দালিয়া-পঞ্চম পরিচ্ছেদ-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

তাহার পরদিনই রহমত শেখ জুলিখাকে গোপনে পত্র লিখিল যে , ‘ আরাকানের নূতন রাজা ধীবরের কুটিরে দুই ভগ্নীর সন্ধান পাইয়াছেন এবং গোপনে আমিনাকে দেখিয়া অত্যন্ত মুগ্ধ হইয়াছেন- তাহাকে বিবাহার্থে অবিলম্বে প্রাসাদে আনিবার আয়োজন করিতেছেন । প্রতিহিংসার এমন সুন্দর অবসর আর পাওয়া যাইবে না । ‘

তখন জুলিখা দৃঢ়ভাবে আমিনার হাত ধরিয়া কহিল , “ ঈশ্বরের ইচ্ছা স্পষ্টই দেখা যাইতেছে । আমিনা , এইবার তোর জীবনের কর্তব্য পালন করিবার সময় আসিয়াছে- এখন আর খেলা ভালো দেখায় না । ”

দালিয়া উপস্থিত ছিল , আমিনা তাহার মুখের দিকে চাহিল ; দেখিল সে সকৌতুকে হাসিতেছে ।

আমিনা তাহার হাসি দেখিয়া মর্মাহত হইয়া কহিল , “ জান দালিয়া?- আমি রাজবধূ হইতে যাইতেছি । ”

দালিয়া হাসিয়া বলিল , “ সে তো বেশিক্ষণের জন্য নয় । ”

আমিনা পীড়িত বিস্মিত চিত্তে মনে মনে ভাবিল , “ বাস্তবিকই এ বনের মৃগ , এর সঙ্গে মানুষের মতো ব্যবহার করা আমারই পাগলামি । ”

আমিনা দালিয়াকে আর-একটু সচেতন করিয়া তুলিবার জন্য কহিল , “ রাজাকে মারিয়া আর কি আমি ফিরিব । ”

দালিয়া কথাটা সংগত জ্ঞান করিয়া কহিল , “ ফেরা কঠিন বটে । ”

আমিনার সমস্ত অন্তরাত্মা একেবারে ম্লান হইয়া গেল ।

জুলিখার দিকে ফিরিয়া নিশ্বাস ফেলিয়া কহিল , “ দিদি , আমি প্রস্তুত আছি । ”

এবং দালিয়ার দিকে ফিরিয়া বিদ্ধ অন্তরে পরিহাসের ভান করিয়া কহিল , “ রানী হইয়াই আমি প্রথমে তোমাকে রাজার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে যোগ দেওয়া অপরাধে শাস্তি দিব । তার পরে আর যাহা করিতে হয় করিব । ”

শুনিয়া দালিয়া বিশেষ কৌতুক বোধ করিল , যেন প্রস্তাবটা কার্যে পরিণত হইলে তাহার মধ্যে অনেকটা আমোদের বিষয় আছে ।

গল্পের ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ পড়িতে এখানে ক্লিক করুন

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!