ত্রিভুজ শুধু একটা কাজেই লাগে, সমুচা বানাতে

ওরা চার বন্ধু। ছুটির রাতে এই চার বন্ধু মিলে করে প্ল্যানচেট। তাদের প্ল্যানচেটে এসে ধরা দেয় বিখ্যাত সব ব্যক্তি। আজ তারা আমন্ত্রণ জানাচ্ছে বিখ্যাত গণিতবিদ পিথাগোরাসকে। তাঁর সঙ্গে নাকি কী বোঝাপড়া আছে। নিরাপদ দূরত্বে থেকে পুরো ঘটনাটা কভার করেছে ঘোড়ার ডিমের সাহসী প্রতিবেদক মো. সাখাওয়াত হোসেন এঁকেছেন মাসুম

সবাই মিলে ফিসফিস করে : কাম প্লিজ কাম প্লিজ কাম। আর ইউ কামিং?

পিথাগোরাস : হ্যাঁ, বৎস আমি পিথাগোরাস, আমি এসেছি।

রবি : আপনি বাংলা বলতে পারেন?

পিথাগোরাস : না। এখানে এসেই তোমাদের ভাষা স্বয়ংক্রিয়ভাবে আমার মস্তিষ্কে প্রবেশ করেছে।

মাসুদ : বাহ, চমৎকার! আপনার তো অনেক ক্ষমতা।

পিথাগোরাস : হ্যাঁ, এই জগতে আমাদের ভালোই ক্ষমতা আছে।

আতিক : এবার আমার একটা প্রশ্নের জবাব দিন।

পিথাগোরাস : বলো, বৎস।

আতিক : পৃথিবীতে থাকতে আপনার কি অন্য কোনো কাজ ছিল না?

পিথাগোরাস : এ কথা বলছ কেন?

আতিক : যে দুইখান উপপাদ্য বানাইছেন, ওই দুইটা পড়তে তো আমাদের কিয়ামত হয়ে যাচ্ছে।

 

পিথাগোরাস : কী বলছ এসব?

আতিক : এহ! কিছু বুঝে না, ন্যাকা চন্দ্র। উপপাদ্য ২৩ আর ২৪-এর কথা বলছি। সমকোণী ত্রিভুজের অতিভুজ হাবিজাবি নিয়ে যেসব আছে।

মাসুদ : আহ, আতিক আস্তে। আপনি কিছু মনে করবেন না। ও আজ ক্লাসে উপপাদ্য ২৩ পারেনি বলে স্যারের প্যাদানি খেয়েছে।

আতিক : প্যাদানি মানে প্যাদানি। পশ্চাৎদেশ পুরা লাল করে ফেলল।

তারেক : এমন লাল যে ওই পশ্চাৎদেশ দেখিয়ে ট্রেন থামিয়ে ফেলা যাবে। হি হি।

পিথাগোরাস : কিন্তু এই উপপাদ্যগুলো তো সহজেই আয়ত্ত করা যায়।

আতিক : এহ! সহজেই! ২৪ নম্বরটা তাও বক্করচক্কর করে পারা যায়। কিন্তু ২৩ নম্বরটা? উফফ! আচ্ছা, ওইটা বানানোর সময় আপনার বউয়ের সঙ্গে কি ঝগড়া হয়েছিল?

মাসুদ : ছি ছি আতিক, এসব কী ধরনের কথা।

পিথাগোরাস : দেখো, এসব উপপাদ্য, জ্যামিতি মানবসমাজের উন্নয়নের জন্যই তৈরি হয়েছে।

রবি : বুঝেছি, আমাদের এলাকার রাস্তাটার মতো।

পিথাগোরাস : মানে?

রবি : ওই রাস্তাটাও উন্নয়নের জন্য তৈরি শুরু হয়েছিল। এখন রাস্তা খুঁড়েফুঁড়ে অবস্থা খারাপ। উন্নয়নের জোয়ারে আমাদের অবস্থা টাইট।

আতিক : আর এসব জ্যামিতি পড়ে কবে কে কি করেছে?

পিথাগোরাস : কী বলছ এসব? কোনো লাভ নেই?

আতিক : কিসের লাভ। আমাদের নায়ক শাকিব যখন নাচে, তখন কি জ্যামিতি লাগে? আবার সাকিব যখন ছক্কা মারে তখন?

পিথাগোরাস : কী বলছ এসব। একই ব্যক্তি নাচে আবার ছক্কাও মারে।

আতিক : আরে, এখানে দুইজনের কথা বলছি। এই সহজ জিনিস বোঝেন না। ক্যামনে যে ওই সব ছাইপাঁশ লিখছিলেন?

 

পিথাগোরাস : দেখো বৎস সকল! তোমরা হয়তো এখন ছোট বলে বুঝছ না। বড় হলে ঠিকই এসব জ্যামিতি, ত্রিভুজ, চতুর্ভুজের গুরুত্ব বুঝবে।

রবি : আরে দূর, কিসের গুরুত্ব! ত্রিভুজ দিয়ে কী হয়? কিছুই হয় না। ত্রিভুজ শুধু একটা কাজেই লাগে। সমুচা বানাতে।

তারেক : হ মামা। আমাগো পাড়ার নারায়ণ চন্দ্রের সমুচা। গ-র-ম গ-র-ম। আহা!

পিথাগোরাস : (দীর্ঘশ্বাস)

আতিক : আচ্ছা, আপনি যে এত কিছু বলছেন, জানেন বৃত্ত সব সময় গরম থাকে কেন?

পিথাগোরাস : বৃত্ত গরম থাকে। কেন?

আতিক : কারণ বৃত্ত সব সময় ৩৬০ ডিগ্রিতে থাকে।

(সবাই হো হো করে হেসে ফেলল)

রবি : আপনি এ ধরনের মজার কিছু জানেন? জানেন না।

পিথাগোরাস : কে বলল জানি না। শোনো তাহলে, আমি তখন একটা স্কুলে পড়াই। একবার একটা ম্যাথ টেস্ট শেষে আমার তিন ছাত্র এসে হাজির। তারা এসে বলল, ‘স্যার আমাদের এক বন্ধুর বাবা অসুস্থ ছিল। ওনাকে দেখতে গিয়েছিলাম, গাড়ি নিয়ে আসতে গিয়ে চাকা পাংচার হয়ে যাওয়ায় দেরি হয়ে গেল। আপনি আমাদের পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দিন।’

মাসুদ : তারপর?

পিথাগোরাস : আমি তাদের হাভভাবেই বুঝে যাই, এরা সারা রাত পার্টি করে এসেছে। আমি তাদের বললাম, পরীক্ষা নিতে পারি, তবে তোমাদের তিনজনকে আলাদা আলাদা ক্লাসে বসে পরীক্ষা দিতে হবে। তারা রাজি হয়ে গেল।

রবি : পরীক্ষা নিয়েছিলেন?

পিথাগোরাস : হ্যাঁ, তবে নতুন একটা প্রশ্ন করেছিলাম। শুধু দুটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে, মার্কস ১০০।

আতিক : দুইটা প্রশ্নের জন্য ১০০ নম্বর! কী প্রশ্ন ছিল? আপনার সেই উপপাদ্য ২৩ আর ২৪ নাকি?

পিথাগোরাস : আরে না। প্রথমে একটা পাঁচ নম্বরের সহজ প্রশ্ন ছিল। আর দ্বিতীয় প্রশ্ন ছিল, ‘তোমাদের গাড়ির কোন চাকাটা পাংচার হয়েছিল?’ যার মার্কস ৯৫!

তারেক : বাপ রে! আপনি তো ভালোই ত্যাঁদর ছিলেন।

পিথাগোরাস : ত্যাঁদর মানে কী?

মাসুদ : না, না, কিছু না।

পিথাগোরাস : ঠিক আছে, বৎস সকল। আজ যেতে হবে। মন দিয়ে বুঝে বুঝে পড়ো, তবে সহজেই সব আয়ত্ত করতে পারবে। বিদায়!

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!