দান কমাতে গিয়ে বাড়ল——আমরা সেই সে জাতি –– আবুল আসাদ

বাংলাদেশে তখন সুলতানী শাসন। সুলতান ফিরোজ শাহ বাংলার সিংহাসনে। হযরত বিলালের দেশ আবিসিনিয়ার অধিবাসী তিনি। কৃষ্ণাংগ ফিরোজ শাহ সামান্য অবস্থা থেকে সুলহতান পদে অধিষ্ঠিত হবার সৌভাগ্য অর্জন করেছেন।

সুলতান ফিরোজ শাহ ক্ষমতার উচ্চ শিখরে উঠেও দৃষ্টি তার উর্ধমুখী হলো না, নীচের দিকে জনসাধারণের দিকেই নিবদ্ধ থাকলো। ভুললেন না তিনি জনসাধারণের কথা- গরীবদেরকথা। তিনি অকাতরে রাজকোষ থেকে গরীব জনগণকে অর্থ দান করতে লাগলেন। অভাবীর সংখ্যা বিপুল, প্রয়োজন তাদের বিরাট। তাই রাজকোষ থেকে অর্থ খরচ হতেও লাগল পানির মতো। রাজ দরবারের আমীর-উমরারা মহাবিপদে পড়ল-প্রমাদ গুণল তারা। ভাবল সুলতানের এ কী অমিতাচার! এভাবে দান করতে থাকলে তো রাজকোষ শূন্য হয়ে যাবে। আমীর উমরারা চিন্তা করলো, সুলতান নিজের হাতে অর্থ সাহায্য দেন না, তাই হয়তো অর্থের মায়া তাঁর কাছে বড় হয় না। দিনে যে অর্থ দান করা হয় তা যদি তিনি এক সংগে দেখতে পেতেন, তাহলে এত অর্থ কিছুতেই তিনি দিতে রাজী হতেন না। সামান্য অবস্থা থেকে তিনি এত বড় হয়েছেন, অর্থের মর্যাদা তাঁর চেয়ে আর বেশী কে বুঝবে। সুতরাং মন্ত্রণা পরিষদ পরামর্শ করে ঠিক করল, দানের অর্থ এনে সুলাতেন সামনে হাজির করতে হবে। পরামর্শ অনুসারেই কাজ হলো। পরদিন দানের জন্য নির্দিষ্ট একলক্ষ কাঁচা রোপ্য মুদ্রা এনে স্তূপীকৃত করে একজন মন্ত্রী অতি বিনয় সহকারে বললেন, “এ টাকাগুলোই আজ গরীব ও সাহায্যপ্রার্থীদের মধ্যে বিতরণের জন্য দিয়েছিলেন।” সুলতান ফিরোজ শাহ সে টাকার দিকে চেয়ে বললেন, “ও আচ্ছা, এ চাকাও তো যথেষ্ট বলে মনে হচ্ছে না। এর সাথে আরও এক লক্ষ টাকা যোগ করে গরীব দুঃখীদের মঝে বিলিয়ে দাও।” হতবাক মন্ত্রী আর কিছু বলতে পারলো না, বলতে সাহস পেলোনা। সুলতানের আদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালিত হলো। সেদিন দান করা হলো দু‘লক্ষ রৌপৗ মুদ্রা।

ইতিহাসে ব্যক্তিগত ও বংশীয় রাজসিংহাসনে খোদাভীরু শাসকের আগমনে মাঝে মধ্যে এভাবে রাজকোষ জনসাধারণের সম্পত্তিতে পরিণত হয়েছে।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!