থিসলডাউনের প্রহরী–হাসান জাহিদঃ৫ম পর্ব

 

তুমি কেমন করে জানো?

সেদিন সেখানে ছিলাম। তোমার ওয়াইফ খুব নার্ভাস ছিল।

ঘটনাটা মনে পড়লে এখনো শিউরে উঠি, এবার তরুণী বলল, যদি বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটে যেত। গ্ল্যাড টু মিট য়্যূ মি. – ।

মহিব, নামটা বল সে।

আমার নাম শ্রীরাধা।

তুমিও কি তামিল?

হ্যাঁ, আমরা দু’জনেই। জেইয়া উত্তর দিল।

এই তরুণীই তবে উঁকি দিয়ে যাচ্ছিল মনে! টেলিপ্যাথির বিষয়টি কি ওর ক্ষেত্রে ঘটে গেল নাকি! এই চেহারাটাই তো ওর মানসপটে ভাসছিল।

মজ্জা ভেদ করা ঠাণ্ডা। বাচ্চা ছেলের টানা ঘ্যানঘ্যানে কান্নার মতো বৃষ্টি চলছে। মহিব কাতর চোখে তাকায় প্রকৃতির দিকে। এরকম শীতার্ত ম্যাড়ম্যাড়ে রাত্তিরে ওকে টহল দিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। ভেতরে হিটের মধ্যে বসে বাইরের ভেজা প্রকৃতিটাকে বাংলাদেশের মতো লাগে – বাইরে বেরুলেই বুঝি বাংলাদেশের গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আবহকে ছুঁয়ে দেখা যাবে। মহিব চেয়ে থাকে উতলা চোখ মেলে। কেউ নেই দেশে, স্ত্রী প্রতীক্ষায় থাকে না, জননী পথের দিকে চেয়ে চোখ ভাসায় না, পিতা আকুল হয়ে থাকে না, একটি ভাই বা বোন সাগ্রহে দিন গোনে না। তবু ফিরে যেতে মন চায় সেই দেশে।

শ্রীরাধার সাথে দেখা হল আবার। দোকানে ছিল। দারুণ লাগছিল ওকে। মেয়েটার গায়ের রং চাপা, কালোর দিকেই। কিন্তু এই কালোর সর্বত্র শ্রী লুকিয়ে আছে। চোখেমুখে, এমনকি হাতে পায়ে কথা বলে যাচ্ছিল শ্রীরাধা। ওর ইংরেজি খুব ভালো না। মহিবের মনে হল ইংরেজি না বলে শ্রীরাধা যদি তামিল বা সিংহলজি ভাষায় কথা বলে যায়, মহিব তা-ও বুঝতে পারবে।

এরমধ্যে একটা অপয়া ব্যাপার ঘটে গেল। অপ্রত্যাশিত ব্যাপার। কর্তৃপক্ষ ওকে বদলি করে দিয়েছে অন্য সাইটে। একটা কণ্ডোমিনিয়ামে, সংক্ষেপে কণ্ডো। থিসলডাউন থেকে তিন কি.মি. দূরে বার্গামট অ্যাভেনিউতে। ভাঙা মন নিয়ে মহিব নতুন সাইটে এল। এখানে সিসি টিভি, ওয়াকিটকি, অটোমেটিক ডোর-সবই আছে।

কিন্তু তবু পছন্দ হল না মহিবের। থিসলডাউনের জন্য কেমন করে উঠল মনটা। জায়গাটা বেশ ছিল। খবরদারি ছিল না তেমন। নিজের মতো করে সে ডিউটি করতে পারত। কিন্তু বর্তমান দৃশ্যপট ভিন্ন, এক অর্থে ভয়াবহ। এটা ওয়াইডব্লিউসি পরিচালিত কণ্ডো। থাকে অবসরপ্রাপ্ত বুড়ি, চাকরিজীবি জোয়ান মেয়েসহ সব ধরনের মহিলা। ব্রিফিং-এর সময় ওকে বলা হয়েছে যে, এখানে যারা ভিজিটরস, তারা মহিবের কাছে রাখা রেজিস্টারে সাইন-ইন ও সাইন-আউট করবে। কাজটা কণ্ডোর সুপারভাইজার করে। রাতে তার ডিউটি থাকে না বলে বিষয়টা মহিবের ঘাড়ে চেপেছে। যে মেয়ে বা মহিলার কাছে গেস্ট আসবে সে নিজ দায়িত্বে বাজারের মাধ্যমে ফ্রন্ট গেট খুলে দেবে।

গেস্ট তখন আসতে পারবে মহিবের কক্ষে। এখানে সাইন-ইন করার পর প্যাসেজের দরজা খুলে দেবে হোস্ট। সন্ধ্যেয়, গভীররাতে এরকম গেস্ট আসতে দেখছে মহিব। ফ্রন্ট এন্ট্রান্স ড্রাইভওয়ে থেকে বেসমেন্ট, প্রতি ফ্লোরের প্যাসেজ, সারি সারি কক্ষে ঢোকার দরজা-সব সিসিটিভিতে দেখা যায়। দেখে দেখে ঘেন্না ধরে গেছে। সিসিটিভির প্রতি ঘেন্না নয়, ডিউটির প্রতিও না। ঘেন্নাটা অন্য জায়গায়। এরা বলে এখানে ভদ্রগোছের স্বয়ংসম্পূর্ণা নারীরা বসবাস করে।

কিন্তু প্রতিরাতে মহিব যা দেখে তা বিচ্ছিরি। নোংরা। ড্রাগ আসক্ত ও মদ্যপ যুবকেরা আসে। তারা ঢুকে যায় নিজ নিজ প্রণয়িণীদের কক্ষে। প্রায় রাতেই প্যাসেজে মহিব দেখতে পায় কোনো মাতাল ঢুকছে কোনো কক্ষে। সারারাত অবস্থান করে। ভোরের আলো ফোটার আগেই বের হয় আলুথালু ব্যসনে। সংক্ষিপ্ত পোশাক গায়ে কোনো মেয়ে বা মহিলা প্যাসেজের দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দেয় মাতাল প্রেমিককে।

এদেরকে পাহারা দিচ্ছে মহিব, এদের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি ন্যস্ত হয়েছে ওর ওপর। এক নিগ্রো মেয়ের কক্ষে প্রায় রোজরাতেই আসে এক যুবক। সে-ও কালো। ভোররাতে মেয়েটি যুবকটিকে এগিয়ে দিতে ল্যাংচাতে ল্যাংচাতে আসে প্যাসেজের দরজা পর্যন্ত। মহিবের হাতে ধরিয়ে দেয়া হয়েছে একটা তালিকা। এতে ক’জন মহিলা ও যুবতীর নাম আছে। তাদের প্রতি এক্সট্রা কেয়ার নিতে হবে। এরা শারীরিক প্রতিবন্ধী। তারা কোনো হেল্প চাইলে হেল্প করতে হবে! ঘেন্না, ঘেন্না! এই নিগ্রো মেয়েগুলো পাছার অনেক নিচে জিন্‌স পরে, পাছার খাঁজ দেখা যায়। বুকে যে টেপ লাগায় তা এমনি সংক্ষেপিত যে না লাগালেও চলে।

গল্পের ষষ্টম অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন। 

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!