কী করিয়া গল্প লিখিতে হয়, তাহা সম্প্রতি শিখিয়াছি । বঙ্কিমবাবু এবং সার ওয়াল্টার স্কট পড়িয়া আমার বিশেষ ফল হয় নাই । ফল কোথা হইতে কেমন করিয়া হইল , আমার এই প্রথম গল্পেই সেই কথাটা লিখিতে বসিলাম ।
আমার পিতার মতামত অনেকরকম ছিল ; কিন্তু বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে কোনো মত তিনি কেতাব বা স্বাধীনবুদ্ধি হইতে গড়িয়া তোলেন নাই । আমার বিবাহ যখন হয় তখন সতেরো উত্তীর্ণ হইয়া আঠারোয় পা দিয়াছি ; তখন আমি কলেজে থার্ড্ ইয়ারে পড়ি — এবং তখন আমার চিত্তক্ষেত্রে যৌবনের প্রথম দক্ষিণবাতাস বহিতে আরম্ভ করিয়া কত অলক্ষ্য দিক হইতে কত অনির্বচনীয় গীতে এবং গন্ধে , কম্পনে এবং মর্মরে আমার তরুণ জীবনকে উৎসুক করিয়া তুলিতেছিল , তাহা এখনো মনে হইলে বুকের ভিতরে দীর্ঘনিশ্বাস ভরিয়া উঠে ।
তখন আমার মা ছিলেন না — আমাদের শূন্যসংসারের মধ্যে লক্ষ্মীস্থাপন করিবার জন্য আমার পড়াশোনা শেষ হইবার অপেক্ষা না করিয়াই , বাবা বারো বৎসরের বালিকা নির্ঝরিণীকে আমাদের ঘরে আনিলেন ।
নির্ঝরিণী নামটি হঠাৎ পাঠকদের কাছে প্রচার করিতে সংকোচবোধ করিতেছি । কারণ , তাঁহাদের অনেকেরই বয়স হইযাছে — অনেকে ইস্কুলমাস্টারি মুন্সেফি এবং কেহ কেহ বা সম্পাদকিও করেন, তাঁহারা আমার শ্বশুরমহাশয়ের নামনির্বাচনরুচির অতিমাত্র লালিত্য এবং নূতনত্বে হাসিবেন এমন আশঙ্কা আছে । কিন্তু আমি তখন অর্বাচীন ছিলাম , বিচারশক্তির কোনো উপদ্রব ছিল না , তাই নামটি বিবাহের সম্বন্ধ হইবার সময়েই যেমনি শুনিলাম অমনি —
কানের ভিতর দিয়া মরমে পশিল গো ,
আকুল করিল মোর প্রাণ ।
এখন বয়স হইয়াছে এবং ওকালতি ছাড়িয়া মুন্সেফি-লাভের জন্য ব্যগ্র হইয়া উঠিয়াছি , তবু হৃদয়ের মধ্যে ঐ নামটি পুরাতন বেহালার আওয়াজের মতো আরো বেশি মোলায়েম হইয়া বাজিতেছে ।
প্রথম বয়সের প্রথম প্রেম অনেকগুলি ছোটোখাটো বাধার দ্বারা মধুর । লজ্জার বাধা , ঘরের লোকের বাধা , অনভিজ্ঞতার বাধা- এইগুলির অন্তরাল হইতে প্রথম পরিচয়ের যে আভাস দিতে থাকে তাহা ভোরের আলোর মতো রঙিন- তাহা মধ্যাহ্নের মতো সুস্পষ্ট , অনাবৃত এবং বর্ণচ্ছটাবিহীন নহে ।
আমাদের সেই নবীন পরিচয়ের মাঝখানে বাবা বিন্ধ্যগিরির মতো দাঁড়াইলেন । তিনি আমাকে হস্টেলে নির্বাসিত করিয়া দিয়া তাঁহার বউমাকে বাংলা লেখাপড়া শিখাইতে প্রবৃত্ত হইলেন । আমার এই গল্পের শুরু হইল সেইখানে ।
শ্বশুরমশায় কেবল তাঁহার কন্যার নামকরণ করিয়াই নিশ্চেষ্ট ছিলেন না , তিনি তাহাকে শিক্ষাদানেরও প্রভূত আয়োজন করিয়াছিলেন । এমন-কি , উপক্রমণিকা তাহার মুখস্থ শেষ হইয়াছিল । মেঘনাদবধ কাব্য পড়িতে হেমবাবুর টীকা তাহার প্রয়োজন হইত না ।
হস্টেলে গিয়া তাহার পরিচয় পাইয়াছিলাম । আমি সেখানে থাকিতে নানা উপায়ে বাবাকে লুকাইয়া নববিরহতাপে অত্যন্ত উত্তপ্ত দুই-একখানা চিঠি তাহাকে পাঠাইতে আরম্ভ করিয়াছিলাম । তাহাতে কোটেশন-মার্কা না দিয়া আমাদের নব্য কবিদের কাব্য
কী করিয়া গল্প লিখিতে হয়, তাহা সম্প্রতি শিখিয়াছি । বঙ্কিমবাবু এবং সার ওয়াল্টার স্কট পড়িয়া আমার বিশেষ ফল হয় নাই । ফল কোথা হইতে কেমন করিয়া হইল , আমার এই প্রথম গল্পেই সেই কথাটা লিখিতে বসিলাম ।
আমার পিতার মতামত অনেকরকম ছিল ; কিন্তু বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে কোনো মত তিনি কেতাব বা স্বাধীনবুদ্ধি হইতে গড়িয়া তোলেন নাই । আমার বিবাহ যখন হয় তখন সতেরো উত্তীর্ণ হইয়া আঠারোয় পা দিয়াছি ; তখন আমি কলেজে থার্ড্ ইয়ারে পড়ি — এবং তখন আমার চিত্তক্ষেত্রে যৌবনের প্রথম দক্ষিণবাতাস বহিতে আরম্ভ করিয়া কত অলক্ষ্য দিক হইতে কত অনির্বচনীয় গীতে এবং গন্ধে , কম্পনে এবং মর্মরে আমার তরুণ জীবনকে উৎসুক করিয়া তুলিতেছিল , তাহা এখনো মনে হইলে বুকের ভিতরে দীর্ঘনিশ্বাস ভরিয়া উঠে ।
তখন আমার মা ছিলেন না — আমাদের শূন্যসংসারের মধ্যে লক্ষ্মীস্থাপন করিবার জন্য আমার পড়াশোনা শেষ হইবার অপেক্ষা না করিয়াই , বাবা বারো বৎসরের বালিকা নির্ঝরিণীকে আমাদের ঘরে আনিলেন ।
নির্ঝরিণী নামটি হঠাৎ পাঠকদের কাছে প্রচার করিতে সংকোচবোধ করিতেছি । কারণ , তাঁহাদের অনেকেরই বয়স হইযাছে — অনেকে ইস্কুলমাস্টারি মুন্সেফি এবং কেহ কেহ বা সম্পাদকিও করেন, তাঁহারা আমার শ্বশুরমহাশয়ের নামনির্বাচনরুচির অতিমাত্র লালিত্য এবং নূতনত্বে হাসিবেন এমন আশঙ্কা আছে । কিন্তু আমি তখন অর্বাচীন ছিলাম , বিচারশক্তির কোনো উপদ্রব ছিল না , তাই নামটি বিবাহের সম্বন্ধ হইবার সময়েই যেমনি শুনিলাম অমনি —
কানের ভিতর দিয়া মরমে পশিল গো ,
আকুল করিল মোর প্রাণ ।
এখন বয়স হইয়াছে এবং ওকালতি ছাড়িয়া মুন্সেফি-লাভের জন্য ব্যগ্র হইয়া উঠিয়াছি , তবু হৃদয়ের মধ্যে ঐ নামটি পুরাতন বেহালার আওয়াজের মতো আরো বেশি মোলায়েম হইয়া বাজিতেছে ।
প্রথম বয়সের প্রথম প্রেম অনেকগুলি ছোটোখাটো বাধার দ্বারা মধুর । লজ্জার বাধা , ঘরের লোকের বাধা , অনভিজ্ঞতার বাধা- এইগুলির অন্তরাল হইতে প্রথম পরিচয়ের যে আভাস দিতে থাকে তাহা ভোরের আলোর মতো রঙিন- তাহা মধ্যাহ্নের মতো সুস্পষ্ট , অনাবৃত এবং বর্ণচ্ছটাবিহীন নহে ।
আমাদের সেই নবীন পরিচয়ের মাঝখানে বাবা বিন্ধ্যগিরির মতো দাঁড়াইলেন । তিনি আমাকে হস্টেলে নির্বাসিত করিয়া দিয়া তাঁহার বউমাকে বাংলা লেখাপড়া শিখাইতে প্রবৃত্ত হইলেন । আমার এই গল্পের শুরু হইল সেইখানে ।
শ্বশুরমশায় কেবল তাঁহার কন্যার নামকরণ করিয়াই নিশ্চেষ্ট ছিলেন না , তিনি তাহাকে শিক্ষাদানেরও প্রভূত আয়োজন করিয়াছিলেন । এমন-কি , উপক্রমণিকা তাহার মুখস্থ শেষ হইয়াছিল । মেঘনাদবধ কাব্য পড়িতে হেমবাবুর টীকা তাহার প্রয়োজন হইত না ।
হস্টেলে গিয়া তাহার পরিচয় পাইয়াছিলাম । আমি সেখানে থাকিতে নানা উপায়ে বাবাকে লুকাইয়া নববিরহতাপে অত্যন্ত উত্তপ্ত দুই-একখানা চিঠি তাহাকে পাঠাইতে আরম্ভ করিয়াছিলাম । তাহাতে কোটেশন-মার্কা না দিয়া আমাদের নব্য কবিদের কাব্য
কী করিয়া গল্প লিখিতে হয়, তাহা সম্প্রতি শিখিয়াছি । বঙ্কিমবাবু এবং সার ওয়াল্টার স্কট পড়িয়া আমার বিশেষ ফল হয় নাই । ফল কোথা হইতে কেমন করিয়া হইল , আমার এই প্রথম গল্পেই সেই কথাটা লিখিতে বসিলাম ।
আমার পিতার মতামত অনেকরকম ছিল ; কিন্তু বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে কোনো মত তিনি কেতাব বা স্বাধীনবুদ্ধি হইতে গড়িয়া তোলেন নাই । আমার বিবাহ যখন হয় তখন সতেরো উত্তীর্ণ হইয়া আঠারোয় পা দিয়াছি ; তখন আমি কলেজে থার্ড্ ইয়ারে পড়ি — এবং তখন আমার চিত্তক্ষেত্রে যৌবনের প্রথম দক্ষিণবাতাস বহিতে আরম্ভ করিয়া কত অলক্ষ্য দিক হইতে কত অনির্বচনীয় গীতে এবং গন্ধে , কম্পনে এবং মর্মরে আমার তরুণ জীবনকে উৎসুক করিয়া তুলিতেছিল , তাহা এখনো মনে হইলে বুকের ভিতরে দীর্ঘনিশ্বাস ভরিয়া উঠে ।
তখন আমার মা ছিলেন না — আমাদের শূন্যসংসারের মধ্যে লক্ষ্মীস্থাপন করিবার জন্য আমার পড়াশোনা শেষ হইবার অপেক্ষা না করিয়াই , বাবা বারো বৎসরের বালিকা নির্ঝরিণীকে আমাদের ঘরে আনিলেন ।
নির্ঝরিণী নামটি হঠাৎ পাঠকদের কাছে প্রচার করিতে সংকোচবোধ করিতেছি । কারণ , তাঁহাদের অনেকেরই বয়স হইযাছে — অনেকে ইস্কুলমাস্টারি মুন্সেফি এবং কেহ কেহ বা সম্পাদকিও করেন, তাঁহারা আমার শ্বশুরমহাশয়ের নামনির্বাচনরুচির অতিমাত্র লালিত্য এবং নূতনত্বে হাসিবেন এমন আশঙ্কা আছে । কিন্তু আমি তখন অর্বাচীন ছিলাম , বিচারশক্তির কোনো উপদ্রব ছিল না , তাই নামটি বিবাহের সম্বন্ধ হইবার সময়েই যেমনি শুনিলাম অমনি —
কানের ভিতর দিয়া মরমে পশিল গো ,
আকুল করিল মোর প্রাণ ।
এখন বয়স হইয়াছে এবং ওকালতি ছাড়িয়া মুন্সেফি-লাভের জন্য ব্যগ্র হইয়া উঠিয়াছি , তবু হৃদয়ের মধ্যে ঐ নামটি পুরাতন বেহালার আওয়াজের মতো আরো বেশি মোলায়েম হইয়া বাজিতেছে ।
প্রথম বয়সের প্রথম প্রেম অনেকগুলি ছোটোখাটো বাধার দ্বারা মধুর । লজ্জার বাধা , ঘরের লোকের বাধা , অনভিজ্ঞতার বাধা- এইগুলির অন্তরাল হইতে প্রথম পরিচয়ের যে আভাস দিতে থাকে তাহা ভোরের আলোর মতো রঙিন- তাহা মধ্যাহ্নের মতো সুস্পষ্ট , অনাবৃত এবং বর্ণচ্ছটাবিহীন নহে ।
আমাদের সেই নবীন পরিচয়ের মাঝখানে বাবা বিন্ধ্যগিরির মতো দাঁড়াইলেন । তিনি আমাকে হস্টেলে নির্বাসিত করিয়া দিয়া তাঁহার বউমাকে বাংলা লেখাপড়া শিখাইতে প্রবৃত্ত হইলেন । আমার এই গল্পের শুরু হইল সেইখানে ।
শ্বশুরমশায় কেবল তাঁহার কন্যার নামকরণ করিয়াই নিশ্চেষ্ট ছিলেন না , তিনি তাহাকে শিক্ষাদানেরও প্রভূত আয়োজন করিয়াছিলেন । এমন-কি , উপক্রমণিকা তাহার মুখস্থ শেষ হইয়াছিল । মেঘনাদবধ কাব্য পড়িতে হেমবাবুর টীকা তাহার প্রয়োজন হইত না ।
হস্টেলে গিয়া তাহার পরিচয় পাইয়াছিলাম । আমি সেখানে থাকিতে নানা উপায়ে বাবাকে লুকাইয়া নববিরহতাপে অত্যন্ত উত্তপ্ত দুই-একখানা চিঠি তাহাকে পাঠাইতে আরম্ভ করিয়াছিলাম । তাহাতে কোটেশন-মার্কা না দিয়া আমাদের নব্য কবিদের কাব্য ছাঁকিয়া অনেক কবিতা ঢালিয়াছিলাম ; ভাবিয়াছিলাম — প্রণয়িনীর কেবল প্রেম আকর্ষণ করাই যথেষ্ট নহে , শ্রদ্ধাও চাই । শ্রদ্ধা পাইতে হইলে বাংলা ভাষায় যেরূপ রচনাপ্রণালীর আশ্রয় লওয়া উচিত সেটা আমার স্বভাবত আসিত না , সেইজন্য মণৌ বজ্রসমুৎকীর্ণে সূত্রস্যেবাস্তি মে গতিঃ । অর্থাৎ , অন্য জহরিরা যে-সকল মণি ছিদ্র করিয়া রাখিয়াছিলেন , আমার চিঠি তাহা সূত্রের মতো গাঁথিয়া পাঠাইত । কিন্তু, ইহার মধ্যে মণিগুলি অন্যের , কেবলমাত্র সূত্রটুকুই আমার , এ বিনয়টুকু স্পষ্ট করিয়া প্রচার করা আমি ঠিক সংগত মনে করি নাই — কালিদাসও করিতেন না , যদি সত্যই তাঁহার মণিগুলি চোরাই মাল হইত ।
চিঠির উত্তর যখন পাইলাম তাহার পর হইতে যথাস্থানে কোটেশন-মার্কা দিতে আর কার্পণ্য করি নাই । এটুকু বেশ বোঝা গেল , নববধূ বাংলাভাষাটি বেশ জানেন । তাঁহার চিঠিতে বানান-ভুল ছিল কি না তাহার উপযুক্ত বিচারক আমি নই- কিন্তু সাহিত্যবোধ ও ভাষাবোধ না থাকিলে এমন চিঠি লেখা যায় না , সেটুকু আন্দাজে বুঝিতে পারি ।
স্ত্রীর বিদ্যা দেখিয়া সৎস্বামীর যতটুকু গর্ব ও আনন্দ হওয়া উচিত তাহা আমার হয় নাই এমন কথা বলিলে আমাকে অন্যায় অপবাদ দেওয়া হইবে , কিন্তু তারই সঙ্গে একটু অন্য ভাবও ছিল । সে ভাবটুকু উচ্চদরের না হইতে পারে , কিন্তু স্বাভাবিক । মুশকিল এই যে , যে উপায়ে আমার বিদ্যার পরিচয় দিতে পারিতাম সেটা বালিকার পক্ষে দুর্গম । সে যেটুকু ইংরেজি জানে তাহাতে বার্ক্ -মেকলের ছাঁদের চিঠি তাহার উপরে চালাইতে হইলে মশা মারিতে কামান দাগা হইত — মশার কিছুই হইত না , কেবল ধোঁয়া এবং আওয়াজই সার হইত ।
আমার যে তিনটি প্রাণের বন্ধু ছিল তাহাদিগকে আমার স্ত্রীর চিঠি না দেখাইয়া থাকিতে পারিলাম না । তাহারা আশ্চর্য হইয়া কহিল , “ এমন স্ত্রী পাইয়াছ , ইহা তোমার ভাগ্য । ” অর্থ্যাৎ , ভাষান্তরে বলিতে গেলে এমন স্ত্রীর উপযুক্ত স্বামী আমি নই ।
নির্ঝরিণীর নিকট হইতে পত্রোত্তর পাইবার পূর্বেই যে কখানি চিঠি লিখিয়া ফেলিয়াছিলাম তাহাতে হৃদয়োচ্ছ্বাস যথেষ্ট ছিল , কিন্তু বানান-ভুলও নিতান্ত অল্প ছিল না । সতর্ক হইয়া লেখা যে দরকার তাহা তখন মনেও করি নাই । সতর্ক হইয়া লিখিলে বানান-ভুল হয়তো কিছু কম পড়িত , কিন্তু হৃদয়োচ্ছ্বাসটাও মারা যাইত ।
এমন অবস্থায় চিঠির মধ্যস্থতা ছাড়িয়া মোকাবিলায় প্রেমালাপই নিরাপদ । সুতরাং , বাবা আপিসে গেলেই আমাকে কালেজ পালাইতে হইত । ইহাতে আমাদের উভয় পক্ষেরই পাঠচর্চায় যে ক্ষতি হইত, আলাপচর্চায় তাহা সুদসুদ্ধ পোষণ করিয়া লইতাম । বিশ্বজগতে যে কিছুই একেবারে নষ্ট হয় না , এক আকারে যাহা ক্ষতি অন্য আকারে তাহা লাভ — বিজ্ঞানের এই তথ্য প্রেমের পরীক্ষাশালায় বারংবার যাচাই করিয়া লইয়া একেবারে নিঃসংশয় হইয়াছি ।
এমন সময়ে আমার স্ত্রীর জাঠ্তুতো বোনের বিবাহকাল উপস্থিত — আমরা তো যথানিয়মে আইবুড়োভাত দিয়া খালাস , কিন্তু আমার স্ত্রী স্নেহের আবেগে এক কবিতা রচনা করিয়া লাল কাগজে লাল কালি দিয়া লিখিয়া তাহার ভগিনীকে না পাঠাইয়া থাকিতে পারিল না । সেই রচনাটি কেমন করিয়া বাবার হস্তগত হইল । বাবা তাঁহার বধূমাতার কবিতায় রচনানৈপুণ্য, সদ্ভাবসৌন্দর্য, প্রসাদগুণ, প্রাঞ্জলতা ইত্যাদি শাস্ত্রসম্মত নানা গুণের সমাবেশ দেখিয়া অভিভূত হইয়া গেলেন । তাঁহার বৃদ্ধ বন্ধুদিগকে দেখাইলেন , তাঁহারাও তামাক টানিতে টানিতে বলিলেন , “ খাসা হইয়াছে! ” নববধূর যে রচনাশক্তি আছে এ কথা কাহারও অগোচর রহিল না । হঠাৎ এইরূপ খ্যাতিবিকাশে রচয়িত্রীর কর্ণমূল এবং কপোলদ্বয় অরুণবর্ণ হইয়া উঠিয়াছিল ; অভ্যাসক্রমে তাহা বিলুপ্ত হইল । পূর্বেই বলিয়াছি , কোনো জিনিস একেবারে বিলুপ্ত হয় না — কী জানি , লজ্জার আভাটুকু তাহার কোমল কপোল ছাড়িয়া আমার কঠিন হৃদয়ের প্রচ্ছন্ন কোণে হয়তো আশ্রয় লইয়া থাকিবে ।
কিন্তু তাই বলিয়া স্বামীর কর্তব্যে শৈথিল্য করি নাই । অপক্ষপাত সমালোচনার দ্বারা স্ত্রীর রচনার দোষ সংশোধনে আমি কখনোই আলস্য করি নাই । বাবা তাহাকে নির্বিচারে যতই উৎসাহ দিয়াছেন , আমি ততই সতর্কতার সহিত ত্রুটি নির্দেশ করিয়া
গল্পের দ্বিতীয় অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।