চাঁদ মুচকি হেসে সালাম দিল সীমাকে। তাকে স্বাগত জানাল। সীমা আববুর পাশে বসে পাঠ মশ্কে করছিল। সে চাঁদের মুচকি হাসির দিকে খেয়ালই করে নি। চাঁদের কাছে ব্যাপারটা খুব আশ্চর্য মনে হলো। চাঁদ বিস্ময়ে ভাবছে, কত আদুরে হাসি সীমাকে আমি উপহার দিলাম, অথচ সে আমার হাসি ও সালামকে পাত্তাই দিল না। হাজার হাজার বছর ধরে আমি আলোকোজ্জ্বল আকাশে উদিত হয়ে আসছি। কতো পিচ্চি সোনামণিদের আমি মুগ্ধ করেছি। মুগ্ধ করেছি সীমার চেয়ে আরো অনেক পাকা বুড়ো-বুড়িদের, কবি-সাহিত্যিকদের। কিন্তু সীমার মতো লা-পরোয়া মেয়ে তো আর দেখি নি। চাঁদ আপন মনে এসব কথা ভাবছে। ঠিক সে মুহূর্তে হঠাৎ তার পিতা বলল :
-বাহ, কত সুন্দর চাঁদ। কী হলো সীমা তোর । চাঁদ নিজের সবটুকু সৌন্দর্য নিয়ে তোর সঙ্গে কথা বলতে চায়, আলিঙ্গন করতে চায়। আড্ডা দিতে চায় হৃদয়-মন ভরে। দেখ দেখ, তার সালামের উত্তর দাও। উত্তর না দিলে প্রিয় চাঁদ তোর সঙ্গে রাগ করবে মা।
-সীমা হেসে বলল :
-নিঃসন্দেহে চাঁদ খুবই সুন্দর! কিন্তু চাঁদ দিয়ে আমার লাভ কি আববু?’
-পিতা আশ্চর্য করে বলল :
-কী বলিস সীমা ? চাঁদ হলো সৌন্দর্য ও আনন্দের প্রতীক। দেখতে পাস না, পুরো আকাশ কিভাবে আলোয় ঝলমল করছে! চাঁদের চতুর্দিকে তারকারা কিভাবে হেসে-হেসে নৃত্য করছে! চাঁদ সম্পর্কে এমন কথা কেউ বলে মা?
-সীমা বলল :
-কিন্তু বিদ্যুৎ থাকতে চাঁদের কী প্রয়োজন, আববু? এখন জ্ঞান-বিজ্ঞানের অগ্রগতির যুগ। এখন এটাই বাস্তবতা। এ বাস্তবতা কিছুতেই পরিবর্তনীয় নয়। তুমি তো ভীষণ জ্ঞান-বুড়ো আববু। তোমাকে এসব কথা নতুন করে বলতে হবে? তুমি তো সব বোঝ আববু।
পিতা প্রিয় সীমাকে চাঁদের উপকারিতা সম্পর্কে কিছু বলতে চাচ্ছিলেন। ঠিক সে মুহূর্তে, পিতা মুখ খোলার আগেই, হঠাৎ টুপ করে মুখ লুকাল চাঁদটা। নিভে গেল তার আলো। আঁধারিতে ছেয়ে গেল পুরো আকাশ। তারকাদের মন ডুবে গেল বিষণ্ণতার কালিমায়। সীমা কেঁপে ওঠল ভয়ে। আশ্রয় নিল পিতার কোলে। কাঁপা-কাঁপা কণ্ঠে বলল:
-কী হলো, আববু, কী হলো? সবকিছু ছেয়ে গেল আঁধারিতে। ভয়ে আমার তনুমন কাঁপছে। কিছুক্ষণ আগেই তো সবকিছু ঝলমলে উজ্জ্বল ছিল।
মেয়ের পিঠে আদুরে-শীতল হাত রেখে পিতা বলল:
-এখন বুঝছিস সীমা চাঁদের মূল্য?
-সীমা বলল :
-বুঝেছি আববু, ভালো করেই বুঝেছি। আমাকে ক্ষমা কর চাঁদমণি! তুমি ফিরে এস। ফিরে এস আমার প্রিয় চাঁদ। আমি সত্যি ভুল করেছি। আমাকে ক্ষমা কর। তুমি ছাড়া আমার রাত চলবে না। তুমি আমার বড় বান্ধবি চাঁদমণি। আর তোমাকে অবহেলা করব না, ওয়াদা দিলাম। ফিরে এস তুমি, জলদি ফিরে এস।
-পিতা বলল :
-মনে হয়, চাঁদ তোর উদাসীনতায় খুব কষ্ট পেয়েছে। আজকের বিকালে, মনে হয়, ও আর ফিরে আসবে না।
-সীমা বলল :
-কিন্তু আববু, চাঁদ তো শিশুদের খুব ভালোবাসে। আমি ভুল স্বীকার করেছি। হে প্রিয় চাঁদ! তুমি আমার কথা শুনবে না। ফিরে আসবে না তুমি। চাঁদ সীমার করুণ কণ্ঠ শুনে বুঝতে পারল, সীমার মন দুঃখে খুব ভারি হয়ে গেছে। চাঁদ ধীরে ধীরে আবার ফিরে আসল। আলোকিত হলো আকাশ। তারকারা হেসে ওঠল সুমধুর গান গেয়ে।
-সীমা বলল :
-কত ভালো চাঁদ তুমি। কত প্রিয় আমার চাঁদ! ধন্যবাদ তোমাকে।
চাঁদ হেসে বলল :
-শুনো হে সীমা। তুই পবিত্র শিশু। একেবারে ফুলের মতো। ভোরের স্নিগ্ধ আলোর মতো। নতুন চাঁদের হাসির মতো। মনে রেখ, স্রষ্টার কোনো সৃষ্টি অর্থহীন নয়। আমি তার এক উজ্জ্বল সৃষ্টি। আমি তোর মতো শিশুদের খুব স্নেহ করি। তাদের খেলার মাঠ আলোকিত করি। তুই আমার চিরবন্ধু। তোকে মা করে দিলাম। আমরা চিরদিন বন্ধু হয়ে থাকব- প্রতিশ্রুতি দিলাম। সীমা খুশীমনে ফিরে গেল পাঠের টেবিলে। তখনো তার মনে ফোটে আছে শুধু চাঁদের হাসি, চাঁদের হাসি।
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।