আমাদের এলাকায় তৈয়ব নামের এক পাগল থাকতো । সে সারাদিন মানুষের কাছ থেকে খাবার চেয়ে খেতো । তবে কেউ তাকে মানা করতো না । কারণ, তাকে খাবার না দিলে নাকি মানুষের ক্ষতি হতো । দুটো ঘটনার বর্ণনা দেইঃ
আমার ছোট খালা একদিন বাসায় তার মেয়েটিকে স্কুলের পড়া পড়াচ্ছেন । এমন সময় হটাত গেটের বাইরে হেঁড়ে গলায় তৈয়ব পাগল ডাক দিয়ে বলল, ঘরে কে আছিস ? খিদা লাগছে খাবার দে । ছোট খালা তাড়াতাড়ি রান্নাঘরে দিয়ে দেখলেন কিছু রান্না করা আছে কিনা । দুর্ভাগ্যজনিত ভাবে সেদিন কিছু ছিল না রান্নাঘরে । খালা এসে পাগলকে গেটের বাইরে থেকে এ কথা বল্ললেন । দরজা খুললেন না । তো পাগলটা বাইরে থেকে খেক খেক করে হেসে বলল, তোর নাগরের জন্য আলমারিতে যেই পিঠা আজকে বিকেলে বানায় রেখেছিস ঐখান থেকে দুটো দে । তুই তো ১৪টা পিঠা রেখেছিস, দুটো দিলে কিছু হবে না । দে, খিদা লাগছে । পিঠা দে । খালা ভয়ে চিৎকার করে উঠলো । কারণ সেইদিন তিনি আসলেই পিঠা বানিয়েছিলেন খালুর জন্য । এবং পরে গুনে দেখা যায় সেখানে আসলে ১৪টা পিঠাই ছিল । আমার খালাতো বোন রিমি নিজে তার মায়ের সাথে ঘটা এই ঘটনার সাক্ষী ।
আরেকদিন আমাদের পাশের বাসার এক আঙ্কেল রাতে একটু দেরি করে বাসায় ফিরছিলেন । পথমধ্যে তৈয়ব হটাত করে কোত্থেকে উদয় হয় । এসে আঙ্কেলের সামনে দাঁড়িয়ে বলে, খুব তৃষ্ণা লাগছে । দোকান থেকে কোন পানি কিনে দিবি ? আমার টাকা নাই । দোকানের সামনে গেলে ব্যাটা লাঠি দিয়ে মারতে আসে ।
আঙ্কেলের সেদিন মনটা খারাপ ছিল । কারণ অফিসে প্রচুর কাজ এবং তার বস তাকে বকা দিয়েছিলেন কিছু ব্যপারে । তাই মামা তৈয়বকে কিনে না দিয়ে উল্টা বকাঝকা করলেন । তৈয়ব পাগল কিছু না বলে আস্তে করে চলে গেলো এবং বলল, তোর মেয়েকে সাবধানে রাখিস । ও পানিতে পড়ে যাবে কয়েকদিনের মধ্যে । তোর পরিবারে কেউ সাঁতার পারে না । এমনকি তুইও না । তোরা কেউ বাঁচাতে পারবি না । কেউ না । এই বলে পাগলা চলে যায় । আঙ্কেল ব্যপারটা মনে রাখেন না । বাসায় ফিরে যান ।
এর কিছুদিন পরে সত্যিই ঐ আঙ্কেলের মেয়েটি পানিতে পড়ে মারা যায় । তাও তেমন কোন গভীর পুকুর না । যেখানে মেয়েটির হয়তো গোলা পর্যন্ত পানি হতো । কিন্তু সে পড়ে যাওয়ার পর আসে পাশে উপস্থিত সবাই দেখে মেয়েটিকে কি যেন নিচের দিকে টানছে । সাথে সাথে কয়েকজন ঝাঁপিয়ে পড়লেও বাঁচাতে পারে নি মেয়েটিকে । পরে ময়নাতদন্তে ধরা পড়ে মেয়েটি পানির কারণে মরে নি । হার্ট অ্যাটাক করে মারা গেছে । এতো ছোট একটা মেয়ে এমন কি কারণে হার্ট অ্যাটাক করবে ? জানা যায় নি কখনো ।
তৈয়ব পাগলার মারা যাওয়ার কাহিনীটাও অনেক রোমহর্ষক । একদিন চলন্ত ট্রেন তার উপর দিয়ে চলে যায় । যারা দেখছেন তারা বলেন সামনে ট্রেন আসছে দেখেও তৈয়ব বসে ছিল লাইনে । সবাই উঠতে বললেও সে না উঠে হাসি মুখে বসে থাকে ট্রেনের দিকে তাকিয়ে । ট্রেন চলে যাওয়ার পর তার কয়েক খণ্ড লাশ পাওয়া যায় । কিন্তু মাথাটা পাওয়া যায় নি আঁতিপাঁতি করে খুজেও । কেউ জানে না কোথাও সেটি । পাগলা মারা যায় রাতের বেলা । দিনের বেলা এলাকার মানুষ এবং পুলিশ সবাই লাশের মাথা খুজলেও, পায় নি কেউ ।