
আমি ঢাকাতে একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে বি.বি.এ করছি। একদিন ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় যে হরতাল পরে, আমি ভাবলাম হরতালে বাড়ি চলে যাই। বাড়িতে যাওয়ার পর এই ঘটনাটি শুনি। সবাই মোটামুটি আতংকের মধ্যে ছিল। রাত্রে কেউ একা ঘর থেকে বের হতে সাহস পায়নি, বিশেষ করে মহিলারা। ঘটনা সংক্রান্ত যাকে বলা হচ্ছিল, তিনি আমার চাচাতো ভাই, নাম অনিক, বয়স ১৪।
এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে একদিন, রাত্রে প্রসাবের বেগ অনুভব করায়, অনিক তার ছোট বোন সুমাইয়াকে নিয়ে টয়লেটে যেতে বের হয়। গ্রাম এলাকার টয়লেট সাধারণত বাড়ির এক কর্নারে থাকে। অনিক টর্চ লাইট নিয়ে বের হয় এবং ঘরের দরজা খুলে দেখে, একজন বৃদ্ধ মোটা মহিলা তার ঘরের দরজায় বসে আছে। মহিলার পরনে ছিল সাদা কাপড়। সে লাইট মারার সঙ্গে সঙ্গে মহিলা টা অদৃশ্য হয়ে গেল, তবে অনিক ঘাবড়াল না। এরপর, তারা টয়লেটে পৌঁছায় এবং এমন সময় কিছু একটা ছোড়া হওয়ার শব্দ শোনা যায়।
ছুড়ে মারার শব্দ শোনার পর, সুমাইয়া পিছনে ফিরে দেখে যে, সেই মহিলা আবার তাদের দিকে তাকিয়ে হাসছে। অন্ধকারে সাদা কিছু সহজেই দেখা যায়, তাই তারা বুঝতে পারে, কিন্তু টর্চ লাইট মারার পর, মহিলা আবার অদৃশ্য হয়ে যায়। এরপর তারা সাদা ধোয়া মত কিছু দেখতে পায়। অনিক সুমাইয়াকে তাড়াতাড়ি আসতে বলে, ঠিক সেই মুহূর্তে ধোঁয়া ওর মধ্যে প্রবেশ করতে থাকে। অনিক নিজের কন্ট্রোল হারাতে থাকে এবং ঘরে ফিরে যায়।
রাতে সে দাদা-দাদির সাথে ঘুমাতে যায়। তবে, ঘুমানোর সময় সে বাহিরে আবার সেই ধোঁয়া দেখতে পায়। সে যখন ধোঁয়ার দিকে এগিয়ে যায়, সে দেখতে পায় যে, সেই ধোঁয়া তাকে ডাকছে। কিন্তু দাদা বিষয়টি বুঝতে পেরে, তাকে ডেকে তুলেন এবং বলেন, “তুমি ঘুমাচ্ছো না কেন?” তখন, অনিক ওর দাদার সাথে তর্ক শুরু করে এবং অদ্ভুত ভাবে কথা বলতে থাকে। দাদি বিষয়টি বুঝতে পারলে, দাদী পাশের ঘর থেকে তার বাবাকে ডাকেন। পরে, তারা মসজিদের হুজুরের কাছে যায়। হুজুর বললেন, “তাকে ভুতে ধরেছে।” হুজুর দোয়া পড়ে ফু দিয়ে দেন।
হুজুরের দোয়ায় কিছুটা শান্তি পেয়ে, পরদিন সকালে অনিকের চেহারা ফুলে যায় এবং কণ্ঠ স্বাভাবিক থাকেনা, এটি মহিলাদের মতো হয়ে যায়। তখন তার বাবা কবিরাজের কাছে খবর দেন এবং কবিরাজ নামাজের পরে আসে। কবিরাজ অনিককে জিজ্ঞাসা করে, “তোর নাম কী?” তখন, ভুতটা বলতে শুরু করে, “আমার নাম ইকরা এবং আমার আরেক বোন কোকরা।” কবিরাজ জিজ্ঞাসা করেন, “তুই কেন এই বাড়িতে এসেছিস?” ভুতটা বললো, “ও কেন আমার সামনে পড়েছে?” এরপর কবিরাজ ভুতটাকে ধমক দিয়ে বলেন, “তুই কেন বাড়ির দরজায় আসছিস?”
এরপর কবিরাজ তেল পড়ে দেন এবং বললেন, “তুই ওকে ছেড়ে চলে যা।” ভুতটা চলে যাওয়ার কথা বললেও, কবিরাজ তেল প্রয়োগ করেন এবং বলেন, “এটা মাখলেই ভালো হবে।” কিছুদিন পর, অনিক সুস্থ হয়ে ওঠে।
এবং, গত মাসের মাঝামাঝির দিকে যখন আমি গ্রামের যাই, তখন এক দাদা বললেন, তিনি মাঝরাতে তাহাজ্জুত নামাজ পড়েন এবং প্রায় সেই ভুতটাকে বাড়ির আশেপাশে ঘুরতে দেখেন। তবে, তিনি জানান, ভুতটা কখনো ঘরের দরজায় চলে আসছে, তবে কেউ তাতে ভয় পায় না। এখন, তার দাদা নিয়মিত জিকির করেন, যাতে এই ধরনের অশুভ ঘটনা আর না ঘটে।