দালিয়া-প্রথম পরিচ্ছেদ-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

পরাজিত শা সুজা ঔরঞ্জীবের ভয়ে পলায়ন করিয়া আরাকান-রাজের আতিথ্য গ্রহণ করেন । সঙ্গে তিন সুন্দরী কন্যা ছিল । আরাকান-রাজের ইচ্ছা হয় , রাজপুত্রদের সহিত তাহাদের বিবাহ দেন । সেই প্রস্তাবে শা সুজা নিতান্ত অসন্তোষ প্রকাশ করাতে একদিন রাজার আদেশে তাঁহাকে ছলক্রমে নৌকাযোগে নদীমধ্যে লইয়া নৌকা ডুবাইয়া দিবার চেষ্টা করা হয় । সেই বিপদের সময় কনিষ্ঠা বালিকা আমিনাকে পিতা স্বয়ং নদীমধ্যে নিক্ষেপ করেন । জ্যেষ্ঠা কন্যা আত্মহত্যা করিয়া মরে । এবং সুজার একটি বিশ্বাসী কর্মচারী রহমত আলি জুলিখাকে লইয়া সাঁতার দিয়া পালায় , এবং সুজা যুদ্ধ করিতে করিতে মরেন ।

আমিনা খরস্রোতে প্রবাহিত হইয়া দৈবক্রমে অনতিবিলম্বে এক ধীবরের জালে উদ্‌ধৃত হয় এবং তাহারই গৃহে পালিত হইয়া বড়ো হইয়া উঠে ।

ইতিমধ্যে বৃদ্ধ রাজার মৃত্যু হইয়াছে, এবং যুবরাজ রাজ্যে অভিষিক্ত হইয়াছেন ।

একদিন সকালে বৃদ্ধ ধীবর আসিয়া আমিনাকে ভর্ৎসনা করিয়া কহিল , “ তিন্নি! ” ধীবর আরাকান ভাষায় আমিনার নূতন নামকরণ করিয়াছিল- “ তিন্নি , আজ সকালে তোর হইল কী । কাজকর্মে যে একেবারে হাত লাগাস নাই । আমার নতুন জালে আঠা দেওয়া হয় নাই , আমার নৌকো —”

আমিনা ধীবরের কাছে আসিয়া আদর করিয়া কহিল , “ বুঢ়া , আজ আমার দিদি আসিয়াছেন , তাই আজ ছুটি । ”

“ তোর আবার দিদি কে রে তিন্নি! ”

জুলিখা কোথা হইতে বাহির হইয়া আসিয়া কহিল , “ আমি । ”

বৃদ্ধ অবাক হইয়া গেল । তার পর জুলিখার অনেক কাছে আসিয়া ভালো করিয়া তাহার মুখ নিরীক্ষণ করিয়া দেখিল ।

খপ করিয়া জিজ্ঞাসা করিল , “ তুই কাজ-কাম কিছু জানিস ? ”

আমিনা কহিল , “ বুঢ়া , দিদির হইয়া আমি কাজ করিয়া দিব । দিদি কাজ করিতে পারিবে না । ”

বৃদ্ধ কিয়ৎক্ষণ ভাবিয়া জিজ্ঞাসা করিল , “ তুই থাকিবি কোথায় । ”

জুলিখা বলিল , “ আমিনার কাছে । ”

বৃদ্ধ ভাবিল , এও তো বিষম বিপদ । জিজ্ঞাসা করিল , “ খাইবি কী । ”

জুলিখা বলিল “ তাহার উপায় আছে ” – বলিয়া অবজ্ঞাভরে ধীবরের সম্মুখে একটা স্বর্ণমুদ্রা ফেলিয়া দিল ।

আমিনা সেটা কুড়াইয়া ধীবরের হাতে তুলিয়া দিয়া চুপিচুপি কহিল , “ বুঢ়া , আর কোনো কথা কহিস না, তুই কাজে যা। বেলা হইয়াছে । ”

জুলিখা ছদ্মবেশে নানা স্থানে ভ্রমণ করিয়া অবশেষে আমিনার সন্ধান পাইয়া কী করিয়া ধীবরের কুটিরে আসিয়া উপস্থিত হইয়াছে সে-সমস্ত কথা বলিতে গেলে দ্বিতীয় আর-একটি কাহিনী হইয়া পড়ে । তাহার রক্ষাকর্তা রহমত শেখ ছদ্মনামে আরাকান রাজসভায় কাজ করিতেছে ।

গল্পের দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পড়িতে এখানে ক্লিক করুন

দুঃখিত!