ত্যাগ ও কোরবানী

এ কথা সবাই বিশ্বাস করেযে, পরিশ্রম ও চেষ্টা ছাড়া কোন কাজেই সাফল্য আসে না। কেবল দুনিয়াবী কাজেই নয়, পরকালে সাফল্যের জন্যও মানুষকে আল্লাহর সন্তুষ্টির লাভ করতে হয়। এজন্য কেবল ঈমান আনলেই চলবে না ; ঈমানদার ব্যক্তিকে বিভিন্ন পরীক্ষার সম্মুখীনও হতে হয়। আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনে বলেছেন, “মানুষ কি মনে করে আমি ঈমান এনেছি এ কথা বললেই তাকে ছেড়ে দেয়া হবে, তাকে পরীক্ষা করা হবে না ?” ( আনকাবুতঃ ২) ঈমানের পরীক্ষা দেয়ার জন্য যুগে যুগে নবী-রাসূল, আহলে বাইতের ইমাম ও বিশিষ্ট আলেমগণ অনেক ত্যাগ ও কোরবানী করেছেন। ঈমানের পরীক্ষা দিতে গিয়ে তারা জান ও মালের ত্যাগ স্বীকার করেছেন। অনেকে দেশ ত্যাগ করেছেন, কেউবা রাজ্য ত্যাগ করেছেন। নবুয়ত পাওয়ার পরপরই যখন রাসূল (সাঃ) -এর সামনে কুরাইশ নেতৃবৃন্দ জোট বেঁধে দাঁড়িয়ে গেল বাধার পাহাড় হয়ে । সে সময়, সিংহপুরুষ আবু তালিবও ঘাবড়ে গিয়ে ভাতিজা মুহাম্মদ (সাঃ) কে বললো, কুরাইশ নেতৃবৃন্দের সাথে একটি আপোসরফা করে চলার জন্যে । নবীজী জানিয়ে দিলেন ,”ওরা আমার এক হাতে যদি চন্দ্র এবং আরেক হাতে সূর্যকেও এনে দেয় তবু আমার পথ থেকে আমি এক চুল পরিমাণও বিচ্যুত হবো না ।” এমন সুদৃঢ় আকাঙ্খা ও বলিষ্ঠ ঈমানের কারণেই তিনি সকল বাধা পেরিয়ে সমগ্র জাহানের অধিপতি হয়েছিলেন।

আল্লাহর সাথে গভীর ও নিবিড় সম্পর্কের একটি বড় মাধ্যম হলো তাহাজ্জুদ নামায। আল কুরআনে বলা হয়েছে, আল্লাহর প্রিয় বান্দাহ তারাই, যারা তাদের রবের দরবারে সিজদা করে এবং দাঁড়িয়ে থেকে রাত কাটিয়ে দেয়। (আল ফুরকান : ৬৩-৬৪) পবিত্র কোরআনে বর্ণিত এ ধরনের প্রিয় বান্দা হতে গিয়ে যারা অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন তাদের মধ্যে একজন ছিলেন হযরত ইবরাহীম বিন আদহাম। আল্লাহকে পাওয়ার জন্য তাঁর বাদশাহ থেকে ফকির হওয়ার কাহিনী আমরা রংধনু আসরে প্রচার করেছি। আর আসরের শেষ পর্যায়ে রয়েছে ঢাকার এক নতুন বন্ধুর সাক্ষাৎকার।

হিজরী দ্বিতীয় শতাব্দীর বিখ্যাত সুফী সাধক হযরত ইবরাহীম বিন আদহাম। তিনি আবু আদহাম নামেও পরিচিত। তিনি ছিলেন পূর্ব খোরাসানের বলখ রাজ্যের শাসক। মাওলানা রুমী তার বিখ্যাত গ্রন্থ মসনবীতে ইব্রাহিম বিন আদহামের কাহিনী বর্ণনা করেছেন। বিখ্যাত এ মনীষী আহলে বাইতের ষষ্ঠ ইমাম জাফর সাদিক (আঃ)-এর বিচারবুদ্ধি ও যুক্তি ও চিন্তাধারা দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন। তো আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের জন্য ইব্রাহিম বিন আদহাম কি ধরনের আত্মত্যাগ করেছিলেন এখন সে কাহিনীটি নিম্নে দেয়া হলো।

হযরত ইবরাহীম বিন আদহাম (রহঃ) নিজ শয়নকক্ষে ঘুমিয়ে ছিলেন। হঠাৎ ছাদের উপর থেকে আসা শব্দে তাঁর ঘুম ভেঙ্গে গেল। তিনি শুনতে পেলেন ঘরের ছাদের উপরে কে যেন খরম পায়ে হাঁটছে। ইবরাহীম বিন আদহাম জিজ্ঞেস করলেন, এত রাতে ছাদের উপরে কে ? ছাদ থেকে জবাব এলো, জাঁহাপনা আমি একজন উটের মালিক। হযরত ইবরাহীম আদহাম আবারো জানতে চাইলেন, তুমি উটের মালিক.. তা এত রাতে ছাদের উপরে কি করছো? ছাদ থেকে জবাব এলো, জাঁহাপনা! আমার একটি উট হারিয়ে গেছে। কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না, তারই খোঁজে বের হয়েছি। উটের মালিকের এ জবাব শুনে ইবরাহীম বিন আদহাম খুব রেগে গেলেন। তিনি ধমক দিয়ে বললেন, আরে নির্বোধ, ছাদের উপরে কি কখনো উট খুঁজে পাওয়া যায়? উট কি ছাদে উঠতে পারে যে, সেটি ছাদে পাওয়া যাবে ?

হযরত ইবরাহীম বিন আদহামের কথা শেষ না হতেই ছাদ থেকে গম্ভীর কণ্ঠে ভেসে এলো, হে ইবরাহীম আদহাম! ছাদের উপর হারানো উট যদি খুঁজে পাওয়া না যায়, তাহলে সোনার খাট-পালঙ্কে শুয়ে থেকে কি আল্লাহকে খুঁজে পাওয়া যাবে? ছাদ থেকে ভেসে আসা এ কথাগুলো শুনে হযরত ইবরাহীম বিন আদহাম (রহঃ) বুঝে ফেললেন, মূলত লোকটি কোন উটের মালিক নয় বরং উটের মালিকের বেশ ধরে আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত ফেরেশতা। তাঁকে মহান আল্লাহ আরো বেশী আপন করার জন্য পথপ্রদর্শনের জন্য পাঠিয়েছেন। বাদশাহ ইবরাহিম আদহাম ভাবলেন, আজ আমাকে যে কথা শোনানো হলো তাতো ঠিকই। কারণ মহান আল্লাহকে পেতে হলে কঠোর সাধনা ও আত্মত্যাগের প্রয়োজন। কিন্তু আমি তো এখনো বাদশাহী আয়েশী জীবন পরিত্যাগ করতে পারিনি। রাজকীয় সুখ-সম্ভোগে লিপ্ত থেকে কি আর আল্লাহপাকের প্রিয়ভাজন হওয়া যায়?

এসব চিন্তা-ভাবনা করার পর তিনি বিছানা ছেড়ে উঠে বসলেন। তাঁর সমস্ত শরীরে এক নব বিপ্লবের স্পন্দন অনুভব করলেন। নিমিষেই সমস্ত শরীর ঘেমে গেলো। তিনি আর বসে থাকতে পারলেন না। সাথে সাথে উঠে দাঁড়ালেন। তারপর চিরদিনের জন্য তিনি রাজসিংহাসনের মায়া ত্যাগ করে বেরিয়ে পড়লেন পরম করুণাময় আল্লাহপাকের সন্ধানে।

অমর একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস

তওবা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *