামনে পতিত হল। সে ঘরে ফিরে স্ত্রীর হাতে ঐ মুক্তা তুলে দিল। স্ত্রী ঐ মুক্তা দেখামাত্র ভয় পেয়ে স্বামীকে জিজ্ঞেস করল, তুমি এটা কোথায় পেয়েছ? এমন উন্নত মানের মুক্তা তো আমি আমাদের রাজ মহলেও দেখিনি। উত্তরে তার স্বামী ঘটনার বিবরণ দিয়ে বলল, আজ সারাদিন পথে পথে ঘুরেও তোমার জন্য কিছুই জোগাড় করতে পারিনি। অথচ তুমি ইফতারের জন্য আমার অপেক্ষায় বসে আছ। এদিকে খালি হাতে ঘরে ফিরতে আমারও লজ্জা হচ্ছিল। পরে আমি আমার সকল দুঃখের কথা জানিয়ে আল্লাহ্‌ পাকের নিকট দোয়া করলাম। সাথে সাথে আকাশ হতে এ মুক্তা আমার নিকট পতিত হল। ঘটনার বিবরণ শুনে স্ত্রী বলল, এখুনি তুমি এ মুক্তা নিয়ে সেখানে চলে যাও এবং কান্নাকাটি করে আল্লাহ্‌ পাকের নিকট এরূপ দোয়া কর, আয় আল্লাহ্‌! এ মুক্তা যদি তুমি আমাকে দুনিয়ার রিযিক হিসেবে দান করে থাক তবে এতে বরকত দান কর। আর যদি এটা আমাদের আখেরাতের অংশ হতে দান করে থাক তবে এখুনি এটা উঠিয়ে নাও।

ফকীর ঐ স্থানে গিয়ে স্ত্রীর কথামত আল্লাহ্‌র দরবারে মোনাজাত করল। তার দোয়ার শেষে আল্লাহ্‌ পাক ঐ মুক্তা আকাশে উঠিয়ে নিলেন। অতঃপর সে ঘরে ফিরে এল। ঘটনার বিবরণ শুনে স্ত্রী বলল, ঐ আল্লাহ্‌র শুকর যিনি আমাদেরকে ঐ বস্তু দেখিয়ে দিয়েছেন যা আমাদের পরকালের জন্য সঞ্চিত রেখেছেন।

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।