এক শিক্ষক স্কুলে যাওয়ার পথে দুই সের গোস্ত স্ত্রীর হাতে দিয়ে বলেছিলেন, ভালো করে রান্না কর, স্কুল থেকে ফিরে খাব। শিক্ষকের অত্যন্ত রুচিশীল পরিবার। স্বামী-স্ত্রীতে ভীষণ ভাব। স্বামী স্কুলে গেলে স্ত্রী পরম আগ্রহে মাংস রান্না করে। রান্নায় ভালোবাসার খুশবু ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। গোসল আসল সেরে স্ত্রী স্বামীর অপেক্ষায় ছিল। এমন সময় তার ভাই-বোন, বোনজামাই হাজির। বাবার বাড়ির আত্দীয় দেখে সে পরম খুশি। খাবার সময় বয়ে যাচ্ছিল, স্বামীর ফিরতে দেরি হবে, তাই বাবার বাড়ির আত্দীয়দের খেতে দেন। অন্যান্য খাবার তো ছিলই, তার ওপর ম ম করা খুশবু ছড়ানো মাংস। ভাই-বোন, বোনজামাই খুব তৃপ্তি সহকারে খাচ্ছিল। গোস্ত খুবই স্বাদের হয়েছিল। ভাই-বোনেরা যখন গোস্তের তারিফ করছিল তখন শিক্ষক গৃহিণী গর্ব করে ভাই-বোনদের পাতে আরও মাংস দিচ্ছে। সংসারে বাপের বাড়ির আত্দীয় এলে কম-বেশি সব বউয়েরই পাওয়ার বাড়ে। পাওয়ার দেখাতে গৃহিণী গোস্তের পাতিল খালি করে ফেলে। পাতিলে গোস্ত নেই দেখে গৃহিণীর হুঁশ হয়, হায় হায় এখন উপায়! শাক-সবজি ভাজা, ভাজি, ছোটখাটো মাছ সবই ছিল, তারপরও স্বামী নিজে গোস্ত দিয়ে গেছে, বাপের বাড়ির ইষ্টিরা সব খেয়ে ফেলেছেন এখন উপায়! উপায় আর কি? যার কেউ নেই তার আল্লাহ ভরসা।
মাষ্টার অন্য দিন বাড়ির ভেতরে এলেই হাত-মুখ ধুতে পানি দেয়, তারপর খাওয়ায়। সেদিন পানি, গামছা নিয়ে বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে থাকেন। স্বামীকে দেখেই পরম তৃপ্তির হাসি হেসে পানির বদনা এগিয়ে দেন। হাত-মুখ ধুয়ে দাঁড়াতেই প্রসারিত হাতে গামছা মেলিয়ে ধরেন। পরম তৃপ্তিতে শিক্ষক খেতে বসে। চমৎকার সব রান্না, ভাজা, ভাজি, ভর্তা, মাছ, মুরগি এসব খেয়ে স্বামী বেচারার কর্মসারা। মাস্টার মানুষ শেষে লজ্জা-শরমের মাথা খেয়ে জিজ্ঞাসা করে এত কিছু খেলাম, কিন্তু একটু গোস্ত দিলা না? স্বামীকে এক মধুর ঝেংটি মেরে, থাকলে দিতাম না। অবাক মাস্টার, কি বল? সব মাংস খেয়ে ফেলেছ, নাকি তোমার বাপের বাড়ির ইষ্টি দেখলাম তারা খাইছে? অগ্নিমূর্তি ধরে বউ বলে, জানি তুমি আমার বাপের বাড়ির লোকদের দেখতে পার না। তারা কি কোনো দিন মাংস খায় না যে, তোমার বাড়ির মাংস খেয়ে ফেলবে? তাহলে কে খেয়েছে? কে আর খাবে। এই যে মিউ মিউ করছে। তোমার এই আদরের বিড়াল খেয়েছে। কি বল? হাড্ডিসার এই বিড়াল দুই সের গোস্ত মাংস খেয়েছে? তবে আর বলি কি? মাস্টার হাতের ভাত ঝাড়া দিয়ে বিড়াল নিয়ে ভোঁ দৌড়। বাইরে গিয়ে দোকানিকে বলে দাঁড়িপাল্লা আর দুই সের পাথর দাও। দোকানি দাঁড়িপাল্লা এবং পাথর এগিয়ে দেয়। এক পাল্লায় বিড়াল, আরেক পাল্লায় পাথর- পাল্লা উঁচু করে দেখে সমান সমান। হাইস্কুলে অঙ্কের ২৫ বছরের শিক্ষক, এমন হিসাব জীবনে দেখেনি। ছুটে যায় বাড়িতে। ছানাবড়া চোখে জিজ্ঞাসা করে, বউগো এটা যদি বিড়াল হয় আমার গোস্ত কোথায়? আর এটা মাংস হলে আমার বিড়াল কই? দুই সের গোস্ত খেয়ে বিড়াল যে দুই সেরই থাকে এত বছর অঙ্কের মাস্টারি করলাম এমন অংক তো কখনো পেলাম না। তোমার কাছে কোনো সমাধান আছে নাকি? থাকলে বল তাড়াতাড়ি।
সংগ্রহে- ইন্টারনেট।
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।